“পঁচিশ বছর আগে ছাত্রেরা দশ থেকে পনের হাজার শব্দ বানান করতে শিখতো। পরের দু’দশকে অনুসন্ধান করে দেখা গেলো যে উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রদের পড়াশোনার জন্য কোন গ্রাজুয়েটের দরকার হয় না, এমনকি ভবিষ্যৎ জীবনের জন্যও দরকার পড়ে না, যদি না তার বিশেষ ধরনের কারিগরী কথাবার্তা রপ্ত করতে হয়। সাধারণ আমেরিকানরা চিঠি-পত্র লেখা এবং সংবাদপত্রের জন্য লিখবার সময় পনেরশ’র বেশি শব্দ ব্যবহার করে না। এসকল বিষয় বিবেচনা করে, দৈনন্দিন জীবনে যে-সকল শব্দের প্রয়োজন তার উপর ভিত্তি করে উচ্চারণ শিক্ষার কোর্স নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অতি প্রয়োজনীয় শব্দসমূহ স্বাভাবিকভাবে উচ্চারণ করার এত দক্ষ করে তোলা হবে। প্রচলিত কারিগরী শব্দসমূহ আগে শিক্ষা দেয়া হতো এবং যেগুলোর ভবিষ্যতে ব্যবহৃত হবার সম্ভাবনা নেই থিয়োরিগতভাবে যা অন্ততঃ স্মৃতিশক্তির পরীক্ষায় মূল্যবান বলে বিবেচিত হতে পারে।”
শেষ বাক্যে প্রথম বাক্যের মুখস্ত করার যুক্তির বিপক্ষে একটি সুষ্ঠু মনস্তত্ত্ব সম্মত আবেদন লক্ষ্য করেছি। তার থেকে মনে হয় যে বাস্তবকে জানা ছাড়া আর কোন ক্ষেত্রে মুখস্ত করা উচিত নয়। তা মেনে নিয়ে আমরা অনুচ্ছেদটির অন্যন্য বক্তব্যসমূহের দিকে নজর দিচ্ছি।
প্রথমতঃ কোন কিছু উচ্চারণ করতে পারা সম্বন্ধে কিছুই বলা হয়নি। অনেকে শেক্সপিয়র এবং মিলটন উচ্চারণ করতে পারতেন না। আবার মেরি করেলি এবং আলফ্রেড অস্টেন উচ্চারণ করতে পারতেন। অশিক্ষিত আর শিক্ষিতের মধ্যে সহজে ভেদ রেখা টানা যায় মতো আংশিকভাবে হামবড়ামী, আংশিক নিখুঁত পোশাক পরে দলে বৈশিষ্ট্য অর্জন এবং অংশত প্রাকৃতিক আইনের অনুরাগীরা ব্যক্তির স্বাধীনতার আওতার মধ্যে অন্ততঃপক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে উচ্চারণ করার জন্য হয়, তাহলে সব সময়ে পাঠকদেরকে উদ্দেশ্যের প্রতি সজাগ রাখা সম্ভবপর।
দ্বিতীয়তঃ চীনা ছাড়া অন্য সকল লিখিত ভাষা কথা বলার ভাষার প্রতিনিধিত্ব করে, যার মধ্যে ভাষার যাবতীয় সৌন্দর্য-তত্ত্ব নিহিত, যে যুগে মানুষ অনুভব করল যে ভাষাকে সুন্দর করা যায় এবং ভাষা সুন্দর হওয়া উচিত; তখন থেকেই তারা উচ্চারণ করতে সাবধানী এবং লিখতে অসাবধানী হয়ে উঠলো। আজকের দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রেরাও সাধারণ শব্দ ছাড়া অন্যান্য শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না। সে জন্য তারা অনেক কবিতার অর্থ হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যের পেশাগত ছাত্র ছাড়া আজকের আমেরিকায় চল্লিশ বছরের নিচে এমন একজন মানুষও খুঁজে পাওয়া যাবে না যে শব্দ ক’টির অর্থ বের করতে পারে।
Scattering unbeholden
Its aerial hue.
ছড়িয়ে আছে না দেখা তার
বায়বীয় রঙ
শিক্ষার মধ্যে যদি সৌন্দর্যতত্ত্ব সম্বন্ধীয় কোন প্রচেষ্টা গ্রহণ করা উচিত বলে বিবেচনা করা হয়, তাহলে শিশুদের উচ্চারণ শেখানোর চাইতে উচ্চস্বরে আবৃত্তি শিক্ষা করতে দেয়া উচিত। আগে উচ্চস্বরে বাইবেল আবৃত্তি করা হতো যা সে উদ্দেশ্য সাধন করত, বর্তমানে তার প্রচলন একেবারে নেই বললেই চলে।
উচ্চারণ করতে জানাই শুধু প্রয়োজন নয়। সৌন্দর্যতত্বের জন্য অপর্যাপ্ত শব্দসম্ভার থাকাও উচিত। যারা পনেরশ শব্দ শুধু ব্যবহার করতে জানে তারা কখনো নিজেদের সংক্ষিপ্ত অথবা সুন্দরভাবে সহজ সরল বিষয় ছাড়া প্রকাশ করতে পারবে
এবং তাও অনেক সময় কপাল গুণে। আজকের আমেরিকার অর্ধেক জনসাধারণ শেক্সপিয়র যত সময় স্কুলে কাটিয়েছেন, তত সময় ব্যয় করেন, কিন্তু তাদের শব্দসম্ভার শেক্সপিয়রের দশভাগের একভাগও নয়। তা সত্বেও তাকে সেম যুগের সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছিল, কেননা তা তার নাটকসমূহের বাণিজ্যিক সফলতা লাভের প্রয়োজন ছিল। আধুনিক মতামত হলো যে মানুষ নিজেকে ভাষার মধ্যে অপরকে বোঝাতে পারার এত প্রকাশ করতে পারে, ভাষার ওপর তার যথেষ্ট অধিকার আছে বলে স্বীকার করা হয়। পুরনো মতামত ছিল, কথা এবং লেখায় সৌন্দর্য এবং আনন্দ দেয়া তার উচিত।
আধুনিক লেখকের মতো যে বাস্তব বিষয় বর্ণনার ব্যাপারে ছাড়া অন্যান্য বিষয় বর্ণনার ক্ষেত্রে অনুমিত নৈতিকতা এবং সৌন্দর্য তত্ত্বকে বর্জন করে আচরণকে গ্রহণ করেছে তার সম্বন্ধে কোন সিদ্ধান্তে আসা যায়? ড. ওয়াটসনের প্রতি আমার প্রগাঢ় শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে এবং তার বইগুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমার বিবেচনায় পদার্থবিজ্ঞান হলো থিয়োরিটিক্যাল বিদ্যার মধ্যে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং শিল্পায়ন ব্যবস্থা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমাজতান্ত্রিক লক্ষণ। তাই বলে আমি অকেজো জ্ঞান এবং শিল্পকলা, যেগুলো শুধুই আনন্দ বিতরণ করে, তার প্রশংসা করা থেকে বিরত থাকতে পারিনে। সমস্যাটা যুক্তিভিত্তিক নয়, যেহেতু আমরা দেখেছি। আচরণবাদ সত্য হলে অপ্রধানভাবে কোন একটা নির্দিষ্ট কাজের সমাপ্তির কারণে কী পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত তা দেখিয়ে দেয়া ছাড়া মূল্যবোধের প্রশ্নে আচরণবাদের কোনও প্রভাব নেই। ব্যাপক অর্থে এটা হলো রাজনৈতিক প্রশ্ন, যেহেতু এটা ধরে নেয়া যেতে পারে যে অধিকাংশ মানুষ ভুল করতে বাধ্য, সে ক্ষেত্রে অসত্য বিষয় থেকে সত্য সিদ্ধান্ত টানা ভালো? এ জাতীয় কোন প্রশ্নের সমাধান সম্ভব নয়। এর ন্যায়শাস্ত্র শিক্ষা দেয়া উচিত, যাতে করে তারা যেন-তেন বক্তব্য থেকে উপসংহার টানতে বিরত থাকে। উদাহরণস্বরূপ যখন বলা হয় যে ফরাসিরা যুক্তিবাদী, তারা তখন সামগ্রিকভাবে একজন মানুষের যুক্তি বহির্ভূত সূক্ষতা যা ভুলবশতঃ আসল বক্তব্য থেকে উদ্ভূত হয়েছে তাও হিসেবের মধ্যে গণ্য করে। তাহলো একটি সর্বশ্রেষ্ঠ অনভিপ্রেত গুণ, তা থেকে সার্বিকভাবে ইংরেজি ভাষাভাষী জাতিগুলো অন্যান্যের তুলনায় অধিকতর স্বাধীন ছিল। কিন্তু তার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে যে তারা যদি এ বিষয়ে স্বাধীন থাকতে চায় তাহলে তাদের পক্ষে অতীতের চাইতে অধিকতর দর্শন এবং ন্যায়শাস্ত্রর প্রয়োজন রয়েছে। আগে ন্যায়শাস্ত্রকে অনুমান করার পদ্ধতি বলে বিবেচিত করা হতো।