–আমার মনে হয়, কিছু শুনতে পায়নি। তবে ওকে জিজ্ঞেস করলেই ব্যাপারটা সঠিক জানা যাবে।
সেই সময়েই ইনসপেক্টর স্লাক এসে পৌঁছলেন। ছোট ছোট কিছু প্রশ্নে প্রাথমিক সব কিছু জেনে নিয়ে তিনি পড়ার টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলেন।
ঝুঁকে খুঁটিয়ে দেখলেন। পরে উৎফুল্ল ভাবে বললেন, হ্যাঁ, এটাই আমরা জানতে চেয়েছিলাম। গুলির আঘাতে লোকটা যখন কাত হয়ে পড়ে তখন ধাক্কা লেগে ঘড়িটা উল্টে পড়ে। খুনের সমগ্রর আঘাতে লোকটা যখন ভাবে বললেন, হয়
তারপর ঘড়িটার দিকে একবার তাকিয়ে পরে বললেন, ছটা বেজে বাইশ মিনিট। আচ্ছা ডাঃ হেডক, আপনি মৃত্যুর সময়টা কখন বলেছিলেন?
হেডক জবাব দিলেন, আধঘণ্টা আগে। তবে..
নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে ইনসপেক্টর স্লাক বললেন, এখন সাতটা বেজে পাঁচ মিনিট হয়েছে। আমি খবরটা পেয়েছি দশ মিনিট আগে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, মৃতদেহটা আবিষ্কার হয়েছিল পৌনে সাতটা নাগাদ। ঠিক আছে, ওতেই যথেষ্ট হবে।
আমার ওই সময় একটা কথা মনে পড়ে গেল। বলবার চেষ্টা করলে বাধা দিয়ে স্লাক বলল, আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব। সময় বড় কম।
–কিন্তু ওই ঘড়িটা
স্লাক আমার কথায় কান না দিয়ে মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল, লোকটা ওখানে কি কিছু লিখবার জন্যে বসেছিল? আরে ওটা কি?
বলতে বলতে এগিয়ে গিয়ে ছোট একটা চিরকূট টেবিল থেকে কুড়িয়ে নিলেন। উৎসাহে তার চোখ চকচক করে উঠল।
আমরা পাশে গিয়ে চিরকূটটার ওপরে চোখ ফেললাম। ছোট্ট একটুকরো কাগজ। মাথার দিকে লেখা ছটা কুড়ি। তার নিচে ডিয়ার ক্লেমেন্ট বলে লেখাটা শুরু হয়েছে।
মাত্র কয়েকটি শব্দ–দুঃখিত, আমি আর অপেক্ষা করতে পারলাম না। আমি নিশ্চয়…
এর পরেই ছেদ পড়েছে। মিঃ প্রথেরো আর কোন শব্দ লিখে উঠবার সুযোগ পাননি।
কিছুক্ষণ পরেই মেরী এসে জানিয়ে গেল মিনিট পাঁচেক আগে গ্রীসলডা ফিরে এসেছে।
আমি গিয়ে বসার ঘরেই তাকে পেলাম। দেখে মনে হল কেমন ভীত ও উত্তেজিত হয়ে পড়েছে।
ওকে ঘটনাটা খুলে জানালাম। সবশেষে বললাম চিরকূটের মাথায় লেখা রয়েছে ছটা কুড়ি! আর ঘড়িটা উল্টে গিয়ে ছটা বাইশ মিনিটে বন্ধ হয়ে ছিল।
গ্রীসলডা বলল, তুমি বললে না কেন ঘড়িটা প্রায় সব সময়ই পনেরো মিনিট ফাস্ট হয়ে থাকে?
বললাম, বলতে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ইনসপেক্টর আমাকে থামিয়ে দিয়েছিল।
হতভম্ব হয়ে গ্রীসলডা আমার মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল। পরে বলল, এতে যে সব ব্যাপারটাই গুলিয়ে যাবে।
ঘড়িতে যখন ছয়টা কুড়ি, তখন প্রকৃত সময় হবে ছটা বেজে পাঁচ মিনিট। আমার ধারণা, ওই সময়ে প্রথেরো এখানে পৌঁছয়নি।
.
০৫.
মেরী এসে খবর দিল ইনসপেক্টর স্লাক চলে গেছেন। যাবার সময় পড়ার ঘরে তালা দিয়ে বলে গেছেন ওই ঘরে কেউ যেন ঢুকবার চেষ্টা না করে।
ইনসপেক্টর আমার সঙ্গে একবার কথা না বলে চলে যাওয়ায় বিস্মিত না হয়ে পারলাম না।
গ্রীসলডা ওল্ড হলে যেতে চাইল। মিসেস প্রথেরোকে একবার এই সময়ে দেখে আসা দরকার। আমি আপত্তি করলাম না। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সে ফিরে এল।
ক্লান্ত শরীরে সোফায় বসে পড়ে বলল, আমি পৌঁছবার কিছুক্ষণ আগেই মিঃ স্লাক বেচারী অ্যানকে খবরটা পৌঁছে দিয়েছে।
-খুবই দুঃখজনক। খবরটা তিনি কিভাবে নিয়েছেন?
–ভালো। দেখে খুবই শান্ত মনে হল।
-ওটাই স্বাভাবিক। মিসেস প্রথেরো শোকে পাথর হয়ে যাবেন, এমনিটা আমি আশা করতে পারি না।
–লেটিস কি করছে?
–টেনিস খেলতে গেছে, এখনো ফেরেনি।
–লেটিসও যে খবরটা পেয়ে খুব কাতর হবে মনে হয় না। বাবাকে ও একেবারেই পছন্দ করত না।
–তাহলেও, আঘাত তো বটে। মৃত্যু অনেক সময় মানুষের অনুভূতিগুলিকে পাল্টে দেয়।
.
পরদিন সকালে আমরা সবে প্রাতরাশ টেবিলে বসেছি। মেরী হাঁপাতে হাঁপাতে এসে জানাল রুটিওয়ালার কাছে খবর পেয়েছে, পুলিস নাকি লরেন্স রেডিংকে গ্রেপ্তার করেছে।
–অসম্ভব। এ হতে পারে না, গ্রীসলডা বলে উঠল, পুলিস নির্ঘাৎ ভুল করেছে।
মেরী বলল, গতরাত্রেই নাকি রেডিং পুলিসের কাছে গিয়ে পিস্তল সমেত আত্মসমর্পণ করেছে। পুলিসের কাছে স্বীকার করেছে নিজেই খুনটা করেছে।
গ্রীসলডা বলল, ব্যাপারটা অসম্ভব বলেই আমার মনে হচ্ছে। ওটা নির্ঘাৎ একটা দুর্ঘটনা হবে। কিসের স্বার্থে লরেন্স কর্নেল প্রথেরোকে খুন করবে? খুনের তো একটা উদ্দেশ্য থাকবে।
আমার মাথায় অনেক ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছিল। বললাম, কিছুদিন আগে তো ওদের দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। তারই…
-হ্যাঁ, লেটিসের ছবি আঁকা নিয়ে। তাছাড়া গোপনে লেটিসের সঙ্গে তার প্রেমও যদি থাকে তার জন্য লরেন্স কর্নেলকে খুন করতে যাবে কেন?
আমি চিন্তান্বিত ভাবে বললাম, আসল ব্যাপারটা কি তা তো আমরা কেউই জানি না।
একটু থেমে আমি আবার বললাম, তোমাকে তো বলেছি, গেটের বাইরে লরেন্সের সঙ্গে যখন আমার দেখা হয় তখন তাকে কেমন উন্মাদের মত লাগছিল। ও কাঁপছিল রীতিমত।
–তা হতে পারে। কিন্তু খুন অসম্ভব। আমি মেনে নিতে পারি না।
–কিন্তু, ঘড়িটাও তো খুনের সাক্ষীই দিচ্ছে। নিজেকে বাঁচাবার জন্যই লরেন্স ঘড়ির কাঁটা পেছন দিকে ঘুরিয়ে রেখেছিল।
-তুমি ভুল করছ গ্রীসলডা বলল, আমাদের ঘড়িটা যে ফার্স্ট যায় তা লরেন্স জানতো। বোকার মত ঘড়ির কাঁটা ও ছটা বাইশে ঘোরাতে যাবে কেন? দিতে হলে পৌনে সাতটার দিকে এগিয়ে দেওয়াই স্বাভাবিক ছিল।