লিষ্টার অবশ্য তারস্বরে কান্না জুড়ে দিল।
-মনে হচ্ছে সেটা ভালো হবে না- মিরিসা হাসল। সে বাচ্চাটাকে তুলে নিয়ে কাছের বাথরুমের দিকে যেতে যেতে বলল,
-আমি ওর ভাব বুঝি। ব্র্যান্ট বা কুমার তোমাকে চারিদিক ঘুরিয়ে দেখাক। ততক্ষণ আমরা অন্যান্য অতিথিদের জন্য অপেক্ষা করি।
ল্যাসানরা অনুষ্ঠান খুবই পছন্দ করে। আর অনুষ্ঠান করার কোন সুযোগই তারা হাতছাড়া করেনা। ম্যাগেলানের আবির্ভাব, সত্যিকার অর্থেই এক না, বহু জন্মেরই ঘটনা। যদি সব আমন্ত্রণ গ্রহণ করার মতো সময় আগন্তুকদের থাকতো তা হলে, তাদের কাজের পুরো সময়টাই কোন আনুষ্ঠানিক বা অআনুষ্ঠানিক নিমন্ত্রণ খেতেই শেষ হয়ে যেত। অবশ্য খুব শিগগিরি ক্যাপ্টেন তার একটা নির্দেশ দিয়ে দিলেন। “বের বজ্র” নামে ডাকা এই নিয়মে একজন পাঁচদিনে একটির বেশী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবে না। ল্যাসানদের আতিথেয়তার অত্যাচারের চাইতে এটাতেই অবশ্য অনেকে খুশী হল।
লিওনার্দের এক তলা বাড়ি, যাতে এখন মিরি, ব্র্যান্ট আর কুমার থাকছে তা প্রায় ছয় প্রজন্ম ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। দোতলা বাড়ী অবশ্য তারনায় খুব কমই আছে। প্রায় তিরিশ মিটার ঘাসের লন এর সামনে। তার মাঝে একটা পুকুর। পুকুরের মাঝে শীর্ণ এক পাম গাছ নিয়ে ছোট্ট দ্বীপ। একটা কাঠের সেতু দিয়ে সেখানে যাওয়া যায়।
–তারা গাছটাকে বদলাতে বলছে- ব্র্যান্ট কৈফিয়তের সুরে বলল। কিছু গাছ খুব ভালো হয়, কিন্তু বাকীগুলি যত রাসায়নিকই দেই না কেন মরে যায়। মাছ নিয়েও এই একই সমস্যা। মিষ্টি পানির মাছ ভালোই টেকে, কিন্তু তাদের জন্য তো জায়গাই নেই। এতো মিলিয়ন গুণ বড় সাগর, কিন্তু আমরা ব্যবহারই করতে পারছি না।
লোরেনের ব্যক্তিগত মত হচ্ছে যে, যখন ব্র্যান্ট ফ্যাকনর সাগর নিয়ে কথা বলে তখন তার মতো বিরক্তিকর আর কেউ নেই। তবে মিরিসার প্রসংগের চাইতে এটা অনেক নিরাপদ।
লোরেন নিজেকেই শুধায়, কখনও স্বপ্নেও কি সে এরকম একটা অবস্থায় পড়বে বলে ভেবেছিল? সে আগেও প্রেমে পড়েছে। কিন্তু সেই স্মৃতি এমনকি নামগুলোও মহাকাশযানের অন্যান্য সবার মতোই যত্ন করে স্মৃতি থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। তার মনে করার ইচ্ছাও নেই। যে অতীত নিষ্ঠুরভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে তাকে মনে করার দরকারটা কি?
এমনকি কিতানির মুখও ঝাপসা হয়ে গেছে। যদিও মাত্র এক সপ্তাহ আগেই তাকে সে শীতল প্রকোষ্ঠে দেখে এসেছে। কিন্তু সে হচ্ছে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথী। যার বাস্তবায়ন এমনকি কখনো নাও হতে পারে। আর মিরিসা এখন, এখানেই উপস্থিত তার সব হাসি আর উচ্ছলতা নিয়ে। কোন অন্তহীন শীতনিদ্রায় নয়। সে তাকে আবার একবার পরিপূর্ণ করেছে পৃথিবীর নিষ্ঠুর শেষ দিনগুলো, যা তার তারুণ্যকে মুছে ফেলেছিল তাকে আবার জাগিয়ে তুলেছে।
প্রতিবার দেখা হলেই তার বলতে ইচ্ছে হয় যে, সে আবার একজন নতুন মানুষ হয়েছে। এই চাপটা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত, সে তার কাজও ঠিকভাবে করতে পারছে না। ম্যানগ্রোভ উপকূলের পরিকল্পনা আর তথ্য দেখার সময় কতবার মিরিসার ছায়া তাকে “স্থগিত নির্দেশ দিতে বাধ্য করেছে। আর কথাগুলো মনে মনেই বলতে বাধ্য। হয়েছে। মিরিসার কয়েক মিটারের মধ্যে থেকেও, কয়েকটা ভদ্রতাসূচক কথার বেশী বলতে না পারাটা এক ধরনের অত্যাচার।
লোরেনকে বাঁচাতেই ব্র্যান্ট হঠাৎ তাকে ছেড়ে তাড়াহুড়ো করে চলে গেল। লোরেনও অবশ্য দ্রুতই কারণটা বুঝতে পারল।
-কমান্ডার লোরেনসন, মেয়র ওয়াডের্ন বললেন। আশা করি তারনা ভালো লাগছে। লোরেন ভদ্রতা করে মাথা ঝাঁকালো। সে জানে মেয়রের প্রতি তার আরও নম্র হওয়া উচিত। তবে সামাজিকতা বড় কোন ব্যাপার নয়।
-হ্যাঁ অবশ্যই, ধন্যবাদ। আমার মনে হয় না, আপনি এই ভদ্রলোকদের সঙ্গে পরিচিত। প্রয়োজনের চাইতে অতিরিক্ত জোরেই সে একদল সহকর্মীকে ডাকল। ভাগ্য ভালো যে নতুন দলটার সবাই লেফটেন্যান্ট। কাজে না থাকলেও উপরের র্যাঙ্ক সবসময়ই সুবিধা পায়, আর সেটা ব্যবহারে তার কোন সঙ্কোচও নেই।
-মেয়র ওয়াডের্ন এ হচ্ছে লেঃ ফ্লেচার। ওয়েন তোমার তো এই প্রথম নীচে নামা? লেঃ ওয়েরনার, লেঃ রঞ্জিত উইলসন, লেঃ কার্ল বোসেলি…সবসময় লুকোচুরি খেলা। নতুন ছেলেগুলো অবশ্য ভালোই। আর তার মনে হয় না যখন সে চুপিসাড়ে কেটে পড়ল মেয়র তা লক্ষ্য করতে পারল।
ক্যাপ্টেনের সঙ্গেই কথা বলতে চাচ্ছিল ডোরেন চ্যাং। কিন্তু তিনি দ্রুত আসলেন, একটা ড্রিঙ্ক নিলেন, তার পরই গৃহকর্তার কাছে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নিলেন।
–কেন তিনি আমাকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন না? সে ক্যালডরকে জিজ্ঞেস করল। ক্যালডরের অবশ্য তেমন কাজ নেই এবং এর মধ্যেই কয়েকদিন ভি.ডি.ও বা অডিও এর সামনে তিনি বসেছেন।
-ক্যাপ্টেন সিরডার বে-সে উত্তর দিল, একজন বিশেষ ব্যক্তি। আমাদের অন্যদের মতো, তাকে ব্যাখ্যাও দিতে হয় না বা মাপও চাইতে হয় না।
-তোমার গলায় কিছুটা ভয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে? থ্যালসা ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের সবচে দামী সংবাদপাঠিকা জিজ্ঞেস করল।
-না তা নয়। আমি তাকে বেশ পছন্দ করি। এমনকি আমার সম্বন্ধে মন্তব্যগুলোও মেনে নেই- পুরোপুরি নয় অবশ্য, এ্যাই তুমি কি রেকর্ড করছো?
-এখন না। খুব বেশী গোলমালের শব্দ হচ্ছে।