ব্যক্তিগত রেকর্ডিং এক। আলফা স্ক্র্যামেবেলর। স্বয়ংক্রিয় মুছে যাওয়া প্রোগ্রাম। ইভলিন, আমরা এখানে। এবং আমি ঠিক প্রমাণিত হইনি। এই মহাকাশযানের সর্বজেষ্ঠ্য ব্যক্তি হলেও আমি এখনও কাজের।
জেগে দেখি, ক্যাপ্টেন বে আমার পাশে। প্রথম অনুভূতিটাই হলো গর্বের। বললাম, ভালো ক্যাপ্টেন। আমি সত্যিই অবাক হচ্ছি। অর্ধেক আশংকা ছিল যে আমাকে অপ্রয়োজনীয় ভেবে না মহাশূন্যেই রেখে আস।
তিনি হাসলেন।
-সেটা এখনও হতে পারে মোজেস। যাত্রা এখনও শেষ হয়নি। তবে তোমাকে আমাদের দরকার। মিশনের পরিকল্পনাকারীরা তোমার চাইতে জ্ঞানী ছিলেন।
-তারা তো আমাকে জাহাজে আভিধানিক দূত হিসেবে আর অআভিধানিক কাউন্সিলর হিসেবে লিখেছিলেন। কোনটায় আমাকে দরকার?
-দুটোই। এবং সম্ভবত তোমার ভূমিকা হবে
-তুমি কুসড়ার শব্দটা ব্যবহার করতে চাচ্ছ! শব্দটা আমার পছন্দ না, আর আমি নিজেকে কোন কিছুর নেতা ভাবতেও পছন্দ করি না। আমি শুধু মানুষকে তাদের নিজেদের জন্য ভাবাতে চেষ্টা করি। আমাকে অন্ধভাবে কেউ অনুসরণ করুক তা আমি মোটেই চাইনি। ইতিহাস অনেক নেতা দেখেছে।
-সবাইতো আর খারাপ না। তোমার নামের নেতার কথাই ধরো।
অতিরিক্ত বলা হয়। অবশ্য তোমার প্রশংসার কারণ আমি বুঝি। কারণ তোমরা দু’জনই গৃহহীন একটা জাতিকে প্রতিশ্রুত ভূমিতে নিয়ে যাচ্ছ। আমার মনে হয় সামান্য কোন সমস্যা হয়েছে।
-তুমি যে সম্পূর্ণ সজাগ তা দেখে আমি আনন্দিত। এ অবস্থায় কোন সমস্যা নেই। থাকা উচিতও নয়। কিন্তু এমন একটা অবস্থা হয়েছে, আর তুমি হচ্ছ একমাত্র কূটনীতিক। তোমার একটা দক্ষতা আছে, যা আমাদের লাগবে বলে ভাবিনি।
তোমাকে আমি বলছি ইভলিন সেটা আমাকে একটা ঝাঁকুনি দিল। আমার চোয়াল ঝুলে পড়তে দেখে নিশ্চয়ই ক্যাপ্টেন বে নির্ভুলভাবে আমার মন বুঝতে পেরেছিলেন।
-না, না আমরা কোন ভিনগ্রহবাসীর কাছে যাচ্ছি না। তবে থ্যালসার মানবজাতি আমাদের ধারণামত ধ্বংস হয়নি। বরং সেটা ভালোই চলছে।
সেটা অবশ্য আরেক আনন্দদায়ক বিস্ময়। থ্যালসা, সমুদ্র-সমুদ্র। যে জগৎটাকে আমি দেখব বলে ভাবিনি। আমি যখন জেগেছি তখন আমি অনেক আলোক বর্ষ দূরে আর শতাব্দী পেরিয়ে এসেছি।
–অধিবাসীরা কেমন? তোমরা কি যোগাযোগ করেছ?
-এখনও না। ওটা তো তোমার কাজ। পেছনের ভুল ভ্রান্তি সম্বন্ধে তুমি ভালো জান। আমরা এখানে তার পুনরাবৃত্তি চাই না। এখন যদি তুমি ব্রীজে আস তাহলে আমি তোমাকে আমাদের অনেক দিনের হারানো ভাইদের সম্বন্ধে হালকা ধারণা দেব।
ইভলিন এটা ছিল এক সপ্তাহ আগে। কি আনন্দের ব্যাপার। কোন অলংঘনীয় এবং নিশ্চিত শেষ সময়সীমার চাপ নেই। থ্যালসা সম্বন্ধে আমরা এখন এতোটাই জানি যে আমরা মুখোমুখি হব। এবং সেটা হবে আজ রাতেই। আমাদের সদিচ্ছা দেখাবার জন্য আমরা পরিচিত জায়গাটাই বেছে নিচ্ছি। প্রথম অবতরণের জায়গাটা পরিষ্কার দেখা যায়। সেটা বেশ ভালো ভাবে রাখা। অনেকটা পার্ক কিংবা হয়তো তীর্থস্থানের মতো। এটা অবশ্য খুব ভালো চিহ্ন। আমি শুধু আশা করছি তারা আমাদের দেবতা ভাবতে পারে, যেটা আমাদের কাজকে সহজই করে দেবে। থ্যালসানরা কি দেবতা সৃষ্টি করছে কিনা আমি বের করতে চাই।
আমি আবার আমার জীবন শুরু করেছি। এবং সত্যি সত্যি তুমি আমার চাইতেও জ্ঞানী ছিলে–তথাকথিত দার্শনিক না হয়েও। যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ তার সাথীদের সাহায্য করতে পারে, ততক্ষণ তার মৃত্যুর অধিকার নেই। অন্যকিছু ভাবাটা হতে স্বার্থপরের মতো… তোমার পাশে চিরতরে শুয়ে থাকা, যে জায়গাটা বহু আগে বহুদূরে আমরা পছন্দ করেছিলাম… এখন আমি মেনে নিয়েছি যে তুমি সৌরজগতে ছড়িয়ে আছ–আমি সারাজীবনে পৃথিবীর যা কিছু ভালোবেসেছি তার সঙ্গেই।
না, এখন কাজের সময় হলো। আর তুমি কি জান তোমার সঙ্গে যখন আমি স্মৃতিতে কথা বলি, তুমি তখন জীবিতই থাক।
৯. সুপারস্পেসের প্রশ্ন
বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানীদের যে মনস্তাত্ত্বিক আঘাতটা সহ্য করতে হয়েছে তা হল “শূন্য” স্থানের মতো ভিড়াক্রান্ত জায়গা আর দ্বিতীয়টি নেই এ সত্যের আবিষ্কার। প্রকৃতি শূন্যতা পরিহার করে অ্যারিস্টোলীয় যুগের এ তথ্যটা সম্পূর্ণ সত্যি এমনকি যখন কোন জায়গা থেকে পদার্থের শেষ অণুটিও সরিয়ে ফেলা হয়, তখনও সেখানে মানবীয় অনুভূতির বাইরে অকল্পনীয় শক্তি ছড়িয়ে থাকে। তুলনা করলে নিউট্রন নক্ষত্রের প্রতি কিউবিক মিলিমিটারে শত মিলিয়ন টনের ভরের সবচে জমাট বস্তুটিও, অধরা ভৌতিক জিনিস “সুপার স্পেসে” একটা ফোম জাতীয় জিনিস। অস্বস্তিটা হল স্পেসে (স্থান) সাধারণ ধারণার চাইতে বেশী কিছু আছে। ১৯৪৭ সালে ল্যাম্ব আর রাদারফোর্ডের ক্ল্যাসিক কাজেই যা বোঝা গিয়েছিল। হাইড্রোজেন পরমাণু–সবচে সরলতম পরমাণু পর্যবেক্ষণের সময় তারা বুঝতে পারলেন কিছু একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটছে, যখন নিঃসঙ্গ ইলেকট্রনটা প্রোটনকে কেন্দ্র করে ঘোরে। মসৃণ একটা পথে ঘোরার চাইতে এটা অতি আণুবীক্ষণীক স্কেলে সবসময় অবিশ্রান্ত ভাবে ওঠানামা করে। কঠিন সত্যটা হল যে, শূন্যতাটার নিজের ভেতরেই ওঠানামা হয়।
সেই গ্রীকদের সময় থেকে দার্শনিকরা দু’ভাগে বিভক্ত। একদল ভাবে প্রকৃতি মসৃণভাবেই পথ চলে। আর যারা এর প্রতিবাদ করে তারা বলেন, সব কিছুই আলাদাভাবে ধাক্কাধাক্কি করে চলে। আনবিক তত্ত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা বিরুদ্ধবাদীদের পক্ষেই গেল। আর যখন প্ল্যাংকের তত্ত্ব দেখাল যে এমনকি আলো বা শক্তিও নিরবিচ্ছিন্নভাবে না এসে থোকা থোকা হিসেবে আসে তখন বিতর্কটা সত্যিকার অর্থে শেষ হয়ে গেল।