- বইয়ের নামঃ ঋণ
- লেখকের নামঃ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
- প্রকাশনাঃ আনন্দ পাবলিশার্স (ভারত)
- বিভাগসমূহঃ উপন্যাস
০১. আপনার নাম
আপনার নাম?
মিঠু মিত্র।
বাবার নাম?
স্বৰ্গত পিনাকী মিত্র।
আপনার কোনও পোশাকি নাম আছে?
না, আমার একটাই নাম।
বয়স?
তেত্রিশ বছর।
ঠিকানা?
এই ফ্ল্যাটই আমার ঠিকানা।
এই ফ্ল্যাট ছাড়া আপনার আর কোনও বাড়ি নেই?
আছে।
কৃষ্ণনগরে। আমার বাবা করেছিলেন। কিন্তু সেটা ভাড়াটেদের দখলে। তারা ভাড়াও দেয় না।
বাড়ির ট্যাক্স কে দেয়?
আমিই দিই।
আপনি কোথায় চাকরি করেন?
এলাহাবাদ ব্যাঙ্কে।
ব্রাঞ্চ?
রসা রোড।
কী চাকরি করেন?
অ্যাকাউন্স অফিসার।
কতদিন চাকরি করছেন?
প্রায় দশ বছর।
একই ব্রাঞ্চে?
না। তিনটে ব্রাঞ্চে ঘুরে ফিরে।
আপনার ম্যারিটাল স্ট্যাটাস?
সিঙ্গল।
কখনও বিয়ে হয়েছিল?
হয়েছিল।
কার সঙ্গে?
মিতালি ঘোষ। ডিভোর্স হয়ে গেছে।
বিয়েটা ভেঙে গেল কেন?
মিতালি আমাকে পছন্দ করত না।
কেন করতেন না?
সেটা তারই জানার কথা।
অপছন্দের কথাটা তিনি কবে প্রকাশ করেন?
বিয়ের রাতেই।
অপছন্দ হলে তিনি আপনাকে বিয়ে করলেন কেন?
আমাদের বিয়ে কিছুটা অ্যাক্সিডেন্টাল।
কীরকম?
ওর বাবা বরুণ ঘোষের লাং ক্যান্সার হয়েছে বলে একজন বড় ডাক্তার সন্দেহ প্রকাশ করেন। মিতালি তার একমাত্র সন্তান, তিনি বিপত্নীক ছিলেন। সুতরাং তিনি খুব তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। হাতের কাছে আমাকে পেয়ে আমার সঙ্গেই বিয়ে দেন।
বরুণ ঘোষের সঙ্গে আপনার বিয়ের আগে পরিচয় ছিল?
সামান্য ছিল। আমার ব্রাঞ্চে ওঁর অ্যাকাউন্ট ছিল। প্রায়ই আসতেন। আমি তখন ক্যাশে বসতাম। সেই সূত্রেই পরিচয়।
মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পক্ষে পরিচয়টা যথেষ্ট নয় কিন্তু।
সেটা আমি অস্বীকার করছি না।
বরুণ ঘোষ কি নিজেই আপনার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন?
হ্যাঁ। আপনিও সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান?
না। আমার বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না। উনি ওঁর অসুখের কথা বলে আমাকে রাজি করান।
কিন্তু আমরা যতদূর জানি বরুণ ঘোষের ক্যান্সার হয়নি।
না। সেটা পরে ধরা পড়ে। কিন্তু তখন ক্যান্সার হয়েছে বলেই তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল।
দেখুন, আমরা পুলিশের লোক। সহজ সরলভাবে কোনও কথা বিশ্বাস করি না। আমাদের কাছে খবর আছে, বিয়ের ব্যাপারে আপনারই আগ্রহ ছিল বেশি। কারণ বরুণ ঘোষের টাকা এবং বিষয়সম্পত্তি। তার মেয়ে মিতালিও ছিল সুন্দরী এবং মেধাবী। আপনার যা স্ট্যাটাস তাতে বরুণ ঘোষের মতো একজন ধনী লোক তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে আপনার সঙ্গে দিতে চাইবেন এবং তার জন্য চাপাচাপি করবেন এটা কি স্বাভাবিক ঘটনা?
না, স্বাভাবিক ঘটনা নয়, আমিও জানি। কিন্তু তখন সিচুয়েশনটা স্বাভাবিক ছিল না। উনি নাচার হয়েই বিয়েটা দেন।
আমি যদি বলি, আপনি ওঁর মেধাবী ও সুন্দরী মেয়েটিকে বিয়ে করে ওঁর বিরাট সম্পত্তি গাপ করার জন্য ওঁকে ব্ল্যাকমেল করেছিলেন?
ব্ল্যাকমেল। কীভাবে ব্ল্যাকমেল করব?
সেটা আস্তে আস্তে জানা যাবে। তদন্তের তো মোটে শুরু।
আগেই বলেছি বরুণবাবুর সঙ্গে আমার পরিচয় গভীর ছিল না। ব্যাঙ্কের সূত্রে পরিচয়। তাকে ব্ল্যাকমেল করার প্রশ্নই ওঠে না।
এই বিয়েতে যে মিতালির আপত্তি ছিল, তা কি আপনি বিয়ের আগে জানতে পেরেছিলেন?
না।
মিথ্যে কথা। বিয়ের আগে মিতালিই আপনাকে টেলিফোন করে জানান যে, এই বিয়েতে তিনি রাজি নন।
না তো, এরকম ঘটনা ঘটেনি।
শুধু তাই নয়, মিতালি আপনাকে একটা চিঠিও লিখেছিলেন।
আমি কোনও চিঠি পাইনি।
মিতালি ঘোষের বন্ধুরা কিন্তু সাক্ষী দেবে। তারা জানে।
আমি সত্যি কথাই বলছি।
ইউ আর এ কুল কাস্টমার। এই ফ্ল্যাটটা কার?
আমার।
এটা কি বিয়ের আগেই কিনেছিলেন?
হ্যাঁ।
ফ্ল্যাট কেনার টাকা কে দিয়েছিল?
ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে কিনেছিলাম। ইনস্টলমেন্ট ফেসিলিটি ছিল।
মিথ্যে কথা। আমরা জানি, ফ্ল্যাট কেনার জন্য টাকা আপনি আদায় করেছিলেন বরুণ ঘোষের কাছ থেকে।
কিন্তু আমার লোনের রেকর্ড ব্যাঙ্কে আছে।
সে টাকা তুলে আপনি হয়তো ফিক্সড ডিপোজিট করে রেখেছেন বা শেয়ারে খাটিয়েছেন। আমরা সবই জানতে পারব।
বরুণ ঘোষের কাছ থেকে আমি টাকা নিইনি।
বিয়ের রাতে মিতালি আপনাকে কী বলেছিলেন?
বলেছিল আমাকে তার পছন্দ নয়।
আপনি তখন কী করলেন?
আমি খুবই অসহায় ফিল করলাম। আমি তাকে বলেছিলাম যে, পছন্দ না হয়ে থাকলে আমার দিক থেকে তার কোনও ক্ষতি হবে না।
মিথ্যে কথা। আপনি তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার সঙ্গে উপগত হয়েছিলেন।
না। কখনওই নয়। তার সঙ্গে আমার শারীরিক সম্পর্কই হয়নি।
আপনারা এই ফ্ল্যাটে কতদিন একসঙ্গে বসবাস করেছেন?
একসঙ্গে বসবাস করিনি৷ ফুলশয্যার রাত থেকেই মিতালি আর আমি আলাদা ঘরে শুতাম। মাসখানেক বাদে মিতালি স্থায়ীভাবে চলে যায়।
আপনার হাইট কত?
পাঁচ ফুট সাড়ে এগারো ইঞ্চি।
ওজন?
আটাত্তর কেজি।
মিতালিদেবীর গয়নাগুলি আপনি তার কাছ থেকে কেড়ে রেখে দিয়েছিলেন কেন?
গয়না! তার গয়নার খবরই আমি রাখি না।
আপনারা দু’জন যুবক-যুবতী একসঙ্গে এক ফ্ল্যাটে থাকতেন, তবু আপনাদের মধ্যে সেক্স রিলেশন হয়নি এটা কি আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে বলেন?
বলি। কারণ ঘটনাটা সত্যি।
আপনার রান্নাবান্না কে করে?
আমি নিজেই করি।