–এমন হতে পারে যে সে জানতো না প্রথেরো কখন এখানে এসেছে। অথবা ওই সঙ্গীন মুহূর্তে ঘড়ি যে ফাস্ট যায় সে কথা একদম ভুলে গিয়েছিল।
–সে হয় না কেউ যখন খুন করতে যায়, এসব বিষয়ে সে খুবই সতর্ক থাকে।
আমাদের কথাবার্তার মধ্যেই মিস মারপল এসে ঘরে ঢুকল। বলল, তখন থেকে ঠিক করেছি, ইনসপেক্টর স্লাকের সঙ্গে বুঝে শুনে চলব। উদ্ভট লোক।
কাল রাতে খবর দিয়েছিল আজ সকালে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে। সকালে ফোন করে জানালো তার দরকার নেই।
আমি বললাম, আসামী! গ্রেপ্তার হয়ে গেছে, তাই হয়তো দরকার হয়নি।
গ্রেপ্তার! আসামী, কে? উত্তেজনায় মুখ লাল হয়ে উঠল মিস মারপলের।
বুঝতে পারলাম খবরটা তখনো পায়নি। তাই বললাম, একজন গ্রেপ্তার হয়েছে–লরেন্স রেডিং।
–সে কী! অসম্ভব। আমি ভাবতে পারছি না।
–আমিও খবরটা বিশ্বাস করি না। বলল গ্রীসলডা তবে সে নাকি নিজে স্বীকার করেছে।
–স্বীকার করেছে? মিস মারপল বলল, আমি দেখছি উল্টো দিকে চেয়ে আছি। তাহলে আমি খুশি।
উত্তেজনার মুহূর্তে ঘটনাটা ঘটিয়ে ফেলেছিল, পরে নিশ্চয় অনুশোচনা হয়েছিল। বললাম আমি।
অনুশোচনা! মিস মারপল বলল, কিন্তু মিঃ ভিকার আপনি কি বিশ্বাস করছেন লরেন্স খুন করেছে?
আচমকা এই প্রশ্ন শুনে আমি চমকালাম। বলার চেষ্টা করলাম, ওই ধরা দেবার
–কিন্তু আমার ধারণা এই ঘটনায় তার কোন হাত নেই।
–তাই যদি হবে তবে এরকম অভিনয় করতে গেল কেন?
–অবশ্যই কারণ আছে। এসব কাজের পেছনে সবসময়ই কোন না কোন কারণ থাকে।
এর পর আগ্রহ সহকারে গতকাল সন্ধ্যার ঘটনাটা মিস মারপল আমার কাছ থেকে শুনে নিল। পরে বলল, আপনি দেখেছিলেন, লরেন্সকে উন্মাদের মত দেখাচ্ছিল? কিন্তু আমি বলতে পারি, ভাবনা চিন্তার পর কোন লোককে খুন করবার পরে কারো মুখের ভাব কখনোই অমন হবে না। খুনটা ছিল সুপরিকল্পিত।
-খুনের পরিবেশটা আমরা ঠিক জানি না, আমি বললাম, কথা কাটাকাটির সময় রাগের মাথায় হয়তো লরেন্স গুলি করে বসেছিল। পরে ব্যাপারটা মাথায় ঢুকতে হতভম্ব হয়ে গিয়ে ছিল। মনে হয়, এরকমই ঘটেছিল ঘটনাটা।
মিঃ ক্লেমেন্ট, আমার মনে হয় না ওদের মধ্যে কোন রাগারাগি হয়েছিল। আপনাদের বাড়ির মেরী তো বলেইছে, লরেন্স ওখানে বেশিক্ষণ ছিল না। ঝগড়া কথা কাটাকাটির জন্য একটা সময়ের দরকার।
তাছাড়া ভুলে যাচ্ছেন, মিঃ প্রথেরো যখন লিখছিলেন সেই সময় পেছন দিক থেকে তাকে গুলি করে মারা হয়েছিল।
একটু পরেই লেটিস এলো। চেয়ারে বসে জানতে চাইল, শুনলাম লরেন্স রেডিংকে নাকি গ্রেপ্তার করা হয়েছে?
-হ্যাঁ। গ্রীসলডা বলল।
-বাবাকে কেউ খুন করতে পারে এটা আমি কখনোই ভাবতে পারিনি। অবশ্য মুখে এমন কথা একসময়ে অনেককেই বলতে শুনেছি। আমি নিজেই তো বলেছিলাম।
অকম্পিত স্বাভাবিক কণ্ঠেই বলল লেটিস কথাগুলো। পরে সে গ্রীসলডার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি জানতে এলাম তোমরা আমার টুপিটা এখানে পেয়েছ কিনা। কয়েকদিন ধরে সেটা পাচ্ছি না।
–মেরী বলতে পারে। ওই তো ঝটপাট দেয়। গ্রীসলডা বলল।
–দেখি তাহলে। বলে লেটিস উঠে দাঁড়াল।
–তুমি এখন ওটা থাকলেও পাবে না, আমি বললাম, মিঃ স্লাক ঘরটায় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে গেছেন। তা ওই সামান্য জিনিসটা এই সময়ে তোমার কাছে এত জরুরী হয়ে পড়ল?
–আপনি শোকের কথা বলছেন? আমার ওসব আসে না।
পরে ভ্রূকুটি করে বলল, আমার ধারণা সব ব্যাপারটাই আমার চানের পোশাকে ছবি আঁকাকে কেন্দ্র করে।
বলতে বলতে লেটিস চলে গেল।
মিস মারপল হাসছিলেন। বললেন, আমার মনে হয় প্রত্যেক ব্যাপারকেই তার নিজ ক্ষেত্রে এগোতে দেওয়া দরকার। মেয়েটা অন্য কোন ধান্দা মাথায় নিয়ে এসে অভিনয় করছিল।
এমন সময় মেরী এসে জানাল, কর্নেল, মেলচেট হলেন দেশের চীফ কনস্টেবল।
২. পুরো ঘটনাটা
০৬.
কিছুক্ষণ কথা বলার পর মিঃ মেলচেটের কাছ থেকে পুরো ঘটনাটা জানতে পারা গেল।
গতরাতে লরেন্স থানায় গিয়ে টেবিলে পিস্তল রেখে বলেছে, আমি নিজেই এসেছি, কর্নেল প্রথেরোকে আমি খুন করেছি।
খুন করার পেছনে অবশ্য যে কারণ দেখিয়েছে তা খুবই খেলো। জবানবন্দিতে বলেছে, সে ভিকারেজে এসেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। আমাকে পায়নি, কিন্তু দেখল প্রথেরো বসে আছে। তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়, সে গুলি করে। কি নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল সে সম্পর্কে কিছু বলেনি।
একসময় চীফ কনস্টেবল মেলচেট আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, মিঃ ক্লেমেট, ব্যক্তিগত ভাবে একটা কথা জিজ্ঞেস করছি। লরেন্স রেডিং কি লোকটার মেয়ের সঙ্গে গর্হিত কোন ব্যবহার করেছিল?
অবশ্য এর মধ্যে আমি মেয়েটাকে টেনে আনতে চাইছি না। তাই আপনার মত ওদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের কাছ থেকে এটা জানতে চাইছি।
আমি পরিষ্কার ভাবে জানালাম যে এমন কোন ঘটনাই কখনো ঘটেনি।
মিঃ মেলচেট বললেন, জেনে খুশি হলাম। আচ্ছা চলি, একবার ডাঃ হেডকের সঙ্গে দেখা করতে হবে।
দুপা এগিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ালেন। বললেন, আমি যদি ইচ্ছে করি তার সঙ্গে যেতে পারি। আমি সম্মত হয়ে একসঙ্গেই ঘর থেকে বেরুলাম।
আমার বাড়ির কাছেই থাকেন ডাঃ হেডক। বসার ঘরেই তার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। মিঃ মেলচেটকে দেখে একটা ছোট বাক্স এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, রাত জেগে আপনাদের কাজটা সেরে রেখেছি।
মিঃ মেলচেট বাক্স খুলে একটা বুলেট বার করে উল্টেপাল্টে পরীক্ষা করতে লাগলেন। আপন মনেই বললেন, এতো দেখছি মশার ২৫।