- সূরার নাম: সূরা দুহা
- বিভাগসমূহ: ইসলামিক বই, কোরআন শরীফ
সূরা দুহা
আয়াতঃ 093.001
শপথ পূর্বাহ্নের,
By the forenoon (after sun-rise);
وَالضُّحَى
Waaldduha
YUSUFALI: By the Glorious Morning Light,
PICKTHAL: By the morning hours
SHAKIR: I swear by the early hours of the day,
KHALIFA: By the forenoon.
=============
সূরা দুহা বা প্রভাতের সুন্দর আলো – ৯৩
১১ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা ও সার সংক্ষেপ : এই সূরাটির সময়কাল হচেছ ৮৯ নং ও ৯২ নং সূরার সমসাময়িক। এই তিনটি সূরাতে রাত্রি ও দিনের বৈষ্যমের মাঝে তুলনা করা হয়েছে। এই সূরাতে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের আশ্বাস দান করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আশা ও সান্তনার বাণী। মানুষকে আহ্বান করা হয়েছে সৎপথের প্রতি এবং আল্লাহ্র নেয়ামত সমূহকে সনাক্ত করতে বলা হয়েছে – তাহলেই মানুষ বুঝতে সক্ষম হবে আল্লাহ্র অনুগ্রহ সমূহ। এই -ই হচ্ছে এই সূরার সাধারণ বিষয় বস্তু যা সর্বকালে সর্ব মানুষের জন্য প্রযোজ্য। রাসুলের (সা) জীবনীর প্রেক্ষাপটে সূরাটি অবতীর্ণ হয়। সেই সময়টি ছিলো রাসুলের (সা) জন্য অত্যন্ত কষ্টকর সময় যা কোন মানুষকে হতোদ্দ্যম করার পক্ষে যথেষ্ট। আল্লাহ্ নবীকে বলেছেন যে বর্তমান নিয়ে হতোদ্দম না হতে, কারণ অচিরেই ভবিষ্যতে তাঁর উজ্জ্বল সম্ভাবনা বিদ্যমান। রাত্রির নিঝুম নিরবতার অন্ধকারের পরে যেরূপ আলোকজ্জ্বল প্রভাতের আবির্ভাব ঘটে ঠিক সেরূপই উজ্জ্বল ভবিষ্যত তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। এই ভবিষ্যত জীবন হবে ইহকাল এবং পরলোকেও। ইহলোকের পার্থিব জীবনে তা হবে ইসলামের বিজয় ও আল্লাহ্র সন্তুষ্টি, পরলোকে আল্লাহ্র সান্নিধ্য। রাসুলের (সা) জীবনীর মাধ্যমে এই ছিলো বিশ্বজনীন উপদেশ।
সূরা দুহা বা প্রভাতের সুন্দর আলো – ৯৩
১১ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
১। প্রভাতের সুন্দর আলোর শপথ, ৬১৭৫
৬১৭৫। আলোকজ্জ্বল প্রভাতের শপথ করা হয়েছে। রাত্রির অন্ধকারকে বিদূরিত করে যখন ধীরে ধীরে প্রভাতের সুর্য পূর্ব দিগন্তের নীল আকাশে উদিয় হতে থাকে; তখন রাত্রির অন্ধকারের পটভূমিতে আলোর তীব্রতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। দেখুন [ ৯১ : ১ ] আয়াত। সূর্যদয় থেকে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত আলোর তীব্রতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে যার পটভূমি হচ্ছে নিশিত রাত্রির অন্ধকারের নিরবতা। ঠিক সেরূপ হচ্ছে মানুষের আধ্যাত্মিক জীবন। নিশিত রাত্রির নিরবতার ন্যায় আধ্যাত্মিক জগতকেও জাগতিক কর্মজগত থেকে সাময়িক বিরতিদান প্রয়োজন তাহলেই আধ্যাত্মিক জগতে প্রভাতের সূর্যের ন্যায় আল্লাহ্র হেদায়েতের আলোর উন্মেষ ঘটবে এবং ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। পৃথিবীর কর্মজগতের সকল চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহ্র ধ্যানে নিমগ্ন হওয়ার প্রকৃষ্ট সময় নিশিত রাত্রির নিরবতা। এটাই হচ্ছে আত্মিক বিকাশের প্রকৃষ্ট সময়। এ কথা ভাবার অবকাশ নাই যে রাত্রির নিরবতা বা শান্ত অবস্থা বৃথা অপচয় ঘটে, অথবা তা আধ্যাত্মিক জগতের জন্য প্রয়োজন নাই। এই নীরবতা জীবনকে পার্থিব কোলাহলমুক্ত করে আত্মাকে আল্লাহ্র অনুগ্রহের উপযুক্ত করে তোলে। মানুষ সে সময়ে একা নয়, আল্লাহ্ তাঁকে ত্যাগ করেন না। যদিও রাত্রির এই ধ্যানমগ্নতার প্রভাব বা ফলাফল তাৎক্ষণিক ভাবে লক্ষ্য করা যায় না, তাই বলে এ কথা ভাবার অবকাশ নাই যে, আল্লাহ্ তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। রাত্রির এই নীরব নিথর ধ্যান মগ্নতাই, আধ্যাত্মিক জীবনের ঊষালগ্নের সূচনা করে। যেমন নিরব নিথর রাত্রি শেষ পূর্ব দিগন্তে প্রভাতের সূর্যের উদয় ঘটে। অপূর্ব রূপক বর্ণনা ও রাসুলের জীবনের উদাহরণের মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষের কাছে এই সার্বজনীন সত্যের রূপকে তুলে ধরা হয়েছে।
আয়াতঃ 093.002
শপথ রাত্রির যখন তা গভীর হয়,
And by the night when it is still (or darkens);
وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَى
Waallayli itha saja
YUSUFALI: And by the Night when it is still,-
PICKTHAL: And by the night when it is stillest,
SHAKIR: And the night when it covers with darkness.
KHALIFA: By the night as it falls.
২। এবং শান্ত নিস্তব্ধ রাত্রির শপথ, ৬১৭৬ –
৬১৭৬। দেখুন সূরা [ ৯২ : ১ – ২ ] আয়াত। সেখানে রাত্রির উল্লেখ প্রথমে করে তারপরে উল্লেখ করা হয়েছে দিনের। এ ভাবেই বিপরীত বৈষম্যকে জোড়ালো ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সাধারণ ভাবে রাত্রির অন্ধকারের অনগুন্ঠন পৃথিবীকে সুপ্তির কোলে টেনে নেয়। সেই অবগুণ্ঠন সরিয়ে প্রভাতের সূর্যের আগমন ঘটে আলোর বন্যা নিয়ে। দিনের আরম্ভের পূর্বে থাকে রাত্রির অন্ধকারের অবগুন্ঠন। এই সূরাতে বিপরীত ভাবে যুক্তির উপস্থাপন করা হয়েছে।প্রভাতের সূর্যের ক্রমান্বয়ে উজ্জ্বলতা লাভ করাই হচ্ছে এখানের প্রধান বিষয়বস্তু। সুতারাং এটাকেই এই সূরাতে প্রথম শপথ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রাত্রির শান্ত নীরবতা হচ্ছে প্রভাতের প্রস্তুতির পূর্বশর্ত ; সুতারাং তা পরে উল্লেখ করা হয়েছে।