তবে কুমারের সঙ্গে তার বোনের মস্তিষ্কের ক্ষমতায় বিশাল পার্থক্য থাকলেও সে হাবা নয়। কোন কিছু তার একবার সত্যিকারের পছন্দ হলে, যত সময়ই লাগুক না কেন সেটার শেষ সে দেখে ছাড়ে। গত দুবছর ধরে সে একজন দুর্দান্ত ডুবুরী। ব্র্যান্টের বিচ্ছিন্ন কিছু সাহায্য নিয়েই সে চার মিটার লম্বা একটা কায়াকও বানাচ্ছিল। হাল হয়ে গেছে তবে পাটাতনের কাজ সে এখনও ধরেনি।
একদিন সে প্রতিজ্ঞা করল যে, সে এটাকে পানিতে ভাসিয়ে সবার হাসি বন্ধ করে দেবে। কারণ ইতিমধ্যেই “কুমারের কায়াক” তারনায় যে কোন অসমাপ্ত কাজ বোঝাতে বাগধারায় পরিণত হয়েছিল।
এটা অবশ্য থ্যালসানদের সাধারণ দীর্ঘসূত্রিতার অভ্যাসের জন্য নয়। কুমারের মূল সমস্যা হল তার অভিযাত্রী মানসিকতা আর কিছুটা বিপজ্জনক বাস্তব রসিকতা করার অভ্যাস। এবং সবাই বিশ্বাস করে এটাই তাকে একদিন একটা বড় বিপদে ফেলবে।
কিন্তু তার সবচেয়ে সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া দুষ্টমীতেও কেউ রাগ করতে পারে না। কেননা সেগুলোর ভেতর একদমই কোন বিদ্বেষের চিহ্ন থাকেনা। সে একদম খোলামেলা স্বচ্ছ। কেউ তাকে মিথ্যা বলতে স্বপ্নেও চিন্তা করবে না। এটার জন্যই সে প্রায়ই এবং আসলে সব সময়ই ক্ষমা পেয়ে যায়।
আগন্তুকদের আসাটাই হচ্ছে তার জীবনের সবচে বড় রোমাঞ্চকর ঘটনা। সে তাদের যন্ত্রপাতি, শব্দ ভিডিও, সুক্ষ্ম রেকর্ডিং, তাদের গল্প-আসলে তাদের সবকিছু দিয়েই অত্যন্ত মুগ্ধ। আর যেহেতু লোরেনের সঙ্গে তার সবচে বেশী দেখা হতো সে স্বাভাবিক ভাবেই তার সঙ্গে জুটে গেল।
লোরেন অবশ্য এই সম্পর্ক গড়াটায় খুব বেশী খুশী হয়েছে তা নয়। কারণ অসহিষ্ণু সাথীর চাইতেও অগ্রহণযোগ্য হল একটা প্রশ্রয়ে বখে যাওয়া, গায়ে পায়ে লেপ্টে থাকা বাচ্চা ভাই।
১৯. সমুদ্র যাত্রা
আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না লোরেন– ব্র্যান্ট ফ্যাকনর বলল- তুমি কখনো বোটে এমনকি জাহাজেও চড়নি।
-একটা রাবারের ডিঙিতে একটা পুকুর পার হয়েছিলাম এমন একটা জিনিস মনে পড়ে। অবশ্য তখন আমার বয়স মাত্র পাঁচ।
-তাহলে তোমার ভালোই লাগবে। শরীর খারাপ করার মতো কোন ঢেউ নেই। সম্ভবত তুমি আমাদের সঙ্গে ডুবও দিতে পার।
-না, ধন্যবাদ একবারে একটা জিনিস হজম করাই ভালো। আর অন্যরা কাজ করার সময় শেখার নামে তাদের বিরক্ত করার কোন মানে নেই।
ব্র্যান্ট ঠিকই বলেছিল। তার ভালোই লাগছে। পানির ইঞ্জিন প্রায় নিঃশব্দে তাদের রীফ থেকে বের করে নিয়ে এল। তবে খুব শিগিগিরি স্থলভাগের নিশ্চিত নিশ্চয়তা ছোট হয়ে এল। সে সামান্য একটু ভয় অনুভব করল।
শুধু একটা অদ্ভুত চিন্তা তাকে স্থির রাখল। এই গ্রহে আসতে সে পঞ্চাশ আলোকবর্ষ পাড়ি দিয়েছে। এ পর্যন্ত কোন মানুষের জন্য সবচে দীর্ঘযাত্রা। আর সে কিনা স্থল থেকে মাত্র কয়েকশ মিটার যেতে ভয় পাচ্ছে।
অবশ্য কোন ভাবেই সে চ্যালেঞ্জটা ফেলতে পারছিল না। সে গলুই এ বসে ফ্যাকনরের হাল ধরা দেখতে লাগল (তার কাঁধে ওই সাদা দাগটা কিসের। ওহ্ হো বছরখানেক আগে একটা ছোট ওড়ার যন্ত্রের ভূপাতিত হবার গল্প করেছিল…) এই ল্যাসানের মনে কি বয়ে যাচ্ছে জানতে তার আগ্রহ হচ্ছে।
এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে, কোন মানব সভ্যতা তা যতই আলোকপ্রাপ্ত বা সহজ সরল হোক না কেন, সেটা হিংসা বা যৌন আধিপত্যের চিন্তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকবে।
অবশ্য এখন পর্যন্ত এমন কিছু হয়নি যার জন্য ব্র্যান্ট হিংসা করবে। মিরিসার সঙ্গে মনে হয় সে একশ শব্দের বেশি কথা বলেনি। তারও বেশির ভাগই তার স্বামীর সঙ্গে থাকা অবস্থায়। ভুল হয়ে গেল–থ্যালসায় প্রথম সন্তান না হওয়া পর্যন্ত কাউকে স্বামী-স্ত্রী বলা হয় না। যদি কোন ছেলে হয়, তাহলে মা সাধারণত (তবে সব সময় নয়) ছেলের বাবার পদবী গ্রহণ করে। আর মেয়ে হলে দু’জনেই মায়ের পদবী রাখে অন্ততঃ দ্বিতীয় (এবং সেটাই শেষ সন্তান জন্ম পর্যন্ত।
খুব কম জিনিসই আছে যা ল্যাসানদের আঘাত করে। আঘাত করার মতো সেরকম একটা জিনিস হল বাচ্চাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা। আর তৃতীয় গর্ভধারণ হচ্ছে আরেকটা বিশেষতঃ এরকম মাত্র দু’শহাজার বর্গকিলোমিটারের একটা বিশ্বে। এখানে শিশু মৃত্যুর হার এতই কম যে, দুটো সন্তানই একটা নির্দিষ্ট জনসংখ্যা রাখতে যথেষ্ঠ। থ্যালসার ইতিহাসে একটিই কেবল বিখ্যাত ঘটনা আছে–সেটায়
একবার এক মহিলা পাঁচ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। বেচারী মাকে এর জন্য দায়ী না করা গেলেও এলাকায় তার নাম বেশ মজার স্মৃতি হিসেবে চিহ্নিত।
আমাকে খুব, খুব সাবধানে চলতে হবে। লোরেন মনে মনে ভাবল। সে ইতিমধ্যেই জানে যে মিরিসা তকে খুব পছন্দ করেছে। তার গলার স্বর আর ভঙ্গিই তা বুঝিয়ে দেয়। আর আচমকা হাত বা শরীরের নরম কোন স্পর্শ প্রয়োজনের চাইতে বেশিক্ষণ লেগে থেকে সেটাকেই একদম প্রমাণিত করে দেয়।
তারা দুজনেই জানে যে, এটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এবং লোরেন। নিশ্চিত যে ব্র্যান্ট সেটা জানে। অবশ্য তাদের মধ্যে এ দ্বন্দ্ব থাকলেও তারা এখনও। যথেষ্ঠ বন্ধুত্ব রেখেই চলছে। জেটের শব্দ থেমে গেছে। পানিতে হাবুডুবু খাওয়া একটা বড় কাঁচের বয়ার কাছে এসে বোটটা থামল।
-এটাই আমাদের শক্তির উৎস, ব্র্যান্ট বলল। মাত্র কয়েকশ’ ওয়াটের ব্যাপার তো-সৌরকোষ দিয়েই হয়ে যায়। মিষ্টি পানির সমুদ্রের সুবিধা এটা। পৃথিবী হলে সম্ভব হতো না। তোমাদের সমুদ্র তো খুব লবণাক্ত ছিল সেটা প্রচুর কিলোওয়াট খেয়ে নিত।