–বেশ, তারপর বলে যাও।
-মিসেস প্রথেরো চলে গেলে রেডিং ডঃ স্টোনের সঙ্গে ব্ল-বার-এ যায়। একসঙ্গে মদ খায়। সেখান থেকে ডঃ স্টোনকে বিদায় দিয়ে রেডিং সোজা চলে আসে ভিকারেজের দিকে। তখন সাতটা বেজে কুড়ি মিনিট। তখন অনেক লোকই তাকে দেখেছে।
-তারপর?
–স্টুডিও ঘর থেকে সদর দরজায় এসে ভিকার-এর খোঁজ করে। জানতে পারে ভিকার নেই এবং মিঃ প্রথেরো পড়ার ঘরে অপেক্ষা করছে। সঙ্গে সঙ্গে রেডিং সেখানে চলে আসে, ভেতরে ঢুকে গুলি চালায়।
ঠিক যে ভাবে সে জবানবন্দিতে বলেছে, এটাই হল প্রকৃত ঘটনা।
মেলচেট বলল, তাহলে তো ডাঃ হেডকের সাক্ষ্যটাকে অগ্রাহ্য করতে হয়। তিনি জানিয়েছেন খুনটা করা হয়েছে সাড়ে ছটার মধ্যেই। তার বেশি কিছুতেই নয়।
–আজকাল ডাক্তাররা অনেক ভুলভাল করে। বললেন ইনসপেক্টর।
–এটাতো কোন রুগী দেখার ব্যাপার নয়, শ্লেষের সুরে বললেন মিঃ মেলচেট, মৃতের সরকারী ডাক্তারী রিপোর্ট তুমি অগ্রাহ্য করতে পার না।
আমি বললাম, আমার সাক্ষ্যটাও অগ্রাহ্য করবার নয়। আমি ছুঁয়ে দেখেছি। শরীর একেবারে ঠাণ্ডা। আমার যে ভুল হয়নি শপথ করে বলতে পারি।
-তাহলে ভেবে দেখ স্লাক। বললেন মিঃ মেলচেট।
–তাহলে তো আর বলার কিছু থাকছে না আমার। বলতে হবে এটা একটা মজাদার কেস। রেডিংকে আর ফাঁসিতে ঝুলতে হবে না।
একটু থেমে পরে বললেন, একটা কাজ করা যাক। ফের গোড়া থেকে জেরা শুরু করা যাক।
আমার দিকে চোখ ফিরিয়ে বললেন, ঘড়ির ব্যাপারটা আমাকে আপনার আগে জানানোই উচিত ছিল।
আমি মিঃ মেলচেটকে যে কৈফিয়ত দিয়েছিলাম তারই পুনরাবৃত্তি শোনালাম তাকে।
শুনে বিরক্ত হয়ে মিঃ স্লাক বললেন, যাই হোক, এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা আমাকে জোর করেই শোনানো যেত।
যাই হোক, মিঃ মেলচেট বললেন, এখন আমাদের প্রথম কাজ মিসেস প্রথেরো ও রেডিং-এর কাছ থেকে সত্যি কথাগুলো জানা।
তাই সাব্যস্ত হল শেষ পর্যন্ত। মিঃ মেলচেট ডাঃ হেডককে ফোন করে জানালেন মিঃ প্রথেরেকে নিয়ে ভিকারেজে চলে আসার জন্য।
আর মিঃ স্লাক থানায় জানিয়ে দিলেন লরেন্স রেডিংকে নিয়ে আসার জন্য।
ফোনের কাছ থেকে সরে এসে মিঃ স্লাক বললেন, তাহলে এই ঘরেই আমরা কাজ শুরু করব।
আমি বললাম, তাহলে আমার তো এখানে না থাকাই উচিত।
–তবে রেডিংকে নিয়ে এলে ইচ্ছে করলে আপনি আসতে পারেন। আপনার সঙ্গে তার সম্পর্কটা বন্ধুর মত, সত্য কথা বের করতে আপনার প্রভাব কাজ দেবে।
আমি অতঃপর পড়ার ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
৩. লরেন্স রেডিং পৌঁছানোর পর
১১.
লরেন্স রেডিং পৌঁছানোর পর আমার ডাক পড়ল। পড়ার ঘরে এসে লরেন্সকে দেখে কেমন উদভ্রান্তের মত মনে হল। আমাকে দেখে ম্লান মুখে হাসল।
চীফ কনস্টেবল মিঃ মেলচেট লরেন্সকে বলল, কয়েকটা প্রশ্ন করব বলেই তোমাকে এখানে আনানো হয়েছে।
আচ্ছা, তুমি কি জান যে আরও একজন মিঃ প্রথেরোকে খুন করেছে বলে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে?
–আরো একজন, বিস্মিত হল লরেন্স, কে কে সে?
–মিসেস প্রথেরো।
–অসম্ভব। এটা একেবারেই অসম্ভব। অ্যানা এটা করতেই পারে না।
–আমরাও অবশ্য তার কথা বিশ্বাস করি না, বললেন মিঃ মেলচেট, অবশ্য তোমার কথাগুলোও আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি।
খুনের যে সময়টার কথা তুমি বলেছ, ডাঃ হেডক বলেছেন, তা হতে পারে না। তিনি জোর দিয়েই বলেছেন।
–ডাঃ হেডক সেরকম বলেছেন নাকি?
-হ্যাঁ। ডাক্তারের কথা আমরা অগ্রাহ্য করতে পারি না। এখন আমরা আশা করব, সত্যি কথাটা বলে তোমরা আমাদের সাহায্য করবে।
লরেন্স মাথা নত করে চিন্তা করতে লাগল। বার কয়েক ইতস্তত করে পরে বলল, মিসেস প্রথেরোর ব্যাপারে আমাকে মিথ্যা কথা বলছেন না তো? আপনি কি সত্যি ওকে সন্দেহ করেন?
–না, মোটেই না।
-আমি একটা আস্ত বোকা, লরেন্স বলে উঠল, আমি কল্পনাও করতে পারিনি যে সে এটা করেছে।
–কি হয়েছিল, তুমি আমাদের খুলে বল।
–বেশি কিছু বলার নেই। সেই বিকেলে আমি মিসেস প্রথেরোর সঙ্গে দেখা করি।
–ওই ব্যাপারটা আমরা জানি। তোমাদের দুজনের সম্পর্কের কথাটা অনেকেই জানতো।
–হয়তো। লরেন্স আমার দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ, আমি সবকথাই খুলে বলছি।
একটু থেমে সে ফের বলতে শুরু করল, বিকেলে সওয়া ছটার সময় আমি স্টুডিও ঘরে মিসেস প্রথেরোর সঙ্গে দেখা করি।
আমি এখান থেকে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই কথাটা তাকে জানাই। ও স্বীকার করে, সাময়িকভাবে আমার সরে থাকাই ভাল।
–তারপর? আমি বললাম।
–আমরা স্টুডিও ছেড়ে বেরিয়ে আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ডাঃ স্টোনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
এরপর ডাঃ স্টোনের সঙ্গে আমি ব্লু-বার-এ গেলাম। মদ খেলাম। সেখান থেকে বেরিয়ে বাড়ি যাবার কথাই মনে হয়েছিল প্রথমে। কিন্তু পরে ভাবলাম, এখানে এসেছি যখন একবার ভিকার-এর সঙ্গে দেখা করে যাই।
ওই অবধি বলে লরেন্স চোখ বুঝল। মনে মনে পরের ঘটনাগুলো সম্ভবতঃ সাজিয়ে নিল।
লরেন্স ফের বলতে শুরু করল, ভিকারেজে দরজার কাছেই ঝি-এর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। শুনলাম ভিকার নেই, তবে ফিরে আসবেন শিগগিরই।
আরো শুনলাম, মিঃ প্রথেরো ভিকারের জন্য পড়ার ঘরে অপেক্ষা করছেন। আমিও অপেক্ষা করব ভেবে পড়ার ঘরে চলে এলাম।
-তারপর? মিঃ মেলচেট উদগ্রীব হলেন।
–দেখলাম মিঃ প্রথেরো লেখার টেবিলে বসে আছেন। আমি এগিয়ে গেলাম, তাকে ছুঁলাম, বুঝতে পারলাম দেহে প্রাণ নেই।