-আমি মোজেস ক্যালডর। আর ইনি হচ্ছেন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার লোরেন লোরেনসন, অ্যাসিসট্যান্ট চীফ ইঞ্জিনিয়ার-মহাকাশযান ম্যাগেলান। আমরা এই বাবল স্যুট পরার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। এটা আমাদের পারস্পরিক সংক্রমণ হতে বাঁচার জন্যই করা হয়েছে। আমরা বন্ধুত্ব নিয়ে আসলেও আমাদের ব্যাকটেরিয়া সেরকম নাও ভাবতে পারে।
মেয়র নিজেকেই বললেন, কি চমৎকার কণ্ঠস্বর। পৃথিবী ধ্বংসের কয়েক দশক আগে এটাই ছিল পৃথিবীতে সব চাইতে পরিচিত কণ্ঠস্বর। যা মিলিয়ন মানুষকে কখনো শান্ত, কখনো খেপিয়ে তুলেছে।
মেয়রের চঞ্চল চোখ অবশ্যই মোজেস ক্যালডরের ওপর বেশীক্ষণ থাকল না। নিশ্চয়ই তার বয়স ষাট। আর মেয়রের তুলনায় সেটা একটু বেশীই। অপেক্ষাকৃত তরুণ ব্যক্তিটি বরং অনেক আকর্ষণীয়। তবে ঐ ফ্যাকাসে চামড়া সে কখনো সহ্য করতে পারবে কিনা সন্দেহ। লোরেন লোরেনসন (কি চমৎকার নাম!) দুই মিটারের মতো লম্বা, এবং তার চুল প্রায় রূপার মতো ব্লন্ড। সে অবশ্য অতটা বড় কাঠামোর নয়, যেমন ব্র্যান্ট-তবে অবশ্যই অনেক বেশী সুদর্শন।
মেয়র নারী পুরুষ উভয় ক্ষেত্রে বেশ ভালো বিচারক। সে লোরেনসনকে খুব দ্রুত ছকে ফেলে দিল। এর মধ্যে আছে বুদ্ধিমত্তা, একাগ্রতা এবং নিষ্ঠুরতাও। সে তাকে শত্রু হিসেবে পেতে কখনো আগ্রহী হবে না। তবে বন্ধু হিসেবে পেতে সে আগ্রহীই হবে অথবা আরও
একই সঙ্গে তার এবিষয়েও সন্দেহ নেই যে ক্যালডর একজন চমৎকার ব্যক্তি। তার চেহারা এবং স্বরে খুব সহজেই প্রজ্ঞা, স্থৈর্য এবং এক প্রগাঢ় দুঃখ মিশে আছে। কিছুটা অবাক করা হলেও এই দুঃখের ছায়ার নীচেই তার বাকী জীবনটা কাটাতে হবে।
অভ্যর্থনা কমিটির বাকী সবাই নিজেদের পরিচিত করাল। ব্র্যান্ট বিশাল ভদ্রতা দেখানোর পর সোজা বিমানটার কাছে গিয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত খুঁটিয়ে দেখতে লাগল।
লোরেন তাকে অনুসরণ করল। একজন সতীর্থ ইঞ্জিনিয়ারকে পেয়ে সে তার কাছ থেকে থ্যালসানদের প্রতিক্রিয়াটা দেখতে চাইল। সে ঠিকই অনুমান করেছিল যে, ব্র্যান্টের প্রথম প্রশ্ন কি হতে পারে। অবশ্য ব্র্যান্ট ভারসাম্য রক্ষা করেছিল।
–এটার উড্ডয়ন ব্যবস্থাটা কি? এর জেটের ফুটোগুলো অদ্ভুত রকমের ঘোট। সত্যিই কি এরা এতোটা ছোট?
এটা অত্যন্ত সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ। প্রথমে যতটা প্রাযুক্তিক দিক থেকে আদিম মনে হয়েছিল এরা ততটা নয়। তবে সে যে উঁচু ধারণা করেছে তা একে দেখানোর প্রয়োজন নেই। বরং উল্টো আঘাত করেই তাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বোঝানো যাক।
-এটা একটা কোয়ান্টাম র্যামজেট। বাতাসে চলার জন্য তৈরী। যা তরল বাতাসকেই জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করে। প্ল্যাংকের সূত্র থেকে তুমি নিশ্চয়ই জান টেন টু দি পাওয়ার মাইনাস থার্টি থ্রি সেন্টিমিটার ব্যাপারটা। তাই আশেপাশে বাতাস থাকলে এটা অন্তহীন ভাবে যেতে পারে।
তাকে আবারও ব্র্যান্টকে কৃতিত্ব দিতে হবে। সে চোখ পিটপিট করে কোনভাবে বলল, দারুণ তো! যদি সে সত্যিই তাই মনে করে।
-আমি কি ভেতরে যেতে পারি।
লোরেন ইতস্ততঃ করল। আপত্তি করাটা অভদ্রতা যেহেতু এরা বন্ধুত্ব করতে অত্যন্ত আগ্রহী। তার চেয়ে বড় কথা হলো, এটা প্রমাণ করবে যে, কে এখানে আসলে প্রভুত্বপরায়ন।
-অবশ্যই। তবে কোন কিছু স্পর্শ করার ব্যাপারে সাবধান থেকো। ব্র্যান্ট অবশ্য “প্লিজ” শব্দটা শোনার চাইতে ভেতরটা দেখার জন্যই বেশী উৎসাহী। লোরেন মহাশূন্যবিমানের ছোট্ট বাতাস নিরোধক জায়গায় নিয়ে গেল। সেখানে মাত্র দু’জনের থাকার মতো জায়গা। আর ব্র্যান্টকে বাড়তি বাবল স্যুট পরাতে রীতিমত জটিল জিমন্যাস্টিক করা লাগল।
-আমার মনে হয় না এটা বেশীদিন লাগবে। কিন্তু আণুবীক্ষণীক পরীক্ষা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এটা পরব। জীবানুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত চোখ বন্ধ করে রাখবে। ব্র্যান্ট হালকা গোলাপী রঙ দেখেছিল আর সেখানে গ্যাসের হিসহিস আওয়াজ শোনা গেল। তার পর ভেতরের দরজা খুলে গেল তারা ভেতরের রুমে ঢুকল। পাশাপাশি বসলেও, শক্ত স্বচ্ছ আবরণটা তাদের নাড়াচাড়া অনেকটা সঙ্কুচিত করেছে। এটা তাদের এমনভাবে আলাদা করেছে যেন তারা দুই বিশ্বের, অবশ্য অনেক অর্থেই তারা তাই।
লোরেনকে স্বীকার করতেই হবে যে, ব্র্যান্ট একজন ভালো শিক্ষার্থী। কয়েক ঘন্টা সময় দিলেই সে এই যন্ত্রটা চালাতে পারবে। অবশ্য এর ভেতরে তত্ত্বটা হজম করার শক্তি তার কখনোই হবে না। অবশ্য এ ব্যাপারে প্রচলিত কথাই হলো যে, মাত্র কয়েকজন মানুষই সত্যিকার অর্থে সুপারস্পেসের জিওডাইনামিক্স বুঝত এবং তার সবাই শতাব্দীরও আগে মারা গেছে।
তারা প্রাযুক্তিক আলোচনায় এতো মগ্ন হয়ে গিয়েছিল যে, বাইরের বিশ্ব সম্বন্ধে ভুলেই গিয়েছিল। হঠাৎ একটা চিন্তিত কণ্ঠ কন্ট্রোল প্যানেল থেকে ভেসে এল,
–লোরেন? মহাকাশযান থেকে বলছি। কি হয়েছে? আধ ঘন্টা হল তোমাদের কোন খবর নেই? লোরেন অলসভাবে সুইচের দিকে হাত বাড়াল,
-তোমরা যেখানে দুটো ভিডিও আর পাঁচটা অডিও চ্যানেলে আমাদের দেখছ সেখানে এটা একটু বেশী বলা হল না? সে আশা করল ব্র্যান্ট তার মর্মার্থটা বুঝবে। আমরা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছি এবং আমরা নিশ্চিত না হয়ে কিছু করি না।