শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করা হলে আরাম আয়েশ অনেক বৃদ্ধি পাবে, যদিনা বাড়তি জনসংখ্যা তা নিঃশেষ না করে ফেলে, তখন পৃথিবী সমাজতন্ত্রী অথবা ধনতন্ত্রী যে রূপই গ্রহণ করুক না কোনো সকল শ্রেণীর অর্থনৈতিক উন্নতি হবে তা আমরা আশা করতে পারি। কিন্তু তার পরে আসে আমাদের প্রশ্ন,বিলি বন্টন ব্যবস্থা।
এটা কল্পনা করাও খুব কষ্টকর নয় যে একটি শক্তিশালী জাতির কতকগুলো পুঁজিপতি (অথবা চুক্তিপত্রের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে কতিপয় জাতি) যখন মিলিত হবে তখন এটা স্পষ্ট যে তারা নিজেরাই অত্যধিক সম্পদের মালিক হবে এবং সে শক্তিশালী জাতির মজুরদের মাইনে প্রগতিশীলভাবে বৃদ্ধি করে দেশের জনসাধারণের মধ্যে সন্তুষ্টি ফিরিয়ে আনবে। আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে এবং আগে ইংল্যাণ্ডে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। একটি জাতির সামগ্রিক সম্পদ তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাওয়াতে পুঁজিপতিদের পক্ষে সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ করে সাফল্যজনকভাবে প্রোপাগাণ্ডা চালানো খুব সহজ হয়ে পড়েছে এবং যে কোন কম সৌভাগ্যবান দেশকে সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণের আওতার মধ্যে অবদমন করে রাখা হয় এ পদ্ধতিতে।
সম্ভবত এরকম পদ্ধতি গণতন্ত্রের মধ্যে থেকেই বিকাশ লাভ করে। সমাজতন্ত্র হলো শুধু একটি সমাজের মানুষদের অর্থনৈতিক গণতন্ত্র যাতে অনেকগুলো শিল্পকে একচেটিয়াভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ইংল্যাণ্ডের বিকাশকে এর সমান্তরাল বলে ধরে নিতে পারে। রাজাই ইংল্যাণ্ডের একত্রীকরণ করেছিলেন এবং সে পদ্ধতি সম্রাট ৭ম হেনরি গোলাপের যুদ্ধের নৈরাজ্যবাদের পর নিজেই সমাপ্ত করেছিলেন! একত্রীভূত করার জন্য রাজকীয় শক্তির প্রয়োজন ছিল, কিন্তু যখনই একত্রীভূত হয়ে গেল তখন থেকেই গণতন্ত্রের দিকে আন্দোলন শুরু হলো। সপ্তদশ শতাব্দীর সঙ্কটকালের পর দেখা গেলো যে গণতন্ত্র জনসাধারণের শাসন শৃঙ্খলার পরিপন্থী নয়। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা এখন গোলাপের যুদ্ধ থেকে ৭ম হেনরির সময়ের যুগ সন্ধিকালের মধ্যে আছি। যখন একবার অর্থনৈতিক একতা তা যতই সামন্ততান্ত্রিক হোকনা কেননা স্থাপিত হবে তারপর থেকেই অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের শক্তি প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে, সুতরাং অর্থনৈতিক নৈরাজ্যবাদের আশঙ্কায় ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। সংখ্যালঘুরা যদি প্রচুর পরিমাণে জনমতের সমর্থন আদায় করতে পারে কেবল তাদেরই হাতে ক্ষমতা অর্পণ করা হবে। স্থলবাহিনী, নৌবাহিনী এবং সিভিল সার্ভিসের লোকেরা অবশ্য অবশ্যই তাদের হুকুম মেনে চলবে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির এমন উন্নতি হবে যে একসময় আসবে যখন অর্থনৈতিক ক্ষমতা যাদের হাতে আছে তারা সুবিধাদান করাকে বুদ্ধিমানের কাজ মনে করবে এবং তাদেরকে কম সৌভাগ্যবান রাষ্ট্র এবং শ্রেণীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিশতে হবে, সামগ্রিক গণতান্ত্রিক অবস্থার সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ পদ্ধতি চালু থাকবে।
যেহেতু আমরা একটি কেন্দ্রীয় সংস্থার কথা বলছি যা সমগ্র পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং সে সংস্থার গণতন্ত্র হবে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র, শুধু শ্বেত জাতিরা এর মধ্যে থাকবে না, আফ্রিকা, এশিয়ার জনগণও এতে অংশ গ্রহণ করবে। এশিয়া যে হারে উন্নতি করে যাচ্ছে তাতে মনে হয় সরকার গঠনের সময়ে উপযুক্ত ভূমিকা পালন করার এত ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে। আফ্রিকাকে নিয়ে অনেকগুলো সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এমনকি আফ্রিকাতেও ফরাসিরা (এ ব্যাপারে আমাদের চাইতে অগ্রণী যারা) উল্লেখযোগ্য সুফল পাচ্ছে এবং আগামি একশ বছরের মধ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে সে সম্বন্ধে কেউ কোন ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে না। সুতরাং উপসংহারে আমি এই বলতে চাই যে সমগ্র জাতির প্রতি সমগ্ৰশ্রেণীর প্রতি অর্থনৈতিক সুবিচার করতে পারার এত বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা কেন্দ্রীয় একটি সংস্থা ব্যতিরেকে কখনো সম্ভবপর হবে না। কেন্দ্রীয় সংস্থা যদি গঠিত হয় রাজনৈতিক শক্তি তা অবশ্যই গ্রহণ করবে।
সে, যাহোক এছাড়া অন্যান্য সম্ভাবনাও রয়ে গেছে কিন্তু সেগুলো শ্রেণীতে শ্রেণীতে বিরোধও জাগিয়ে রাখতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় স্টেটগুলো, যেখানে নিগ্রো এবং শ্বেতকায়রা পাশাপাশি বসবাস করে সেখানে শ্বেতকায়দের জন্যে গণতন্ত্র এবং নিগ্রোদের জন্য অর্ধদাস ব্যবস্থামূলক সমাজের পত্তন করা হয়েছে। ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলোতে নিগ্রোদের আমদানীর ব্যাপারে শ্রমিকদলের আপত্তিই হলো এই ব্যবস্থার উন্নতির পথে প্রধান প্রতিবন্ধক। সে যাহোক, এটাও একটা সম্ভাবনা জ্ঞানে মনে রাখা যেতে পারে। সে সম্বন্ধে পরে আমার আরো বেশি কিছু বলার রয়েছে।
আগামী দুশ বছরের মধ্যে পরিবারের কি উন্নতি হতে পারে? তা আমরা বলতে পারিনা, কিন্তু আমরা কতিপয় প্রভাব দেখতে পাচ্ছি কাজ করে যাচ্ছে, সেগুলো যদি না দমে যায় তাহলে কতকগুলো বৈশিষ্ট্যের আকারে ফুটে উঠবে তা বলা যায়। প্রথমেই আমি যা বলতে চাই তা না বলে আমি কি প্রত্যাশা করি সে সম্বন্ধে আলোকপাত করতে চাই। এ আলোকপাতের কাজটা বলতে গেলে সম্পূর্ণভাবে আলাদা পর্যায়ের। অতীতে আমি যেমন আশা করেছিলাম পৃথিবীর সেভাবে উন্নতি হয়নি এবং ভবিষ্যতেও আমি যেভাবে প্রত্যাশা করব সেভাবে উন্নতি হবে না।