- বইয়ের নামঃ বক্তৃতা শিখবেন কীভাবে
- লেখকের নামঃ ডেল কার্নেগি
- প্রকাশনাঃ মেমোরী পাবলিকেশন্স
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই
বক্তৃতা শিখবেন কীভাবে
০১. সাহস আত্মবিশ্বাসের বিকাশ
বক্তৃতা শিখবেন কীভাবে
ডেল কার্নেগি
‘স্নায়বিক দুর্বলতা কাটিয়ে আত্মবিশ্বাস অর্জন তেমন কঠিন কাজ নয়। সহজে এই ক্ষমতা অর্জন করা যায়। কতিপয় ব্যক্তির প্রতি এটি খোদার বিশেষ দান। চেষ্টা করলে সকলেই এই ক্ষমতা অর্জন করতে পারে।’–ডেল কার্নেগি
‘আত্মবিশ্বাস, সাহস আর জ্ঞানই হচ্ছে বক্তার প্রধান শক্তি।’–তপন রুদ্র
.
প্রসঙ্গ-কথা
অনেক বছর ধরে প্রতিপত্তি ও বন্ধুলাভের সঙ্গে ডেল কার্নেগির নাম সমভাবে পরিচিত। নোবেল বহির্ভূত বইয়ের মধ্যে ডেল কার্নেগির লেখা ‘প্রতিপত্তি ও বন্ধুলাভ’ বইটি সব চাইতে বেশি বিক্রি হয়েছে এবং এই বইটি তার আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে, কিন্তু ‘প্রতিপত্তি ও বন্ধুলাভ’ তাঁর প্রথম বই নয়।
১৯২৬ সালে ডেল কার্নেগি একটি বই লেখেন। বইটির নাম বক্তৃতা শিক্ষা’ এটা পাবলিক স্পিকিং বা বক্তৃতা শেখার পাঠ্য বই। এবং আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বে বক্তৃতা শেখা ও জন সংযোগ বিষয়ে এটি স্বীকৃত পাঠ্যবই। এটি ওয়াই.এম.সি.এ. পাবলিক স্পিকিং ক্লাসেও পড়ানো হত। বিগত দশ বছরে এই বইটির ৬,০০,০০০ কপি বিক্রি হয়েছে এবং মোট বিক্রির সংখ্যা এক কোটি কপিরও বেশি। এটি ২০টিরও বেশি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে এবং হাজার হাজার কপি বিক্রি হয়েছে তবে সাধারণ পাঠকেরা এই বই সম্পর্কে ওয়াকেবহাল নন।
ডেল কার্নেগি কোর্সের দর্শন আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এবং দশ লাখেরও বেশি লোক এই কোর্সে গ্রাজুয়েশন লাভ করেছে। এই কোর্সে জনগণকে অধিকতর সাহসী করে তোলে, তাদের সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
ডেল কার্নেগি কোর্সের ছাত্ররা এ বই থেকে যে উপকার পেয়েছে নতুন পাঠকেরাও অনুরূপ উপকার পাবে আমার বিশ্বাস।
ডরোথি কার্নেগি
.
০১. সাহস আত্মবিশ্বাসের বিকাশ
১৯১২ সাল থেকে পাঁচ লাখেরও বেশি নারী পুরুষ সাধারণ ভাষণ কোর্সে অংশ নিয়ে আমার প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, তারা কেন এই প্রশিক্ষণে অংশ নেন এবং এটা হতে তারা কী পেতে চান। স্বাভাবিক ভাবে তাদের মতামত ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু এসব মতামতের মূল বিষয়, সংখ্যা গরিষ্ঠের মূল আকাক্ষা আশ্চর্যজনকভাবে প্রায় এক।”যখন আমাকে কোনো কিছু বলতে আমন্ত্রণ জানানো হয় ব্যক্তির পর ব্যক্তি লিখেছেন, “আমি এত ভীত, আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়ি যে কোনো কিছুই পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে পারি না, কোনো কিছুতে মনোনিবেশ করতে পারি না, স্মরণ করতে পারি না আমি কী বলতে ইচ্ছুক। আমি আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে চাই, আমি চাই চিন্তার ক্ষেত্রে আত্মনির্ভশীল হতে, সুস্থির হতে। আমি আমার সমস্ত চিন্তাকে যুক্তি সম্মত পদ্ধতিতে ধারাবাহিক ভাবে পেতে চাই আর আমি চাই ব্যবসায়ীদের সমাবেশ, ক্লাব সদস্যদের বৈঠক অথবা অন্য যে কোনো শ্ৰোতৃমণ্ডলীর সামনে আমার সমস্ত যুক্তি পরিষ্কার ও সুষ্ঠুভাবে দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে তুলে ধরে শ্রোতাদের আকর্ষণ করতে ও স্বমতে আনতে।” হাজার-হাজার লোকের মনের কথা এরূপ ভাবেই প্রতিধ্বনিত ও প্রকাশিত হয়েছে।
একটি বাস্তব উদাহরণ উল্লেখ করছি; কয়েক বছর আগে মি. ডি. ডব্লিউ. গেস্ট নামে পরিচিত এক ব্যক্তি ফিলাডেলফিয়ায় আমার সাধারণ ভাষণ কোর্সে যোগদান করেন। উদ্বোধনীর স্বল্পকাল পর তিনি আমাকে ম্যানুফাঁকচারদের ক্লাবে তার সাথে মধ্যাহ্ন ভোজ গ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। তিনি ছিলেন মধ্যবয়সী ও কর্মব্যস্ত লোক। তিনি ছিলেন তার উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং গির্জাও সমাজসেবামূলক কাজের স্থানীয় নেতা। ঐ দিন আমরা খেতে বসলে তিনি ঝুঁকে পড়ে বলেন, “বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সভায় আমার প্রতি বক্তৃতা করতে অনুরোধ জানানো হয়ে থাকে, কিন্তু কখনো আমি তা করতে পারি না। এরূপ আহ্বানে আমার মন শূন্য হয়ে যায়, আমি ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠি। তাই আমি জীবনে কখনো বক্তৃতা করতে পারি নি। কিন্তু আমি এখন একটা কলেজের স্ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। বোর্ডের সভায় আমাকে সভাপতিত্ব করতে হবে। সুতরাং আমাকে কিছু বলতেও হবে। আপনি কি মনে করেন, আমার জীবনের এ সময়ে আমার বক্তৃতা শেখা সম্ভব?”
“আমি তাই মনে করি, মি. গেস্ট।” আমি উত্তর দিলাম, “এটা আমার কল্পনা নয়। আমি জানি আপনি পারবেন এবং আমি বিশ্বাস করি, নির্দেশ সঠিক অনুসরণে কাজ করলে আপনি সফল হবেন।”
তিনি এ কথা বিশ্বাস করতে চাচ্ছিলেন। তবে তার কাছে এটা অতি বেশি আশা করা বলে মনে হল।”আপনি আমার প্রতি অত্যন্ত সদয়” বললেন তিনি, “তাই আপনি আমাকে উৎসাহিত করতে চাচ্ছেন?”
তাঁর প্রশিক্ষণ শেষ হবার পর কিছু কাল আমাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ ছিল না। পরে আমাদের দেখা হয় এবং আমরা ম্যানুফ্যাকচারার ক্লাবে মধ্যাহ্ন ভোজ গ্রহণ করি। প্রথম দিনের মতো সেদিনও আমরা এক কোণার একটি টেবিল দখল করে বসি। আমাদের পূর্ব কথোপকথনের উল্লেখ করে আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমার বিশ্বাস সত্য হয়েছে কিনা। তিনি তাঁর পকেট হতে লাল কভার দেওয়া একটি নোট বই বের করে তাতে বিভিন্ন সভায় তার বক্তৃতা করার তারিখ সহ একটা তালিকা দেখালেন। এ সব সভায় তাঁকে বক্তৃতা করতে হবে।”আমি এখন বক্তৃতা করার ক্ষমতা অর্জন করেছি” তিনি স্বীকার করলেন, “এটা করতে আমি আনন্দ পাই, সমাজ সেবামূলক কাজে অংশ নিতে পারি এবং এটা হচ্ছে আমার জীবনের বিশেষ কাজ।”