–শব্দটা কি কোন
-না, সেটার জন্য লরেন্স কি ব্যবস্থা করেছিল সঠিক বলতে পারব না। তবে এটুকু বলতে পারি, পিকরিক এসিডের ওপর ভারি কোন বস্তু ফেললে, ওরকম শব্দ হওয়া সম্ভব। ভিকার, আপনার নিশ্চয় মনে আছে, আপনি যখন জঙ্গলে ঢুকেছিলেন, লরেন্সের সঙ্গে আপনার দেখা হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় একটা পাথর ছিল তার হাতে।
পরে ক্রিস্টালটা আপনি যেখানে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন, আপনাদের দেখা হয়েছিল ঠিক সেই জায়গাতেই। চতুর লরেন্স ক্রিস্টালটার ওপরে নিশ্চয় পাথর ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছিল। কুড়ি মিনিট মত সময় লেগেছিল সেটা পুড়ে গলে যেতে। “ এই হিসেব থেকে বোঝা যায় বিস্ফোরণটা হয়েছিল ছটা তিরিশ মিনিট নাগাদ। ঠিক ওই সময়েই তারা দুজন স্টুডিওঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল।
নিঃসন্দেহে খুবই নির্ঝঞ্ঝাট বিস্ফোরণ ছিল সেটা। বিস্ফোরণের পরে কেবল একটা পাথরই সেখানে পড়েছিল। চতুর লরেন্স এই প্রমাণটাও রাখতে চায়নি সেখানে। পাথরটাকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিল।
মিস মারপল ঘটনাটার এমন সুন্দর বিশ্লেষণ করছিলেন যে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। আমি তাকে সমর্থন জানিয়ে বললাম, মনে হয় আপনি ঠিকই বলছেন। আমার মনে আছে, সেদিন জঙ্গলে আমাকে দেখে লরেন্স চমকে উঠেছিল। সেই সময় ব্যাপারটা আমার খুব স্বাভাবিকই মনে হয়েছিল। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি…
-হ্যাঁ, আপনাকে ওরকম জায়গায় দেখবে বলে সে আশা করেনি, তাই স্বাভাবিক ভাবেই একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওরকম লোকের নার্ভ সহজে ফেল করে না। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়েছিল। একটা মিথ্যা গল্প শুনিয়েছিল আপনাকে। বলেছিল, আমার বাগানের জন্য পাথরটা নিয়ে আসছে।
তার এই মিথ্যা গল্প থেকেই আমি রহস্যের একটা সূত্র পেয়ে গিয়েছিলাম।
কথা শেষ করে মিস মারপল থামলেন। মন্ত্রমুগ্ধের মত তার কথা শুনে যাচ্ছিলেন ইনসপেক্টর মেলচেট। মিস মারপল থামলে যেন সম্বিৎ ফিরে পেলেন। বললেন, চমৎকার–অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত বিশ্লেষণ।
এর পর পকেট থেকে হস-এর ঘরে আমার কুড়িয়ে পাওয়া দুমড়ানো চিঠিটা বার করে মিস মারপলকে দেখিয়ে বললেন, আপনার যুক্তিতে কোথাও ফাঁক নেই এটা সত্যি কথা। ঘটনার সঙ্গে বিশ্লেষণ খাপ খেয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু হস সম্পর্কে আপনি কি ব্যাখ্যা দেবেন। সে কেন ফোন করতে গেল আর কেনই বা স্বীকারোক্তি দিতে গেল…।
-ওটা ছিল তার ভবিষ্যতের জন্য সতর্কতা, বললেন মিস মারপল, গির্জার ফাণ্ডের টাকাটা সরিয়েছিল হসই। পরে এই দুষ্কর্মের জন্য তার অনুশোচনা হয়। তখন সে ঠিক করে সবকিছু স্বীকার করবে।
এই চিঠিটা পেয়ে লরেন্স লুকিয়ে রেখেছিল। কার জন্য প্রয়োগ করা যায় সেই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।
অবশ্য পরে সে বুঝতে পেরেছিল, হসকে দিয়েই চিঠিটা ব্যবহার করবে। আমার ধারণা এই মতলব মাথায় নিয়েই লরেন্স গতরাত্রে হস-এর বাড়ি আসে। নানান গল্পে বেশ কিছু সময় তার সঙ্গে কাটায়।
বলতে বলতে একটু থামলেন মিস মারপল। একমুহূর্ত চিন্তা করলেন। পরে বললেন, আমার সন্দেহ হয়, সেই সময় নিজের ক্যাসেট বাক্সের সঙ্গে লরেন্স হস-এর ক্যাসেট বাক্স বদল করে নেয়। তারপর কৌশলে হস-এর ড্রেসিংগাউনের ভেতরে চিঠিটা ঢুকিয়ে দেয়।
হস কিছুই বুঝতে পারে না। সে রাতে বদলা বদলি করা ক্যাসেট থেকে মারাত্মক ক্যাপসুল গলাধঃকরণ করে। লরেন্স দেখাতে চেয়েছিল অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে অতিরিক্ত ওষুধ খেয়ে হস আত্মহত্যা করেছে।
অনুশোচনাটা কর্নেল প্রথেরোকে গুলি করে হত্যা করার জন্য। সকলে অবশ্য সেকথাই ভাবতো।
–আচ্ছা বেশ, এ না হয় মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু ওই ফোনটার ব্যাখ্যা আপনি কি দেবেন? লরেন্সের বাড়ি থেকে যেটা প্রাইস রিডেলকে করা হয়েছিল?
-হ্যাঁ, ওটা একই সময়ে ঘটে যাওয়া একটা আকস্মিক ঘটনা বলব আমি। ফোনটা করেছিল গ্রীসলডা।
ডেনিস আর গ্রীসল পরিকল্পনা করেই এই কাণ্ডটা করে বলে আমার ধারণা। ওরা শুনছিল যে মিসেস প্রাইস রিডলে ভিকারের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাই তাকে চুপ করাবার জন্যই হুমকি দেবার এই বিপজ্জনক পথটা বেছে নিয়েছিল।
গ্রীসলডা যেই সময়ে ফোনটা করেছিল, ঠিক সেই মুহূর্তেই জঙ্গলের ভেতর থেকে গুলি করার মত শব্দ ভেসে আসে। যেহেতু প্রায় একই সময়ে ঘটনা দুটো ঘটে যায় তাই এই দুইয়ের মধ্যে কোন যোগসূত্র আছে বলে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
ইনসপেক্টর মেলচেট হঠাৎ কেমন নড়েচড়ে বসলেন। তারপর বললেন, আপনার বিশ্লেষণ চমৎকার। কিন্তু এভাবে যে সাধারণ তত্ত্বটা দাঁড়াচ্ছে তা প্রমাণ করবার মতো তো কোন প্রমাণ নেই। প্রমাণ ছাড়া কিছুই ধোপে টিকবে না।
তা আমি জানি, বললেন মিস মারপল, তবে আমার বিবরণটাকে আপনি সত্য বলেই বিশ্বাস করতে পারেন। আর যদি আরও নিঃসংশয় হতে চান তাহলে একটা ফাঁদ পাতা যেতে পারে।
.
২০.
–ফাঁদ? কি ধরনের ফাঁদ।
চমকে উঠে ইনসপেক্টর মিস মারপলের দিকে তাকালেন। আমারও একই রকম অবস্থা।
-হ্যাঁ ফাঁদ। ধরুন যদি লরেন্স রেডিংকে ফোন করে সতর্ক করা হয়?
–কি ভাবে সে কাজটা করব বলছেন আপনি?
–যেমন ধরুন, সে যে হস-এর ক্যাসেট বাক্স বদলাবদলি করেছে এই ঘটনা দেখে ফেলেছে এমন একজন ফোনটা করবে এবং বলবে যে সে সব ঘটনা দেখে ফেলেছে। রেডিং যদি নির্দোষ হয় তাহলে কথাগুলোর মানে সে বুঝতে পারবে না। আর যদি না হয় তাহলে নিশ্চয় বোকার মত কিছু একটা করবে।