-না-না। আমাকে চলে যেতে হবে অবশ্যই।
আমাকে বিস্মিত করে একরকম ছুটেই যেন লরেন্স বেরিয়ে গেল। হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম পেছন থেকে।
বাড়িতে ঢোকার মুখেই মেরীর সঙ্গে দেখা হল। জানাল কর্নেল প্রথেরো পড়ার ঘরে অনেকক্ষণ থেকে বসে আছেন।
জিজ্ঞেস করলাম, কখন এসেছেন?
-সোয়া ছটা নাগাদ।
বুঝতে পারলাম, এজন্যই তার বাড়ি গিয়ে দেখা পাইনি।
মেরীকে জিজ্ঞেস করলাম, লরেন্স রেডিং এসেছিল?
–কিছুক্ষণ আগেই এসেছিলেন। বসতে বলেছিলাম। কর্নেল যে পড়ার ঘরে আছেন সেকথাও বলেছিলাম। মনে হয় ওই ঘরেই অপেক্ষা করছেন।
-না চলে গেছে। গেটের মুখে দেখা হয়েছে আমার সঙ্গে।
হতে পারে। আমি দেখিনি কখন চলে গেছেন। এদিকে মিসেস ভিকারও তো ফিরলেন না এখনো।
মেরী রান্নাঘরে চলে গেল। আমি পড়ার ঘরের দিকে পা বাড়ালাম।
দরজাটা বন্ধ ছিল। খুললাম। ভেতরে পা দিয়ে থমকে গেলাম। যেন পাথরের মূর্তি হয়ে গেলাম মুহূর্তের জন্য।
কর্নেল প্রথেরো আমার লেখার টেবিলে অস্বাভাবিক ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। মাথা থেকে ঘাড় বেয়ে রক্ত গড়িয়ে টেবিলে জমছে, মেঝেতে পড়ছে।
শরীরটাকে টেনে টেবিলের কাছে নিয়ে এলাম। নাড়ী দেখার জন্য একটা হাত তুলে নিয়েই চমকে উঠলাম।
বরফের মত ঠাণ্ডা। মানুষটা আর বেঁচে নেই। মাথায় গুলি করে মারা হয়েছে।
কেমন একটা ঘোরের মত লাগছিল। দরজার কাছে গিয়ে মেরীকে ডাকলাম।
ডাক শুনে মেরী ছুটে এলো। ডাক্তার হেডক সামনের মোড়ের মাথাতেই থাকেন। বললাম, একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, এখুনি গিয়ে তাকে নিয়ে আসতে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার হেডক এসে পৌঁছলেন। তাকে কর্নেলের কাছে নিয়ে গেলাম।
ডাক্তারও থমকালেন। পরমুহূর্তেই সক্রিয় হয়ে উঠলেন। ঝুঁকে একবার দেখলেন। পরীক্ষা করলেন। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন।
আমি জিজ্ঞাসার দৃষ্টি নিয়ে তাকালাম। ডাক্তার বললেন, আমার ধারণা প্রায় আধঘণ্টা আগে মারা গেছেন।
–এটা কি আত্মহত্যা?
–অসম্ভব। আঘাতটা মাথার পেছন দিকে। তাছাড়া আত্মহত্যার অস্ত্র তো কোথাও নেই।
ঘরে খুঁজে দেখা হল। কোন অস্ত্র পাওয়া গেল না।
ডাক্তার হেডক পুনরায় বললেন, এখন কিছুতে হাত না দেওয়াই ভাল।
বলতে বলতে তিনি টেলিফোনের কাছে গিয়ে রিসিভারটা তুলে নিলেন। থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে সংক্ষেপে ঘটনাটা জানালেন। পরে আমার পাশে এসে বসলেন।
–খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। মৃতদেহ আপনার চোখে পড়ল কখন?
আমার তখনই ঘটনাটা মনে পড়ল। বললাম, একটা অদ্ভুত কাণ্ড হয়েছে। বিকেল নাগাদ এক মহিলা ফোনে জানালেন তাঁর স্বামী খুবই অসুস্থ। আমি সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গেলাম। কিন্তু মজার ব্যাপর হল, দেখলাম মহিলার স্বামী দিব্যি সুস্থ। ফোনের কথা জানাতে মহিলা অবাক হয়ে গেলেন। তারা কেউই ফোন করেননি।
কথা শুনে ডাক্তার হেডকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। বললেন, খুবই পরিকল্পিত ব্যাপার মনে হচ্ছে। আপনাকে এখান থেকে সরিয়ে দেবার জন্যই ফোন করা হয়েছিল। ভাল কথা, আপনার স্ত্রী কোথায়?
–তিনি লণ্ডনে গেছেন।
কাজের মেয়েটি?
–রান্নাঘরে।
রান্নাঘরটা কতদূরে?
–এই ঘরেরই উল্টো দিকে।
–কর্নেল প্রথেরো যে আজ বিকেলে এখানে আসবেন নিশ্চয় কেউ কেউ জানতো?
–হ্যাঁ, গ্রামের অনেকের সামনেই তো বলেছিল আসার কথাটা।
একটু থেমে ডাক্তার কি ভাবলেন। পরে বললেন, কর্নেলের ওপর ব্যক্তিগত রাগ বা আক্রোশ থাকতে পারে এমন কারোর কথা মনে পড়ে?
আমার মনে পড়ল সবার আগেই লরেন্স রেডিং-এর কথা। ওর উদভ্রান্ত চেহারাটা চোখের ওপর ভেসে উঠল। আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, এমন সময় করিডরে পায়ের শব্দ পাওয়া গেল।
ডাক্তার হেডক দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, নিশ্চয় পুলিস আসছে।
বলতে বলতেই পুলিস কনস্টেবল হার্স্ট ঘরে ঢুকলেন।
শুভসন্ধ্যা জানিয়ে তিনি বললেন, যে কোন মুহূর্তে ইনসপেক্টর এসে যাবেন, ইতিমধ্যে তিনি নির্দেশিত কাজগুলো সমাধা করে রাখতে চান।
হার্স্ট মৃতদেহের দিকে তাকালেন। বললেন, আমার বিশ্বাস কর্নেল প্রথেরোকে গুলিবিদ্ধ অবস্থাতে ভিকারেজের পড়ার ঘরে পাওয়া গেছে।
বলতে বলতে তিনি লেখার টেবিলটার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললেন, ঘরের কোন কিছুতে যেন হাত দেওয়া না হয়।
পকেট থেকে পেন্সিল নোটবুক বার করে এবারে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন হার্স্ট। আমি তাকে ব্যাপারটা আগাগোড়া খুলে বললাম।
ধৈর্য ধরে তিনি আমার কথা শুনলেন। পরে ডাঃ হেডকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ডাঃ হেডক, আপনার মতে মৃত্যুর কারণটা কি?
-খুব কাছে থেকে মাথায় গুলি করে মারা হয়েছে।
–অস্ত্রটা?
বুলেটটা শরীর থেকে বার না করা পর্যন্ত সেটা বলা যাচ্ছে না।
–কোন সম্ভাবনা
–হ্যাঁ, বাহ্যিক ব্যাপারটা পর্যালোচনা করে বলা যায় যে বুলেটটা কোন ছোট ক্যালিবারের পিস্তল থেকেই ছোঁড়া হয়েছে। সম্ভবত মসার পিস্তল ২৫।
কথাটা শুনে আমি চমকে উঠলাম। আগের দিন রাতেই লরেন্স রেডিং কথায় কথায় জানিয়েছিল তার কাছে একটা মসার পিস্তল রয়েছে।
কনস্টেবল হার্স্ট পুনরায় ডাঃ হেডককে জিজ্ঞেস করলেন, কখন দুর্ঘটনাটা ঘটেছে বলে আপনার ধারণা?
ডাঃ হেডক একটু ইতস্তত করলেন, পরে জানালেন, কর্নেল ঠিক আধঘণ্টা আগে মারা গেছেন। আমার মতে সময়টা ওই রকমই।
হার্স্ট এবার আমার দিকে ঘুরে জিজ্ঞেস করলেন, বাড়ির কাজের মেয়েটা কি কিছু শুনতে পেয়েছিল?