-আমরা কিভাবে আপনাদের সাহায্য করব? প্রযুক্তির দিক থেকে তো আপনারা শত শত বছর এগিয়ে।
-আমার সন্দেহ আছে। অবশ্য কোয়ান্টাম ড্রাইভ ছাড়া। আমাদের ডেপুটি ক্যাপ্টেন ম্যালিনা আমাদের বিবেচনার জন্য পরিকল্পনাটা পেশ করবে।
-নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই।
-প্রথমে আমাদের বরফ কলের জায়গাটা ঠিক করতে হবে। অনেক জায়গাতেই সেটা হাতে পারে-উপকূলের যে কোন আলাদা জায়গায় এটা হতে পারে। এটা পরিবেশের ওপর বিন্দুমাত্র প্রতিক্রিয়া ফেলবে না। আর যদি আপনারা চান, তাহলে আমরা এটাকে পূর্ব দ্বীপেও বানাতে পারি। আশা করি ক্র্যাকান কাজ শেষ হবার আগেই জেগে উঠবে না।
কলের পরিনা পুরোটাই করা আছে। কেবল বসানোর জায়গা হিসেবে একটু এদিক ওদিক করতে হবে। অধিকাংশ মূল যন্ত্রগুলো সঙ্গে সঙ্গেই কাজ আরম্ভ করতে পারবে। এটা খুব সহজ সরল প্রক্রিয়া। দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রযুক্তি –পাম্প, শীতল অংশ, উষ্ণতা বিনিময়, ক্রেন সবই।
সব কিছু ঠিক থাকলে নব্বই দিনের মধ্যেই আমরা প্রথম বরফ পাব। আমরা প্রমাণ সাইজ ব্লক তৈরী করব। প্রতিটি দশ টনের সমতল, ছ’কোনা পাত। উৎপাদন আরম্ভ হলে আমরা প্রতিদিন এই তুষারচাকগুলো উপরে নিয়ে যাব। সেখানে কক্ষপথে সেগুলো জুড়ে বর্মটা তৈরী হবে। প্রথম ওঠানো থেকে শেষ তৈরী পর্যন্ত দু’শ পঞ্চাশ দিনের মতো লাগবে। এবং এর পর আমরা যাত্রার জন্য তৈরী হয়ে যাব। ডেপুটি ক্যাপ্টেন যখন শেষ করলেন প্রেসিডেন্ট ফারাদিন এক মুহূর্ত থমকে রইলেন, তারপর প্রায় নিমগ্ন স্বরে বললেন।
-বরফ আমি কখনো দেখিনি, ওই পানীয়ের তলানীতে ছাড়া।
হ্যান্ডসেক করে অতিথিদের বিদায় দেবার সময় প্রেসিডেন্ট ফারাদীন অবাক হয়ে উপলব্ধি করলেন যে অ্যারোমেটিক গন্ধটা তেমন পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি কি ওটায় অভ্যস্ত হয়ে গেছেন না গন্ধ শোঁকার শক্তি তার হারিয়ে গেছে? দুটোই অবশ্য ঠিক ছিল। তবে মাঝরাতের দিকে তিনি দ্বিতীয়টাকেই স্বীকার করে নিলেন। তিনি উঠে বুঝলেন তার চোখ জ্বলছে আর নাক এতো বন্ধ যে নিঃশ্বাস নেয়াই প্রায় দুঃসাধ্য।
-কি হয়েছে! মিসেস প্রেসিডেন্ট শঙ্কিতভাবে জিজ্ঞেস করলেন। প্রধান নির্বাহী বললেন,
-ডাক্তার ডাক। হ্যাঁচ্ছো! আমাদের আর মহাকাশযানের কাউকে। তারা কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। তবে আমি তাদের –হ্যাচ্ছো-কিছু বলতে চাই। তোমারও হয়নি বলে আশা করি।
প্রেসিডেন্ট পত্নী তাকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন যে কিছু হয়নি-অবশ্য নাক মুছতে মুছতে। তারা অসন্তুষ্ট ভাবে বিছানায় দু’জন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
প্রেসিডেন্ট বললেন,
আশা করি সাত দিনের মধ্যেই এটা সারবে। তবে শেষ শতাব্দীতে চিকিৎসা নিশ্চয়ই কিছু এগিয়েছে।
তার আশা কিছুটা হলেও পূর্ণ হলো। বীরত্বপূর্ণ চেষ্টায়, কোন জীবনহানি না ঘটিয়েই সংক্রমনটি শেষ হয়ে গেল, দুটি বিরক্তিকর দিন পর। হাজার বছর ধরে বিচ্ছিন্ন দুই ভাইয়ের মধ্যেকার সাক্ষাতের জন্য অবশ্য এটা কোন শুভসূচনা নয়।
১২. উত্তরাধিকার
ইভলিন; এখানে আমরা প্রায় দু’সপ্তাহ। থ্যালসার হিসাবে মাত্র এগারো দিন। অবশ্য আজ বা কাল আমাদের পুরোনো বর্ষপঞ্জী ফেলে দিতেই হবে। কিন্তু আমার হৃদয় ঐ প্রাচীন পৃথিবীর ছন্দেই চলবে।
বেশ ব্যস্ত এবং আনন্দদায়ক সময় গেণ। স্বাস্থ্যগত অবশ্য একটা সমস্যা। হয়েছিল। আলাদা করে রাখা সত্ত্বেও ল্যাসানদের প্রায় বিশভাগই কোন একটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এবং আমাদের কারও কোন লক্ষণ না দেখায় আমরা আরও দোষী হয়ে গেছি। ভাগ্যিস কেউ মরে যায়নি। তার জন্য স্থানীয় ডাক্তারদের কোন কৃতিত্ব দেয়া যায় না। চিকিৎসা বিজ্ঞান এখানে অনেক পিছিয়ে। তারা আগেকার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার ওপর এতো নির্ভরশীল যে নতুন কিছুই তারা সামলাতে পারে না।
অবশ্য আমাদের ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতেই দেখা হয়েছে। ল্যাসানরা খুব ভালো মানুষ, আমুদে জাতি। তারা ভাগ্যবান-বেশীই ভাগ্যবান। বিশেষত তাদের গ্রহের ব্যাপারে। আর এটা সাগান-২ কে আরও বেশী মলিন করে দিয়েছে।
জমির স্বল্পতাই তাদের মূল সমস্যা। অবশ্য তারা বুদ্ধিমানের মতো সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সংখ্যার নীচেই জনসংখ্যা স্থির রেখেছে। তারা এটাকে কখনো বাড়াতে চাইলে পৃথিবীর শহরগুলোর অতীত ইতিহাসের সতর্ক সংকেত পেয়ে যাবে।
তারা এতোই ভালো আর চমৎকার যে, তাদের সংস্কৃতি নিজস্ব প্রক্রিয়ায় উন্নত হবার চাইতে আমাদের সাহায্য করতে ইচ্ছা করে। সত্যিকার অর্থে তারা তো আমাদেরই সন্তান। তবে সব বাবা মাকেই এটা মানতে হয় যে, আজ অথবা কাল তাদের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতেই হবে।
অবশ্য আমাদের উপস্থিতিটাই কিছু প্রভাব ফেলেছে। আমরা অপ্রত্যাশিত, তবে অনাহুত নই এই গ্রহে। আর তারা কখনোই ভোলে না যে, ম্যাগেলান ঠিক তাদের মাথার ওপর ঘুরছে। পৃথিবীর শেষ চিহ্ন।
আমি প্রথম অবতরণের জায়গায় আবার গিয়েছিলাম। ওটা ওদের জন্মস্থান। আর একটা ট্যুরেও গেলাম, যেটায় প্রতিটি ল্যাসান অন্তত জীবনে একবার হলেও যায়। এটা জাদুঘর আর স্মৃতির মিশ্রণ। সম্ভবত গ্রহের একমাত্র জায়গা যেটা সমন্ধে “পবিত্র” শব্দটা ব্যবহার করা যায়।
মহাকাশযানটা এখন শূন্যগর্ভ হলেও, মনে হয় যেন এইমাত্র নেমেছে। নিশ্চুপ যন্ত্রেরা রাসায়নিক কারখানা, তাদের রোবট সাথী সহ আর প্রথম প্রজন্মের নার্সারী স্কুল।