৫. সবশেষে আমি একটা ব্যাপারকে ধন্যবাদ দেই কারণ থ্যালসার সময় ভাগ মাত্র একটাই।
সিরডার বে (ক্যাপ্টেন)
৩৮৬৪.০৫.২৬.২০৩০ পৃ.স.
৭১৮.০০.০২.১৫.০০ থ্যা.স.
একটা সহজ জিনিসকে কিভাবে কেউ এতো জটিল বানাতে পারে, মিরিসা হেসে দিল। তখন টেরা নোভা বুলেটিন বোর্ডে মাত্র নোটিশটা উঠেছে- আমার মনে হয় এটা একটা সেই বিখ্যাত বে’র বজ। ক্যাপ্টেন কেমন মানুষ? আমি তার সঙ্গে কখনো কথা বলার ঠিকমতো সুযোগ পাইনি।
-তাকে খুব সহজে চেনা যায় না, মোজেস ক্যালডর বলল। আমার মনে হয় না ডজনখানেকের বেশী আমি তার সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ করেছি। এবং সেই হচ্ছে। একমাত্র ব্যক্তি যাকে মহাকাশযানের প্রত্যেকে “স্যার” বলে ডাকে–সবসময়। অবশ্য একান্তে থাকলে ডেপুটি ক্যাপ্টেন ম্যালিনা হয়তোবা বলেনা। এটা অবশ্য সে অর্থে বে’র বজ্র নয়। এটা প্রধানত তত্ত্বীয়। সিনিয়র অফিসার ভার্লে আর সেক্রেটারী লেলিরয় মিলে নিশ্চয়ই এটা লিখেছে। ক্যাপ্টেন বের প্রাযুক্তিক জ্ঞান আমার চাইতে অনেক বেশী ভালো হলেও, সে প্রধানত একজন প্রশাসক। আর মাঝে মাঝে সর্বাধিনায়ক।
-তার দায়িত্বকে আমি ঘৃণা করি।
-এটা কাউকে না কাউকে তো করতেই হবে। সাধারণ সমস্যা সাধারণত সিনিয়র অফিসার বা কম্পিউটার ব্যাঙ্কের সাহায্যেই সমাধান করা যায়। কিন্তু কখনো কখনো একজনকেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং তাকেই তা প্রয়োগ করতে হয়। তাই একজন ক্যাপ্টেন দরকার। তুমি সব সময় একটা মহাকাশযান একটা কমিটি দিয়ে চালাতে পারবে না।
-ভাগ্য ভালো যে থ্যালসা এভাবে চলছে না। প্রেসিডেন্ট ফারাদীনকে তুমি কি একজন ক্যাপ্টেন হিসেবে চিন্তা করতে পার?
-পীচগুলো ভারী সুস্বাদু, ক্যালডর চালাকী করল। যদিও সে জানে ওগুলো লোরেনের জন্য আনা হয়েছে। কিন্তু তোমরা ভাগ্যবান। গত সাতশ বছরে তোমরা সত্যিকারের কোন বিপদে পড়নি। তোমাদের নিজেদের লোকেরাই কি বলে না যে থ্যালসার কোন ইতিহাস নেই, আছে শুধু উপাত্ত।
-এটা ঠিক না। ক্র্যাকান পর্বতের অগ্ন্যুৎপাতকে তুমি কি বলবে?
-ওটা একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অবশ্যই বড় ধরনের। আমি রাজনৈতিক সমস্যা বা গৃহযুদ্ধ এধরনের কথা বলছি।
-সেজন্য আমরা পৃথিবীকে ধন্যবাদই দেই। জেফারসন মার্ক-৩ এর সংবিধান যেটাকে অনেকে দুই মেগাবাটের ইউটোপিয়া বলতো, খুব ভালো কাজ করেছে। তিনশ বছরেও ঐ প্রোগ্রামে কেন পরিবর্তন করতে হয়নি। মাত্র ছ’টা সংশোধনী আনা হয়েছে।
-যতদিন আমরা এখানে আছি, ক্যালডর বলল, আমার ভাবতে ভালো লাগবে না যে, সপ্তমটি আমাদের জন্য হবে।
যদি এটা হয় প্রথমে এটাকে আর্কাইভের মেমরী ব্যাঙ্কে দিতে হবে। তোমরা আবার কখন আমাদের এখানে বেড়াতে আসবে? কত কিছু যে আমি তোমাকে দেখাতে চাই।
-আমি যতটা দেখতে চাই ততটা নিশ্চয়ই নয়। সাগান-২ এ লাগবে এমন অনেক কিছুই নিশ্চয়ই আছে, যদিও সেটা একেবারে অন্যরকমের গ্রহ, অনেক আকর্ষণহীনও বটে। সে স্বগত বলল।
তাদের কথা বলার সময়ই লোরেন ব্যস্তভাবে অভ্যর্থনা কক্ষে এল। নিশ্চয়ই খেলার রুম থেকে গোসলে যাবার পথে।
-নিশ্চয়ই সবগুলোতে জিতেছ বরাবরের মতো। তোমার একঘেয়ে লাগে না? লোরেন মাথা চুলকালো।
-কিছু তরুণ ল্যাসান প্রতিশ্রুতি ভালোই দেয়। একজন তিন পয়েন্ট তো নিয়েই নিয়েছিল। অবশ্য আমি বা হাতে খেলছিলাম।
-এটা অবশ্য অসম্ভব মিরিসা, যে কেউ তোমাকে বলেনি লোরেন পৃথিবীতে টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন ছিল।
-বাড়িয়ে বলো না মোজেস। প্রথম পাঁচজনের মধ্যে ছিলাম। আর শেষের দিকে মান খুব নীচুতে নমে গিয়েছিল। তৃতীয় শতকের যে কোন চীনা খেলোয়ার আমাকে হারাতে পারবে।
-নিশ্চয়ই তুমি ব্র্যান্টকে শেখানো আরম্ভ করনি- ক্যালডর হঠাৎ বলল, সেটা বেশ আকর্ষণীয় হতো।
বেশ বড় একটা নিস্তব্ধতা গ্রাস করল সবাইকে। লোরেন আস্তে করে বলল, এটা ঠিক না।
মিরিসা বলল, ব্র্যান্ট তোমাকে কিছু দেখাতে চায়।
-তাই।
-তুমি নাকি কখনো বোটে চড়নি।
-হ্যাঁ।
-তাহলে ব্র্যান্ট এবং কুমার তোমাকে কাল সকালে সাড়ে আটটায় পিয়ের তিন এ আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।
লোরেন ক্যালডরের দিকে তাকাল,
-এটায় যাওয়া কি আমার জন্য নিরাপদ? সে কৃত্রিম গাম্ভীর্যের সঙ্গে জিজ্ঞেস করল, আমি সাঁতার জানি না যে।
-দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই-ক্যালডর ভরসা দিল। তারা যদি তোমার চিরযাত্রার পরিকল্পনা করেই থাকে, তাহলে ওতে কোন লাভ হতো না।
১৮. কুমার
আঠারো বছরের জীবনে কুমার লিওনার্দের একটিই মাত্র দুঃখ আছে। সে তার প্রত্যাশার চাইতে দশ সেন্টিমিটার ছোট। তাকে পেছনে যখন কেউ “ছোট্ট” সিংহ বলে ডাকে তখন তাতে অবাক হবার কিছু নেই। অবশ সামনাসামনি ডাকার সাহস কারও নেই। তার উচ্চতার এই ঘাটতি পূরণ করতেই সে স্বাস্থ্যের প্রশস্ততার প্রতিই বেশী মনোযোগ দিয়েছে। মিরিসা বহুবার বলেছে “কুমার শরীর চর্চার সময়টা যদি তুমি মস্তিষ্ক চর্চায় দিতে তাহলে থ্যালসার সবচে বড় প্রতিভা তুমিই হতে।” তবে যেটা কখনোই সে কুমারকে বলেনা, এমনকি নিজের কাছেও নিজে স্বীকার করেনা সেটা হল প্রতিদিনের সকালের ব্যায়াম দেখার সময় তার বুকেও একটা অ ভগ্নীসুলভ ব্যাপার জেগে ওঠে এবং আশেপাশের প্রশংসা তাদের প্রতি তার একটা হিংসাই লাগে। কুমারের আশেপাশে অবশ্য তার বয়সীরাই থাকে। তারনার সমস্ত মেয়ে আর অর্ধেক ছেলের সঙ্গে তার যে প্রেমকাহিনী বাতাসে ছড়িয়ে আছে তার মধ্যে সত্যের বদলে অতিরঞ্জনই বেশী।