মানুষ যদি এ বিপত্তি সম্বদ্ধে ব্যাপকভাবে ওয়াকেবহাল হয়, তাহলে তা জনমত জাগাতে সমর্থ হবে এবং তা করতে হলে মানুষের বিশ্বাসকে তার চাকুরির নীরিখ হিসাবে গণ্য করা উচিত নয়। সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার দায়িত্ব অপরিসীম। আমাদের যারা খুব ভয়ঙ্কর গোঁড়া তারাও কোনদিন সংখ্যালঘুতে পরিণত হতে পারে, সুতরাং আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের অত্যাচারের বাধা দান করা একান্তই উচিত। জনমত ছাড়া আর কোন কিছু এ সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না। ব্যতিক্রমী মালিকদের কাছে যে সুবিধা পাওয়া যায় সমাজতন্ত্র তার নিরসন করে সমস্যা আরো ঘোলাটে করে তুলবে। শিল্পের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নতুন হস্তক্ষেপের ফলে অবস্থা অধিকতর সঙ্গীন হয়ে দাঁড়াবে, যেহেতু এর ফলে স্বাধীন বিনিয়োগ কর্তার সংখ্যা, কমতে থাকবে। একচেঠিয়া মালিকানায় যেমন তেমনি সমাজতন্ত্রেও বিশ্বাসের অবক্ষয় চূড়ান্ত সত্য বলে প্রমাণিত হবে। মানুষ যখন ক্যাথলিক অথবা প্রোটেষ্টান্ট মতবাদের চূড়ান্ত সত্যতায় বিশ্বাস করে,তাহলে একে অপরকে অত্যচার করার ইচ্ছা পোষন করে। মানুষ যখন তাদের আধুনিক ধর্মমত সম্বন্ধে জেনে ফেলেছে তারাও বিরুদ্ধবাদীদের নিজস্ব পদ্ধতিতে নির্যাতন করবে। থিয়োরিতে না হলেও প্রয়োগিক ক্ষেত্রে সহনশীলতার জন্য কিছু পরিমাণ সংশয়ের প্রয়োজনীয়তা আছে। এর সঙ্গে আমার দ্বিতীয় দফার সংযোগ রয়েছে, শিক্ষার অভীষ্ট ছিল যার আলোচ্য বিষয়।
পৃথিবীতে সহনশীলতা আনতে হলে স্কুল সমূহে যা যা শিক্ষা দিতে হবে তার একটি হলো প্রমাণের গুরুত্ব বিচার সম্পূর্ন ভাবে বিশ্বাস করার যুক্তি না থাকলে কোন বক্তব্যকে সত্য বলে মেনে না নেয়ার অভ্যাস শিক্ষা দেয়া। উদাহরণস্বরূপ সংবাদপত্র পাঠ করার কায়দা কসরত শিখিয়ে দেয়া উচিত। অনেকদিন আগে ঘটে গেছে এবং ঐ সময় আবেগ জড়িয়ে তুলেছিল, শিক্ষকদের এমন কতক ঘটনা বেছে নেয়া উচিত। একপক্ষের সংবাদ পত্র বিশেষ একটি ঘটনার ওপর কি মন্তব্য করেছিল এবং অন্য পক্ষের সংবাদপত্রের সে ঘটনার ওপর কি বক্তব্য ছিল তা ছাত্রের কাছে পড়ে শুনিয়ে নিরপেক্ষ ভাবে কি ঘটেছিল ছাত্রদের কাছে বলে দেয়া শিক্ষকের উচিত। প্রত্যেক দিকের পক্ষপাতিত্ব সম্বন্ধে আলোচনা করা সংবাদপত্রে যা লেখা হয় কম বেশী তাতে মিথ্যা থাকে একথা বুঝিয়ে দেয়া উচিত। এর ফলে ছেলে মেয়ের মনে যে বিদ্রুপাত্নক সংশয়ের সৃষ্টি হবে তার দরুন চালবাজদের পরিকল্পনায় ভালো লোকদের যে ভাবে ব্যবহার করা হয়, তার থেকে পরবর্তী জীবনে ছাত্রেরা বেঁচে থাকতে সক্ষম হবে।
এই পদ্ধতিতে ইতিহাস শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। উদাহরণ স্বরূপ নেপোলিয়ানের ১৮১৩-১৪ সালের অভিযানসমূহকে পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। নেপলিয়ান কর্তৃক প্রত্যেক যুদ্ধে পরাজিত মিত্রশক্তির সৈন্যেরা যখন প্যারি নগরীর প্রাচিরে এসে হানা দিলো তখন প্যারির নগরবাসীরা কি রকম বিস্ময় অনুভব করেছিল। মৃত্যুর প্রতি ঘৃণা জাগাবার জন্যে লেনিন কতোবার টটস্কি কর্তৃক নিহত হয়েছিলেন উচ্চশ্রেণীর ছাত্রদেরকে তা জানতে অনুপ্রাণিত করা উচিত। ছেলেমেয়েদেরকে এমন এক স্কুলে দেয়া উচিত যে স্কুলে সরকার অনুমোদিত ইতিহাস পাঠ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত এবং আমাদের সঙ্গে ফরাসিদের যুদ্ধের ইতিহাস ফরাসি স্কুলে কি রকম তা অনুমান করতে নির্দেশ দেয়া উচিত। কতেক মানুষ যেমন বিশ্বাস করে নৈতিকতার বাণী প্রচার করে নাগরিক কর্তব্য শিক্ষা দেয়ার দায়িত্ব শেষ করা হয়। তার চেয়ে এরকমের শিক্ষা পদ্ধতি অনেক বেশি নাগরিক কর্তব্যের শিক্ষা সহায়ক হয়ে দাঁড়াবে।
আমার মতে এটা স্বীকৃত সত্য যে পৃথিবীর অশান্তির মূলে যতটুকু নৈতিক বিচ্যুতি রয়েছে অবশ্যই ততটুকু বুদ্ধিহীনতার প্রভাব বর্তমান। কিন্তু মানব সম্প্রদায় আজ পর্যন্ত নৈতিক দোষ সংশোধন করবার কোনও পন্থা আবিষ্কার করতে পারেনি। প্রচার এবং কপটতা,শুধু পুরনো পাপের তালিকায় নতুন দোষের সংখ্যা বাড়ায়। পক্ষান্তরে প্রত্যেক দক্ষ শিক্ষাবিদদের জানা পদ্ধতি অনুসারে সহজে বুদ্ধিবৃত্তি উৎকর্ষ সাধন করা যায়। সুতরাং নৈতিকতা শিক্ষার কোন পদ্ধতি না অবিষ্কার হওয়া পর্যন্ত প্রগতিকে নীতির বদলে বুদ্ধিবৃত্তি বিকাশের ওপরেই নির্ভর করতে হবে। বিশ্বাস প্রবণতা হলো বুদ্ধিবৃত্তির প্রধান প্রতিবন্ধক সমূহের একটি এবং প্রচলিত পদ্ধতিতে মিথ্যা খবর নিরসন ঘটিয়ে বিশ্বাস প্রবণতার পরিমাণ হ্রাস করা যেতে পারে। বিশ্বাস প্রবণতা বর্তমান দুনিয়াতে আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়ে পড়েছে এবং গণতন্ত্রের জন্যে আগের চাইতে অনেক বেশি মিথ্যা খবর প্রচারের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে, সে কারণে সংবাদপত্রের পাঠক সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় পৃথিবীতে পূর্বোক্ত দুটো পদ্ধতি (১) উপযুক্ততার ভিত্তিতে চাকুরিতে বিনয়োগ করা। (২) শিক্ষার একটি লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রমাণহীন বিষয়ে বিশ্বাস করার অভ্যাস পরিহার করা কি ভাবে প্রয়োগ করা উচিত, তাহলে আমি শুধু বলব সুশিক্ষিত জনমত গঠনের দ্বারাই তা সম্ভব। যারা এ পদ্ধতি চালু হোক কামনা করবে একমাত্র তাদের চেষ্টার ফলেই সুশিক্ষিত জনমত গঠন করা সম্ভব হবে। সমাজতন্ত্রবাদীরা অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে যে আরোগ্যের কথা বলেন, তাতে আলোচ্য দোষগুলোর কিছু হ্রাসপ্রাপ্তি ঘটবে বলে আমি বিশ্বাস করিনে। রাজনীতিতে যাই ঘটুক না কেন, অর্থনৈতিক বিকাশের ফলে মানসিক স্বাধীনতা অটুট রাখা বরঞ্চ অত্যাধিক বিপজ্জক হয়ে দাঁড়াবে যদি জনমতের চাপে পড়ে বিনিয়োগকর্তা কর্মচারীদের শুধু কাজ ছাড়া জীবনের বিশ্বাস সমূহ নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছা পরিহার না করে। রাষ্ট্রের ক্ষমতা পরিদর্শন, টাকা পয়সা দেয়া এবং বিশেষ পদ্ধতির রক্ষণাবেক্ষণ করার মধ্যে সীমিত করার পর ইচ্ছে করলেই শিক্ষার স্বাধীনতা অর্জন করা যায়। কিন্তু তাতে করে শিক্ষা ব্যবস্থার ভার এসে পড়বে গির্জাগুলোর ওপর। দুর্ভাগ্যবশতঃ স্বাধীন চিন্তাবিদেরা তাদের সংশয় সমূহ শিক্ষা দিতে যতটুকু সচেষ্ট তারা তাদের বিশ্বাস সমূহের প্রচারের জন্যে অনেক বেশী তৎপর। সে যা হোক সত্যিকার ভাবে চাইলে উদারনৈতিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করার একটি ক্ষেত্র আবিষ্কার করা অসম্ভব হবে না। কিন্তু তা যতদূর সম্ভব আইনের আওতামুক্ত থাকবে।