- বইয়ের নামঃ ক্রুসেড ১ : গাজী সালাহউদ্দীনের দুঃসাহসিক অভিযান
- লেখকের নামঃ আসাদ বিন হাফিজ
- বিভাগসমূহঃ গল্পের বই
ক্রুসেড ১ : গাজী সালাহউদ্দীনের দুঃসাহসিক অভিযান
ভূমিকা
ইসলামকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলার চক্রান্তে মেতে উঠলো খৃষ্টানরা। একে একে লোমহর্ষক সংঘাত ও সংঘর্ষের পরাজিত হয়ে বেছে নিল ষড়যন্ত্রের পথ। মুসলিম দেশগুলোতে ছড়িয়ে দিল গুপ্তচর বাহিনী। ছড়িয়ে দিল মদ ও নেশার দ্রব্য। ঝাঁকে ঝাঁকে পাঠাল প্রশিক্ষনপ্রাপ্তা সুন্দরী গোয়েন্দা। বড় বড় অফিসার ও আমীর উমরাদের হারেমগুলোতে ওদের ঢুকিয়ে দিল নানা কৌশলে। ভাসমান পতিতা ছড়িয়ে দিল সর্বত্র। মদ জুয়া আর বেহায়াপনার সস্রোত বইয়ে দিল শহরগুলোতে।
একদিকে সশস্ত্র লড়াই – অন্যদিকে কুটিল সাংস্কৃতিক হামলা, এ দুয়ের মোকাবেলায় রুখে দাঁড়ালো মুসলিম বীর শ্রেষ্ঠরা। তারা মোকাবিলা করলেন এমন সব অবিশ্বাস্য ও শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনার, মানুষের কল্পনাকেও যা হার মানায়।
ক্রুসেড-১ || গাজী সালাহউদ্দীনের দুঃসাহসিক অভিযান
জাদুল আসাদির তাঁবুতে বিশ্রাম নিচ্ছেন সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী। শিরস্ত্রাণ খোলেননি। তাঁবুর বাইরে সশস্ত্র দেহরক্ষীরা পাহারা দিচ্ছে। কয়েক মুহূর্তের জন্য রক্ষীবাহিনীর কমাণ্ডার একটু অন্যদিকে গেলেন। একজন গার্ড পর্দা ঈষৎ ফাঁক করে উঁকি দিল তাঁবুর ভেতর। দু’চোখ বন্ধ করে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন সুলতান। গার্ড বাইরে দাঁড়ানো চারজন সঙ্গীর দিকে তাকাল। চোখ বন্ধ করে খুলল একবার। সে চারজন দেহরক্ষী অন্যদের সাথে গল্প জুড়ে দিল।
তাঁবুতে ঢুকল প্রথম রক্ষী। খঞ্জর হাতে নিল। বিড়ালের মত নিঃশব্দে এগিয়ে গেল ঘুমন্ত সুলতানের দিকে। খঞ্জর বাগিয়ে ধরে হাত উপরে তুলল। আইয়ুবীর বুক লক্ষ্য করে যখন নেমে আসছিল হাত, ঠিক সে মুহূর্তে পাশ ফিরলেন তিনি। রক্ষীর আঘাত গিয়ে পড়ল সালাহউদ্দীন আইয়ুরীর শিরস্ত্রাণে।
বিদ্যুৎ গতিতে দাঁড়িয়ে গেলেন সালাহউদ্দীন আইয়ুবী। নিমিষেই ঘটনাটা আঁচ করে নিলেন। নিজের বাছাই করা দেহরক্ষী আক্রমণ করছে দেখেও হতবাক হলেন না।
রক্ষী শিরস্ত্রাণের পাশ কেটে মাটিতে গেঁথে যাওয়া খঞ্জর টেনে তুলছিল। পলকে পূর্ণ শক্তিতে রক্ষীর মুখে ঘুসি মারলেন সালাহউদ্দীন। মট করে হাড় ভাংগার শব্দ হল। বিকট শব্দ করে চিৎ হয়ে পরে গেল রক্ষী।
সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রক্ষীর হাত থেকে ছিটকে পড়া খঞ্জর নিজের হাতে তুলে নিলেন। চিৎকার শুনে বাইরে থেকে ছুটে এল দু’জন রক্ষী।
‘ওকে বেঁধে ফেল।’ নির্দেশ দিলেন সুলতান।
কিন্তু ওরা সুলতানের আদেশ অমান্য করে উল্টো আইয়ুবীকেই আক্রমণ করে বসল। একা খঞ্জর দিয়ে দুই রক্ষীর তলোয়ারের মোকাবেলা করতে লাগলেন আইয়ুবী। তাঁবুর ভেতর শুরু হলো আসম এক লোমহর্ষক লড়াই।
দু’এক মিনিটের মধ্যেই অন্য গার্ডরাও ভেতরে প্রবেশ করল। অবাক বিস্ময়ে কয়েক মুহূর্ত তারা তাকিয়ে রইল আউয়ুবী ও রক্ষীদের অসম লড়াইয়ের দিকে। সম্বিত ফিরে এলে একজন এগিয়ে এসে আঘাত করল রক্ষীদের। দেখাদেখি অন্য রক্ষীরাও ঝাঁপিয়ে পড়ল। এবার রক্ষীরা দুই দল হয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু করল। আপন পর পার্থক্য করতে না পেরে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলেন সালাহউদ্দীন আইয়ুবী।
সংঘর্ষ থেমে গেল। দু’জন নিহত হল এই সংঘর্ষে। আহত হল কয়েকজন, পালিয়ে গেল একজন। তদন্ত শেষে দেখা গেল দেহরক্ষীদের সাতজন ছিল ঘাতক দলের সদস্য। গুমাস্তিগীন নামে খলিফা সালেহের এক কেল্লাধিপতি আইয়ুবীকে হত্যার জন্য এদের নিয়োগ করেছিল।
সালাহউদ্দীন আইয়ুবীকে হত্যা করার এ ধরনের কয়েকটি প্রচেষ্টা পরপর ব্যর্থ হল। এ হত্যা পরিকল্পনার হোতা ছিল সাইফুদ্দীন। সাইফুদ্দীন ছিল সালাহউদ্দীনের চাচাতো ভাই খলিফা আস সালেহের একজন আমীর। যে সময়ের কথা বলছি, তখন মুসলিম বিশ্বের প্রধান হলেও কার্যত ইসলামী দুনিয়া ছিল তাঁর নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত। বিভিন্ন প্রদেশের গভর্ণরগণ সুলতান উপাধি ধারণ করে বলতে গেলে স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতো। এ ঘনটার পর একদিন ভোরে সাইফুনদ্দীনকে লক্ষ্য করে একটি চিঠি পাঠালেন সালাহউদ্দীন আইয়ুরী। তাতে তিনি লিখলেন,
“খাঁচায় বন্দী পাখীর মাঝে তুমি চিত্তপ্রসাদ খোঁজ, নারী আর মদের মাঝে খোঁজ জীবনের মানে, কিন্তু জাননা সৈনিকের জীবন মানেই এক বিপজ্জনক খেলা।’
চিঠিটি লিখেছিলেন তিনি ১১৭৫ সালের এপ্রিল মাসে। খলিফা সালেহ এবং সাইফুদ্দীন খৃস্টানদের সহযোগিতায় আইয়ুরীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হলো। পরাজিত হয়ে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে গেল সাইফুদ্দীন। তার তাঁবুতে পাওয়া গেল অগণিত সম্পদ। পাওয়া গেল খাঁচায় বন্ধী রঙবেরঙের পাখী, এক ঝাঁক সুন্দরী তরুণী, নর্তকী, গায়িকা। বিভিন্ন প্রকার বাদ্যযন্ত্র আর পিপা ভর্তি মদ।
সালাহউদ্দীন খাঁচায় দুয়ার খুলে দিলেন, পাখীরা উড়ে গেল উন্মুক্ত আকাশে। নর্তকী, গায়িকা আর তরুণীদের মুক্ত করে দিলেন। চিঠি লিখলেন আমীর সাইফুদ্দীনের কাছে,
‘তোমরা বেঈমানী করে খৃস্টানদের সহযোগিতায় আমাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছ। একবারও কি ভেবেছ, তোমাদের এ ষড়যন্ত্র ইসলামী বিশ্বের মানচিত্র মুছে দিতে পারে? যদি আমাকেই ঈর্ষা কর, যদি আমিই তোমাদের শত্রু হয়ে থাকি, মেরে ফেল আমায়। দু’বার সে চেষ্টাও করেছ। সফল হওনি, আবার না হয় চেষ্টা করে দেখ। এবার সফল হলে হতেও পার।