- বইয়ের নামঃ মৃত্যুখনি
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
মৃত্যুখনি
১
এই যে, কিশোর, দুই সুড়ঙ্গের ঢাকনা তুলে উঁকি দিয়েই বলল মুসা আমান, জানন, কার সঙ্গে দেখা হয়েছে?
মুসার পেছনে হেডকোয়ার্টারে ঢুকল রবিন মিলফোর্ড।
হেডকোয়ার্টার মানে পুরানো বাতিল একটা ট্রেলার-মোবাইল হোম, পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডের পাহাড় প্রমাণ লোহালকড়ের জঞ্জালের তলায় চাপা পড়েছে অনেক দিন আগে, বাইরে থেকে দেখা যায় না। ভেতরে ঢোকার জন্যে কয়েকটা গোপন পথ বানিয়ে নিয়েছে তিন গোয়েন্দা, তারই একটা দুই সুড়ঙ্গ।
জানি, বলল ডেস্কের ওপাশে সুইডেল চেয়ারে বসা কিশোর পাশা, মেরিচাচী। আজ ভোর ছটায় উঠে নাস্তা খাইয়ে জোর করে রাশেদ চাচাকে পাঠিয়েছে একটা গ্যারেজে, পেপারে বিজ্ঞাপন দিয়েছে ওখানে নাকি অনেক পুরানো মাল বিক্রি হবে, জিনিসপত্রের লিস্ট দেখে খুব পছন্দ হয়েছে চাচীর।
ঘড়ির দিকে তাকাল সে। সোয়া একটা বাজে। এতক্ষণে নিশ্চয় এসে পড়েছে চাচা। ট্রাক বোঝাই করে মালপত্র নিয়ে এসেছে। বোরিস আর রোভার একা পারছে না, নামানোর জন্যে আমাদেরকেও দরকার। তাই ওয়ার্কশপে খুঁজতে এসেছে চাচী, আসার সময় তাকেই দেখে এসেছ।
হলো না, হাসল রবিন। ভুল করলে মিস্টার শার্লক হোমস, চেয়ারে বসতে বসতে বলল সে। কিশোর পাশাও ভুল করে তাহলে।
চাচী নয়, কিশোর, চাচী নয়, মুখ টিপে হাসল মুসা। অনুমান করো তো, আর কে হতে পারে?
উঁ-হুঁ, পারছি না, অবাক হয়েছে যেন কিশোর। তোমরাই বলো।
ধীরে বন্ধু, ধীরে, খুব মজা পাচ্ছে সহকারী গোয়েন্দা, এত তাড়াহুড়ো কেন? এসেছি, দু-দণ্ড বসি, জিরাই, তারপর বলব। এখন কেমন লাগছে? কোন রহস্য যখন বুঝি না, আমাদের ধাধায় রেখে খুব তো মজা পাও। এখন?
না ভাই, আর থাকতে পারছি না, আগ্রহে সামনে ঝুকে এল কিশোর। বলো না, বলেই ফেলো।
তাহলে ভবিষ্যতে আর ভোগাবে না তো আমাদের?
না।
রবিনের দিকে তাকাল মুসা। কিরবিন, বলব?
মাথা কাত করল রবিন। কিশোরের হাবভাব সন্দিহান করে তুলছে তাকে। এভাবে আগ্রহ প্রকাশ করবে কিশোর পাশা?…নাহ ঠিক মানাচ্ছে না স্বভাবের, সঙ্গে…
সকালে বাজারে গিয়েছিলাম, বলার জন্যে উদগ্রীব হয়ে আছে মুসা, এতক্ষণ চেপে রাখতে তারই কষ্ট হয়েছে। দেখা হয়ে গেল জিনার সঙ্গে।
জিনা? ঝট করে সোজা হলো কিশোর।
আরে হ্যাঁ, জিনা। আমাদের জরজিনা পারকার।
তাই নাকি? আমি তো জানতাম নিউ মেসিকোয় ছুটি কাটাচ্ছে ও, চাচার র্যাঞ্চে। তার মা-বাবা গেছেন জাপানে, সেখানে এক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে যোগ দেবেন মিস্টার পারকার।
তুমি জানতে? কই বলোনি তো।
জিজ্ঞেস তো করোনি। যাকগে, কোথায় এখন জিনা?
পারকার হাউসে, জবাব দিল রবিন। মুসার কাছে শুনলাম, কিছু জিনিসপত্র নিতে এসেছে, শুছিয়ে নিচ্ছে হয়তো।
জ্বী না, জনাবেরা। আমি এখানে,পর্দা সরিয়ে ল্যাবরেটরি থেকে বেরিয়ে এল জিনা। পরনে রঙচটা জিনসের প্যান্ট, গায়ে ধবধবে সাদা সিল্কের ওয়েস্টান শার্ট,
যেন এই মাত্র নামল ঘোড়ার পিঠ থেকে।
হাঁ হয়ে গেল মুসা আর রবিন।
মিটিমিটি হাসছে কিশোর।
তু-তুমি! তোতলাচ্ছে মুসা কিশোরের দিকে চেয়ে। আমাদের বোকা…দুত্তোর! নিজের ওপর রেগে গেল সে। ভেবেছিল কিশোরকে জব্দ করবে, উল্টে তাদের দুজনকেই এমন চমকে দিল গোয়েন্দাপ্রধান। হতাশ চোখে রবিনের দিকে তাকাল মুসা।
তুমি বাড়ি যাওনি? মবিন জিজ্ঞেস করল জিনাকে।
না, বাজার থেকে সোজা চলে এসেছি। এই তো, আমিও ঢুকলাম, তোমরাও ঢুকলে।
তবে না বলেছিলে, বাড়ি যাবে? ক্ষোভ ঢেকে রাখতে পারল না মুসা, যেন সব দোষ জিনার।
বলেছিলাম, কিন্তু যাইনি। ইচ্ছে করেই যাওনি, আমাদের জব্দ করার জন্যে।
আরে, কি মুশকিল? আমি জানি নাকি, তুমি এসে এরকম করবে কিশোরের সঙ্গে। এতই যদি ঠকানোর ইচ্ছে ছিল, আগে বললে না কেন আমাকে?
আরে দূর, রাখো তো, ধমক দিয়ে দুজনকে থামাল রবিন। কি ছেলেমানুষী করছ? মুসা, তখনই বলেছিলাম, এসবের দরকার নেই, পারবে না কিশোরের সঙ্গে। ও সব সময় এক ধাপ এগিয়ে থাকে।
খামোকা লজ্জা দিচ্ছ, রবিন, বাধা দিল কিশোর। এটাতে আমার কোন মত ছিল না, নিতান্ত ভাগ্যক্রমেই ঘটে গেছে, জিনা তোমাদের আগে জল এসেছে যাকগে, জিনা, বসো। তা কি মনে করে?
এমনি। চাচার কাজ ছিল রকি বীচে। জিজ্ঞেস করল আসব নাকি? ভাবলাম, তোমাদের সঙ্গে দেখা করে যাই। তাছাড়া কয়েকটা জিনিস রয়েছে বাড়িতে, নিয়ে যাব।
কবে যাচ্ছ? আজই?
আগামীকাল।
ভালই কাটছে তাহলে ছুটি।
দারুণ, মাথা ঝাঁকি দিল জিনা, মুখের ওপর এসে পড়ল এক গোছা রোদেপোড়া তামাটে চুল, সরালো। যা একখান কেস পেয়েছি না। উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে বড় বড় তামাটে দুটো চোখের তারা।
কেস? মুসার রাগ পানি।
হ্যাঁ, ওপরে নিচে মাথা দোলাল জিনা। চাচার চোখে ধূলো দেয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু আমি তা হতে দেব না।
কেন বোকা নাকি তোমার চাচা?
তুমি যে কি বলো, মুসা, চাচা বোেকা হবে কেন? আমার বাপের ফুফাত ভাই কোয়েনটিন উইলসনকে বোকা বলে কার সাধ্য? স্টক মার্কেটে অনেক টাকা কামিয়েছে, নিউ মেকসিকোয় র্যাঞ্চ আর জায়গা কিনে এখন ক্রিস্টমাস গাছের ব্যবসা ফেঁদেছে। এমনিতে খুব চালাক। কিন্তু মানুষের ব্যাপারে একেবারে দিল-দরিয়া, সবাইকেই বিশ্বাস করে, সেজন্যে ঠকেও মাঝে-মধ্যে, তা-ও শিক্ষা হয় না।