আমি অবশ্য এ ধরনের কোন পরিণতি যে অবশ্যম্ভাবী সে সম্বন্ধে কোন নিশ্চয়তা দিচ্ছি না। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞান যে যে পর্যায়ে তার চেয়ে অনেক দূর না এগিয়ে গেলে মানুষকে তার ভবিষ্যতের ব্যাপারে সবসময় অনিশ্চিতের উপর নির্ভর করতে হবে। আমার কথা হলো নির্দেশিত দিকে টেনে নেয়ার মত কিছু শক্তিশালী উপাদান রয়েছে যেহেতু এ শক্তিগুলো মনস্তাত্ত্বিক সেহেতু এগুলো মানুষের নিয়ন্ত্রণসাধ্য। যদি ক্ষমতার অধিকারী ভবিষ্যতে নীতিযুদ্ধের পুনঃ প্রবর্তন না করতে চায় তাহলে তারা অতি সহজে যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে পারবে। ভবিষ্যত সম্পর্কে কোন অপ্রিয় মন্তব্য করে এবং মন্তব্যটাও যদি স্বাভাবিক যুক্তিসিদ্ধ না হয়, তাহলে জনগণকে তার ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে চেষ্টা করার জন্য অনুপ্রাণিত করা তার আংশিক কর্তব্য বিশেষ হয়ে দাঁড়ায়। যারা অশুভ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত করেন, তারা যদি বিশ্বপ্রেমিক হন প্রথমে নিজেদেরকে ঘৃণিত করে তোলা উচিত, যাতে করে তাদের ভবিষ্যদ্বাণী সফল না হলে তারা অত্যন্ত অসুখী হতে পারেন। এই প্রাথমিক বোধটুকু নিয়ে আমি সম্ভাব্য নীতিযুদ্ধের ভিত্তিভূমি নির্ণয় করতে চাই এবং পরে এড়িয়ে যাওয়ার জন্যে কি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, তাতে হাত দেব।
অষ্টাদশ শতাব্দীর চাইতে অদূর ভবিষ্যতে সক্রিয় অসহিষ্ণুতার ক্ষেত্রজ কারণ হলো বৃহৎ সাম্যবাদী ইস্তাহারের চেয়েও পুরনো যুগের আসনে এখনো আসীন। বর্তমান ক্ষেত্রে এর যে প্রতিক্রিয়া আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিতে শুরু হয়েছে, তাই আমাদের বিবেচনার বিষয়। কয়েকজনের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার ফলে মতামতের উৎসকে বন্ধ করে দেয়ার জন্য বর্ধিত মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ কারণে সংখ্যালঘু মতামত কখনো পরিপূর্ণ বক্তব্যের আঙ্গিকে প্রকাশ করার সুযোগ পায় না। সোভিয়েট রাশিয়াতে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে রাজনৈতিকভাবে মতামতকে অবদমন করা হয়। প্রথমে মতামত অবদমদের পদ্ধতিটি সাফল্যজনক প্রমাণ হবে কিনা সে সম্পর্কে প্রচুর সন্দেহের অবকাশ ছিল, কিন্তু যতই বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে ততই সে সন্দেহের নিরসন হচ্ছে। বাস্তব অর্থনীতিতে সুবিধা দেয়া হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক থিয়োরি এমনকি দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যেও কোন বিশেষ সুবিধা দেয়া হয় না। কমিউনিজম ধীরে ধীরে ভবিষ্যৎ স্বর্গের অনুসন্ধানী এবং পার্থিব সম্পর্কবিমূর্খ একটি বিশ্বাসে পরিণত হচ্ছে। বেড়ে ওঠা নতুন যুগের মানুষ এই বিশ্বাসকে চরম সত্য বলে মেনে নিয়েছে, কারণ এর নির্মিতির যুগে সে সম্বন্ধে কেউ কোন প্রশ্ন ওঠায়নি। বর্তমানে সাহিত্যের ওপর, সংবাদপত্রের ওপর, বেতারের ওপর রাষ্ট্রের যে কর্তৃত্ব, আগামী বিশ বছর যদি তা বলবৎ থাকে তাহলে অধিকাংশ মানুষ কমিউনিস্ট দর্শনকে গ্রহণ করবে, তাতে সন্দেহ করার কোন সঙ্গত কারণ নেই। কিছু সংখ্যক বয়স্ক লোক যারা পূর্ব যুগের দর্শনের রিক্তাবশেষ এবং যারা স্বাধীন চিন্তা করেন তেমনি কতিপয় মানুষ কমিউনিজমের বিরোধিতা করবেন, দীর্ঘদিনের ব্যবধানেও যারা বিশেষ কোন প্রভাব সৃষ্টি করতে পারবেন না বলে মনে হয়। পৃথিবীতে সবসময় স্বাধীন চিন্তাবিদ ছিলেন। ইতালির অভিজাততন্ত্র সবসময় একদেশদর্শী ছিল, কিন্তু কোন আকস্মিক কারণে, আজকের মেক্সিকোর মতো তাদের মতামত রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠিত গির্জার সামান্য একটু শুভেচ্ছা থাকলে তা এড়ানো যায় এবং ধরে নেয়া যায়। রাশিয়ার প্রতিষ্ঠিত গির্জা এ ব্যাপারে যথকিঞ্চিত সদিচ্ছা দেখাতে পেরেছে। শিক্ষাবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে তরুণ কৃষকদের মাঠে এনে কৃষিকার্যের পদ্ধতির ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিত্ব স্বীকার করে নিয়ে তাকে নীতিতে বিশ্বাস করিয়ে নেয়া হচ্ছে। কমিউনিজম যেখানে গাঢ় নয় সেখানে তা শুধু অর্থনৈতিক রাজত্বমাত্র এবং যেখানে কমিউনিজম প্রগাঢ় সেখানে তা সাধারণত স্বীকৃত একটি বিশ্বাসের স্তরে উন্নীত হয়।
শুধুমাত্র এশিয়া অথবা রাশিয়ার অঞ্চলসমূহের মধ্যে এই পদ্ধতি অনুসৃত হচ্ছে। না। চীনদেশেও এ পদ্ধতি শুরু হতে যাচ্ছে, সম্ভবত তা অধিকতর শক্তিও সংগ্রহ করবে। চীনদেশের সবচেয়ে যা শক্তিশালী, বিশেষ করে বলতে গেলে জাতীয়তাবাদী সরকারের ওপর রাশিয়ানদের প্রভাব অপ্রতিহত। রাশিয়ানদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্রচার প্রোপাগাণ্ডার কারণে দক্ষিণ বাহিনী সামরিক সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্ম এবং তাও মতবাদ প্রভৃতি প্রাচীন ধর্মে যে সকল চীনা রাজনৈতিক বিশ্বাসী তারা প্রতিক্রিয়াশীল। বিদেশীদের কাছে জাতীয়তাবাদীদের তুলনায় খ্রিষ্টানেরা অধিকতর বন্ধুভাবাপন্ন। এর কারণ হলো প্রধানতঃ জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে প্রাচীন ধর্মসমূহের কোনও বিরোধ নেই। দেশী হোক, বিদেশী হোক তাদের প্রসঙ্গে একই কথা খাটে। আনকোরা নতুন মতবাদ, প্রগতির শেষ অর্থ এবং তার সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ শক্তি বলতে গেলে একমাত্র রাজনৈতিক বন্ধুত্বপূর্ণ শক্তির সংযোগ থাকার ফলে রাশিয়ার নতুন ধর্ম দেশপ্রেমিক জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। চীনদেশে কমিউনিজমকে গ্রহণ করেছে এটা কল্পনা করা অসম্ভব হলেও সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।