-ধন্যবাদ মি. প্রেসিডেন্ট। একটু থেমে ক্যাপ্টেন বললেন, থ্যালসা যে বেঁচেই নেই বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে এটা অবশ্যই চমৎকার বিস্ময়। এটা আমাদের এখানে অবস্থান আরও মধুর করেছে। এবং আমরা আশা করি যাবার সময়ও আমাদের দু’পক্ষের ভেতর সদিচ্ছা ছাড়া আর কিছু থাকবে না।
-আমাকে ক্ষমা করবেন, একটা প্রশ্ন তোলা খুব রূঢ় মনে হতে পারে। তবু বলছি, কতদিন আপনারা থাকবেন এখানে? আমরা দ্রুতই জানতে চাই। কারণ। তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারব।
-আমি বুঝতে পেরেছি মি. প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এখনই আমরা নিশ্চিত হতে পারব না। কারণ আপনি কতজন সাহায্যকারী দিতে পারবেন তার ওপরও এটা নির্ভর করবে। আমার মনে হয় কমপক্ষে এক বছর, দুই বছরও হতে পারে।
এডগার ফারাদীন, অন্যান্য ল্যাসানদের মতোই তার আবেগ লুকাতে দক্ষ নয়। ক্যাপ্টেন বে প্রধাণ নির্বাহীর মুখের ওপর দিয়ে সমর্থন সূচক বা ধূর্ত বললেও হয়, ভাবটা যাওয়াতে চমকে উঠলেন।
-মহামাণ্য, মনে হয় আমরা কোন সমস্যা করিনি।
হাত ঘষতে ঘষতে সে বলল,
-আমাদের দেশে, আপনারা হয়তো জানেন না, আমাদের ২০০ তম অলিম্পিক আগামী দুবছর পর। যুবক অবস্থায় ১০০০ মিটারে আমি ব্রোঞ্জ পেয়েছিলাম। বাইরে থেকে আমরা কিছু প্রতিযোগী আনতে পারি।
কেবিনেট সেক্রেটারী বললেন,
–মি. প্রেসিডেন্ট। আমার মনে হয়, এরকম কোন নিয়ম–
-সেটা আমি বানাব। প্রেসিডেন্ট দৃঢ় স্বরে বললেন, ক্যাপ্টেন আমাদের আমন্ত্রণ অথবা আপনি মনে করলে প্রতিযোগিতা মনে রাখবেন।
ম্যাগেলানের কমান্ডার সব সময় দ্রুত আলোচনা সারতেই অভ্যস্ত। কিন্তু এবার হঠাৎ করেই তিনি থমকে গেলেন। আর এই ফাঁকে প্রধান চিকিৎসক ঢুকে পড়লেন।
সার্জন কমান্ডার মেরী নিউটন বললেন,
-সেটা অবশ্যই আপনার অসীম দয়া, মি. প্রেসিডেন্ট। তবে একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি বলছি যে আমাদের সবার বয়স তিরিশের ওপর। আমরা সবাই ট্রেনিং এর বাইরে। এছাড়া থ্যালসার মধ্যাকর্ষণ ছয় পার্সেন্ট বেশী পৃথিবীর চাইতে। তাই এগুলোর সবগুলোই আমাদের বিপক্ষে। তাই যদি অলিম্পিকে দাবা অথবা কার্ড ঢোকানো… প্রেসিডেন্টকে হতাশ দেখাল। অবশ্য দ্রুত তিনি সেটা কাটিয়ে উঠলেন।
-ঠিক আছে। তবে ক্যাপ্টেন বে, আপনাকে পুরস্কার বিতরণীর সময় থাকতেই হবে।
-আনন্দের সঙ্গে। সামান্য হতবুদ্ধি কমান্ডার বললেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে, মিটিংটা তার হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে এবং এখনই আলোচ্যসূচীতে ফিরতে হবে।
-মি. প্রেসিডেন্ট আমাদের এখানকার করণীয় সম্বন্ধে আমি কি ব্যাখ্যা করতে পারি?
-নিশ্চয়ই, কিছুটা নিরাসক্ত উত্তর এল। তিনি সম্ভবতঃ এখনও অন্য জগতে অবস্থান করছেন। হয়তো তিনি এখনও তার যৌবনের জয়কে ভাবছেন। তারপর অনেক চেষ্টায় তিনি বর্তমানে মনোযোগ দিলেন। আমরা আপনাদের আসায় সত্যি খুশী, আর স্তম্ভিত। এখানে খুব সামান্যই আছে যা আপনাদের দেয়া যায়। আমাকে বলা হয়েছে বরফের কথা, নিশ্চয়ই সেটা রসিকতা।
-না, মি. প্রেসিডেন্ট। আমরা অবশ্যই সিরিয়াস। ওটাই আমরা চাই। আমরা কিছু খাবারের নমুনাও নিয়েছি। বিশেষত দুপুরের খাবারের চীজ আর ওয়াইনের ব্যাপারে বলা যায় যে, আমরা হয়তো এর চাহিদা বাড়াব। তবে বরফ অবশ্যই। আমাকে ব্যাখ্যা করতে দিন। প্রথম দৃশ্য প্লিজ।
মহাকাশযান ম্যাগেলান–দুই মিটার লম্বা, প্রেসিডেন্টের সামনে ভাসছে। দেখার মতো কেউ না থাকলে তিনি নিশ্চয়ই ছবিটা ধরে দেখার চেষ্টা করতেন।
-আপনারা দেখছেন যে আমাদের মহাকাশযানটি উপবৃত্তাকার। চার কিলোমিটার লম্বা, এক কিলোমিটার চওড়া। যেহেতু আমরা মহাশূণ্য দিয়েই জ্বালানী সংগ্রহ করি, সেহেতু আমাদের গতির সীমা তত্ত্বীয় ভাবে আলোর সমান পর্যন্ত। কিন্তু বাস্তবে এর এক পঞ্চমাংশেই, আন্তঃনাক্ষত্রিক ধুলা আর গ্যাসের জন্য সমস্যার সম্মুখীন হই। এবং সেকেন্ডে ষাট হাজার মাইল বা তার চাইতে বেশী গতিসম্পন্ন কোন বস্তুর জন্য কোন বস্তুকে আঘাত করা একটা ভয়ংকর ব্যাপার। এমন কি এই গতিতে একটা হাইড্রোজেন পরমাণুও যথেষ্ট ক্ষতি করতে পারে।
তাই আদিম মহাকাশযানগুলোর মতো ম্যাগেলানও একটা রক্ষাবর্ম তার সামনে রাখে। যে কোন পদার্থই যথেষ্ঠ পরিমানে হলে এই কাজ করতে পারে। এবং প্রায় শূণ্য ডিগ্রী তাপমাত্রায় বরফের চাইতে ভালো আর কিছুই হতে পারে না। সস্তা, সহজ আর বিস্ময়কর রকমের শক্ত। সামনের গোলাকার জিনিসটা আমাদের ছোট্ট হিমবাহ যখন আমরা সৌরজগত ছাড়ি; দশ বছর আগে। আর এটা হচ্ছে এখনকার রূপ। ছবিটা ঝাপসা হল, তারপর আবার ফিরে এল। জাহাজটা অপরিবর্তিত হলেও সামনের ভাসমান জিনিসটা পাতলা হয়ে গেছে।
এটা হচ্ছে গ্যালাক্সীর এই ময়লা অংশ দিয়ে পঞ্চাশ আলোকবর্ষ চলার ফল। আমাদের হিসেবের চাইতে ক্ষয়ের পরিমাণ শতকরা পাঁচ ভাগের মতো বেশী। তবে সেটা কোন বিপদ নয়। অবশ্য সত্যিকারের বড় কিছুর সঙ্গে আঘাতের সম্ভাবনা থেকেই যায়। আর সেক্ষেত্রে কোন আবরণই সেটা থেকে আমাদের বাঁচাতে পারবে না। সেটা বরফেরই হোক আর স্টীলেরই হোক।
আমরা ভালোভাবেই আরও দশ আলোকবর্ষ পেরুতে পারতাম। কিন্তু সেটা যথেষ্ঠ নয়। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে সাগান-২ গ্রহ, পচাত্তর আলোকবর্ষ দূরে।
সুতরাং মি. প্রেসিডেন্ট নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পারছেন, কেন আমরা থ্যালসায় থেমেছি। তাই আমরা আপনাদের কাছে ধার হিসেবে, আসলে সাহায্য হিসেবেই বলা ভালো, যেহেতু আমরা ফেরত দিতে পারব না, কয়েক হাজার টনের মতো পানি চাচ্ছি। আমাদের উপরের কক্ষপথেই আরেকটা বরফের বর্ম তৈরী করতে হবে, যেটা আমাদের নক্ষত্রের পথটা পরিষ্কার করে দেবে।