- বইয়ের নামঃ কাব্য আমপারা
- লেখকের নামঃ কাজী নজরুল ইসলাম
- প্রকাশনাঃ আগামী প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ প্রবন্ধ, ধর্মীয় বই
সুরা আ-দিয়াত
শুরু করিলাম লয়ে নাম আল্লার,
কৃপা করুণার যিনি অপার পাথার।
বিদ্যুৎ-গতি দীর্ঘশ্বসা
(বীরবাহী উটের শপথ),
যাহার চরণ-আঘাত উগারে
তপ্ত বহ্নি ফিনকিবৎ।
প্রত্যুষে করে ধূলি উৎক্ষেপি
(শত্রু-শিবির) আক্রমণ,
অনন্তর সে (অরি) দলে পশে
(এই হেন করে বিলুন্ঠন)।
শপথ তাদের – নিঃসংশয়
অকৃতজ্ঞ মানবকুল
তাদের পালনকর্তা প্রভুর
পরে, নিশ্চয়, (নহে সে ভুল!)
আর সে নিজেই সাক্ষী ইহার
কঠিন বিষয়াসক্তি তার,
সে কি তা জানে না, কবর হইতে
উঠানো হইবে সবে আবার?
হৃদয় তাদের লুকানো যা-কিছু
প্রকাশ করাব সব সেদিন,
জানিবে তাদের (সকল গোপন)
কথা – ‘রাব্বুল আলামিন’ ।
————-
সুরা আ-দিয়াত
এই সুরা মক্কা শরিফে নাজেল হইয়াছে। ইহাতে ১১টি আয়াত, ৪০টি শব্দ ও ১৭০টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – হজরত তাঁহার সহচর মোনজের-বেনে-আমরকে একদল অশ্বারোহীসহ ‘বণি-কানানা’ সম্প্রদায়কে আক্রমণ করিতে পাঠান এবং ফিরিয়া আসিবার দিন নির্দিষ্ট করিয়া দেন। পাথের এক স্থান জলপ্লাবিত থাকায় তাঁহাদের ফিরিয়া আসিতে বিলম্ব হয়। তখন কাফেরগণ উক্ত সৈন্য দল বিনষ্ট হইয়াছে বলিয়া মিথ্যা সংবাদ প্রচার করায় মুসলমানগণ দুঃখিত হয়। তাঁহাদিগকে সান্ত্বনা প্রদানের নিমিত্ত এই সুরা নাজেল হয়।
সুরা আ-লা
শুরু করিলাম লয়ে নাম আল্লার,
করুণা-নিধান যিনি দয়ার পাথার।
মহত্তম যা নাম প্রভুর,
বর্ণনা করো পবিত্রতা তার,
সৃজন করিয়া যিনি পূর্ণতা
দানিয়াছেন তায় আবার।
উচিত ধর্মে নিয়ন্ত্রণ
করিয়া তিনিই দেখান পথ,
সৃজিয়া তৃণাদি তারে আবার
করেন কৃষ্ণ ভস্মবৎ।
আমি তোমা পড়াইব কোরান,
বিস্মৃত তাই হবে না আর,
তবে আল্লাহ্ জানেন সব
প্রকাশ গোপন সব ব্যাপার।
তোমার তরে সে কল্যাণের
পথেরে সহজ দিব করে,
অতএব উপদেশ বিলাও
যদি সে সুফল হয়, ওরে!
উপদেশ তব লবে ত্বরায়
সেই জন আছে যাহার ভয়,
অতিশয় হতভাগ্য যে
তাহা হতে দূরে সরিয়া রয়,
দোজখের মহা অনল মাঝ
করিবে প্রবেশ সেই সে জন
বাঁচিবেও না সে (শান্তিতে)
হবে না সেথায় তার মরণ।
সেই জন হয় সফলকাম
অন্তঃকরণ পবিত্র যার,
নামাজ পড়ে যে, করি স্মরণ
নাম সে দয়াল প্রভুর তার।
পছন্দ সে করিল হায়
পার্থিব এই জীবনকেই
উত্তম আর অবিনাশী
জীবন যা পাবে পরকালেই।
নিশ্চয় পূর্বের সকল
কেতাবেই আছে তা বিদ্যমান,
বিশেষ করিয়া ইব্রাহিম,
মুসার কেতাব তার প্রমাণ।
———–
সুরা আ-লা
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হয়। ইহাতে ১৯টি আয়াত, ৭২টি শব্দ ও ২৯৯টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – যখন হজরতের প্রতি সুদীর্ঘ সুরাসমূহ নাজেল হইতে থাকে এবং তিনি অসংখ্য তত্ত্বজ্ঞান লাভ করিতে থাকেন, তখন তাঁহার মনে এই চিন্তা উপস্থিত হয় যে, আমি কোনো শিক্ষকের নিকট লেখাপড়া শিখি নাই, এমতাবস্থায় এত অধিক সংখ্যক শব্দ ও সূক্ষ্ম মর্ম আয়ত্ত করা ও স্মরণ রাখা সম্ভব হইবে না, হয়তো ইহার অধিকাংশ বিলুপ্ত হইয়া যাইতে পারে। তাঁহাকে সান্ত্বনা প্রদানার্থ এই সুরা অবতীর্ণ হয় – ‘খোদাই আপনার শিক্ষাদাতা, আপনি উহা ভুলিবার কল্পনাও করিবেন
সুরা আবাসা
শুরু করি লয়ে নাম আল্লার,
দয়া করুণার যার নাই নাই পার।
(মোহাম্মদ) ভ্রু-ভঙ্গি করি ফিরাইল মুখ
যেহেতু আসিল এক অন্ধ আগন্তুক
তাঁহার নিকট। তুমি জান (মোহাম্মদ)?
হয়তো বা লভিবে সে শুদ্ধির সম্পদ;
কিংবা তব উপদেশ মতো সে চলিবে,
তাহাতে তাহার তরে সুফল ফলিবে।
মানে না যে তব কথা বেপরোয়া হয়ে,
বুঝাইতে কত যত্ন তব, তারে লয়ে!
অথচ সে শুদ্ধাচারী না হইলে পর
তোমার দায়িত্ব নাই প্রভুর গোচর।
কিন্তু তব পাশে ছুটে আসে যেইজন
আল্লার সে ভয়ও রাখে, তার থেকে মন
সরাইয়া লও তুমি! উচিত এ নয়,
আল্লার এ উপদেশ জানিয়ো নিশ্চয়;
কাজেই যাহার ইচ্ছা, করুক উহার
আলোচনা। ( সেই উপদেশ-সম্ভার)
মহিম-মহান পত্রাবলিতে (লিখিত),
উন্নত পূত লেখক হস্তে (সুরক্ষিত)।
(আর সে লেখকগণ) সৎ ও মহান।
সর্বনাশ মানুষের! সে কৃতঘ্ন-প্রাণ
অতি ঘোর! (হায়), তারে কোন বস্তু হতে
সৃজন করিয়াছেন তিনি? শুক্র হতে!
– তারে সৃষ্টি করে
যথাযথভাবে তারে সাজান, তা পরে
সহজ করেন তার জন্য পথ তার,
পরে মৃত্যু ঘটাইয়া সমাধি মাঝার
লন তারে। পুনরায় ইচ্ছা সে যখন,
বাঁচাইয়া তুলিবেন তাহারে তখন।
না, না তিনি করেছেন যে আদেশ তারে
সমাধা সে করিল না তাহা (একেবারে)।
করুক মানুষ এবার দৃষ্টিপাত
তাহার খাদ্যের পানে, কত বৃষ্টিপাত
করিয়াছি (তার তরে); মাটিরে তা-পরে
বিদীর্ণ করিয়াছি কত ভালো করে।
অনন্তর জন্মায়েছি ফসল প্রচুর,
আঙ্গুর শাকসব্জি, জায়তুন, খেজুর,
গহন কাননরাজি, তৃণাদি ও ফল;
তোমাদের, তোমাদের পশুর মঙ্গল
সাধিতে। আসিবে যবে সে বিপদ-দিন,
(ভীষণ নিনাদে) লোক পালাবে সেদিন
নিজ ভ্রাতা, নিজ পিতা-মাতা হতে,
সঙ্গিনী ও পুত্রগণে (ফেলে রেখে পথে)।
সেদিন এমনই হবে অবস্থা লোকের,
ভাবিতে সে পারিবে না কথা অন্যের।
সেদিন উজ্জ্বল হবে কত সে আনন,
হাসিরাশি-ভরা আর পূর্ণ-হরষন;
আবার কত সে মুখ ধূসর ধুলায়
(হইবে হায় রে) আচ্ছাদিত কালিমায়!
– ইহারা তাহারা,
অমান্যকারী আর ভ্রষ্টাচারী যারা।
————
সুরা আবাসা
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হয়। ইহাতে ৩২টি আয়াত, ১৩৩ টি শব্দ ও ৫৫৩টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – একদা হজরত কোরেশ সম্প্রদায়ের ওৎবা, আবুজাহেল, আব্বাস প্রভৃতি বিশিষ্ট ব্যক্তিগণকে ইসলামের দিকে এই আশায় আহ্বান করিতেছিলেন যে, তাহারা ইসলাম গ্রহণ করিলে বহু লোক ইসলাম ধর্মগ্রহণ করিতে পারে। সেই সময় আবদুল্লাহ-এবনে-ওম্মে মকতুম নামক জনৈক অন্ধ লোক তাঁহার নিকট উপস্থিত হইয়া তাঁহাকে কোরান শিক্ষা দিবার জন্য হজরতকে তাঁহার দিকে অগ্রসর হইতে বলে। সে হজরতের কথোপকথনে বাধা প্রদান করিতে আসিয়াছে ভাবিয়া হজরত মুখ বিমর্ষ করিয়াছিলেন। তখন এই সুরা নাজেল হয়।