সে যা হোক, যদি আমাদের কোন অংশীদার অথবা ডিরেক্টার বন্ধু থেকে থাকে, তাহলে জটিল কোন নীতি নির্ধারণের বেলায় তাকে ডাকা হতে পারে। এ সমস্ত সিদ্ধান্তের বেলায় তার বিশ্বাসের কিছু প্রতিক্রিয়া অবশ্যই থাকবে। কোনকিছুর দাম বাড়বে এবং কোনকিছুর দাম কমবে। অমুক অমুক ভালো মানুষ দেউলিয়া হওয়ার আগে এই এই করতে হবে, এসবে তিনি বিশ্বাস করেন। এ সকল বিশ্বাস অনুসারেই তিনি কাজ করেন। অভ্যাস ব্যতিরেকে বিশ্বাসের বলে তিনি কেরানির বদলে আরো শক্তিশালী মানুষ হলে কাজ করতে পারেন। যদি তার বিশ্বাসগুলো সত্য হয়, তিনি বেশি টাকা রোজগার করতে পারেন।
পারিবারিক জীবনে বিশ্বাস যদি কাজের কারণ হয়ে থাকে, তাহলে এরকম সুযোগের ঘন ঘন পুনরাবৃত্তি ঘটে থাকে। সচরাচর, তার স্ত্রী এবং সন্তানের প্রতি ব্যবহার অভ্যাস অথবা অভ্যাস দ্বারা শোধিত প্রবৃত্তির বশেই নিয়ন্ত্রিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি বিয়ের প্রস্তাব করেন, যখন তিনি ছেলেকে কোন স্কুলে পাঠাবেন ঠিক করেন এবং যখন তিনি স্ত্রীর চরিত্রে সন্দেহের কারণ খুঁজে পান তখন তার কাজ সম্পূর্ণভাবে স্বভাবের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিয়ের প্রস্তাব করার সময়ে তিনি প্রবৃত্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন, অথবা ভদ্রমহিলার ধনী হওয়ার কারণেই আকৃষ্ট হন। যদি তিনি প্রবৃত্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন, তিনি নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করেন যে, ভদ্রমহিলার সকল গুণ রয়েছে এবং তা তার কাছে প্রস্তাব করার কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। প্রকৃতপ্রস্তাবে প্রবৃত্তিকে কাজের একমাত্র ভিত্তি মনে করা, প্রবৃত্তিরই আরেক রকম প্রতিক্রিয়া। তার ছেলের জন্য একটা স্কুল পছন্দ করার জটিল ব্যাপারে যেমন চিন্তা করেন, তেমনিভাবে চিন্তা করে দেখেন। সাধারণতঃ এখানে তার বিশ্বাসের সবল ভূমিকা বর্তমান। যদি প্রমাণ পান যে তার স্ত্রী তার প্রতি বিশ্বাস ত্যাগ করেছে, তাহলে তিনি প্রবৃত্তিগতভাবেই ব্যবহার করবেন। কিন্তু প্রবৃত্তির নিয়মকে পরিচালিত করে আমাদের বিশ্বাস এবং বিশ্বাসই হচ্ছে প্রবৃত্তিকে চালিত করার প্রথম কারণ।
যদিও বিশ্বাসগুলি প্রত্যক্ষভাবে আমাদের কর্মের সামান্য ভগ্নাংশের সঙ্গে মাত্র। সংযুক্ত, যে সকল কাজের জন্য আমরা বিশ্বাসের কাছে দায়ী, সেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের জীবনের সাধারণ ছক নির্ধারিত করে। বিশেষভাবে আমাদের ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক কাজগুলো আমাদের বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
(২) আমি এখন আমাদের দ্বিতীয় প্রশ্ন সম্বন্ধে আলোচনা করছি যার দুটো স্তর। (ক) আদতে আমাদের বিশ্বাসসমূহ কতদূর প্রমাণের উপর নির্ভরশীল এবং (খ) তাদের পক্ষে কতদূর প্রমাণনির্ভর হওয়া সম্ভব অথবা উচিত?
(ক) বিশ্বাসসমূহ প্রমাণের উপর যে পরিমাণ নির্ভরশীল, তা বিশ্বাসীরা যতো মনে করে তার চেয়ে অনেক কম। যে সকল কাজ যুক্তিসঙ্গত কাজের কাছাকাছি, সেগুলোর কথা বলা যেতে পারে; যেমন একজন ধনী কিছু টাকা খাটালেন। উদাহরণস্বরূপ আপনি দেখতে পাবেন ফ্রাঙ্কের মূল্য বাড়বে কি কমবে সে সম্বন্ধে তার যে ধারণা, তা তার রাজনৈতিক সহানুভূতির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার বিশ্বাস এত প্রবল যে তিনি এত টাকা লোকসানের ঝুঁকি গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
যদি কোন কারণে তিনি দেউলিয়া হয়ে যান, অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, কতেক আবেগপূর্ণ আকাঙ্খই তার ধ্বংসের মূল কারণ। রাজনৈতিক মতামত প্রমাণের উপর প্রায়ই নির্ভরশীল নয়। সরকারি কর্মচারীদের প্রমাণের উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু নীতি সম্বন্ধে তাদের কথা বলার কোন অধিকার নেই। অবশ্য তার ব্যতিক্রম রয়েছে। দ্রব্যমূল্য সংস্কারের ব্যাপারে পঁচিশ বছর আগে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল তাতে অনেক শিল্পপতি যে পক্ষে গেলে তাদের ব্যক্তিগত আয় বৃদ্ধি পাবে, সে পক্ষই সমর্থন করেছিলেন এবং তাদের আয় বৃদ্ধির কথাটা যতই ঢাকা-চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করা হোক না কেন, যে কোন লোক তা ধরতে পারবে। এখানে একটা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ফ্রয়েডিয়রা আমাদেরকে সকল কিছু যুক্তিসম্মত করতে অভ্যস্ত করে তুলেছেন। তার মানে হলো, যে অযৌক্তিক বিশ্বাস এবং মতামতসমূহকে যুক্তিসম্মত মনে করি, তা সত্যি কি না যাচাই করার একটা পদ্ধতি আবিষ্কার করা। বিশেষতঃ ইংরেজি ভাষাভাষী জগতে তার সম্পূর্ণ বিপরীত একটা পদ্ধতি প্রচলিত আছে, তা হলো সবকিছুকে অযৌক্তিক ছাঁচে ঢালাই করা। একজন চালাক-চতুর মানুষ কমবেশি সচেতনভাবে তার স্বার্থের স্বপক্ষে একটি বিষয়ের খুঁটিনাটি সংগ্রহ করেন। (নিঃস্বার্থ বিবেচনা অবচেতনভাবে নিজের ছেলে ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে খুবই কম হয়ে থাকে)। অবচেতন মনে, একটা সোহংবাদী নির্ভুল সিদ্ধান্ত খাড়া করে, একজন মানুষ কতকগুলো উচ্চনিনাদিত শ্লোগান আবিষ্কার করে, অথবা অন্যের কাছ থেকে ধার করে দেখান যে কিভাবে জনগণের কল্যাণের জন্য তিনি আত্মোৎসর্গ করেছেন। এ সব শ্লোগানে যে মানুষ বুদ্ধি দিয়ে বিশ্বাস করে, যতক্ষণ পর্যন্ত কল্পিত জনগণের কল্যাণ তার কাজের মাধ্যমে আসবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে প্রমাণের সাহায্যে যাচাই করা যাবে না। এ সকল বিষয়ে মানুষ যতো অনুসন্ধিৎসার বশে চলে, ততো যুক্তির অনুসরণ করে না। তার মনের সচেতন স্তর অযৌক্তিক এবং অবচেতন স্তরে যুক্তিগত বিশ্বাস বর্তমান থাকে। চরিত্রের এই বেশিষ্ট্যই হলো ইংরেজ এবং আমেরিকানদের সাফল্যের কারণ।