-এটা এমন কোন কঠিন কাজ নয়। রাতের বেলা ছোট একটা নৌকা, কয়েকজন ডুবুরী। আর পানিতে মাত্র বিশ মিটার গভীর।
ঠিক আছে আমি তদন্তের ব্যবস্থা করছি। তবে এর মধ্যে তোমাকে দুটো কাজ করতে হবে।
-কি? ব্র্যান্ট তার গলার সন্দেহ লুকাবার বৃথাই চেষ্টা করল।
-জিনিসটা মেরামত কর। স্টোর থেকে যা নেবার নাও। আর একশ ভাগ নিশ্চিত না হয়ে কাউকে দায়ী করো না। কারণ তোমার ভুল হলে তোমাকেই বোকা বনতে হবে। এবং তোমাকে মাপ চাইতেও হতে পারে। আর তুমি ঠিক হলেও তোমার কথা তাদের সতর্ক করে দেবে। বুঝেছো?
ব্র্যান্টের চোয়াল কিছুটা ঝুলে পড়ল। সে কখনো মেয়রকে এতো স্থিরচিত্ত দেখেনি। সে কোনভাবে বেরিয়ে এল।
সে হয়তো আরও কিছুটা ধাক্কা খেত কিংবা হয়তো তেমন খেত না, যদি জানত যে মেয়র আর তার প্রতি তেমন আকৃষ্ট নয়।
বিলক্ষণ, অ্যাসিটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার লোরেন লোরেনসন একজনের বেশী মহিলার উপরই সেদিন প্রভাব ফেলেছিল।
১৫. টেরা নোভা
পৃথিবীর কথাকেই স্মরণ করিয়ে দেয় এমন কোন নাম অবশ্যই বসতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু কেউ স্বীকার না করলেও বেস ক্যাম্প কথার চাইতে সেটা অনেকটাই সৌকর্যময়, তাই সেটাই দ্রুত গৃহীত হয়ে গেল। আগে থেকেই বানানো জটিল ঘরগুলো অসম্ভব গতিতে বসানো হয়ে গেল সত্যিকার অর্থে এক রাতেই। পৃথিবীবাসীদের তার চাইতে বলা ভালো পৃথিবীর রোবটদের এটাই তারনার প্রতি প্রথম কাজের উদাহরণ। এবং পুরো বসতিই দারুণ ভাবে প্রভাবিত হল। এমনকি ব্র্যান্ট যে কিনা ঝামেলা আর একঘেয়ে কাজ ছাড়া রোবটদের কাজের চেয়ে অকাজেরই বেশী মনে করে সেও দ্বিতীয় বারের মতো ভাবতে বাধ্য হল। সেখানে একটা বিশাল, সব ধরনের কাজ করতে সক্ষম, চলনক্ষম নির্মাণ যন্ত্র ছিল যার কাজ অনেক সময় দেখাটাই দুঃসাধ্য হয়ে যেত। যেখানেই এটা যেত না কেন, সবসময়ই এর পেছনে ল্যাসানদের ছোট একটা ভীড় লেগেই থাকতো। আর কেউ পথে পড়লে, এটা বাধা দূর না হওয়া পর্যন্ত চুপ করে বসে থাকতো। ব্র্যান্ট ঠিক করল, এরকম একটা সাহায্যকারীই তার দরকার। সম্ভবত আগন্তুকদের কাছে এটা চাওয়া যায়…
ঠিক এক সপ্তাহ পর টেরা নোভা কক্ষপথের ঘূর্ণনায়মান বিশাল মহাকাশযানের আণুবীক্ষণীক কর্মস্থল রূপ পেয়ে গেল। সেখানে সাধারণ কিন্তু একশ জনের উপযুক্ত বাসস্থান হয়ে গেল সব ব্যবস্থা সহ। যেমন লাইব্রেরী, ব্যায়ামগার, সুইমিং পুল আর মঞ্চ। ল্যাসানরা এই সুবিধাগুলোকে সমর্থন করল আর ব্যবহার করতেও দ্বিধা করল না। ফলে টেরা নোভার জনসংখ্যা কখনোই অন্ততঃ অনুমিত একশর দ্বিগুনের কম রইলনা।
অধিকাংশ অতিথি আমন্ত্রিত হোক আর অনাহুতই হোক, আগন্তুকদের সাহায্য করতে আর তাদের অবস্থানকে আনন্দদায়কই রাখতে চাচ্ছিল। ওরকম বন্ধুত্ব খুব প্রত্যাশিত আর কাম্য হলেও প্রায়ই অত্যন্ত বিব্রতকর। ল্যাসানরা অত্যন্ত কৌতূহলী, আর একান্ত ব্যক্তিগত শব্দটার সঙ্গে তারা পরিচিতই নয়।
দয়া করে বিরক্ত করবেন না– এধরনের চিহ্ন একটা ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ হিসেবেই ধরা হয়। যার ফলাফলটা অবশ্যই বেশ আকর্ষণীয় সমস্যা…
-আপনারা সবাই পদস্থ কর্মকর্তা, বুদ্ধিমান ও প্রাপ্তবয়স্ক, শেষ স্টাফ কনফারেন্সে ক্যাপ্টেন বে বলেছিলেন। তাই আপনাদের এটা ভেঙ্গে বলার দরকার নেই। আপনারা চেষ্টা করবেন কোন ধরনের ইয়ে মানে ঝামেলায় না জড়ানোর জন্য। যতক্ষন না আমরা ওসব ব্যাপারে সব জানছি। তারা সহজ ভাবেই সব নিচ্ছে কিন্তু সেটা প্রতারণাও হতে পারে। ড. ক্যালডর আপনি কি বলেন?
-ক্যাপ্টেন, আমি না বলব না। বিশেষতঃ এই অল্প কদিনের পর্যবেক্ষণেই। তবে একটা চমৎকার ঐতিহাসিক সাযুজ্য আছে। যখন পৃথিবীর পুরোনো পাল তোলা জাহাজ বিশাল সমুদ্র যাত্রা শেষ করে নোঙর করত। আমার মনে হয় তোমরা অনেকেই সেই ক্লাসিক ভিডিও গুলো দেখেছ।
-ড. ক্যালডর নিশ্চয়ই আমাকে ক্যাপ্টেন কুকের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে না?
-এটা কোন অপমান নয়। সে একজন মেধাবী নাবিক ছিল। এমুহূর্তে আমাদের দরকার হচ্ছে সাধারণ বুদ্ধি, ভালো ব্যবহার আর আপনি যেটা বললেন ধৈৰ্য্য। লোরেন অবাক হল যখন ড. ক্যালডর তার দিকে তাকিয়ে কথা শেষ করল। নিশ্চয়ই এখনই এটা তেমন বেশী কিছু হয় নি…
দাপ্তরিক কাজেই ব্র্যান্টের সঙ্গে অন্তত ডজন খানেক বারের বেশী তার দেখা হয়েছে। ইচ্ছা থাকলেও মিরিসাকে পাশ কাটাবার উপায় নেই। তারা একত্রে এখনও কোন সময় কাটায়নি। এমনকি এখন পর্যন্ত কয়েকটা ভদ্রতা সূচক কথা ছাড়া তেমন কথাও হয়নি। তবে খুব বেশী কিছু বলার দরকারও বোধহয় নেই।
১৬. অনুষ্ঠান
এই হচ্ছে একটা শিশু, মিরিসা বলল। দেখতে যেমন লাগুক না কেন একদিন এই বড় হয়ে বড় মানুষে রূপ নেবে।
ভেজা চোখেই সে হাসছিল। লোরেনের আকর্ষণ লক্ষ্য করার আগে কখনোই তার এমন হয়নি। সম্ভবতঃ তারনার এই ছোট বসতিতে যে পরিমাণ বাচ্চা আছে পৃথিবীর শেষ দিনগুলোতে সমগ্র পৃথিবীতেও সেই প্রায় শূন্য জন্মহারে এতো শিশু ছিল না।
-এটা কি তোমার? সে দ্রুত জিজ্ঞেস করল।
-এ্যাই, প্রথম কথা হচ্ছে একে এটা বলা চলবে না। এ হচ্ছে ব্র্যান্টের ভাইপো লিস্টার। ওর বাবা-মা উত্তর দ্বীপে গেলে আমরা ওর দেখাশোনা করি।
-কি সুন্দর! আমি ওকে নিতে পারি?