ডাঃ হেডক বললেন, হ্যাঁ। ঘটনাটা আকস্মিক আক্রমণই ছিল। কিন্তু এটা খুবই আশ্চর্য লাগছে, গুলি চলল অথচ কেউ শব্দ শুনতে পেল না।
মেলচেট বললেন, সেটা আমাকেও বিস্মিত করেছে। অন্তত বাড়ির কাজের মেয়েটার শুনতে পাবার কথা।
ডাঃ হেডক জানতে চাইলেন, আচ্ছা পড়ার ঘরের জানালাটা তো ভোলাই ছিল। মিস মারপল কিছু শুনতে পাননি? পাশেই তো থাকেন।
আমি বললাম, বোধহয় শুনতে পাননি। কেন না ঘটনার পরেই তিনি ভিকারেজে গিয়েছিলেন। কথাও হয়েছে আমার সঙ্গে কিন্তু ওরকম কিছু আভাস দেননি।
ডাঃ হেডক বললেন, শুনে থাকলেও হয়তো খেয়াল করেননি। স্বাভাবিক শব্দ বলে ভেবেছেন। অথবা পিস্তলে সাইলেন্সর লাগানো ছিল। খুনের কারণ কিছু বলেছে?
-খুবই মামুলি। ঝগড়া হয়েছিল। মিঃ মেলচেট বললেন।
-ঝগড়া করার মত কোন সময়ই ছিল না। আমি বললাম। চুপিসাড়ে এসে কাজটা সেরেছে। আমার সঙ্গে গেটের বাইরে দেখা হলে কথাও বলেছিল কেমন অসংলগ্ন…আপনি মিঃ প্রথেরোর সঙ্গে দেখা করতে চান? হ্যাঁ, দেখা হবে। ওরকম কথা শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম, কিছু একটা ঘটতে চলেছে।
ডাঃ হেডক আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, লরেন্স কখন গুলি করেছে বলে আপনার ধারণা?
-আমি বাড়িতে ঢোকার মিনিট কয়েক আগে।
–অসম্ভব। আমার পরীক্ষা তা বলে না। মিঃ প্রথেরো অনেক আগেই খুন হয়েছেন।
–কিন্তু ডাঃ হেডক, আপনি যে বললেন, আধঘণ্টা আগে ঘটনাটা ঘটেছে? মিঃ মেলচেট বললেন।
–হ্যাঁ, মোটামুটি সময় ওটা–দু-পাঁচ মিনিট এদিক সেদিক হতে পারে। কিন্তু এর বেশি নয়।
-কিন্তু আমি যখন ওখানে পৌঁছাই তখনো তো মিঃ প্রথেরোর দেহটা উষ্ণ ছিল।
আমি ডাক্তারের মুখের দিকে তাকালাম। তার মুখ হঠাৎ কেমন বিবর্ণ হয়ে গেল। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
লরেন্স স্বীকার করেছে, খুনটা সে পৌনে সাতটার সময় করেছে।
উত্তেজনায় ডাক্তার আচমকাই উঠে দাঁড়ালেন। দৃঢ় স্বরে বললেন, এটা অসম্ভব। পৌনে সাতটার সময় খুন করেছে যদি বলে থাকে, তাহলে বলব লরেন্স মিথ্যা বলেছে। আমি একজন ডাক্তার হিসেবেই কথাটা আবারও বলছি।
মিঃ মেলচেটকে কেমন দ্বিধাগ্রস্ত দেখালো। তিনি বললেন, লরেন্স মিথ্যা বলেছে কিনা ওকে আরো একবার ভালকরে জেরা করলেই বোঝা যাবে সম্ভবত। চলুন দেখা যাক।
.
০৭.
পুলিস স্টেশনে আমি আর মিঃ মেলচেটই লরেন্সের মুখোমুখি হলাম। দেখলাম চিন্তাচ্ছন্ন বিবর্ণ মুখে বসে আছে লরেন্স।
মিঃ মেলচেট তাকে বললেন, তুমি ইনসপেক্টর স্লাকের কাছে যে জবান বন্দি দিয়েছ তাতে বলেছ ভিকারেজে পৌনে সাতটা নাগাদ গিয়েছিলে। সেখানে প্রথেরোর সঙ্গে তোমার ঝগড়া হয়, তুমি গুলি করে বেরিয়ে আস। তাই তো?
–হ্যাঁ।
এবারে তোমাকে আমি কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই।
–আমি তো বলেইছি মিঃ প্রথেরোকে খুন করেছি। এর মধ্যে লুকনো কিছু নেই।
–বেশ ভাল কথা, তুমি পিস্তলটা কোথায় পেলে?
–আমার পকেটে ছিল। সঙ্গে নিয়েই ভিকারেজে এসেছিলাম।
–ওটা সঙ্গে রেখেছিলে কেন?
–সবসময়ই সঙ্গে থাকে। একটু যেন ইতস্তত করল লরেন্স।
–তুমি ঘড়ির কাটাটা পেছন দিকে সরিয়ে দিয়েছিলে কেন?
–ঘড়ি? কোথায়? লরেন্স স্পষ্ট তো-ই হতভম্ব হল।
–হ্যাঁ, ঘড়ির কাঁটা ছটা বাইশে ঘুরিয়ে রাখা হয়েছিল।
একটা ভয়ের ছাপ পড়ল লরেন্সের মুখে। পরক্ষণেই বলে উঠল, ও হ্যাঁ, হা,–তা রেখেছিলাম।
-কর্নেল প্রথেরোর শরীরে কোন জায়গায় তুমি গুলি করেছিলে? ডাঃ হেডক জিজ্ঞেস করলেন।
-মনে হচ্ছে মাথায় করেছি। হ্যাঁ হ্যাঁ মাথাতেই।
–তুমি নিশ্চিত নও?
–এসব অনর্থক প্রশ্ন। বিরক্ত হল লরেন্স।
এই সময় একজন কনস্টেবল এসে আমার হাতে একটা চিঠি দিয়ে গেল। সেটা খুলে দেখলাম কাগজে লেখা রয়েছে :
বুঝতে পারছি না কি করব। দয়া করে একবার আমার এখানে আসবেন। ভীষণ ভয় লাগছে-যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসবেন। তেমন কাউকে সঙ্গে আনতে পারেন। অ্যানা প্রথেরো।
চিঠিটা মিঃ মেলচেটের দিকে এগিয়ে দিলাম। তিনি চোখ বোলালেন। পরক্ষণেই আমরা সেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
চিঠিটা লরেন্সেরও নজরে পড়েছিল। দেখলাম, চেহারাটা কেমন রুক্ষ হয়ে উঠেছে।
মিসেস প্রথেরো আমাকে বলেছিলেন, তিনি খুব মরীয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি আর পারছেন না। কথাগুলো মনে হতেই লরেন্সের নিজেকে অপরাধী বলে স্বীকার করবার একটা যুক্তি ততক্ষণে পরিষ্কার হল।
পুলিস স্টেশন থেকে বেরিয়ে ডাঃ হেডককে সঙ্গে নিয়েই আমরা ওল্ডহলের দিকে রওনা হলাম।
একজন চাকর আমাদের দরজা খুলে দিল। মিঃ মেলচেট বললেন, আমরা এসেছি, খবরটা ভেতরে দিয়ে এসো, তোমাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করব।
চাকরটি ফিরে এলে মিঃ মেলচেট তাকে জিজ্ঞেস করলেন, গতকাল সম্পর্কে কয়েকটা কথা জানতে চাই। মিঃ প্রথেরো কাল খেয়েছিলেন?
-হ্যাঁ, অন্যদিনের মতই ।
–তারপর তিনি কি করলেন?
–মিসেস প্রথেরো শুতে চলে গিয়েছিলেন। আর মিঃ প্রথেরো পড়ার ঘরে গিয়ে বসেছিলেন।
-এরপর?
–লেটিস টেনিস খেলতে বেরিয়েছিল। আর সাড়ে চারটের সময় মিঃ এবং মিসেস প্রথেরো চা খান। পরে গাড়িতে করে গ্রামে চলে গিয়েছিলেন।
সময়টা মনে আছে?
-হ্যাঁ, সাড়ে পাঁচটা হবে। ওরা চলে যাবার পরেই মিঃ ক্লেমেন্টে ফোন করেছিলেন। আমি, বাড়ি নেই বলে দিয়েছিলাম।
–আচ্ছা, মিঃ রেডিং শেষ কবে এখানে এসেছে?
–মঙ্গলবার বিকেলে।