- বইয়ের নামঃ সীতারাম
- লেখকের নামঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- প্রকাশনাঃ রহমান বুকস
- বিভাগসমূহঃ উপন্যাস
সীতারাম – ১ম খণ্ড – ০১-০৫
সীতারাম
প্রথম খণ্ড
দিবা-গৃহিণী
প্রথম পরিচ্ছেদ
পূর্বকালে, পূর্ববাঙ্গালায় ভূষণা নামে এক নগরী ছিল। এখন উহার “ভূষ্যণো |” যখন কলিকাতা নামে ক্ষুদ্র গ্রামের কুটীরবাসীরা বাঘের ভয়ে রাত্রে বাহির হইতে পারিত না, তখন সেই ভূষণায় একজন ফৌজদার বাস করিতেন। ফৌজদারেরা স্থানীয় গবর্ণর ছিলেন; এখনকার স্থানীয় গবর্ণর অপেক্ষা তাঁদের বেতন অনেক বেশী ছিল। সুতরাং ভূষণা স্থানীয় রাজধানী ছিল।
আজি হইতে প্রায় এক শত আশী বৎসর পূর্বে একদিন রাত্রিশেষে ভূষণা নগরের একটি সরু গলির ভিতর, পথের উপর একজন মুসলমান ফকির শুইয়াছিলেন। ফকির, আড় হইয়া একেবারে পথ বন্ধ করিয়া শুইয়া আছেন। এমন সময়ে সেখানে একজন পথিক আসিয়া উপস্থিত হইল। পথিক বড় দ্রুত আসিতেছিল, কিন্তু ফকির পথ বন্ধ করিয়া শুইয়া আছে দেখিয়া, ক্ষুণ্ণ হইয়া দাঁড়াইল।
পথিক হিন্দু। জাতিতে উত্তররাঢ়ী কায়স্থ। তাহার নাম গঙ্গারাম দাস। বয়সে নবীন। গঙ্গারাম বড় বিপন্ন। বাড়ীতে মাতা মরে, অন্তিম কাল উপস্থিত। তাই তাড়াতাড়ি কবিরাজ ডাকিতে যাইতেছিল। এখন সম্মুখে পথ বন্ধ।
সে কালে মুসলমান ফকিরেরা বড় মান্য ছিল। খোদ আকবর শাহ ইসলাম ধর্মে অনাস্থাযুক্ত হইয়াও একজন ফকিরের আজ্ঞাকারী ছিলেন। হিন্দুরা ফকিরদিগকে সম্মান করিত, যাহারা মানিত না, তাহারা ভয় করিত। গঙ্গারাম সহসা ফকিরকে লঙ্ঘন করিয়া যাইতে সাহস করিল না। বলিল, “সেলাম শাহ সাহেব। আমাকে একটু পথ দিন |”
শাহ সাহেব নড়িলেন না, কোন উত্তরও করিলেন না।-গঙ্গারাম জোড়হাত করিল, বলিল, “আল্লা তোমার উপর প্রসন্ন হইবেন, আমার বড় বিপদ! আমায় একটু পথ দাও |”
শাহ সাহেব নড়িলেন না। গঙ্গারাম জোড়হাত করিয়া অনেক অনুনয় বিনয় এবং কাতরোক্তি করিল, ফকির কিছুতেই নড়িলেন না, কথাও কহিলেন না। অগত্যা গঙ্গারাম তাহাকে লঙ্ঘন করিয়া গেল। লঙ্ঘন করিবার সময় গঙ্গারামের পা ফকিরের গায়ে ঠেকিয়াছিল; বোধ হয়, সেটুকু ফকিরের নষ্টামি। গঙ্গারাম বড় ব্যস্ত, কিছু না বলিয়া কবিরাজের বাড়ীর দিকে চলিয়া গেল। ফকিরও গাত্রোত্থান করিলেন-সে কাজির বাড়ীর দিকে চলিয়া গেলেন।
গঙ্গারাম কবিরাজের সাক্ষাৎ পাইয়া, তাহাকে আপনার বাড়ীতে ডাকিয়া আনিল; কবিরাজ তার মাকে দেখিল, নাড়ী টিপিল, বচন আওড়াইল, ঔষধের কথা দুই চারি বার বলিল, শেষে তুলসীতলা ব্যবস্থা করিল। তুলসীতলায় হরিনাম করিতে করিতে গঙ্গারামের মা পরলোক লাভ করিলেন। তখন গঙ্গারাম মার সৎকারের জন্য পাড়া-প্রতিবাসীদিগকে ডাকিতে গেল। পাঁচ জন স্বজাতি জুটিয়া যথাবিধি গঙ্গারামের মার সৎকার করিল।
সৎকার করিয়া অপরাহ্নে শ্রীনাম্নী ভগিনী এবং প্রতিবাসিগণ সঙ্গে গঙ্গারাম বাটী ফিরিয়া আসিতেছিল, এমন সময়ে দুই জন পাইক, ঢাল-সড়কি-বাঁধা-আসিয়া গঙ্গারামকে ধরিল। পাইকেরা জাতিতে ডোম, গঙ্গারাম তাহাদিগের স্পর্শে বিষণ্ণ হইল। সভয়ে দেখিল, পাইকদিগের সঙ্গে সেই শাহ সাহেব। গঙ্গারাম জিজ্ঞাসা করিল, “কোথা যাইতে হইবে? কেন ধর?-আমি কি করিয়াছি?”
শাহ সাহেব বলিলেন, “কাফের! বদ্ বখত! বেত্সমিজ! চল্ |”
পাইকেরা বলিল, “চল্ |”
একজন পাইক ধাক্কা মারিয়া গঙ্গারামকে ফেলিয়া দিল। আর একজন তাহাকে দুই চারিটা লাথি মারিল। একজন গঙ্গারামকে বাঁধিতে লাগিল, আর একজন তাহার ভগিনীকে ধরিতে গেল। সে ঊর্ধশ্বাসে পলায়ন করিল। যে প্রতিবাসীরা সঙ্গে ছিল, তাহারা কে কোথা পলাইল, কেহ দেখিতে পাইল না। পাইকেরা গঙ্গারামকে বাঁধিয়া মারিতে মারিতে কাজির কাছে লইয়া গেল। ফকির মহাশয় দাড়ি নাড়িতে নাড়িতে হিন্দুদিগের দুর্নীতি সম্বন্ধে অতি দুর্বোধ্য ফারসী ও আরবী শব্দ সকল সংযুক্ত নানাবিধ বক্তৃতা করিতে করিতে সঙ্গে গেলেন।
গঙ্গারাম কাজি সাহেবের কাছে আনীত হইলে, তাহার বিচার আরম্ভ হইল। ফরিয়াদী শাহ সাহেব-সাক্ষীও শাহ এবং বিচারকর্তাও শাহ সাহেব। কাজি মহাশয় তাঁহাকে আসন ছাড়িয়া দিয়া দাঁড়াইলেন, এবং ফকিরের বক্তৃতা সমাপ্ত হইলে, কোরাণ ও নিজের চশমা এবং শাহ সাহেবের দীর্ঘবিলম্বিত শুভ্র শ্মশ্রুর সম্যক সমালোচনা করিয়া, পরিশেষে আজ্ঞা প্রচার করিলেন যে, ইহাকে জীয়ন্ত পুঁতিয়া ফেল। যে যে হুকুম শুনিল, সকলেই শিহরিয়া উঠিল। গঙ্গারাম বলিল, “যা হইবার তা ত হইল, তবে আর মনের আক্ষেপ রাখি কেন?”
এই বলিয়া গঙ্গারাম শাহ সাহেবের মুখে এক লাথি মারিল। তোবা তোবা বলিতে বলিতে শাহ সাহেব মুখে হাত দিয়া ধরাশায়ী হইলেন। এ বয়সে তাঁর যে দুই চারিটি দাঁত অবশিষ্ট ছিল, গঙ্গারামের পাদস্পর্শে তাহার মধ্যে অনেকগুলিই মুক্তিলাভ করিল। তখন হামরাহি পাইকেরা ছুটিয়া আসিয়া গঙ্গারামকে ধরিল এবং কাজি সাহেবের আজ্ঞানুসারে তাহার হাতে হাতকড়ি ও পায়ে বেড়ি দিল এবং যে সকল কথার অর্থ হয় না, এরূপ শব্দ প্রয়োগপূর্বক তাহাকে গালি দিতে দিতে এবং ঘুষি, কিল ও লাথি মারিতে মারিতে কারাগারে লইয়া গেল। সে দিন সন্ধ্যা হইয়াছিল; সে দিন আর কিছু হয় না-পরদিন তাহার জীয়ন্তে কবর হইবে।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
যেখানে গাছতলায় পড়িয়া এলোচুলে মাটিতে লুটাইয়া গঙ্গারামের ভগিনী কাঁদিতেছিল, সেইখানে এ সংবাদ পৌঁছিল। ভগিনী শুনিল, ভাইয়ের কাল জীয়ন্তে কবর হইবে। তখন সে উঠিয়া বসিয়া চক্ষু মুছিয়া এলোচুল বাঁধিল।
গঙ্গারামের ভগিনী শ্রীর বয়স পঁচিশ বৎসর হইতে পারে। সে গঙ্গারামের অনুজা।
সংসারে গঙ্গারাম, গঙ্গারামের মা এবং শ্রী ভিন্ন কেহই ছিল না। গঙ্গারামের মা ইদানীং অতিশয় রুগ্না হইয়াছিলেন, সুতরাং শ্রীই ঘরের গৃহিণী ছিল। শ্রী সধবা বটে, কিন্তু অদৃষ্টক্রমে স্বামিসহবাসে বঞ্চিতা।
ঘরে একটি শালগ্রাম ছিল,-এতটুকু ক্ষুদ্র একখানি নৈবেদ্য দিয়া প্রত্যহ তাহার একটু পূজা হইত। শ্রী ও শ্রীর মা জানিত যে, ইনিই সাক্ষাৎ নারায়ণ। শ্রী চুল জড়াইয়া সেই শালগ্রামের ঘরের দ্বারের বাহিরে থাকিয়া মনে মনে অসংখ্য প্রণাম করিল। পরে হাত জোড় করিয়া বলিতে লাগিল, “হে নারায়ণ! হে পরমেশ্বর! হে দীনবন্ধু! হে অনাথনাথ! আমি আজ যে দুঃসাহসের কাজ করিব, তুমি ইহাতে সহায় হইও। আমি স্ত্রীলোক-পাপিষ্ঠা। আমা হইতে কি হইবে! তুমি দেখিও ঠাকুর!”
এই বলিয়া সেখান হইতে শ্রী অপসৃতা হইয়া বাটীর বাহিরে গেল। পাঁচকড়ির মা নামে তাহার এক বর্ষীয়সী প্রতিবাসিনী ছিল। ঐ প্রতিবাসিনীর সঙ্গে ইহাদের বিলক্ষণ আত্মীয়তা ছিল, সে শ্রীর মার অনেক কাজ-কর্ম করিয়া দিত। এক্ষণে তাহার নিকটে গিয়া শ্রী চুপি চুপি কি বলিল। পরে দুই জনে রাজপথে নিষ্ক্রান্ত হইয়া, অন্ধকারে গলি-ঘুঁজি পার হইয়া অনেক পথ হাঁটিল। সে দেশে কোঠাঘর তত বেশী নয়, কিন্তু এখনকার অপেক্ষা তখন কোঠা-ঘর অধিক ছিল, মধ্যে মধ্যে একটি একটি বড় বড় অট্টালিকাও পাওয়া যাইত। ঐ দুই জন স্ত্রীলোক আসিয়া, এমনই একটা অট্টালিকার সম্মুখে উপস্থিত হইল। বাড়ীর সম্মুখে দীঘি, দীঘিতে বাঁধা ঘাট। বাঁধা ঘাটের উপর কতকগুলা দ্বারবান বসিয়া, কেহ সিদ্ধি ঘুঁটিতেছিল, কেহ টপ্পা গাইতেছিল, কেহ স্বদেশের প্রসঙ্গে চিত্ত সমর্পণ করিতেছিল। তাহাদেরই মধ্যে এক জনকে ডাকিয়া পাঁচকড়ির মা বলিল, “পাঁড়ে ঠাকুর! ভাণ্ডারীকে ডেকে দাও না?” দ্বারবান্ বলিল, “হাম পাঁড়ে নেহি, হাম্ মিশর হোতে হেঁ |”
পাঁচকড়ির মা। তা আমি জানি না বাছা! পাঁড়ে কিসের বামুন? মিশর যেমন বামুন! তখন মিশ্রদেব প্রসন্ন হইয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোম ভাণ্ডারী লেকে কেয়া করোগে?”
পাঁচকড়ির মা। কি আর করিব? আমার ঘরে কতকগুলা নাউ কুমড়া তরকারি হয়েছে, তাই বলে যাব যে, কাল গিয়ে যেন কেটে নিয়ে আসে।
দ্বারবান্। আচ্ছা, সো হাম্ বোলেঙ্গে। তোম ঘরমেু যাও।
পাঁচকড়ির মা। ঠাকুর, তুমি বলিলে কি আর সে ঠিকানা পাবে কার ঘরে তরকারি হয়েছে?
দ্বারবান। আচ্ছা। তোমারি নাম বোলকে যাও।
পাঁচকড়ির মা। যা আবাগির বেটা! তোকে একটা নাউ দিতাম, তা তোর কপালে হলো না।
দ্বারবান। আচ্ছা, তোম্ খাড়ি রহো। হাম্ ভাণ্ডারীকো বোলাতে হেঁ |”
তখন মিশ্রঠাকুর গুন্গুরন্ করিয়া পিলু ভাঁজিতে ভাঁজিতে অট্টালিকামধ্যে প্রবেশ করিলেন, এবং অচিরাৎ জীবন ভাণ্ডারীকে সংবাদ দিলেন যে, “এক্পঠো তরকারিওয়ালি আয়ি হৈ। মুঝ্রকো কুছ্ মেলেগা, তোম্ংকো কুছ মেল সক্তাল হায়। তোম জলদীও আও |”
জীবন ভাণ্ডারীর বয়স কিছু বেশী, কতকগুলো চাবি ঘুনসিতে ঝোলান। মুখ বড় রুক্ষ। কিঞ্চিৎ লাভের প্রত্যাশা পাইয়া সে শীঘ্র বাহির হইয়া আসিল। দেখিল, দুইটি স্ত্রীলোক দাঁড়াইয়া আছে। জিজ্ঞাসা করিল, “কে ডেকেছে গা?”
পাঁচকড়ির মা বলিল, “এই আমার ঘরে কিছু তরকারি হয়েছে, তাই ডেকেছি। কিছু বা তুমি নিও, কিছু বা দরওয়ানজীকে দিও, আর কিছু বা সরকারীতে দিও |”
জীবন ভাণ্ডারী। তা তোর বাড়ী কোথা বলে যা, কাল যাব।
পাঁচকড়ির মা। আর একটি দুঃখী অনাথা মেয়ে এয়েছে, ও কি বলবেি একবার শোন।
শ্রী গলা পর্যন্ত ঘোমটাঃ টানিয়া প্রাচীরে মিশিয়া এক পাশে দাঁড়াইয়াছিল। জীবন ভাণ্ডারী তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া রুক্ষভাবে বলিল, “ও ভিক্ষেশিক্ষের কথা আমি হুজুরে কিছু বলিতে পারিব না |” পাঁচকড়ির মা তখন অস্ফুট স্বরে ভাণ্ডারী মহাশয়কে বলিল, “ভিক্ষে যদি কিছু পায় তবে অর্ধেক তোমার |”
ভাণ্ডারী মহাশয় তখন প্রসন্নবদনে বলিলেন, “কি বল মা?” ভিখারীর পক্ষে ভাণ্ডারীর প্রভুর দ্বার অবারিত। শ্রী ভিক্ষার অভিপ্রায় জানাইল, সুতরাং ভাণ্ডারী মহাশয় তাহাকে মুনিবের কাছে লইয়া যাইতে বাধ্য হইলেন।
ভাণ্ডারী শ্রীকে পৌঁছাইয়া দিয়া প্রভুর আজ্ঞামত চলিয়া গেল।
শ্রী আসিয়া দ্বারদেশে দাঁড়াইল। অবগুণ্ঠনবতী, বেপমানা। গৃহকর্তা বলিলেন, “তুমি কে?”
শ্রী বলিল, “আমি শ্রী |”
“শ্রী! তুমি তবে কি আমাকে চেন না? না চিনিয়া আমার কাছে আসিয়াছ? আমি সীতারাম রায় |”
তখন শ্রী মুখের ঘোমটা তুলিল। সীতারাম দেখিলেন, অশ্রুপূর্ণ, বর্ষাবারি-নিষিক্ত পদ্মের ন্যায়, অনিন্দ্যসুন্দরমুখী। বলিলেন, “তুমি শ্রী! এত সুন্দরী!”
শ্রী বলিল, “আমি বড় দুঃখী। তোমার ব্যঙ্গের যোগ্য নহি |” শ্রী কাঁদিতে লাগিল।
সীতারাম বলিলেন, “এত দিনের পর কেন আসিয়াছ? আসিয়াছ ত অত কাঁদিতেছ কেন?”
শ্রী তবু কাঁদে—কথা কহে না। সীতারাম বলিল, “নিকটে এসো |”
তখন শ্রী অতি মৃদুস্বরে বলিল, “আমি বিছানা মাড়াইব না-আমার অশৌচ |”
সী। সে কি?
গদগদস্বরে অশ্রুপূর্ণলোচনে শ্রী বলিতে লাগিল, “আজ আমার মা মরিয়াছেন |”
সী। সেই বিপদে পড়িয়া কি তুমি আজ আমার কাছে আসিয়াছ?
শ্রী। না-আমার মার কাজ আমিই যথাসাধ্য করিব। সে জন্য তোমায়দুঃখদিব না। কিন্তু আমার আজ ভারি বিপদ!
সী। আর কি বিপদ!
শ্রী। আমার ভাই যায়। কাজি সাহেব তাহার জীয়ন্তে কবরের হুকুম দিয়াছেন। সে এখন হাবুজখানায় আছে।
সী। সে কি? কি করেছে?
তখন শ্রী যাহা যাহা শুনিয়াছিল এবং যাহা যাহা দেখিয়াছিল, তাহা মৃদুস্বরে কাঁদিতে কাঁদিতে আদ্যোপান্ত বলিল। শুনিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া সীতারাম বলিলেন, “এখন উপায়?”
শ্রী। এখন উপায় তুমি। তাই এত বৎসরের পর এসেছি।
সী। আমি কি করিব?
শ্রী। তুমি কি করিবে? তবে কে করিবে? আমি জানি, তুমি সব পার।
সী। দিল্লীর বাদশাহের চাকর এই কাজি। দিল্লীর বাদশাহের সঙ্গে বিরোধ করে কার সাধ্য?
শ্রী বলিল, “তবে কি কোন উপায় নাই?”
সীতারাম অনেক ভাবিয়া বলিলেন, “উপায় আছে। তোমার ভাইকে বাঁচাইতে পারি। কিন্তু আমি মরিব |”
শ্রী। দেখ, দেবতা আছে, ধর্ম আছেন, নারায়ণ আছেন। কিছুই মিথ্যা নয়। তুমি দীন দুঃখীকে বাঁচাইলে তোমার কখনও অমঙ্গল হইবে না। হিন্দুকে হিন্দু না রাখিলে কে রাখিবে? ”
সীতারাম অনেকক্ষণ ভাবিল। পরে বলিল, “তুমি সত্যই বলিয়াছ, হিন্দুকে হিন্দু না রাখিলে কে রাখিবে? আমি তোমার কাছে স্বীকার করিলাম। গঙ্গারামের জন্য আমি যথাসাধ্য করিব |”
তখন প্রীতমনে ঘোমটা টানিয়া শ্রী প্রস্থান করিল।
সীতারাম দ্বার অর্গলবদ্ধ করিয়া ভৃত্যকে আদেশ করিলেন, “আমি যতক্ষণ না দ্বার খুলি ততক্ষণ আমাকে কেহ না ডাকে |” মনে মনে একবার আবার ভাবিলেন, “শ্রী এমন শ্রী? তা ত জানি না। আগে শ্রীর কাজ করিব, তার পর অন্য কথা |” ভাবিলেন, “হিন্দুকে হিন্দু না রাখিলে কে রাখিবে?”