- বইয়ের নামঃ প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ-২
- লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ
- প্রকাশনাঃ গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স
- বিভাগসমূহঃ আত্মোন্নয়নমূলক
০০. প্রকাশকের কথা / লেখকের কথা
প্রকাশকের কথা
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই বিদ্যমান। সভ্যতার প্রতিটি যুগে, প্রতিটি সময়ে এবং প্রতিটি প্রেক্ষাপটে আমরা এই দ্বন্দ্বের লড়াই দেখতে পাই। দেখতে পাই তার চলমান ধারা। সত্য ও অসত্যের এই লড়াইয়ে সত্য সবসময় বিজয়ী হবে, এটাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ইচ্ছে। তাই, যখনই সভ্যতার মাঝে কোনো অসত্য, কোনো অবিশ্বাস বেঁকে বসেছে, তখনই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সেখানে সত্যের পক্ষে কথা বলার জন্য, সত্যের নিশান উড্ডীন করার জন্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তারা এসে মানুষকে সত্যের পথে ডেকেছেন। তাদের অনুপম স্পর্শে মুছে যেত অবিশ্বাস আর অসত্যের কালি। সত্যের আলোয় মুখরিত হয়ে উঠত অন্ধকার ধরণী। বিশ্বাসের সুশীতল বাতাস তারা বুলিয়ে দিতেন সকলের হৃদয়জুড়ে।
বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির। তথ্যপ্রবাহের অবাধ এবং স্বাধীন ব্যবহারের সুযোগে মানুষের জীবন যেমন সহজ হয়ে উঠেছে, তেমনি এই সহজলভ্যতা অস্থির করে তুলছে মানুষের অন্তরকে। তথ্যপ্রবাহের অবাধ ব্যবহারের এই সুযোগ পুঁজি করে ধর্মবিদ্বেষী একটি মহল খুবই চতুরতার সাথে সরলপ্রাণ মুসলিমদের মনে ঢুকিয়ে দিচ্ছে অবিশ্বাসের বিষ; হৃদয়-মনে বপন করে চলছে সন্দেহের বীজ। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে ধর্মের বিরুদ্ধে তাদের কৌশলী মিথ্যাচার। তাদের মিথ্যার বুলি ও প্রোপাগান্ডা এবং ইসলাম-বিদ্বেষী লেখাজোখা এমনভাবে আর এমন ঢঙে তারা উপস্থাপন করছে যে, সাধারণের কাছে তাদের কথাগুলোকে সত্য বলে মনে হতে পারে। তাদের এই মিথ্যার জালে পা দিয়ে ঈমানহারা হচ্ছে মুসলিম তরুণ-সমাজ।
ইসলামকে তারা পশ্চাদপদ, গোড়া, সেকেলে ও অসার এবং যুগের সাথে অসামঞ্জস্য প্রমাণ করতে চায়। এতে করে মুসলিম তারুণ্যকে তারা বোঝাতে চায়, আধুনিক জীবন মানেই হলো ঈশ্বর, ধর্ম ও ধর্মীয় জীবনাচরণমুক্ত জীবন ধারণ।
দুঃখের বিষয় হলো তাদের এরকম মিথ্যা ও প্রোপাগান্ডামূলক লেখালেখিতে প্রভাবিত হয়ে অনেক তরুণ-তরুণীরা বিপথে হাঁটছে। ধর্মকে তারা নিতান্তই মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত এবং খুবই আনকালচারড জ্ঞান করছে। তারা বেছে নিচ্ছে আধুনিকতার নামে ভ্রান্তিপূর্ণ বেহায়াপনার রাস্তা। নিজেরাও হয়ে উঠছে একেকজন। চরম ও হিংসাত্মক ধর্মবিদ্বেষী। এভাবে, ইসলাম বিদ্বেষীদের ছড়ানো বিষবাষ্প গ্রাস করে নিচ্ছে আমাদের প্রজন্মকে। প্রজন্ম হয়ে পড়ছে অস্থির, দিশেহারা ও দিকভ্রান্ত।
প্রজন্মকে অস্থির ও ভ্রষ্ট গহ্বর থেকে বাঁচিয়ে তুলতে হলে দরকার তাদের নিয়ে কাজ করা। যে-মিথ্যা এবং প্রতারণার ফাঁদে তারা পা দিয়েছে, সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করতে হলে প্রয়োজন সেই মিথ্যা এবং প্রতারণার জাল উপযুক্ত ও ধারাল যুক্তিতর্কের মাধ্যমে ছিন্ন করে দেওয়া। অবশ্যই সেটা করতে হবে তরুণদের মনস্তত্ত্ব বুঝে। তরুণরা কী চায় আর কীভাবে চায় সেটি প্রাধান্য দিয়ে এগোতে পারলেই তাদেরকে তুলে আনা যাবে বিভ্রান্তির ধ্বংসাত্মক মায়াজাল থেকে।
ইসলাম-বিদ্বেষী মায়াজাল ভেদ করে প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখাতে যে কজন কাজ করে যাচ্ছেন, আরিফ আজাদ নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে একজন তরুণ তুর্কি। নিজে একজন তরুণ হয়ে তরুণদের মনস্তত্ত্ব বুঝতে তিনি একদম ভুল করেননি। নাস্তিক তথা ইসলাম বিদ্বেষীদের উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে গিয়ে গৎবাঁধা প্রবন্ধ রচনা না করে, তিনি সেগুলোকে হৃদয়কাড়া গল্পে রূপ দিয়েছেন। পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে সেই গল্পগুলোতে রেখেছেন টানটান উত্তেজনা। সাজিদ চরিত্রটি গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে তিনি সাজিয়েছেন সবগুলো গল্পের রহস্যময়ী-চিত্রপট। শুধু তাই নয়, গল্পগুলোর যে পরিবেশ আর কাহিনিপট, তা দেখলে যে-কারও মনে হবে, ওই গল্পের তিনিও একজন অংশীদার। পরিচিত পরিবেশের মধ্য দিয়ে চেনাজানা মানুষগুলোর সাথে অনুসন্ধিৎসু আবহে এগিয়ে যায় গল্পের কাহিনি। এভাবেই সাজিদ রচনা করে যায় বিশ্বাসের পক্ষে যৌক্তিক কথামালা। সাজিয়ে যায় বিশ্বাসী হৃদয়ে ভালোবাসার পসরা। যুক্তি আর তথ্যের সাহায্যে কখনো-বা চুরমার করে দেয় অবিশ্বাসের অশুভ-দূর্গ। এভাবেই এগিয়ে যায় সাজিদ…।
বাংলা ইসলামী-সাহিত্যাঙ্গনে আরিফ আজাদ এখন নিত্য-আলোচিত, বহুলপ্রশংসিত ও পরিচিত মুখ। প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ লিখে চমক সৃষ্টি করেছেন বইমেলা ২০১৭-তে। এরপর রচনা করেছেন পাঠকনন্দিত বই আরজ আলী সমীপে। সম্পাদনা করেছেন প্রত্যাবর্তন, তিনিই আমার রব এবং মা, মা, মা এবং বাবার মতো সাড়া জাগানো বইয়েরও। তার অনবদ্য রচনা সাজিদ সিরিজের দ্বিতীয় বই-ই হলো।
সাবলীল, প্রাঞ্জল ও যৌক্তিক লেখার মাধ্যমে বিশ্বাসী মানুষের মনে শক্ত-জায়গা করে নেওয়া লেখক আরিফ আজাদের জন্য সমকালীন পরিবারের পক্ষ থেকে শুভকামনা। সাজিদ সিরিজের দ্বিতীয় বই প্রকাশ করতে পেরে সমকালীন পরিবার গর্বিত এবং আনন্দিত। আমরা লেখকের দীর্ঘায়ু কামনা করছি। উম্মাহর জন্য আরও বিপুল পরিমাণে কাজ করার সুযোগ যেন মহান রাব্বল আলামীন আমাদের এই ভাইকে দান করেন। আমীন।