- বইয়ের নামঃ কানা বেড়াল
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
কানা বেড়াল
০১.
কাজে ব্যস্ত কিশোর পাশা আর মুসা আমান, এই সময় বড় বড় দুটো কাঠের গামলা নিয়ে তিন গোয়েন্দার ব্যক্তিগত ওয়ার্কশপে ঢুকলেন রাশেদ পাশা। ছেলেদের সামনে এনে মাটিতে রাখলেন ওগুলো। কোমরে হাত দিয়ে বললেন, কাজ নিয়ে এলাম। রঙ করতে হবে। লাল, নীল আর সাদা ডোরা।
ওই গামলায় রঙ? অবাক হলো মুসা।
এখন? হাতের স্ক্রু-ড্রাইভার নেড়ে বললো কিশোর।
তিন গোয়েন্দার জন্য একটা কি-জানি-যন্ত্র বানাচ্ছে কিশোর, ওয়ার্কবেঞ্চে রাখা ইলেকট্রনিক যন্ত্রগুলো দেখিয়ে বললো মুসা।
নতুন আবিষ্কার? আগ্রহী হলেন রাশেদ পাশা, ক্ষণিকের জন্যে ভুলে গেলেন গামলার কথা।
কি জানি? হাত নাড়লো মুসা। আমাকে কিছু বলে নাকি? আমি তো শুধু ওর ফাইফরমাশ খাটছি।
পরে করলে হয় না, চাচা? কিশোর জিজ্ঞেস করলো।
না, আজ রাতেই দরকার। ঠিক আছে, তোমরা না পারলে বোরিস আর রোভারকে গিয়ে বলি, মিটিমিটি হাসি রাশেদ পাশার চোখের তারায়। কিন্তু তাহলে গামলাগুলো ডেলিভারিও দেবে ওরাই।
সতর্ক হয়ে উঠলো কিশোর। মানে?
রাশেদচাচার সারা মুখে হাসি ছড়ালো। ধরো, ওই গামলাগুলোকে সিংহের আসন বানানো হলো। কেমন হবে?
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকালো মুসা, সিংহেরা শুধু এই তালেই আছে। কখন লাল-নীল চেয়ারে বসবে।
কিশোর হাসছে না। চোখ উজ্জ্বল। ঠিক বলেছো, চাচা, খুব ভালো হয়। উপুড় করে বসালে চমৎকার সীট হবে সিংহের…তবে অবশ্যই সার্কাসে!
খাইছে! সার্কাস! হাসি মুছে গেল মুসার মুখ থেকে। গামলা-ডেলিভারি দিতে গেলে সার্কাসের ভেতরটা ঘুরিয়ে দেখাবে আমাদেরকে?
ঠিক সার্কাস নয়, হাসিমুখে খবর জানালেন রাশেদ পাশা। কারনিভল। আমাদের দেশের মেলা আরকি। নানা রকমের খেলা, আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা আছে। কাল রাতে এসে আস্তানা গেড়েছে রকি বীচে। সিংহ বসার বেদীগুলো নাকি পুড়ে গেছে। মুশকিলে পড়েছে বেচারা লায়ন ট্রেনার। কিসে বসিয়ে সিংহের খেলা দেখায়? অনেক খুঁজেও ওরকম বেদী কোনোখানে পেলো না, শেষে আমাদের ফোন করলো, পুরনো বেদী-টেদী যদি থাকে। নেই, বলেছি। শেষে আমিই পরামর্শ দিয়েছি, গামলা দিয়ে আসন বানানো সম্ভব, কথা থামিয়ে বিশাল গোঁফের কোণ ধরে টানলেন তিনি। ওগুলো পেলে খুব উপকার হবে ওদের। হয়তো ঘুরিয়ে দেখাতেও পারে।
কিশোর! প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো মুসা। তাহলে আর দেরি করছি কেন আমরা? রঙ আনো। আমি স্প্রে গান রেডি করছি।
আধ ঘন্টার মধ্যেই রঙ হয়ে গেল। শুকাতে সময় লাগবে। এই সুযোগে সাইকেল নিয়ে রবিনকে খবর দিতে চললো মুসা, রকি বীচ পাবলিক লাইব্রেরিতে, যেখানে পার্টটাইম চাকরি করে রবিন মিলফোর্ড। শুনে, রবিনও উত্তেজিত। সময় আর কাটে না, কখন অফিস ছুটি হবে। ছুটির পর আর এক মুহূর্ত দেরি করলো না। সাইকেল নিয়ে ছুটলো স্যালভিজ ইয়ার্ডে।
তাড়াতাড়ি মুখে কিছু গুঁজে রাতের খাওয়া শেষ করলো তিন গোয়েন্দা। সাড়ে সাতটা নাগাদ বেরিয়ে পড়লো। গামলা দুটো বেঁধেছে কিশোর আর মুসার সাইকেলের ক্যারিয়ারে।
দূর থেকেই চোখে পড়লো কারনিভলের আলো। একটা পরিত্যক্ত পার্কের পাশে অসংখ্য তাঁবু আর কাঠের ছোট ছোট খুপড়ি। সাময়িক তারের বেড়া, যাওয়ার সময় আবার তুলে নিয়ে চলে যাবে। জোরে জোরে বাজনা বাজছে মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্যে। ঘুরছে শূন্য নাগরদোলা। একটা পথের মাথায় দাঁড়িয়ে আছে দুজন ভাঁড়।
লায়ন ট্রেনারের তাঁবু খুঁজে বের করতে অসুবিধে হলো না। লাল কাপড়ে সাদা অক্ষরে লিখে বিজ্ঞাপন টানানো হয়েছেঃ কিং–দুনিয়ার সবচেয়ে বুদ্ধিমান সিংহ। তাঁবুর সামনে দাঁড়িয়ে লম্বা একজন লোক, পরনে গাঢ় নীল পোশাক, পায়ে চকচকে বুট; ওদের দেখে এগিয়ে এলো। গোঁফে তা দিয়ে বললো, এসে গেছো! দেখি? ভালো হয়েছে তো?
পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ড কখনও বাজে মাল সাপ্লাই দেয় না, কিশোর বললো।
বাহ, হেসে উঠলো লোকটা। একেবারে বারকারদের মতো কথা বলছে, ইয়াং ম্যান।
বারকার কি, স্যার? জিজ্ঞেস করলো মুসা।
আন্দাজ করো তো, মিটিমিটি হাসছে লোকটা।
বাজি রেখে বলতে পারি, আমাদের কিশোর জানে, ঘোষণা করলো রবিন।
তাকে নিরাশ করলো না গোয়েন্দাপ্রধান। বারকার হলো, যে সার্কাস কিং কারনিভলের বাইরে দাঁড়িয়ে দর্শকদের জানায়, ভেতরে কি মজার মজার ব্যাপার। হচ্ছে। এটা এক ধরনের বিজ্ঞাপন, পুরনো।
জানো তাহলে, লোকটা বললো। আরও নাম আছে ওদের। কেউ বলে স্পাইলার, কেউ পিচম্যান। যতোই বোঝাও বারকারদের, লাভ হবে না, বাড়িয়ে বলবেই। আসলে ওটাই ওদের কাজ। তবে খুব ভালো আর অভিজ্ঞ বারকারের। মিথ্যে বলার প্রয়োজন পড়ে না, সত্যি কথা বলেই দর্শক আকৃষ্ট করতে পারে। এই আমাদের বারকারের কথাই ধরো না, কিঙের কথা এক বর্ণ বাড়িয়ে বলবে না সে। অথচ যা বলবে তাতেই লোকে দেখার জন্যে পাগল হয়ে উঠবে। সিংহকে ট্র্যাপিজের খেল দেখাতে দেখেছো কখনও?
খাইছে! চোখ বড় বড় হয়ে গেল মুসার। সিংহ আবার ট্র্যাপিজে উঠতে পারে নাকি?
আমাদেরটা পারে। বিশ্বাস না হলে নিজের চোখেই দেখবে। আর ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ফার্স্ট শো শুরু হবে। এসো, তোমরা আমার মেহমান। টিকেট লাগবে না।…ও, আমি মারকাস। মারকাস দ্য হারকিউলিস।