- বইয়ের নামঃ অগ্রন্থিত গান
- লেখকের নামঃ কাজী নজরুল ইসলাম
- বিভাগসমূহঃ প্রবন্ধ
আঁধার মনের মিনারে মোর
আঁধার মনের মিনারে মোর
হে মুয়াজ্জিন, দাও আজান!
গাফেলতির ঘুম ভেঙে দাও
হউক নিশি অবসান॥
আল্লাহ নামের যে তকবীরে
ঝর্না বহে পাষাণ চিরে
শুনি’ সে তকবিরের ধ্বনি
জাগুক আমার পাষাণ প্রাণ॥
জামাত ভারী জমবে এবার
এই দুনিয়ার ঈদগাহে,
মেহেদী হবেন ইমাম সেথায়
রাহ দেখাবেন গুমরাহে।
আমি যেন সেই জামাতে
শামিল হতে পারি প্রাতে
ডাকে আমায় শহীদ হতে
সেথায় যতো নওজোয়ান॥
আবীর-রাঙা আভীর নারী সনে
আবীর-রাঙা আভীর নারী সনে
কৃষ্ণ কানাই খেলে হোরি।
হোরির মাতন চুড়ি ও কাঁকনে
উঠিছে কল-কাকলি।।
শ্যামল তনু হল রাঙা আবীর রেঙে,
ইন্দ্রধনু-ছটা যেন কাজল মেঘে,
রাঙিল রঙে নীল চোলি।।
লহু লহু হাসে মহু মহু ভাসে
রাঙা কুঙ্কুম ফাগের রাগে,
দোঁহে দুহু ধরি, মারে পিচকারি
চাঁদ-মুখে কলঙ্ক জাগে
রাঙা কুঙ্কুম ফাগের রাগে।
অঙ্গে অপাঙ্গে অনঙ্গ-রঙ্গিমা
ইঙ্গিতে উঠিছে উছলি।।
আবে-হায়াতের পানি দাও
আবে-হায়াতের পানি দাও, মরি পিপাসায়।
শরণ নিলাম নবীজীর মোকারক পায়।।
ভিখারিরে ফিরাবে কি শূন্য হাতে,
দয়ার সাগর তুমি যে মরু সাহারায়।।
অন্ধ আমি আঁধারে মরি ঘুরিয়া,
দেখাবে না-কি মোরে পথ, এই নিরাশায় ।।
যে-মধু রহে না ক্ষুধা তৃষা,
মরার আগে সেই মধু দি গো আমায়।।
আমার ধ্যানের ছবি আমারি হযরত
আমার ধ্যানের ছবি আমারি হযরত।
ও-নাম প্রাণে মিটায় পিয়াসা
আমার তামান্না আমারি আশা
আমার গৌরব আমার ভরসা
এ দীন গুনাহগার তাঁহারই উম্মত।।
ও-নামে রওশন জমিন আসমান
ও-নামে মাখা তামাম জাহান
ও-নাম দরিয়ায় বহায় উজান
ও-নাম ধেয়ায় মরু ও পর্বত।।
আমার নবীর নাম জপে নিশিদিন
ফেরেশতা আর হুর পরী জিন,
ও-নাম যদি আমার ধ্যানে রয়
পাব কিয়ামতে তাঁহার শাফায়ত।।
আমার প্রিয় হযরত নবী কামলিওয়ালা
আমার প্রিয় হযরত নবী কামলিওয়ালা!
যাঁহার রওশনীতে দ্বীন- দুনিয়া উজালা।।
যাঁরে খুঁজে ফেরে কোটি গ্রহ তারা,
ঈদের চাঁদে যাঁহার নামের ইশারা;
বাগিচায় গোলাব গুল গাঁথে যাঁর মালা।।
আউলিয়া আম্বিয়া দরবেশ যাঁর নাম
খোদার নামের পরে জপে অবিরাম,
কেয়ামতে যাঁর হাতে কাওসার পিয়ালা।।
পাপে মগ্ন ধরা যাঁর ফজিলতে
ভাসিল সুমধুর তৌহিদ- স্রোতে,
মহিমা যাঁহার জানেন একে আল্লাহতায়ালা।।
আমার মোহাম্মদের নামে ধেয়ান হৃদয়ে যার রয়
আমার মোহাম্মদের নামে ধেয়ান হৃদয়ে যার রয়
ওগো হৃদয়ে যার রয়।
খোদার সাথে হয়েছে তার গোপন পরিচয়।।
ঐ নামে যে ডুবে আছে
নাই দুঃখ-শোক তাহার কাছে;
ঐ নামের প্রেমে দুনিয়াকে সে দেখে প্রেমময়।।
যে খোশ-নসীব গিয়াছে ঐ নামের স্রোতে ভেসে,
জেনেছে সে কোরন-হাদিস-ফেকা এক নিমেষে।
মোর নবীজীর বর-মালা,
করেছে যার হৃদয় আলা
বেহেশতের সে আশ রাখে না,
তার নাই দোজখে ভয়।।
আমার সুরের ঝর্ণা-ধারায় করবে তুমি স্নান
আমার সুরের ঝর্ণা-ধারায় করবে তুমি স্নান।
ওগো বধূ, কন্ঠে আমার তাই ঝরে এই গান।।
কেশে তোমার পরলে বালা
তাই গাঁথি এই গানের মালা,
তোমার টানে ভাব-যমুনায় তাই ঝরে এই গান।।
আমার সুরের ইন্দ্রাণী গো, উঠবে তুমি বলে
নিত্য বানীর সিন্ধুতে মোর মন্থন তাই চলে।
সিংহাসনের সুর-সভাতে
বসবে রানীর মহিমাতে,
সৃজন করি সেই গরবে সুরের পরীস্হান।।
আমারে সকল ক্ষুদ্রতা হতে বাঁচাও প্রভু উদার
মোনাজাত
আমারে সকল ক্ষুদ্রতা হতে
বাঁচাও প্রভু উদার।
হে প্রভু! শেখাও – নীচতার চেয়ে
নীচ পাপ নাহি আর।
যদি শতেক জন্ম পাপে হই পাপী,
যুগ-যুগান্ত নরকেও যাপি,
জানি জানি প্রভু, তারও আছে ক্ষমা-
ক্ষমা নাহি নীচতার।।
ক্ষুদ্র করো না হে প্রভু আমার
হৃদয়ের পরিসর,
যেন সম ঠাঁই পায়
শত্রু-মিত্র-পর।
নিন্দা না করি ঈর্ষায় কারো
অন্যের সুখে সুখ পাই আরো,
কাঁদি তারি তরে অশেষ দুঃখী
ক্ষুদ্র আত্মা তার।।
আমি অগ্নি-শিখা, মোরে বাসিয়া ভালো
আমি অগ্নি-শিখা, মোরে বাসিয়া ভালো
যদি চাও, তব অন্তরে প্রদীপ জ্বালো।।
মোর দহন-জ্বালা রবে আমারি বুকে,
তব তিমির রাতে হব রঙিন আলো।।
হব তোমার প্রেমে নব উদয়-রবি,
আমি মুছাব প্রাণের তব বিষাদ-কালো।।
লয়ে বহ্নি-দাহ, প্রিয়! করো না খেলা,
কবে লাগিবে আগুন, ভাঙিবে মেলা;
শেষে আমার মতো কেন মরিবে জ্বলে;
তুমি মেঘের মায়া, শুধু সলিল ঢালো।।
মোরে আঁচলে ঢেকে তুমি বাঁচালে ঝড়ে,
আজ তুমিই আবার তারে নিভায়ো না লো।।
আমি গরবিনী মুসলিম বালা
আমি গরবিনী মুসলিম বালা।
সংসার সাহারাতে আমি গুলে লালা।।
জ্বালায়েছি বাতি আমি আঁধার কাবায়
এনেছি খুশির ঈদে শিরনির থালা।।
আনিয়াছি ঈমান প্রথম আমি,
আমি দিয়াছি সবার আগে মোহাম্মদে মালা।।
কত শত কারবালা বদরের রণে
বিলায়ে দিয়াছি স্বামী-পুত্র স্বজনে;
জানে গ্রহ-তারা জানে আল্লাহ্তালা।।
আমি বাণিজ্যেতে যাব এবার মদিনা শহর
আমি বাণিজ্যেতে যাব এবার মদিনা শহর।
আমি এদেশে হায় গুনাহগারি দিলাম জীবন ভর।।
পাঞ্জেগানার বাজার যেথা বসে দিনে রাতে,
দুই টাকা আল্লাহ বসুল পুঁজি নিয়ে হাতে
কত পথের ফকির সওদা করে হল সওদাগর।।
সেথা আজান দিয়ে কোরান পড়ে ফেরিওয়ালা হাঁকে,
বোঝাই করে দৌলত দেয়, যে সাড়া দেয় ডাকে।
ওগো জানেন তাহার পাকে পাকে কাবা খোদার অাফিস-ঘর।।
বেহেশতে রোজগারের পরে ছাড়পত্র পায়,
পায় সে সাহস ঈমান-জাহাজ যদি ডুবে যায়।
ওগো যেতে খোদার খাস-মহলে পায় সে সীলমোহর।।