ইতিমধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে একটি দর্শন গড়ে উঠেছে, যাকে অনেক সময় বস্তুবাদ বলে অবিহিত করা হয়েছে, কিন্তু আদতে তা বহুত্ববাদ পদ্ধতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে আলাদা দর্শন হিসেবে বিশেষিত করা হয়েছে। কোনক্রমেই তা বস্তুবাদী দর্শন নয়, বরঞ্চ কোন কোন অংশে বার্কলের আদর্শবাদের সঙ্গে তার মিল বর্তমান। যে যুক্তিতর্কের উপর কান্ট এবং হেগেলের দর্শন প্রতিষ্ঠিত, সেগুলোকে অস্বীকার করে গেলে কান্টিয় এবং হেগেলিয় মতবাদের সঙ্গেও তার কোন মিল নেই। পৃথিবীর মৌলিক উপাদান মানসিক এবং বস্তুগত দু’টোর কোনটাই নয়, বরঞ্চ এমন কিছু, যা অধিকতর মৌলিক এবং সরল, যার থেকে মন এবং পদার্থ দুটোই গঠিত হয়েছে, জেমসের এ মতবাদ গ্রহণ এবং এর বিকাশের দিকে উত্তরোত্তর অধিকভাবে সে দর্শন ঝুঁকে পড়েছে।
১৮৯০ সালে খুব প্রাচীনেরা ছাড়া জার্মান আদর্শবাদের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়েছিলেন, তার মধ্যে জেমস ছিলেন বলতে গেলে একমাত্র খ্যাতিমান পুরুষ। ডিউয়ি এবং শিলার তখনো গভীরভাবে অনুভব করেন নি, এমনকি জেমসকেও একজন মনস্তত্ববিদ বলে ধরা হতো। দর্শনের ক্ষেত্রে তার আবেদনের কথা কেউ গুরুত্ব সহকারে চিন্তাও করেননি। ১৯৭০ সালে প্রয়োগবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরঞ্চ কড়াকড়িভাবে বাস্তবদৃষ্টিভঙ্গি থেকে জার্মান আদর্শবাদের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। জার্মানিতে, Frege-এর রচনাবলী (যা শুরু হয় ১৮৭৯ সালে, কিন্তু সাম্প্রতিক কালে ছাড়া পঠিত হয় নি, Husser এর উল্লেখযোগ্য রচনা Logische Unter Such ungen ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। Meinong এর Ueber Annahmen ১৯০২ সালে Gogen Stands theoric এবং Psychologic ১৯০২ সালে প্রকাশিত হয় এবং একই দিকে বিশেষ প্রভাবশালী ছিল। ইংল্যাণ্ডে G. E Moore এবং আমি এ মতবাদের সমর্থনে ওকালতি করতে শুরু করি। তার প্রবন্ধ The nature of judgement ১৮৯৯ সালে Principia Ethica ১৯০৩ সালে ও আমার Principles of Mathematics ১৯০৩ সালে ফরাসিদেশে Conturat একই ধরনের দর্শন প্রবলভাবে প্রধান্য বিস্তার করে। আমেরিকাতে উইলিয়াম জেমসের Redical Empricism (তার প্রয়োগবাদকে বাদ দিয়ে) নতুন ন্যায়শাস্ত্রের সঙ্গে সংমিশ্রণে কিছু পরবর্তী সময়ে সম্পূর্ন ভিন্ন একটি নতুন দর্শনের জন্ম দেয়। উপরে যে সব ইউরোপিয় দর্শনগ্রন্থের কথা বলা হলো ওগুলোর তুলনায় আরো বেশি বিদ্রোহ ছিল এ নব-বস্তুবাদ। যদিও Mach এর Analyseder Emfindungen-এর অংশবিশেষের শিক্ষাকে জোরদার করেছিল।
যে নতুন দর্শনের সূচনা হলো এখনো কোন চূড়ান্ত রূপ পরিগ্রহ করে নি এবং কোন অংশে এখনো অপরিপক্ক রয়ে গেছে। তাছাড়াও বিভিন্ন সমর্থকের মতামতের মধ্যে প্রচণ্ড পার্থক্য রয়ে গেছে। তার আবার কোন অংশে দুর্বোধ্য। এ সকল কারণে কতকগুলো প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরা ছাড়া এ সম্পর্কে আর কিছু বলা একরূপ অসম্ভব।
নতুন দর্শনের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো কোন কোন বিশেষ দার্শনিক পদ্ধতি এবং দর্শনকে বিশেষ কোন মার্কামারা জ্ঞান অর্জনের উপায় বলে স্বীকার করে না। নতুন মতবাদ বিশেষ বিজ্ঞানে সমস্যার সাধারণীকরণের পার্থক্য এবং অভিজ্ঞতালব্ধ প্রমাণ যেখানেই নেই, সেখানে অনুমান করা ছাড়া আর সকল ব্যাপারেও দর্শনকে বিজ্ঞানের সঙ্গে এক করে দেখে। এ দর্শন মতে সব রকমের জ্ঞান বিজ্ঞানভিত্তিক, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে অর্জন এবং প্রমাণ করতে হয়। পূর্ববর্তী দর্শনের বেলায় যেমন ব্রহ্মাণ্ডকে দেখা এবং ধারণাতে প্রতিভাস রচনার পদ্ধতি প্রচলিত ছিল, নতুন দর্শনের তা অচল হয়ে দাঁড়াল। নিজস্ব ন্যায়শাস্ত্রের মতে পৃথিবীর যে আপাতঃ বিখণ্ডিত এবং বিশৃঙ্খল প্রকৃতি বর্তমান তা অস্বীকার করার কোনও কারন নেই। ধ্বংসপ্রাপ্ত দৈত্যের বিশেষ হাড় থেকে যেমন কঙ্কাল সম্পর্কে ধারণা করা যায়, তেমনি পৃথিবীকে কোন বিশেষ অনুষঙ্গ থেকে ভালোভাবে জানার এত আঙ্গিক বিশিষ্ট্য কোন কিছু মনে করে না। জার্মান আদর্শবাদের যেমন লব্ধজ্ঞানের প্রকৃতি থেকে বিশ্বের প্রকৃতি সম্বন্ধে একক ধারণা পোষণ করা হতো, এ দর্শনে তেমন কোন বিশেষ প্রচেষ্টায় মনে করে, তার কোন মরমি তাৎপর্য এবং মহাজাগতিক গুরুত্ব নেই।
জ্ঞানতত্ব, ন্যায়শাস্ত্র এবং অঙ্কের নিয়মনীতি হলো নতুন দর্শনের তিনটি প্রধান মৌলিক উৎস। কান্টের সময় থেকে জ্ঞানকে অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার পারস্পরিক ধারণা বলে মনে করা হতো। সে অনুসারে জ্ঞাত বস্তুকে আমাদের সে বিষয়ে জ্ঞান দ্বারা শোধিত করে নেয়া হয়, যা সকল অবস্থাতেই আমাদের জ্ঞানের কারণে নতুন বৈশিষ্ট্যে মণ্ডিত হয়ে দেখা দেয়। জানা না হলে কোন বস্তুর অবস্থিতি ন্যায়শাস্ত্রানুসারে অসম্ভব, তাও বিশ্বাস করা হতো। (যদিও কান্ট তা করেন নি। সুতরাং যথাযথ জানার পরে যে গুণগুলো আবিষ্কার করা গেলো, প্রত্যেক ব্যাপারে সেগুলোর উপস্থিতি অবশ্যম্ভাবী। পক্ষান্তরে নতুন দর্শন জানা বস্তু এবং কোন মনের অগোচর কোনো বস্তুর অবস্থিতির কি সামান্য কারণ থাকতে পারে, সে সম্বন্ধে কোন পার্থক্য করে না। ফলতঃ জ্ঞানতত্ব বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্য দ্বারা উদঘাটন করার যাদুকরি চাবিকাঠি থেকে যায় এবং আমাদেরকে বিজ্ঞানের শ্রমসাপেক্ষ অনুসন্ধানের জগতে নিক্ষেপ করা হয়েছে।