অনুশীলনী শেষ করার পরেও জটিল অঙ্কের আকারে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে পারে। তা আমার জন্য আবিস্কার করা হয়েছিল এবং মি. মাডষ্টেন আমাতে তা মৌখিকভাবে বলতে শুরু করতেন, ‘যদি আমি পনিরের দোকানে গিয়ে ৫০০ ডবল সাইজের গ্লাউচেষ্টার পনির প্রত্যেকটা সাড়ে পাঁচ পেন্স মূল্যে খরদ করি, তাহলে সবগুলোর দাম কতো?” আমি দেখতাম তিনি ব্যাপারটাকে উপভোগ করতেন গোপনে। ডিনারের পূর্বপর্যন্ত এই পনিরের মধ্যে আমি ঝুঁকে পড়ে থাকতাম এবং গায়ে চামড়ায় শ্লেটের লেখা মুছে নিজেকে একজন শ্বেতকায় এবং নিগ্রোর দোআঁশলা সন্তান করে তুলতাম। পনিরের অত্যাচার থেকে সাহায্য করার জন্য এক স্লাইস পাউরুটি পেতাম এবং বাকি সন্ধ্যাটাকে দুঃসহ বলে মনে করতাম।
এই অসুবিধা কাটিয়ে যেতে হলে পড়াবার ঘন্টা হ্রস্ব এবং শিক্ষকদেরকে শিক্ষাদানের কলাকৌশল সম্পর্কে ওয়াকেবহাল করে তুলতে হবে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এ নিয়ম অনুসৃত হচ্ছে কিন্তু পাবলিক স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষকেরা তা মেনে চলেন না।
শিক্ষার স্বাধীনতার বিভিন্ন দিক রয়েছে। সর্বপ্রথমে শিক্ষা পাওয়া না পাওয়ার স্বাধীনতা আছে। কি শিক্ষা করবে তার স্বাধীনতা আছে এবং পরবর্তীকালের শিক্ষায় মতামতের স্বাধীনতা রয়েছে। শিক্ষা পাওয়া না পাওয়ার স্বাধীনতা অংশতঃ বাল্যকালের সঙ্গে সম্পর্কশীল। দুর্বল এবং অক্ষম যারা নয়, তাদের সকলকে লিখতে পড়তে শিক্ষা দেয়া নিশ্চিতভাবেই প্রয়োজনীয়। কেবলমাত্র সুযোগ সুবিধার বন্দোবস্ত করে এর কতটুকু করা যাবে অভিজ্ঞতাই তা সপ্রমাণ করবে। সুযোগ সুবিধা তাদের শিক্ষার জন্য যথেষ্ঠ হলেও ছেলেদের গ্রহণ করার এত সুযোগ সুবিধাও অবশ্যই থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় সুযোগের অভাবে ছেলেদের বেশিরভাগই ঘরে বাইরে খেলাধূলা করাটাকে পছন্দ করে। পরবর্তী পর্যায়ে তরুণদের পছন্দের ওপর শিক্ষাকে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। দৃষ্টান্তস্বরূপ তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া উচিত কিনা, কেউ যেতে চাইবে এবং কেউ যেতে চাইবে না। কোন প্রবেশিকা পরীক্ষা এরকম ভালো এবং নিখুঁত একটি নির্বাচনী নীতির প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। যারা ভালোভাবে কাজ করে না তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে দেয়া উচিত নয়। যে সকল ধনী যুবক বর্তমানে কলেজে তাদের সময়কে হত্যা করছে তারা অন্যান্যদেরকে নীতিহীন করছে,অকর্মণ্য হওয়ার শিক্ষাই গ্রহণ করছে। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবার শর্ত হিসেবে কঠোর পরিশ্রম করার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলে বুদ্ধিবৃত্তির প্রতি যারা নিস্পৃহ মনোভাব পোষণ করে, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ তাদের কাছে। আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারবে না।
কি শিখতে হবে এ ব্যাপারে যতটুকু স্বাধীনতা বর্তমানে আছে, প্রয়োজন তার অনেক বেশির। ছেলেদের নিজস্ব ইচ্ছানুসারে বিষয় নির্বচন করা উচিত বলে আমি মনে করি। নির্বাচনী পদ্ধতিতে অনেক ঘোরতর দোষ রয়েছে যা অনেকগুলো সম্পর্কহীন বিষয় স্বাধীনভাবে বাছাই করার ভার একজন তরুণের ওপর অর্পণ করে। যদি আমাকে কাল্পনিকভাবে শিক্ষাপদ্ধতি রচনা করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ দেয়া হয়। আমি বারো বছর পর্যন্ত প্রত্যেক ছেলেকে কিছু পরিমাণ অঙ্ক বিজ্ঞান এবং প্রাচীন সাহিত্য বিষয়ে শিক্ষাদান করব। দু’বছর পরে ছেলের ঝোঁক কোনদিকে, স্পষ্ঠভাবে তার নাগাল পাওয়া যাবে এবং অন্য কোন বিষয়ের প্রতি কোমলপক্ষপাত না থাকলে শিশুর নিজস্ব রুচিই তার প্রবণতার পরিচয় নিরূপণ করবার জন্যে যথেষ্ট হবে। তারপরে আমি আকাঙ্খিত প্রত্যেকটি বালক বালিকাকে চৌদ্দ বছর বয়স থেকে বিশেষ দিকে দক্ষতা অর্জন করার অনুমতি দান করব। প্রথমে দক্ষতা অর্জন করার ক্ষেত্র ব্যাপক এবং প্রসারিত হওয়া উচিত এবং শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সুনির্দিষ্ট পথে পরিচালিত হবে। যে সময়ে এ পদ্ধতি চালু করা সম্ভব ছিল, সকলেই জানে তা অতীত হয়ে গেছে। একজন পরিশ্রমী মানুষ ইতিহাস এবং সাহিত্য সম্পর্কে কিছু জ্ঞান রাখতে পারেন, যার জন্য তার প্রাচীন এবং আধুনিক ভাষাসমূহের ওপর কিছুটা দখল থাকা আবশ্যক হয়ে পড়ে। অথবা তিনি অঙ্কের বিশেষ দিক বিজ্ঞানের দু’একটি শাখা সম্পর্কে ওয়াকেবহাল হতে পারেন। সর্বাঙ্গীন শিক্ষার যে আদর্শ তা বিগত জ্ঞানের উন্নতির ফলে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য মতামতের স্বাধীনতা বিভিন্ন ধরণের স্বাধীনতার মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এবং তাতে কোন সীমানা নির্দেশ করার প্রয়োজন পড়েনা। বস্তুতঃপক্ষে মতমতের স্বাধীনতা অনুপস্থিত বলেই এর সমর্থনে কি কি যুক্তি আছে তা আবিষ্কার করা বাঞ্ছনীয় হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের যাবতীয় বিশ্বাসে সংশয় পোষণ করাই হলো মতামতের স্বাধীনতার মৌলিক যুক্তি। যদি আমরা নিশ্চিতভাবে সত্যকে জানতে পারি তাহলে এর জন্য শিক্ষাদান সম্পর্কে কিছু বলা যেতে পারে। ও সকল ব্যাপারে অন্তর্নিহিত যৌক্তিকতার কারণে কোন রকমের ক্ষমতা প্রয়োগ না করেই শিক্ষা দেয়া যেতে পারে। যে লোক গুণের টেবিল সম্পর্কে বিরুদ্ধ মন্তব্য করে তাকে অঙ্ক শিখতে না দেয়ার জন্য একটি আইন করা উচিত। কারণ সত্য এখানে পরিষ্কার এবং জরিমানা করে তা প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়েনা। রাষ্ট্র যখন কোন মতবাদ শিক্ষার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তখন করে একারণে যে ঐ মতবাদের সমর্থনে উপসংহারস্বরূপ কেনো প্রমাণ অনুপস্থিত। এর ফল হয় সত্যকেও সত্য হিসেবে শিক্ষা না দেয়া। নিউইয়র্ক রাজ্যে আজ পর্যন্ত সাম্যবাদ ভালো-এ শিক্ষা দেয়া বেআইনী। আবার সোভিয়েত রাশিয়ায় সাম্যবাদ খারাপ-এ শিক্ষা দেয় বেআইনী। এ দু’-মতবাদের মধ্যে একটা সত্য এবং অন্যটা মিথ্যা তাতে সন্দেহ নেই; কিন্তু কোনটা তা কেউ জানেনা। আমেরিকা এবং সোভিয়েত রাশিয়া সত্য শিক্ষা দিচ্ছে এবং মিথ্যা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, কিন্তু কেউ সত্তাবে তা করছেনা। কারণ প্রত্যেকে একটা সংশয়মূলক বক্তব্যকে সত্য বলে ধরে নিয়েছে।