প্রথম যুগের প্রায় কোন রেকর্ডই নেই। সম্ভবতঃ ইচ্ছাকৃত। পরিকল্পনাকারীদের সব যোগ্যতা আর সাবধানতা সত্ত্বেও নিশ্চয়ই ভুল-ত্রুটি হয়েছিল। আর সেই সব ভুল নির্মম ভাবে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। কোন রক্তমাংসের বাবা-মা না থাকাটাও একটা বিশাল মানসিক আঘাত।
তবে সেই সব ট্র্যাজেডী আর দুঃখ আজ শতাব্দীর পেছনে। সব অভিযাত্রীর কবর যেভাবে নতুন সমাজ নির্মাতারা ভুলে যায়।
এখানে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দিলে ভালো হতো। থ্যালসায় নৃতত্ত্ববিদ, মনোবিজ্ঞানী আর সমাজতত্ত্ববিদদের একটা বিশাল বাহিনীর প্রয়োজনীয় রসদ আছে। আর আমার সবচে ইচ্ছা জাগে আমার কিছু গতায়ু সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে যে, আমাদের দীর্ঘ ঝগড়ার অবসান হয়েছে।
ঐশ্বরিক ভীতির কোন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই একটা যুক্তিবাদী মানব সংস্কৃতি তৈরী করা যায়। কোন সেন্সরশীপকে সমর্থন না করলেও যারা থ্যালসার আর্কাইভ তৈরী করেছিল তারা অবশ্য একটা অসাধ্য সাধন করেছে। তারা দশ হাজার বছরের ইতিহাস আর সাহিত্যকে সংশোধন করেছে। এবং তাদের চেষ্টা ফলবতী হয়েছে। আমরা যত অসুন্দরই হোক না কেন, একটা জিনিস সরাবার আগে চিন্তা করি। থ্যালসানরা মৃত ধর্মগুলোর ক্ষয়িষ্ণু উপজাত দিয়ে দূষিত হয়নি। গত সাতশ বছরে কোন নবী, নতুন কোন বিশ্বাস নিয়ে আসেনি। “ঈশ্বর” শব্দটি তাদের ভাষা থেকে মুছেই গেছে। এবং ওই শব্দ কখন আমরা ব্যবহার করতাম সেটা ভেবে তারা প্রায়ই অবাক হয়।
আমার বৈজ্ঞানিক বন্ধুরা অবশ্য একটা উদাহরণ খুব কম বলে সবসময় উল্লেখ করত। তাই এই সমাজে ধর্মের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি খুব কমই প্রমাণ করে। আমরা
জানি থ্যালসানরা জেনেটিক বাছাই এর ব্যাপারে খুব সতর্ক, যাতে সামাজিক বিশৃংখলা না হয়। হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি জানি মানুষের ব্যবহারের মাত্র পনেরো ভাগ জিন নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এই অংশটাও গুরুত্বপূর্ণ। ল্যাসানরা অসহিষ্ণুতা, ঈর্ষাকাতরতা, ক্রোধ এসমস্ত অপ্রিয় জিনিস থেকে মুক্ত। এটা কি শুধুই সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের ফসল?
ছাব্বিশ শতাব্দীর ধার্মিকদের প্রেরিত বীজ মহাকাশযানের ফলাফল জানতে পারলে কি খুশিই আমি হতাম। কনভেন্টের বাতি, নবীর তলোয়ার আরও কত জিনিস দেয়া সেটায়। যদি তারা সফল হয়, তাদের সাফল্য, ব্যর্থতায় ধর্মের ভূমিকা কি হবে? হয়তো যেদিন আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আমরা প্রথম দিকের অভিযানগুলো সম্বন্ধে জানতে পারব। তবে নাস্তিকতার কারণে এদের ভাব প্রকাশ কমে গেছে। যখন কোন ল্যাসানের পায়ে কিছু পড়ে, সে তখন কথা খুঁজে পায়না। শরীরের ভাবই যা প্রকাশ করে। একমাত্র “ক্র্যাকান” শব্দটি দিয়েই তারা সব কিছু বোঝায়। চারশ বছর আগে ক্র্যাকান পর্বতের অগ্ন্যুৎপাত তাদের মনে ছাপ রেখে গেছে। আমি মনে হয় যাবার আগে একবার ওটা দেখতে যাব।
আরও বহুমাস আছে সামনে। আমি ভয় পাচ্ছি। আমার বিপদ নয়, তবে মহাকাশযানের যদি কিছু হয়। এর মানে হল পৃথিবীর সঙ্গে আর তোমার সঙ্গেও সম্পর্কের একটা সুতো ছিন্ন হয়ে যাওয়া।
১৩. টাস্ক ফোর্স
-প্রেসিডেন্ট এটা পছন্দ করবেন না, মেয়র ওয়াডের্ন বললেন, আপনাদের উত্তর দ্বীপে নেবার জন্যই তিনি মনস্থির করেছেন।
-আমি জানি, ডেপুটি ক্যাপ্টেন ম্যালিনা উত্তর দিলেন, তাকে হতাশ করতে হলো বলে, আমরাও দুঃখিত। তিনি অত্যন্ত বন্ধুভাবাপন্ন। কিন্তু উত্তর দ্বীপ খুব বেশী পার্বত্য এলাকা আর ভালো উপকূলীয় এলাকাগুলোও গড়ে উঠেছে। আর এখানকারটা একটা সম্পূর্ণ মরুময় উপকূল-সুন্দর ঢালু সৈকত। তারনা থেকে মাত্র নয় কিলোমিটার দূরে।
-ভালোই লাগছে শুনতে। কিন্তু, এটা মরুময় কি হিসাবে?
-ওটা একটা ম্যানগ্রোভ প্রজেক্ট। আমরা এখনও জানি না কেন,তবে সব গাছই মরে গেছে। কেউ ওই বিশৃংখলাকে গোছানোর চেষ্টাও করেনি। এটা দেখতে ভয়ংকর, আর জঘন্য গন্ধ।
-তাহলে এটা এখনই একটা পরিবেশগত বিপর্যয়ে আছে। তাহলে ক্যাপ্টেন আপনারা স্বাগতম। আপনারা কেবল জিনিসটার ভালোই করবেন।
-আপনাকে আমি নিশ্চিত ভাবে বলছি যে, প্ল্যান্টটা খুব চমৎকার আর তা আপনাদের পরিবেশের সামান্য বিপর্যয়ও আনবে না। আর আপনারা না চাইলে, যাবার সময় আমরা ওটা ধ্বংস করে যাব।
-ধন্যবাদ। তবে কয়েকশ টন বরফ দিয়ে প্রতিদিন আমরা কি করব তা নিয়ে আমার প্রচুর সন্দেহ আছে। আর এর মধ্যে তারনা কি সুবিধা দিতে পারে বাসস্থান, খাদ্য, পরিবহন? আমরা কিছু করতে পারলে খুশী হব। আমার মনে হয় অনেকেই কাজ করতে আসবে।
–সম্ভবতঃ একশ। আপনার আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ। তবে মনে হয় আমরা একটু অদ্ভুত অতিথি। আমাদের মহাকাশযানের সঙ্গে প্রতি ঘন্টায় যোগাযোগ রাখতে হবে। তাই আমাদের একত্রে থাকতে হবে সবসময়। আমরা খুব শিগগিরিই ছোট একটা বসতি গড়ে তুলব; আর যন্ত্রপাতি নিয়ে আসব। এটা অকৃতজ্ঞের মতো মনে হতে পারে কিন্তু অন্য কিছু হবে অবাস্তব।
-হয়তো আপনারা ঠিক। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়র বললেন। সে অবাক হয়ে ভাবল কিভাবে প্রটোকল আর আতিথেয়তার ব্যাপারটা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার লোরেনের বদলে ডেপুটি ক্যাপ্টেন ম্যালিনার কাছে যায়। সমস্যা অমোচনীয় মনে হলেও এখন আর সমস্যাটাই উঠবে না।
১৪. মিরিসা
বৃদ্ধা হবার পরও মিরিসা লিওনার্দ লোরেনের সঙ্গে তার প্রথম চোখাচোখিটা স্পষ্ট মনে করতে পারবে। সেখানে কেউ উপস্থিত ছিল না, এমনকি ব্র্যান্টও।