- বইয়ের নামঃ দ্য ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস
- লেখকের নামঃ এইচ জি ওয়েলস
- প্রকাশনাঃ সৃজনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
দ্য ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস
১. পৃথিবীর ওপর নজর
দ্য ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস ( The War of the Worlds ) – উপন্যাস – এইচ জি ওয়েলস। অনুবাদ – অদ্রীশ বর্ধন
[‘The War of the Worlds’ ওয়েলসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য উপন্যাস, প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ধারাবাহিক আকারে ১৮৯৭ সালে ব্রিটেনে ‘Pearsons Magazine’ এবং মার্কিন দেশে ‘Cosmopolitan’ পত্রিকায়। ১৮৯৮ সালে এটি বই আকারে ছেপে বেরয় লন্ডনের ‘William Heinemann’ প্রকাশনী থেকে। মনুষ্য জাতি এবং এলিয়েন দ্বন্দ্বের সাহিত্য ধারার প্রথম দিককার নিদর্শন হিসেবে এই উপন্যাস এখনও উল্লেখযোগ্য। এই উপন্যাস অনুপ্রাণিত করেছিল এই ধারার আর অনেক গল্প, নাটক, উপন্যাস এবং চলচিত্র। ১৯৩৮ সালে উপন্যাসটি অনুসরণে অরসন ওয়েলেস কৃত রেডিয়ো নাটিকাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অগাস্ট ১৯২৭ সালে গল্পটি পুনঃপ্রকাশিত হয় ‘Amazing Stories’ পত্রিকায়। অদ্রীশের অনুবাদে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল কিশোর মন পত্রিকায় ১-১৫ নভেম্বর ১৯৮৫ সংখ্যায়।]
১৮০০-র শেষের কবছরে কাউকে যদি বলা হত, মানুষের চাইতে অনেক বেশি চৌকস প্রাণী পৃথিবীর ওপর নজর রেখে চলেছে পৃথিবীর বাইরে থেকে–হেসেই উড়িয়ে দিত কথাটা। সত্যি সত্যিই কিন্তু মহাশূন্যে বহু দূরে বসে এই ধরনের প্রাণীরা খর-নজরে দেখে যাচ্ছিল পৃথিবীকে। সেই সঙ্গে ফন্দি এঁটে চলেছিল, কীভাবে আক্রমণ করা যায় আমাদের।
১৮০০-র শেষের দিকে বিশ্বের বেশ কজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী বেজায় উত্তেজিত হলেন চাঞ্চল্যকর একটা খবর শুনে। মঙ্গল গ্রহের বুকে নাকি একটা বিস্ফোরণ দেখা গেছে। বিশালকায় একটা আগুনের গোলক নাকি বিষম বেগে ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। নানান খবরের কাগজে বেরল এই খবর। সাধারণ মানুষ কিন্তু বিচলিত হল না মোটেই। আসন্ন বিপদ উদবিগ্ন করল না কাউকেই।
খবরটা আমার কানে এসেছিল হঠাৎ। ওগিলভি নামে আমার এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী বন্ধু আছে। মানমন্দিরে বসে টেলিস্কোপ দিয়ে সে দেখেছিল ধাবমান অগ্নিগোলককে। রাস্তায় ওগিলভির সঙ্গে মুখোমুখি হতেই ব্যাপারটা বললে আমাকে।
সবশেষে বললে, স্বচক্ষে দেখতে যদি চাও, চলে এসো আজ রাতে। টেলিস্কোপের মধ্যে দিয়ে দেখতে পাবে ধাত ছেড়ে যাওয়ার মতো কাণ্ডকারখানা।
শুনেই রীতিমতো উত্তেজিত হয়েছিলাম। বললাম, বেশ তো, আসছি আজ রাত্রে।
সেই রাতেই টেলিস্কোপের মধ্যে দিয়ে দেখা গেল আর-একটা বিস্ফোরণ। গ্যাসের বিস্ফোরণ। তখন রাত ঠিক বারোটা।
টেলিস্কোপে চোখ লাগিয়ে ওগিলভিই প্রথমে দেখেছিল সেই বিস্ফোরণ। মঙ্গলের বুকে। চিৎকার করে উঠেছিল বিষম উত্তেজনায়, লালচে ঝলক! কী যেন একটা ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে!
ওকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে টেলিস্কোপে চোখ রেখেছিলাম আমি।
এবার দেখেছিলাম সেই আশ্চর্য দৃশ্য!
ধোঁয়ার কুণ্ডলী ঠিকরে যাচ্ছে রক্তরাঙা গ্রহ মঙ্গলের বুক থেকে!
হতভম্ব গলায় বলেছিলাম, ওগিলভি! ওগিলভি! এ কাদের সংকেত? মঙ্গল গ্রহের প্রাণীদের নাকি? সত্যিই কি মঙ্গলে জীব আছে?
ননসেন্স!–বলেছিল ওগিলভি, মঙ্গলের বুকে মানুষের মতো প্রাণীর অস্তিত্বের সম্ভাবনা লাখে একটাও নয়। যা দেখছ, তা বোধহয় উল্কাবৃষ্টি অথবা আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ।
মোটের ওপর, ওগিলভির মতো প্রত্যক্ষদর্শী বৈজ্ঞানিক ব্যাপারটাকে পাত্তাই দিল না। মঙ্গলগ্রহীরাও বিপুলবেগে ধেয়ে আসতে লাগল পৃথিবীর দিকে দিনে দিনে এগিয়ে আসতে লাগল কাছে… কাছে… আরও কাছে!
মঙ্গল গ্রহ যে রক্তরাঙা লাল গ্রহ, তা আমরা জানি অনেকদিন থেকেই। যুদ্ধের প্রতীক হিসেবে ধরে নিয়েছি এই গ্রহকে। কিন্তু কল্পনাও করতে পারিনি, সে যুদ্ধ হবে আমাদের সঙ্গেই। সূর্য থেকে চোদ্দো কোটি মাইল দূরে বসেও তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমাদের হালচাল দেখেছে, নিজেদের গ্রহে বসবাস যখনই একটু একটু করে কষ্টকর হতে আরম্ভ করেছে–ফন্দি এঁটেছে মাত্র সাড়ে তিন কোটি মাইল দূরের পৃথিবী গ্রহটাকে কবজায় আনার।
মঙ্গল আর পৃথিবী কাছাকাছি এসেছিল ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে। ২ আগস্টের খবরের কাগজে বেরল, একটা দারুণ আলোর ঝলকানি নাকি দেখা গেছে মঙ্গলের বুকে, পরপর কয়েক রাত ধরে চলল এই একই ব্যাপার। রাত ঠিক বারোটায় ঝলসিত হয় একটা বিপুল আলোকপিণ্ড–অন্তর্হিত হয় মিনিট পনেরো পরে। স্পেকট্রোস্কোকোপের বর্ণালি দেখে একজন বৈজ্ঞানিক বলেছিলেন, মনে হচ্ছে যেন একটা গ্যাসের পিণ্ড জ্বলতে জ্বলতে নক্ষত্রবেগে ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে।
ওগিলভির সঙ্গে দেখা হয় ঠিক এই সময়ে। নিস্তব্ধ মানমন্দিরে বসে এক কোণে রাখা ম্যাড়মেড়ে আলোয় রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম দুই বন্ধু। দেখেছিলাম মঙ্গলের বুকে হঠাৎ আলোর ঝলকানি। ঠিক যেন আর-একটা আলোর ডেলা ধেয়ে আসছে এই পৃথিবীর দিকে।
পরপর দশ রাত একই কাণ্ড দেখা গেল রহস্যময় গ্রহ মঙ্গলের বুকে। রাত ঠিক বারোটার সময়ে। তারপর থেকেই কিন্তু রক্তরাঙা গ্রহ শুধু লাল গ্রহই হয়ে রইল–লালের ঝলক দেখিয়ে আর বিড়ম্বিত করেনি পৃথিবীবাসীদের।
কিন্তু আক্কেল গুড়ুম করে দেবার পরিকল্পনা যে চালু হয়ে গেছে, তখনও যদি তা কেউ ভাবতে পারত।