-হ্যাঁ, চিরকূট কি হয়েছে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
–আগেও আপনাকে আমি জানিয়েছিলাম, চিরকূটটা আমাকে খুবই ধাঁধায় ফেলেছে। আমার ধারণা, কোথাও একটা ভুল রয়ে গেছে।
–আমারও ধারণা, বললাম আমি; চিরকূটটা লেখা হয়েছিল ছটা পঁয়ত্রিশে। লেখাটাও কর্নেলের নয়-অন্য কারো। মনে হয় সে সকলের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যেই সময় ছটা কুড়ি লিখেছিল।
–যত যাই হোক, সবটাই ভুল বলেই আমার বিশ্বাস। জোরের সঙ্গে বললেন মিস মারপল।
–ভুল কেন?
আমার প্রশ্ন শুনে মিস মারপল এক মুহূর্ত কি ভাবলেন। সামনের দিকে ঝুঁকে বললেন, শুনুন ভিকার, আমার গেট পার হয়ে মিসেস প্রথেরো লাইব্রেরী ঘরের জানালার কাছে উপস্থিত হয়। কিন্তু ঘরের ভেতরে কাউকেই তার চোখে পড়েনি।
–না পড়ারই সম্ভব, কেননা কর্নেল থেরো লেখার টেবিলে বসে লিখছিলেন। বললাম। আমি।
ভুল, একেবারে ভুল, বললেন মিস মারপল, সময়টা খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন। তখন ছটা কুড়ি; আর চিরকূটটাতে কি লেখা ছিল? মিঃ প্রথেরো সাড়ে ছটার বেশি অপেক্ষা করতে পারবেন না। এই কথার যৌক্তিকতা বিচার করলে একথা কি মনে হয় না যে ছটা কুড়ি অবধি বসে থেকে ওই কথা কেউ লিখতে পারে না। যদি আমরা সকলে এ বিষয়ে একমত হই তাহলে মিঃ প্রথেরো চিরকূট লেখার জন্য লেখার টেবিলে বসেছিলেন একথা মনে করছি কেন আমরা?
আমি মাথা দুলিয়ে বললাম, ব্যাপারটা আমি এভাবে ভেবে দেখিনি।
–বেশ, তাহলে ব্যাপারটাকে একবার ভালভাবে ভেবে দেখা যাক।
বলে মিস মারপল কি ভেবে নিলেন। কয়েক মুহূর্ত পরে বললেন, মিসেস প্রথেরো জানালার কাছে এসে ভেতরে উঁকি দেন। কাউকে দেখতে না পেয়ে তিনি নিশ্চিন্ত হন। তারপর সেখান থেকে সোজা স্টুডিও ঘরে চলে যান।
–ঘরে কেউ নেই এ সম্পর্কে মিসেস প্রথেরো সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়েছিল বলেই মনে করছেন?
–হ্যাঁ। কেননা ঘরটা সেই সময়ে সম্পূর্ণ নীরব ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি ভেবে নিয়েছিলেন ঘর ফাঁকা।
–তাহলে বলতে চাইছেন–
-হ্যাঁ, বলছি শুনুন। এই ঘটনাটা থেকে আমরা তিনটে জিনিস ভাবতে পারি। প্রথমে যা মনে হয় সেটা হল, মিসেস প্রথেরো যেই সময়ে জানালা দিয়ে উঁকি মেরেছিলেন, খুনের ঘটনাটা তার আগেই ঘটে গেছে।
তবে আমার ধারণা, সেই সম্ভাবনা কম।
দ্বিতীয়ত যা মনে হয় তা হল, কর্নেল লেখার টেবিলে বসে চিরকুট লিখছিলেন। আমার ধারণা তিনি যে চিরকূট লিখছিলেন তার বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওসব অপেক্ষা না করতে পারার কথা উনি লেখেননি।
মিস মারপল থামলেন কিছুক্ষণের জন্য। চোখবুজে কি ভাবলেন। পরে বলল, তৃতীয় ব্যাপার হল-মিসেস প্রথেরোর কথাই ঠিক। ঘরটা তখন যথার্থই ফাঁকা ছিল।
–তাহলে, আপনার কথামতো দেখা যাচ্ছে, মিঃ প্রথেরো লাইব্রেরী ঘরে একবার ঢুকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। পরে আবার ঘরে ফিরে আসেন। বললাম আমি।
মিস মারপল স্মিতহাস্যে ঘাড় নাড়লেন।
–কিন্তু উনি তা করতে গেলেন কেন?
এর পর আমাদের দুজনের মধ্যে আরো কিছু কথা হল। তাকে বিদায় জানাবার জন্য সদর দরজা অবধি সঙ্গে সঙ্গে হেঁটে গেলাম। সেই সময় জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে তো দেখছি চিরকূটটা সমস্যা হয়েই রয়ে গেল।
চলতে চলতে আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালেন মিস মারপল। বললেন, সমস্যা কেন হতে হবে। ওটা যে আসল চিরকূট তা আমি বিশ্বাস করি না। যা হোক, আজ চলি মিঃ ক্লেমেট।
মিস মারপল চলে গেলেন। কিন্তু আমাকে অতি মাত্রায় বিস্মিত করে রেখে গেলেন। কিছুই যেন মাথায় ঢুকছিল না।
.
১৮.
ভিকারেজে লাইব্রেরি ঘরে বসেছিলাম। অপ্রত্যাশিতভাবে কর্নেল মেলচেটের আবির্ভাব ঘটল।
–শহরে একটা কাজে এসেছিলাম। ফেরার পথে ভাবলাম আপনার সঙ্গে একবার দেখা করে যাই। সেই সঙ্গে গলাটাও ভিজিয়ে নেওয়া যাবে।
–ওহো, নিশ্চয় নিশ্চয়। বসুন। অভ্যর্থনা জানালাম আমি।
–অবাক করবার মত খবরও অবশ্য একটা রয়েছে।
বেশতো শোনা যাবে। আগে আপনার গলা ভেজাবার ব্যবস্থাটা করা যাক। আমি উঠে গিয়ে হুইস্কি আর সোডা নিয়ে এলাম। তারপর দুটো গ্লাস দুজনে নিয়ে মুখোমুখি বসলাম।
-হ্যাঁ, আপনার অবাক-করা কথাটা এবারে বলুন। বললাম আমি।
-খবরটা অবাক হবার মতই। সেই চিরকুটটার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? মিঃ প্রথেরো খুন হবার আগে যেটা লিখেছিলেন?
-হ্যাঁ, মনে আছে। ঘাড় নেড়ে বললাম আমি।
–একজন এক্সপার্টের কাছে সেটা আমরা পাঠিয়েছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম ছটা কুড়ি লেখাটা অন্য কারোর হাতের কিনা। মিঃ প্রথেরোর হাতের লেখার নমুনাও সেজন্য পাঠানো হয়েছিল।
–রায় কি জানা গেল। আমি উদগ্রীব হলাম।
–এক্সপার্ট কি জানালো জানেন? চিরকূটের কোন লেখাই নাকি মিঃ প্রথেরোর হাতে লেখা নয়।
-তার মানে অন্য কারো হাতের লেখা মিঃ প্রথেরোর বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছিল?
–হ্যাঁ। ওটা জাল। ছটা কুড়ি লেখাটা এবং অন্য লেখাগুলোও ভিন্ন হাতে লেখা। মিঃ প্রথেরো ওই চিরকূট লেখেনইনি। ওরা এ বিষয়ে নিশ্চিত।
আমরা দুজনেই পরস্পরের মুখের দিকে তাকালাম। পরে ধীরে ধীরে বললাম, আজ সন্ধ্যাবেলা মিস মারপল এসেছিলেন। তিনিও ঠিক ওই একই কথা বলে গেছেন।
–মিস মারপল?
-হ্যাঁ। তিনি বলেছিলেন, চিরকূটের ব্যাপারটাই ভুল। কর্নেল মেলচেট কথাটা শুনে যে খুশি হতে পারলেন না তা তার মুখভাব দেখেই বোঝা গেল।
–যে খুনটা করেছে, এই কথা কেবল সেই বলতে পারে।