- বইয়ের নামঃ খাবারে বিষ
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
খাবারে বিষ
১
রকি বীচ মেমোরিয়াল হসপিটালের আউটডোর পার্কিঙের কাছে এসে ঘাঁচ করে ব্রেক কষল মুসা। গাড়ির অভাবে অনেক কষ্ট করেছে। তাই কিনে ফেলেছে আরেকটা। অবশ্যই সেকেন্ড হ্যান্ড এবং পুরানো মডেল। একাশি মডেলের শিরোকো। গোঁ গোঁ করে দুবার গর্জে উঠে বন্ধ হয়ে গেল ইঞ্জিন। উইন্ডশীল্ড ওয়াইপার দুটো চলতে চলতে থেমে গেল মাঝপথে।
খাইছে! বলল সে, বৃষ্টি যা হচ্ছে না!
হ্যাঁ, মাথা ঝাকাল পাশে বসা কিশোর পাশা।
শুধু বৃষ্টি না, ঝড়ো বাতাসও বইছে। ঝমঝম ঝমঝম অবিরত উইন্ডশীন্ডে আঘাত হেনে চলেছে বড় বড় ফোটা। আকাশ চিরে দিল বিদ্যুতের শিখা। বাজ পড়ল বিকট শব্দে।
থামবে না। এরই মধ্যে বেরোতে হবে, মুসা বলল। ভিজিটিং আওয়ারও শেষ হয়ে আসছে।
ফারিহাকে দেখতে এসেছে ওরা। একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে। ইদানীং ওর সঙ্গে হৃদ্যতা গড়ে উঠছে মুসার।
চুপ করে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর।
কি হলো, নাম না। ফারিহা অপেক্ষা করছে।
করুক। বৃষ্টি যে হচ্ছে সেটাও নিশ্চয় বুঝতে পারছে। কার ওপর বিরক্ত হয়েছে কিশোর, বোঝা গেল না। সীটবেল্ট খুলল।
আসলে মেয়েদেরকে তুমি দেখতে পারো না।
কথাটা ঠিক না, মুসা। তবে ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান শুরু করে যখন, তখন আর ভাল্লাগে না। আর যখন কোন ব্যাপারে অহেতুক চাপাচাপি শুরু করে, না বুঝে।
হেসে উঠল মুসা। জিনার সামনে বলে দেখ এসব কথা…
বললে কি হবে? খেয়ে ফেলবে নাকি?
জবাব দিল না মুসা। ঠেলা দিয়ে খুলে ফেলল দরজা। উইন্ডব্রেকারের হুড তুলে দিয়ে বেরিয়ে গেল বৃষ্টির মধ্যে। মাথা নিচু করে দিল দৌড়। কিশোরও বেরোল। দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে মুসার পিছু নিল।
বারান্দায় উঠে উইন্ডব্রেকার খুলে ঝেড়ে পানি ফেলল। তারপর ভাঁজ করে। হাতে নিয়ে রওনা হলো রুম নম্বর ১১১১-এর দিকে।
ঢুকে দেখল বিছানায় শুয়ে আছে ফারিহা ডিকটার। ফোনে কথা বলছে। এক আঙুলে বার বার পেঁচাচ্ছে কোঁকড়া চুল। টিভি অন করা। মিউজিক শো চলছে। দেখে মনেই হয় না, মাত্র তিনদিন আগে অ্যাপেনডিক্স অপারেশন হয়েছে তার।
রকি বীচ হাই স্কুলে হাসিখুশি মিশুক মেয়ে বলে সুনাম আছে ফারিহার। মাস ছয়েক আগে হঠাৎ করেই মনে হয়েছে তার, মুসা খুব ভাল ছেলে। ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করা চলে।
ওদেরকে ঢুকতে দেখে ফোনে বলল ফারিহা, আজ রাখি, শেলি। মুসা আর কিশোর এসেছে… কি বললে?… কিশোর?…জানি না।
নিজের নাম শুনে শূন্য দৃষ্টিতে একবার ফারিহার দিকে তাকিয়েই আরেক দিকে চোখ সরিয়ে নিল কিশোর।
ও তো সব সময়ই মেয়েদেরকে এড়িয়ে চলে, ফারিহা বলল। আচ্ছা, দেখি জিজ্ঞেস করে, কিশোরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, শেলি কথা বলতে চায়।
ঢোক গিলল কিশোর। যত জটিল রহস্যই হোক, তাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে ওর কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যতই বড় হচ্ছে, বুঝতে শিখছে, অভিজ্ঞ হচ্ছে, ততই যেন মেয়েদেরকে আরও বেশি রহস্যময় মনে হচ্ছে ওর। ওদের কোন কিছুই যেন বোঝা যায় না। না বলতে পারলেই খুশি হত কিশোর, তবু এভাবে মুখের ওপর বলে দেয়াটা অভদ্রতা। তাই হাত বাড়াল, দাও।
রিসিভার কানে ঠেকাল গোয়েন্দাপ্রধান। হ্যালো। কিশোর পাশা বলছি।
খিলখিল করে হাসল শেলি। ঘাবড়ে গেছ মনে হয়? তারপর? চলছে কেমন?
এই তো শুরু হলো ফালতু কথা! মনে মনে বলল কিশোর। জিজ্ঞেস করল, কি চলছে?
বোকা নাকি? কেমন আছ জিজ্ঞেস করছি, বুঝতে পারছ না?
তাহলে কেমন আছি, সেটা সোজা করে জিজ্ঞেস করলেই হয়।
আ মর, জ্বালা! তোমার সঙ্গে কথা বলাই ঝকমারি…
তাহলে বলো কেন?
হাসতে আরম্ভ করেছে মুসা আর ফারিহা। জানে, এরকমই একটা কিছু ঘটবে।
বলি কেন? এটা একটা কথা হলো…
ঘামতে শুরু করেছে কিশোর। ঠিক এই সময় লাল চুলওয়ালা একজন নার্স উঁকি দিয়ে বলল, ভিজিটিং আওয়ার শেষ। বেরিয়ে যেতে হবে। হাঁপ ছেড়ে বাঁচল যেন কিশোর। তাড়াতাড়ি রিসিভারটা ফিরিয়ে দিল ফারিহার হাতে। ফারিহা বলল, শেলি, পরে কথা বলব। এখন রাখি…
বলেই চলে গেছে নার্স। হঠাৎ ঝটকা দিয়ে খুলে গেল দরজা। দুজন আদালী আর দুজন নার্স একটা চাকাওয়ালা বেড ঠেলতে ঠেলতে ঢুকল। সঙ্গে ঢুকলেন একজন ডাক্তার। লাফিয়ে সরে গেল কিশোর।
বেডটাতে একজন রোগী। একটা মেয়ে। কিশোরদেরই বয়েসী হবে। কালো কোঁকড়া চুল। সুন্দর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। জখম আছে। ব্যান্ডেজ লাগানো।
ফারিহা, ডাক্তার বললেন। তোমার নতুন রুমমেট। রোগীকে ফারিহার পাশের বিছানাটায় শোয়াতে নার্সদের সাহায্য করলেন তিনি। বেহুঁশ হয়ে আছে রোগী।
বেশি অসুস্থ? ফারিহা জানতে চাইল।
ওর জখমগুলো সুপারফিশিয়াল মনে হচ্ছে, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর। আমার ধারণা, কনকাশন আর মাইল্ড শক থেকে সেরে উঠছে।
হাঁ হয়ে গেছেন ডাক্তার। অবাক হাসি ফুটল মুখে। ডাক্তারি পড়ছ নাকি?
না, মাথা নাড়ল কিশোর। তবে অবসর সময়ে যে কোন বই হাতের কাছে পেলে পড়ে ফেলি।
নার্সেরা কাজ শুরু করে দিয়েছে। মেয়েটার হাতে স্যালাইনের সুচ ঢুকিয়ে দিয়েছে। স্যালাইনের সঙ্গে আরও নানারকম ওষুধ মিশিয়ে দিতে লাগল। কাজ শেষ করে সরে দাঁড়াল। চার্টে নোট লিখে দিতে লাগলেন ডাক্তার।