-মোজসকে দিলাম। সেই কথাবার্তা চালাচ্ছে বরাবরের মতো।
বাঁকা জানালা দিয়ে তারা দেখতে পাচ্ছিল যে ক্যালডর আর মেয়র একান্ত আলাপে মগ্ন, আর কাউন্সিলর সিমন্স মাঝে মাঝে তাতে যোগ দিচ্ছে। লোরেন একটা সুইচ চালাতেই তাদের কণ্ঠস্বর বেড়ে গিয়ে কেবিন ভরে ফেলল।
-আমাদের আতিথেয়তা। কিন্তু আপনি বুঝবেন যে জমির দিক থেকে চিন্তা করলে এটা একটা অসম্ভব ছোট বিশ্ব। আপনার জাহাজে কতজন আছে যেন বলেছিলেন।
-ম্যাডাম মেয়র, আমি কোন সংখ্যা বলেছি বলে তো মনে পড়ে না। থ্যালসা খুব সুন্দর হলেও আমাদের খুব অল্প লোকই এখানে নামবে। আমি তোমাদের ব্যাপারটা বুঝি। কিন্তু সামান্যতম সংকোচের কোন কারণ নেই। সবকিছু ভালোভাবে চললে এক বা দুই বছরের মধ্যে আমরা আবার রওয়ানা দেব।
আমরা বেড়াতে আসিনি। আমরা কাউকে এখানে আশাই করিনি। আর আলোর অর্ধেক গতিতে চলা কোন মহাকাশযান খুব ভালো কারণ না হলে এমনি এমনি থামবে না। তোমাদের এমন কিছু আছে যা আমাদের দরকার এবং তোমাদের দেয়ার মতো কিছু আমাদেরও আছে।
-যেমন, যদি কিছু মনে না করেন?
-আমাদের কাছ থেকে তোমরা যদি চাও শিল্প আর বিজ্ঞানের শেষ শতাব্দীর মানিষ্কার নিতে পার। অবশ্যই আমি তোমাদের সাবধান করব, তোমাদের সংস্কৃতিতে আমাদের উপহার কি প্রভাব ফেলবে সে ব্যাপারে সতর্ক থেক। আমরা যা দেব তার সবই নেয়াটা ঠিক হবে না।
-আমি আপনাদের সততা ও উপলব্ধির প্রশংসা করছি। আপনাদের কাছে নিশ্চয়ই অমূল্য সম্পদ আছে। কিন্তু বিনিময়ে আমরা কি দেব?
ক্যালডর অট্টহাসি দিলেন।
-সৌভাগ্যবশত, সেটা কোন সমস্যা না। এমনকি আমরা না বলে নিলেও তোমাদের চোখে পড়ত না।
থ্যালসা থেকে আমরা যা চাই তা হচ্ছে কয়েক হাজার টন পানি। আর ঠিক ভাবে বলতে–বরফ।
১১. দূত
থ্যালসার প্রেসিডেন্ট মাত্র দু’মাসের জন্য তার অফিসে এসেছেন এবং এখনও তার দূর্ভাগ্যের জন্য দুঃখ করেন। কিন্তু তার কিছু করার নেই, কেবলমাত্র তিন বছরের একটা খারাপ চাকরীকেই ভালো মতো করে যাওয়া ছাড়া। আবার গণনা করতে বলে কোনো লাভ নেই। বাছাই প্রোগ্রাম যেটা প্রজন্ম আর হাজার অক্ষরের সংখ্যার ওপর নির্ভরশীল তাকে মানুষের নিখাদ ভাগ্য বলেই মানতে হয়।
প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ (বিশটা রুম, একটা একশ জনকে বসানোর মতো বড়) থেকে বেরিয়ে যাবার ঠিক পাঁচটা পথ আছে। তোমাকে হয় তিরিশের নীচে বা সত্তরের ওপরে হতে হবে, তোমাকে নিরাময় অযোগ্য অসুস্থ হতে হবে, তুমি মানসিক রোগগ্রস্ত হতে পার কিংবা গুরুতর কোন অপরাধ করতে পার। প্রেসিডেন্ট এডগার ফারাদীনের সামনে শেষ পথটাই ভোলা এবং সে সেটা নিয়ে গভীর ভাবেই ভাবছে। তার ব্যক্তিগত ক্ষতি করলেও সে অবশ্যই স্বীকার করে যে, মানবজাতির জন্য এই সরকারটিই সম্ভবতঃ সর্বশ্রেষ্ঠ।
মাতৃগ্রহ প্রায় দশ হাজার বছর সময় লাগিয়েছে এই ব্যবস্থাটা গড়তে এবং তাও বহুবার চেষ্টা ও বীভৎস ভুলের মাধ্যমে।
যখন সমগ্র জনসংখ্যা এর সর্বোচ্চ (অনেক সময় আরও বেশী) জ্ঞান দ্বারা সিঞ্চিত হয়, প্রকৃত গণতন্ত্র তখনই সম্ভব। আর চূড়ান্ত রূপটি হল সেন্ট্রাল কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রত্যেকের মধ্যে ব্যক্তিগত যোগাযোগ। ঐতিহাসিকদের মতে ২০১১ সালে প্রথম সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় নিউজিল্যান্ড নামের এক দেশে।
এরপর থেকে একজন রাষ্ট্রপ্রধাণ পছন্দ করা অপ্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ায়। যখন সবাই একমত হল যে, ঐ পদটির প্রতি সক্রিয় চেষ্টাই হবে অযোগ্যতা, তখন থেকে সব পদ্ধতিই সমান। তবে লটারী হল সবচে সহজ পদ্ধতি।
কেবিনেট সেক্রেটারী বললেন,
-মি. প্রেসিডেন্ট। অতিথিরা লাইব্রেরীতে অপেক্ষা করছে।
-ধন্যবাদ লিজা। বাবল স্ট ছাড়াই।
-হ্যাঁ সব ডাক্তারী বিদ্যাই সে কথা বলছে, এটা সম্পূর্ণ নিরাপদ-তবে স্যার আমি আপনাকে সাবধান করছি। তাদের গায়ে সামান্য গন্ধ আছে।
-ক্র্যাকান! কি ভাবে?
সেক্রেটারী হাসল,
-দুর্গন্ধ নয়। অন্তত আমার মনে হয়নি। নিশ্চয়ই এটা তাদের খাবারের সঙ্গে জড়িত। হাজার বছরে আমাদের বায়োকেমিস্ট্রি নিশ্চয়ই কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। “অ্যারোমেটিক” বললে এটা ঠিকভাবে হয়তো বোঝানো যায়।
প্রেসিডেন্ট অবশ্য ঠিকভাবে ব্যাপারটা বুঝলেন না বরং একটা বিব্রতকর প্রশ্ন। জিজ্ঞেস করবেন কিনা চিন্তা করলেন।
-আমাদের গন্ধ তাদের কাছে কি রকম লাগবে বলে তুমি মনে কর?
তার পাঁচজন অতিথি অবশ্য একে একে পরিচিত হবার সময় কেউই নাসিকা কুঞ্চিত করল না। তবে তার সেক্রেটারী এলিজাবেথ ইশিহিয়া বেশ বুদ্ধিমান। কারণ তিনি এখন “অ্যারোমেটিক” কথাটার আসল অর্থ ধরতে পেরেছেন।
অশ্ব খুরাকৃতি টেবিলে বসে থ্যালসার প্রেসিডেন্ট নিজেকে সুযোগ আর ভাগ্যের মধ্যে হাবুডুবু খেতে দেখলেন, যা নিয়ে তিনি অতীতে খুব একটা ভাবেননি। সুযোগ তাকে আজ এখানে এনেছে। এখন তার সঙ্গী ভাগ্য আবার আঘাত হেনেছে। কি অদ্ভুত, খেলার সামগ্রী তৈরীকারক, উচ্চাভিলাষহীন একজন লোক, এই ঐতিহাসিক মিটিং-এ বসেছে। তবে কাউকে তো এটা করতেই হবে এবং সে এর মধ্যেই এটা উপভোগ করতে আরম্ভ করেছে। অন্ততঃপক্ষে তার স্বাগত বক্তব্য দেয়া কেউ বন্ধ করতে পারবে না।
বক্তব্য বেশ ভালোই হয়েছিল। তবে কিনা এমন ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্যও কিছুটা বড়। অবশ্য শেষ দিকে তিনি বুঝতে পারছিলেন যে অতিথিদের নম্র মনোযোগ আস্তে আস্তে তুচ্ছ জিনিসে চলে যাচ্ছে। তাই তিনি শেষ দিকে কিছু উৎপাদন উপাত্ত আর দক্ষিন দ্বীপের নতুন পাওয়ার গ্রীডের ব্যাপারটা বাদ দিয়ে দিলেন। তিনি বসে পড়ে এটুকু নিশ্চিত হলেন যে একটা উদ্যমী, বর্ধনশীল উঁচু প্রযুক্তিসম্পন্ন সমাজের ছবি আঁকা গেছে। থ্যালসা পিছিয়ে বা নীচুতে নেই। এর আছে প্রাচীন প্রজন্মের রেখে যাওয়া সর্বোচ্চ রীতিনীতি।