-ভাগ্য ভালো যে আমি তোমাকে বলিনি।
-অবশ্যই এটা রেকর্ডের বাইরে থাকবে। মোজেস, তোমার সম্বন্ধে সে কি ভাবে?
-সে আমার দৃষ্টিভঙ্গী পছন্দ করে, আমার অভিজ্ঞতাও। কিন্তু খুব গুরুত্বের সঙ্গে কখনোই নেয় না। এটা আমিও জানি কেন। সে একবার আমাকে বলেছিল “মোজেস, তুমি ক্ষমতা পছন্দ কর কিন্তু দায়িত্ব না। কিন্তু আমি দুটোই উপভোগ করি” এটা খুব রুক্ষ কথা। কিন্তু এটাই আমাদের পার্থক্যের মূল কথা।
-তুমি কি উত্তর দিলে?
-আমি কি বলব? এটা একদম সত্যি। সত্যিকারের রাজনীতিতে আমি একবারই যোগ দিয়েছিলাম, সেটা ভয়ংকর নয়-তবে আমি সত্যিই সেটা উপভোগ করিনি।
-ক্যালডর ক্রুসেড সমন্ধে?
-ওহ তুমিও জানো। ফালতু বিশেষণ আর আমাকে সেটাই ভয় পাইয়ে দেয়। ওটা আমার আর ক্যাপ্টেনের মধ্যকার আরেকটা পার্থক্য। সে ভাবত এবং আমি জানি এখনও ভাবে, জীবন সম্পন্ন, যে কোন গ্রহ সরাসরি আমাদের এড়িয়ে যাবার নির্দেশ একটা মানবীয় ফালতু দুর্বলতা।
-আশ্চর্য। তুমি একদিন এটাকে রেকর্ড করতে দেবে।
-কক্ষনো না। ওখানে কি হচ্ছে? ডোরেন চ্যাং একজন সহনশীল মহিলা। এবং সে জানে কখন থামতে হবে।
-ওটা হচ্ছে মিরিসার প্রিয় গ্যাসীয় ভাষ্কর্য। তোমাদের পৃথিবীতেও নিশ্চয়ই ছিল।
-অবশ্যই। আর রেকর্ডের বাইরে বলছি আমার মনে হয় না, ওটা কোন শিল্প। তবে আকর্ষণীয়।
উঠোনের এক অংশের মূল বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়েছে। আর প্রায় ডজন খানেক অতিথি প্রায় এক মিটার চওড়া, সাবানের বুদবুদের মতো একটা জিনিসের কাছে জড়ো হয়েছে। চ্যাং আর ক্যালডর সেদিকে আগাতে আগাতেই তারা দেখল, একটা রঙীন ফিতা ভেতরে তৈরী হচ্ছে। একটা স্পাইরাল নেবুলার জন্মের মতো।
-এটাকে “জীবন” বলা হয়, ডোরেন বলল। মিরিসার পরিবার প্রায় দু’শ বছর ধরে এটা রাখছে। গ্যাসটা অবশ্য লীক হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে আছে এটা আরও অনেক উজ্জ্বল ছিল।
তা হলেও এটা এখনও আকর্ষণীয়। ইলেকট্রন বন্দুক আর লেজারকে এর গোড়ায় কোন পুরোনো শিল্পী এমন ভাবে বসিয়েছেন, যাতে একসারি জ্যামিতিক আকৃতি ধীরে ধীরে জটিল জৈব যৌগের আকৃতি নিতে থাকে। কেন্দ্র থেকে পরিধির দিকে আরও জটিল রূপ দেখা যায়। আর একটা আরেকটাকে ক্রমাগত প্রতিস্থাপিত করতে থাকে। এক পর্যায়ে, একটা পেচানো জিনিস দেখা যায়, যাকে অনেকটা ডি.এন.এ অনুর মতো মনে হয়। আর প্রতিটা পদক্ষেপেই কিছু নতুন জিনিস যুক্ত হয়ে সেটা কয়েক মিনিটের মধ্যে অ্যামিবা থেকে মানুষ হবার মহাকাব্য দেখিয়ে দেয়।
শিল্পী তার পরেও যেতে চেয়েছেন। ক্যালডর অবশ্য সেটা বুঝল না। উজ্জ্বল গ্যাসের আলো খুব বেশী জটিল আর বিমূর্ত হয়ে গেছে। আরও কয়েকবার দেখলে হয়তো একটা প্যাটার্ন ধরা যেতে পারে।
-শব্দের কি হলো? ডোরেন সব আলো নিভে গেলে জিজ্ঞেস করল। এখানে কিছু খুব সুন্দর সুর ছিল, বিশেষত শেষে।
-আমার আশঙ্কা ছিল কেউ জিজ্ঞেস করবে। মিরিসা কৈফিয়তের সুরে বলল,–আমরা বুঝতে পারছি না, সমস্যাটা কি আবহ সঙ্গীতের না প্রোগ্রামের ভেতরে।
-নিশ্চয়ই একটা বিকল্প ছিল।
-হ্যাঁ ছিলো তো বটেই। কিন্তু বাড়তি মডেলটা কুমারের রুমে। হয়তো তার ক্যানুর কোথাও হবে। তার রুম না দেখলে এন্ট্রপি কি জিনিস তোমরা বুঝবেনা।
-ওটা ক্যানু নয় কায়াক, কুমার প্রতিবাদ করল। সে মাত্রই একটা সুন্দর স্থানীয় মেয়েকে নিয়ে ঢুকেছে–আর এন্ট্রপিটা কি জিনিস?
একজন তরুণ বোকার মতোই জিনিসটা বোঝাতে চাচ্ছিল। কিন্তু বেশী দূর যাবার আগেই একটা সুর ভেসে আসল।
-তোমরা দেখলে–কুমার জোরে চেঁচালো, অবশ্যই একটু গর্বের সঙ্গে-ব্র্যান্ট যে কোন জিনিস সারাতে পারে।
যে কোন জিনিস? লোরেন ভাবল। মনে হয় না….
১৭. নিয়মের শৃংখল
উৎস: ক্যাপ্টেন
লক্ষ্য: সকল কর্মীবৃন্দ
ক্রমপঞ্জী
এ ব্যাপারে অপ্রয়োজনীয় সন্দেহ দেখা দেয়ায় আমি নিম্নলিখিত জিনিসগুলো পরিষ্কার করছি।
১. মহাকাশযানের সব রেকর্ড ও সময় পৃথিবী সময় (পৃ.স.) অনুযায়ী থাকবে আপেক্ষিকতার প্রভাবকে সংশোধিত করে। এ যাত্রার শেষ পর্যন্ত সব ঘড়ি এবং সময় সংরক্ষক ব্যবস্থা পৃ.স. হিসাবে রাখবে।
২. গ্রহে অবস্থানকারী কর্মীরা সুবিধার জন্য থ্যাসলার সময় (থ্যা. স.) ব্যবহার করলেও তাদের সব রেকর্ড পৃ.স. হিসাবে রাখবে।
৩. সবার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে থ্যালসার সৌর দিবস পৃ.স. ২৯.৪৩২৫ ঘন্টা।
৩১৩.১৬৬১ দিনে থ্যালসায় বছর হয়। যেটাকে ২৮ দিনের ১১ মাসে ভাগ করা হয়েছে। ক্যালেন্ডার থেকে জানুয়ারী বাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ৩১৩ দিনের হিসাবের জন্য ডিসেম্বরের শেষ দিনের পর বাড়তি পাঁচ দিন যোগ করা হয়। ছয় বছরে লিপ ইয়ারের বাড়তি দিন যোগ হয়। তবে আমাদের অবস্থানের মধ্যে এটা হবে না।
৪. যেহেতু থ্যালসার দিনগুলো পৃথিবীর দিনের চাইতে ২২%বেশী আর অন্যদিকে দিনের সংখ্যা ১৪% কম, সেহেতু থ্যালসার বছর পৃথিবীর চাইতে মাত্র ৫% বেশী। তোমাদের সবার বোঝা উচিত, জন্মদিনের বেলায় এর একটা গুরুত্ব আছে। থ্যালসা ও পৃথিবীর সময়পঞ্জী প্রায় এক। একজন ২১ বছর বয়সী থ্যালসান পৃথিবীবাসী হলে ২০ বছরের হতো। ল্যাসান ক্যালেন্ডার ৩১০৯ পৃ.স. প্রথম অবতরণ থেকে গণনা করা হয়। বর্তমান বছর হচ্ছে ৭১৮ থ্যা.স., ৭৫৪ পৃথিবী সময় পরে।