-ভালো মাছ পেয়েছ?
কুমার উত্তর দিল,
–মোটেই না। তার আগ্রহ হচ্ছে কেবল উপাত্ত নেয়াতে। কিলোগ্রাম পার কিলোওয়াট এসব হাবিজাবি আর কি। ভাগ্য ভালো যে আমি রডটা নিয়েছিলাম। রাতের জন্য একটা টুনা মাছ ধরেছি।
সে বোটে গিয়ে প্রায় এক মিটার লম্বা সুন্দর মাছটা তুলে ধরল। এর রং অবশ্য দ্রুত বিবর্ণ হচ্ছে, চোখটা মৃত্যুর ছোঁয়ায় চকচকে হয়ে গেছে। সে গর্বের সঙ্গে বলল,
-এতবড় সবসময় পাওয়া যায় না।
তারা যখন সবাই এর প্রশংসায় ব্যস্ত ঠিক তখন ইতিহাস ফিরে এল থ্যালসায়। আর যে সহজ নিরুদ্বিগ্ন জগতে তাদের তারুণ্য কাটছিল হঠাৎ করেই তা শেষ প্রান্তে চলে এল।
এর প্রমাণটা চলে যাচ্ছিল আকাশ দিয়ে। যেন একটা দৈত্য নীল আকাশে বিশাল এক চক দিয়ে দাগ টেনে দিয়েছে। তারা দেখছিল উজ্জ্বল ধোয়ার পথটা তার প্রান্তের দিক দিয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে। তারপর সেটা খন্ড খন্ড মেঘ হয়ে গেল আর যেন বরফের একটা সেতু তৈরী হল দিগন্ত থেকে দিগন্তে।
আর একটা দূরাগত গর্জন ধেয়ে আসতে লাগল আকাশ থেকে। এটা সেই আওয়াজ যা থ্যালসা গত সাতশ বছরে শোনেনি। তবে এমনকি বাচ্চারাও একবার শুনলেই এই আওয়াজ চিনে ফেলবে।
বিকেলের গরম সত্ত্বেও মিরিসা কেঁপে উঠল। মিরিসা ব্র্যান্টের হাত ধরলেও সে সেটা টের পেল কিনা সন্দেহ। সে তখনও আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। এমনকি কুমারও মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ছিল। অবশ্য সেই প্রথম কথা বলল,
-যে কোন একটা কলোনী আমাদের খুঁজে পেয়েছে।
ব্র্যান্ট মাথা নাড়ল, তবে খুব দৃঢ় বিশ্বাসে নয়।
-তাদের দরকারটা কি? তাদের কাছে পুরানো ম্যাপ তো আছেই। তারা তো জানেই যে থ্যালসা প্রায় পুরোটাই সাগর। তাদের এখানে এসে কোন লাভ নেই।
-বৈজ্ঞানিক কৌতূহল? মিরিসা বলল, আমাদের কি হয়েছে তা দেখতে। আমি সব সময় বলেছি যে আমরা কমিউনিকেশন লিঙ্কটা ঠিক করি।
এটা একটা পুরোনো তর্ক, যা কয়েক যুগ পর পর চাঙ্গা হয়। এক সময় বেশীর। ভাগ লোকই মনে করত যে থ্যালসার উচিত পূর্ব দ্বীপের বড় ডিসটা মেরামত করা। যেটা নাকি চারশ বছর আগে ক্র্যাকানের অগ্নৎপাতের কারণে ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে অনেক কিছুই এল, যা নাকি আরও গুরুত্বপূর্ণ বা আরও মজাদার।
ব্র্যান্ট চিন্তার সঙ্গে বলল।
-একটা মহাকাশযান তৈরী বিশাল ব্যাপার। আমার মনে হয় না, কোন কলোনী সেটা করতে পারবে যতক্ষণ না পৃথিবীর মতো…।
সে চুপ করে গেল। এতো শত বছর পর এটা একটা কঠিনই নাম উচ্চারণের জন্য। তারা দ্রুত পুবে ফিরল, যেখানে নিরক্ষীয় রাত দ্রুত নামছে সমুদ্র অতিক্রম করে। কিছু উজ্জ্বল তারা এর মধ্যেই ফুটে উঠেছে। পাম গাছের ওপর ছোট্ট নির্ভুল ত্রিভুজ।
এ তিনটি নক্ষত্র একই ম্যাগনিচুডে। দক্ষিণে থাকলে কয়েক সপ্তাহের জন্য আরও উজ্জ্বল দেখা যায়।
এর ক্ষয়ে যাওয়া চারপাশটা এখনও দেখা যায়, মাঝারী মানের টেলিস্কোপেই, কিন্তু কোন যন্ত্রই সেই পুড়ে যাওয়া পৃথিবীকে দেখতে পায় না।
২. ছোট্ট, নিরপেক্ষ এক
প্রায় এক হাজার বছর পরে একজন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ১৯০১-২০০০ সালকে “শতাব্দী–যখন সব হয়েছিল” হিসাবে বলেন, তখন তিনি এটাও উল্লেখ করেন যে ঐ সময়ের মানুষরাও তার সঙ্গে একমত হবে, তবে সম্পূর্ণ এক ভুল কারণে। তারা অবশ্য যৌক্তিক গর্বের সঙ্গেই দেখাবে বাতাসের ওপর প্রভুত্ব, আনবিক শক্তি, জীবনের মূল সূত্রের আবিষ্কার, ইলেক্ট্রনিক আর যোগাযোগ বিপ্লব, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শুরু আর সবচাইতে বড় জিনিস সৌরজগৎকে ছাড়িয়ে যাওয়া আর চাঁদে প্রথম পদার্পন। অবশ্য ঐ ঐতিহাসিক যথার্থ ভাবেই দেখান যে, হাজারে একজনও সেই আবিষ্কারের কথা শোনেনি যা কিনা সব ঘটনাকেই ছাড়িয়ে যায়, এবং সব কিছুকে একদম অপ্রাসঙ্গিক করে তোলে।
এটাকে ক্ষতিকর মনেই হয়নি, যেমন মনে হয়নি হিরোশিমায় আনবিক বোমা পড়ার পঞ্চাশ বছর আগে বেকরোলের পরীক্ষাগারে ফটোগ্রাফিক প্লেটের ছবিকে। বস্তুত, এটা ছিল ঐ পরীক্ষারই একটা উপজাত এবং অবশ্যই সমান নিরীহ।
প্রকৃতি খুব শক্তভাবে তার ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই পদার্থবিদরা খুবই অবাক হলেন, যখন তারা আবিষ্কার করলেন যে কিছু আনবিক বিক্রিয়ায় সব যোগ করলেও সমীকরণের এক পাশে কিছু কম হয়ে যাচ্ছে।
অডিটরের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য হিসাব রক্ষক যেমন নতুন হিসাব দেখায়, পদার্থবিদরাও তেমন একটা নতুন কণার সৃষ্টি করলেন। এবং গরমিলের হিসাবের একাউন্টের মতোই এটা ছিল অদ্ভুত। এর না ছিল ভর, না ছিল চার্জ এবং আশ্চর্যভাবে কোন বিক্রিয়া ছাড়াই এটা ভেদ করতে পারত–এমনকি বিলিয়ন কিলোমিটার পুরু সীসার দেয়ালও। এর ডাক নাম দেয় হল “নিউট্রিনো” নিউট্রন+ব্যমবিননা। এটাকে অবশ্য চিহ্নিত করার কোন আশা কারও ছিল না। কিন্তু ১৯৫৬ সালে পদার্থবিদরা যন্ত্রের সাহায্যে প্রথম কিছু নমুনা ধরতে পারলেন। এটা অবশ্য তাত্ত্বিকদের জন্য এক বিশাল বিজয়। তারা তাদের সমীকরণের নির্ভুলতার প্রমাণ পেলেন।
অবশ্য সমগ্র বিশ্ব এ ব্যাপারে শোনেনি কিংবা পাত্তাও দেয়নি। কিন্তু শেষের দিনের হিসাব আরম্ভ হয়ে গেল।
৩. কাউন্সিল
তারনার আঞ্চলিক যোগাযোগ কখনোই শতকরা পচানব্বই ভাগের বেশী কিংবা পচাশি ভাগের কমে কর্মক্ষম থাকে না। থ্যালসার অন্যান্য যন্ত্রের মতোই এটা বহু আগেকার মেধাবীদের তৈরী। তাই হঠাৎ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা একেবারেই অসম্ভব। এমনকি যদি অনেকগুলো অংশও খারাপ হয়ে যায়, তবুও এটা কাজ করে, যতক্ষন। না কেউ একজন রেগেমেগে এটাকে ঠিক করে।