- বইয়ের নামঃ নকশা
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ গোয়েন্দা কাহিনী
নকশা
০১.
সন্ধ্যাবেলা ইয়ার্ডের ওঅকশপে বসে আড্ডা দিচ্ছে তিন গোয়েন্দা। ক্যামেরা নিয়ে। আলোচনা হচ্ছে, ইনফ্রারেড-ক্যামেরা। ওরকম একটা ক্যামেরা এই জন্মদিনে উপহার পেয়েছে মুসা। সামনের টেবিলে পড়ে আছে। কাজে লাগাতে পারছে না বলে তার খুব দুঃখ।
এই সময় ফোন বাজল। অলস ভঙ্গিতে হাত বাড়িয়ে রিসিভার তুলে কানে ঠেকাল কিশোর। হালো?
পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ড?
হ্যাঁ।
কে, কিশোর? আমি ভিকটর সাইমন।
মুহূর্তে সজাগ হয়ে উঠল কিশোর। নিশ্চয় কোন কেস। ও, আপনি, স্যার? কি খবর?
ভাল। তোমাদের খবর কি? ব্যস্ত?
নাহ। কাজকর্ম কিছু নেই। বসে বসে ঝিমুচ্ছি।
ভালই হলো। ওয়াল্ট ক্লিঙ্গলস্মিথ নামে এক ভদ্রলোক আমার সামনে। বসে আছেন। ব্যবসায়ী। কারখানার মালিক। একটা বিপদে পড়ে আমার কাছে এসেছেন। কিন্তু আমার এখন মোটেও সময় নেই। তোমাদের কাছে পাঠাচ্ছি। দেখো, কোন সাহায্য করতে পারো কিনা?
বিপদটা কি, স্যার?
মিস্টার স্মিথকে পাঠাচ্ছি। তার কাছেই শুনো।
এখনই পাঠাবেন?
হ্যাঁ, এখনই।
আচ্ছা, পাঠান। আমরা তিনজনেই আছি।
দ্বিধা করে বললেন সাইমন, আরেকটা কথা, চোখ-কান একটু খোলা রেখো। ক্লিঙ্গলস্মিথের সন্দেহ, তার পেছনে লোক লেগে আছে। ইয়ার্ডেও গিয়ে হাজির হতে পারে ওরা। সাবধান থাকবে।
থাকব।
কোন দরকার হলে আমাকে ফোন কোরো। বাড়িতেই আছি।
আচ্ছা।
রাখলাম?
আচ্ছা।
কিশোরকে ধন্যবাদ দিয়ে লাইন কেটে দিলেন সাইমন।
উৎসুক হয়ে কিশোরের দিকে তাকিয়ে আছে মুসা আর রবিন। সে রিসিভার রাখতেই মুসা জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার? কোন কেস?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। আর আফসোস করা লাগবে না। তোমার ক্যামেরা ব্যবহারের সুযোগ এসে গেছে। বাইরে গিয়ে লুকিয়ে বসে থাকোগে। এখন থেকে যে ভেতরে ঢুকবে তারই ছবি তুলে নেবে। গোপনে। কিছু যেন টের না পায়। আমি গেট খুলে রাখছি।
অবাক হয়ে কিশোরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে মুসা। কিছুই বুঝলাম না!
বুঝতে আমিও পারছি না। মিস্টার সাইমন বললেন চোখ-কান খোলা রাখতে। তা-ই রাখব। ইনফ্রারেড-ক্যামেরার চেয়ে কড়া নজর আর কোন চোখের নেই। লেন্সের সামনে পড়লে আর ফসকবে না। সুতরাং ওই চোখই ব্যবহার করতে বলছি।
আর কোন প্রশ্ন না করে টেবিলে রাখা ক্যামেরাটা তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেল মুসা। কাজে লাগানোর জন্যে অস্থির হয়ে ছিল, সেই সুযোগ পেয়ে গেছে আজ।
জঞ্জালের আড়ালে লুকিয়ে বসল মুসা।
ইয়ার্ডের বেশির ভাগ আলোই নেভানো। বোরিস আর রোভারকে নিয়ে রাশেদ পাশা গেছেন পুরনো মালপত্র দেখতে। দোতলার ঘরে মেরিচাচী একা।
রাস্তায় গাড়ি চলাচল করছে। এ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। কয়েক মিনিট পর একটা মোটর সাইকেলের ইঞ্জিনের শব্দ শুনল মুসা। শক্তিশালী ইঞ্জিন। ইয়ার্ডের গেটের কাছে একবার থমকাল মনে হলো, তারপর চলে গেল।
বসেই আছে মুসা, গেটের দিকে তাকিয়ে। হঠাৎ দেখতে পেল লোকটাকে। কেমন অনিশ্চিত ভঙ্গিতে ভেতরে ঢুকল। এগিয়ে আসতে লাগল। কিছুদূর এসে থমকে দাঁড়াল। তাকাল এদিক ওদিক। এমন ভঙ্গি করল, যেন ভুল করে ঢুকে পড়েছে। ঘুরে আবার এগিয়ে গেল গেটের দিকে। বেরিয়ে গেল।
ততক্ষণে ছবি তুলে ফেলেছে মুসা।
খানিক পর একটা গাড়ি এসে থামল গেটের সামনে। হর্ন বাজাল। ওঅর্কশপ থেকে বেরিয়ে গেল কিশোর আর রবিন। গাড়িটার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। আরোহীর সঙ্গে কথা বলে সরে দাঁড়াল।-ভেতরে ঢুকল গাড়িটা। ইয়ার্ডের চত্বরে থামল।
গাড়ি থেকে নামলেন যিনি, তাঁর মাথা জুড়ে টাক, দীঘল শরীর, পরনে ধূসর রঙের পুরানো ছাঁটের স্যুট। হাত বাড়িয়ে দিলেন কিশোরের দিকে।
ছবি তুলে ফেলল মুসা। শুনতে পেল, ভদ্রলোক বলছেন, আমি ওয়াল্ট ক্লিঙ্গলস্মিথ।
কিশোর পশিা, নিজের পরিচয় দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল গোয়েন্দাপ্রধান। ও রবিন। আমাদের আরেক বন্ধু মুসা আমান, একটা জরুরী কাজে বাইরে গেছে। চলে আসবে।
রবিনের সঙ্গেও হাত মেলালেন স্মিথ। তাঁকে নিয়ে ঘরের দিকে এগোল কিশোর আর রবিন। বারান্দায় উঠল। ঢুকে গেল ভেতরে। বসার ঘরে ঢুকেছে।
ক্যামেরা হাতে বসেই রইল মুসা।
বসার ঘরে ঢুকে স্মিথকে বসতে বলল কিশোর। নিজেও বসল। জিজ্ঞেস করল, চা-টা কিছু দেব?
না না, দরকার নেই, হাত নেড়ে বললেন ভদ্রলোক, মিস্টার সাইমনের বাড়ি থেকে কফি খেয়ে এসেছি। সাংঘাতিক প্রশংসা করলেন তোমাদের। তোমরা নাকি অনেক বড় গোয়েন্দা।
জবাবে শুধু হাসল কিশোর।
কেশে গলা পরিষ্কার করে নিলেন স্মিথ। বললেন, হ্যাঁ, যা বলতে এসেছি সেটাই বলি। আমার এক ভাগ্নেকে খুঁজে বের করে দেয়ার অনুরোধ করব তোমাদের। তার নাম মাটি লফার, সে-ও আমারই মত কারখানার মালিক। অল্প বয়েসেই লস অ্যাঞ্জেলেসের বড় ব্যবসায়ী হয়ে গেছে। মাস তিনেক আগে নিখোঁজ হয়েছে।
চুপ করে রইল কিশোর। অপেক্ষা করছে।
প্লেন নিয়ে বেরিয়েছিল, আবার বললেন স্মিথ। সঙ্গে ছিল তার এক বন্ধু, লুক ব্রাউন। অ্যারিজোনার মরুভূমিতে নেমে কলোরাডো নদীর কাছাকাছি হারিয়ে যায় ওরা। তাদের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। বেমালুম গায়েব।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, প্লেনটার কি হয়েছে?