- বইয়ের নামঃ এ রিভেঞ্জ অফ ডেথ
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস, ভূতের গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
এ রিভেঞ্জ অফ ডেথ
অপরসায়নের প্রকৃত রহস্য
এ রিভেঞ্জ অফ ডেথ – আগাথা ক্রিস্টি
১৫ই এপ্রিল,
১৮৯০
সবিনয় নিবেদন,
অপরসায়নের প্রকৃত রহস্য বিষয়ের যে প্রবন্ধ আমাদের পরের সভায় আপনি পাঠ করতে চেয়েছেন তার উত্তরে জানাই, তা কাউন্সিল সভার কার্যাবলীর অন্তর্ভুক্ত করতে পারছেন না।
ইতি সেক্রেটারি
১৮ই এপ্রিল,
১৮৯০
সবিনয় নিবেদন,
দুঃখের সাথে জানাই, আপনি যে বিষয়ের ওপর বলবেন সে সম্বন্ধে আপনার সাথে আলোচনা করার সময় নেই। এছাড়াও আমাদের সংগঠনের এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করাও বেআইনি হবে। এর আগে যে খসড়া পাঠিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞেরা যথার্থ গুরুত্বের সাথে পড়েই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
ইতি সেক্রেটারি
২০শে এপ্রিল,
১৮৯০
সবিনয় নিবেদন,
সংগঠনের সম্পাদক শ্রদ্ধার সাথে মিঃ কার্সওয়েলকে জানাচ্ছেন যে তার খসড়া কাকে বা কাদের পাঠ করতে দেওয়া হয়েছিল তা জানানো অসম্ভব, এবং সেই সাথে জানাচ্ছেন যে উক্ত বিষয়ে আর কোনো পত্র লিখলে তার উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়।
ইতি সেক্রেটারি
সম্পাদকের পত্নী প্রশ্ন করলেন, মিঃ কার্সওয়েলকে, তিনি অফিসে এসে চিঠিগুলো তুলে নিয়ে গেছেন।
মানে, কার্সওয়েল এখন খুবই রেগে আছেন। তার বিষয়ে আমি শুধু এটুকু জানি যে তিনি খুবই বিত্তশালী। তার ঠিকানা লাফোর্ড অ্যাবি, ওয়ারউইকশায়ার। তিনি একজন অপরসায়নবিদ, মানে উৎকৃষ্ট না এমন কিছু ধাতু সোনায় পরিবর্তিত করার মধ্যযুগীয় প্রক্রিয়া বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, তার কিছু জানার আছে–আসল ব্যাপার তাই। তবে আমি পরবর্তী দু-এক সপ্তাহের মাঝে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইছি না।–আচ্ছা যদি প্রস্তুত হয়ে থাকো তা চলো, বেরোনো যাক।
কিন্তু তুমি কী করলে যার জন্য তিনি রাগান্বিত হলেন?
আরে এ কোনো নতুনত্ব ঘটনা নয়। এডোয়ার্ড ডানিংকে দিয়ে তার খসড়া পড়িয়েছিলাম। তার মতামত লেখাটা অত্যন্ত খারাপ আর সেই কারণেই আমি রাজি হইনি। আর তখন থেকেই কার্সওয়েল পরপর চিঠি দিয়ে যাচ্ছেন। শেষ চিঠিতে তিনি জানতে চেয়েছিলেন খসড়াটা কে পড়েছেন, আর সেই উত্তর তো তুমি পড়লে। এই বিষয়ে তুমি আর কোনো কথা বলো না।
না, তা কেন বলবো-আমার কি তাই অভ্যাস? যা হোক আশা করা যায় তিনি জানবেন না যে লোকটা বেচারা ডানিং।
ডানিংকে বেচারা বলছো কেন? তিনি ভীষণ সুখী, প্রচুর সৌখিন জিনিষ নিয়ে আরামের বাড়িতে দিব্যি আছেন।
না, মানে, আমি বলছিলাম, যদি ভদ্রলোক জানতে পারতেন ডানিংই নাকচ করেছেন তাহলে হয়তো-বা তাঁকে বিরক্ত করবেন।
হ্যাঁ, তা বলতে পার অবশ্য।
সেদিন তারা যে বন্ধুর বাড়িতে লাঞ্চে গিয়েছিলেন তাঁরাও ওয়ারউইকশায়ারের বাসিন্দা, সম্পাদকের স্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি কার্সওয়েলের বিষয়ে তাদের কাছে কিছু জানবেন। তবে বিষয়টা সুযোগমতো কায়দা করে বলতে হবে। তবে প্রসঙ্গটা তিনিই তুললেন তাকে বলতে হলো না। নানান কথায় গৃহকর্ত্তী গৃহকর্তাকে বললেন, জান, আজ প্রত্যুষেই আমি লাফোর্ডের অ্যাবটকে দেখেছিলাম।
তাই নাকি? তা, কি কারণ তার এখানে আসার?
বলতে পারব না, আমি গাড়িতে যেতে গিয়ে দেখলাম তিনি ব্রিটিশ মিউজিয়াম থেকে বের হয়ে আসছেন। স্বাভাবিকভাবেই সম্পাদকের স্ত্রী জানতে চাইলেন তিনিই প্রকৃত অ্যাবট কি না? এবং তার উত্তরে সম্পাদক বললেন, না না, তিনি আমাদের পাড়ার লোক, কয়েক বছর হলো অ্যাবটের সম্পত্তি ক্রয় করে অ্যাবট হয়েছেন। আদপে তার নাম কার্সওয়েল। জনান্তিকে গৃহকত্রীর দিকে তাকিয়ে সম্পাদক প্রশ্ন করলেন, আপনাদের বন্ধু কি তিনি?
সাথে সাথে তারা প্রতিবাদ করে উঠলেন, জানালেন, তার বিষয়ে তারা কিছু জানে না, আর একেবারেই অসহ্য হলো ভদ্রলোকের ভুত্যেরা! তিনি কি এক নতুন ধর্ম আবিষ্কার করেছেন, ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয় সেই ধর্মানুষ্ঠানে। এছাড়া সামান্য কিছুতেই মেজাজ খারাপ করে ফেলেন তিনি, এমনকি সারাজীবনে কখনও কাউকে ক্ষমা করেননি। তাকে দেখলে পরে ভীষণ ভীত হতে হয়। তবে এই ব্যাপারে অবশ্য গৃহকর্তা গৃহকত্রীর সাথে ঐক্যমতে আসতে পারেন না। দয়ামায়া সবকিছুই তার মধ্যে অনুপস্থিত এছাড়া তার সংস্পর্শে সব সময় খারাপ কিছু বহন করে নিয়ে আসে।
ঠিক সেই সময় গৃহস্বামী বাধা দিয়ে বললেন, বেচারার ওপর কিন্তু সুবিচার করছে না তুমি। স্কুলের ছাত্রর তার দ্বারা কত উপকৃত হয়েছেন তা মনে নেই?
মনে নেই আবার? কথাটা স্মরণ করিয়ে ভালোই করলে, কারণ এর থেকেও ভদ্রলোক সম্পর্কে একটা ধারণা জন্মায়। প্রথম যখন তিনি লাফোর্ডে এলেন, ধর্মর্যাজককে পত্রপাঠ জানালেন তিনি ম্যাজিক লণ্ঠনের দ্বারা ছাত্রদের কিছু দেখাতে চান–যা তাদের ভালো লাগার কথা। পত্র পেয়ে আশ্চর্য হলেন ধমর্যাজক, কারণ তাকে ছেলেদের প্রতি তিনি বিরূপ বলেই জানতেন, তার এলাকায় তাদের প্রবেশের কোনো অধিকার নেই প্রভৃতি নিয়ে প্রায় সময় ছাত্রদের সম্বন্ধে নালিশ করতেন। যাইহোক, তবুও ধর্মযাজক অরাজি হলেন না। নির্দিষ্ট দিন ঠিক হয়ে গেলো, নিজে গিয়ে তিনি দেখে এলেন সব ব্যবস্থা সঠিক হয়েছে কি না। পরে তিনি বলেছিলেন, ভগবানকে ধন্যবাদ যে, তাঁর নিজস্ব সন্তানরা সেই অনুষ্ঠান দেখতে যায়নি। ধর্মযাজক বলেন কার্সওয়েলের প্রকৃত লক্ষ্য ছিল গ্রামের ছেলেমেয়েদের অত্যন্ত ভীত করে দেওয়া এমনকি কোনোপ্রকার বাধাদানের চেষ্টা না করলে সত্যিই তারা প্রচণ্ড ভয় পেতো। প্রথমে তিনি শুরু করেন হাল্কা ধরনের ঘটনা দিয়ে যেমন লাল টুপি পরিহিত বাচ্চা এক মেয়ের কাহিনী। অবশ্য এই ঘটনায় একটি নেকড়েকে দেখানো হয়েছিল যা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ছিল ফলে বাচ্চাদের সবাইকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছিল গল্পটা বলার সময়। প্রথমেই কার্সওয়েল দূর থেকে ভেসে আসা ভয়াল নেকড়ের ডাক শুনিয়েছিলেন যা ধর্মযাজক মিঃ ফারারও কস্মিনকালে শোনেননি। ফাদার বলেন যে সমস্ত ছবিই ছিল বীভৎস অত্যন্ত সুন্দর এবং বাস্তব–কার্সওয়েল যে এধরনের ছবিগুলো কোথায় পেয়েছেন তা তাঁর পক্ষে আন্দাজ করা সম্ভব হয়নি। পরপর ছবি দেখানো হলো এবং ক্রমশই দেখা যাচ্ছে যে, সেগুলি ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্করতর হচ্ছে। বাচ্চারা সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো নিশ্রুপে দেখতে লাগলো। শেষ পর্যন্ত একটা ছবি তিনি দেখালেন যার মধ্যে দেখা যাচ্ছে একটা বাচ্চা ছেলে তার লাফোর্ডের বাগানের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, সময়টা সন্ধেবেলা ছেলেদের বাগানটা অপরিচিত নয়। পরক্ষণেই দেখা গেল একটা ভয়ঙ্কর দেখতে সাদা জন্তু লাফিয়ে বাচ্চাটাকে অনুসরণ করছে সে হয়তো বাচ্চাটাকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো নতুবা তাকে ছিঁড়ে খণ্ড খণ্ড করে ফেললো। এই বীভৎস দৃশ্য ধর্মযাজক মি. ফারারকেই ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছিল। এর থেকেই বোঝা যায় যে তা বাচ্চাদের ওপর কি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে এবং এ কথা ভাবলে ভয়ে গায়ে কাঁটা দেয়। তিনি অসহ্য হয়ে শেষে পর্যন্ত বাধ্য করলেন কার্সওয়েলকে প্রোগ্রাম বন্ধ করতে। তাতে কার্সওয়েল বললেন, বেশ, তাই যখন বলছেন, কথা শেষ না হতেই তিনি সাপ, শতপদী ও ডানাযুক্ত ভয়ঙ্কর প্রাণীদের একটা ছবি দেখাতে লাগলেন এবং একই সঙ্গে যে শুকনো খস্ খস্ শব্দ শোনা গেলো তাতে বাচ্চাদের মাথার কোনো ঠিক রইলো না। সাথে সাথে তারা পালিয়ে গেলো। আমার মনে হয় তাদের কেউই সে রাত্রে ঘুমোতে পারেনি। এই ঘটনায় গ্রামে প্রচণ্ড গণ্ডগোল হয়, বাচ্চাদের মায়েরা এই ঘটনার জন্য ফাদারকে দোষী সাব্যস্ত করে। কার্সওয়েলের এটাই সত্যিকারের পরিচয়।