মিস ক্রেম গ্রীসলডার কথার সূত্র ধরে বলল, এমন বিচ্ছিরি একটা ব্যাপার ঘটে গেল, মিঃ ক্লেমেট যে ভাবতে পারছি না। ভাবলাম, আপনার এখানে এলে হয়তো সবকিছু জানতে পারব। আমি ঠিকই করে নিয়েছি, এ ব্যাপারে যথাসাধ্য আমি সহযোগিতা করব। যাই হোক, এদিককার ঘটনা কিছু বলুন, সারাদিনই তো আপনি পুলিসের সঙ্গে কাটালেন। পুলিস কি ভাবছে?
মিস ক্রেমের কৌতূহল আমাকে চমৎকৃত করল। ধীরে ধীরে বললাম, পুলিস এখনো কিছু ঠিক করতে পারছে না।
-তাহলে কি ওরা মিঃ রেডিংকে আর আসামী বলে ভাবছে না? অমন সুন্দর চেহারার একটা মানুষ, কি সুন্দর মুখের হাসি, আমি তো প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি যে পুলিস ওকে গ্রেপ্তার করেছে।
-পুলিসের জন্য কিছু করতে হয়নি। লরেন্স রেডিং নিজেই গিয়ে পুলিসের কাছে অপরাধ স্বীকার করেছে।
–সেকি! মিস ক্ৰ্যেম বিস্মিত হলেন, সত্যি সত্যি যে খুন করে সে কি কখনো এমন করে ধরা দেয়। এর পেছনে নিশ্চয় অন্য কোন কারণ আছে। এরপর আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল। মিঃ প্রথেরোকে খুন করেছে কেন, সেই ঝগড়ার জন্য?
আমি বললাম, খুনটা যে সেই করেছে, সে-ব্যাপারে এখনো কেউ নিশ্চিত নয়। বললাম আমি।
–তবু, দোষ যখন স্বীকার করেছে, তার কারণও নিশ্চয় কিছু দেখিয়েছে?
–হ্যাঁ। কিন্তু পুলিস তা বিশ্বাস করেনি।
-যত্তসব উদ্ভট ব্যাপার দেখছি। না, এবারে উঠছি। দেখি মিঃ স্টোন কি করছে। রেডিং-এর গ্রেপ্তারের খবরটা শুনলে উনিও অবাক হবেন।
গ্রীসলডা দরজা বন্ধ করে ফিরে এসে বলল, কৌতূহল মেটাবার জন্যই মেয়েটা এখানে এসেছিল, আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না।
অন্য আর কি কারণ থাকতে পারে। কৌতূহল খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।
যাকগে ওসব। আমি তখন থেকে হাঁ করে আছি, এবারে আমাকে সব খুলে বল।
আমি সকলের সমস্ত ঘটনা ওকে খুলে বললাম। শুনে ও বলল, প্রেমটা তাহলে লরেন্স আর অ্যানার মধ্যে।
আমরা আরো লেটিসকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করে মরছি। গতকাল মিস মারপল এরকমই একটা ইঙ্গিত দিয়েছিল মনে পড়ছে।
–হ্যাঁ। আমি বললাম।
এরপর আমি মেরীকে ডেকে পাঠালাম। ওকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করতে হবে।
মেরী এলে বললাম, আচ্ছা মেরী, মনে করে দেখতো কাল সন্ধ্যাবেলা কোন গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছিলে কিনা।
মেরী বলল, ও রকম কিছুই শুনিনি। তাহলে তো আমি উঁকি মেরে দেখতাম কি হয়েছে।
–কিন্তু মিস মারপল বলছেন, বনের দিক থেকে একটা শব্দ শুনেছিলেন। গুলির শব্দ না হোক, মনে করে দেখতো, অন্য কোন রকম শব্দ তুমি শুনেছিলে কিনা?
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মনে হল মেরী মনে করবার চেষ্টা করছে। পরে বলল, হ্যাঁ, মনে পড়ছে। সেরকম একটা শব্দ কানে এসেছিল বটে।
–তখন সময় কটা হবে?
–তা ঠিক ঠিক বলতে পারব না। তবে চা পানের পরে যে ওটা শুনেছি তা নিশ্চিত।
–ঠিক ঠিক না হলে, কাছাকাছি সময়টা বলতে পারবে না।
-তা বলতে পারব না। কাজে ব্যস্ত থাকি, ঘড়ির দিকে সারাক্ষণ নজর রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
–মিঃ লরেন্স এখানে আসার অনেক আগেই কি শব্দটা তুমি শুনেছিলে?
–হ্যাঁ, তা বলতে পারব। এই মিনিট দশ পনেরো আগে হবে।
-ঠিক আছে, তুমি কাজে যাও।
বৈঠকখানায় বসেই গ্রীসলডার সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে লাগলাম।
একটু পরেই মেরী এসে জানাল, মিঃ মেলচেট এসেছেন। পড়ার ঘরে বসে আছেন।
.
১০.
পড়ার ঘরে এসে দেখলাম, ইনসপেক্টর স্লাক এবং মিঃ মেলচেট উপস্থিত। ইনসপেক্টরের মুখ গম্ভীর। মেলচেটের মুখে রাগ রাগ ভাব।
ওদের সঙ্গে কথা শুরু করেই বুঝতে পারলাম, দুজনের মধ্যে মতের অমিল ঘটেছে।
মেলচেট বলল, মিঃ রেডিং-এর নির্দোষিতা মিঃ স্লাক মেনে নিতে পারছেন না।
মিঃ স্লাক বললেন, ও যদি খুনই না করবে তাহলে সেধে অমন করে ফাঁসির দড়ি গলায় নিতে চাইবে কেন?
মেলচেট বললেন, মিসেস প্রথেরোও তো ওই একই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।
-ওটা স্ত্রীলোকেদের আবেগ বলেই ধরে নেওয়া যায়। আবেগের মাথায় ওরা ওরকম অনেক কাণ্ডই করে। কিন্তু রেডিং-এর ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। খুন করার পর ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। ও যে অপরাধ করেছে তার প্রমাণ পিস্তল। ওটাকে তো অস্বীকার করা যায় না।
-তাহলে কি বলতে চাও রেডিং মিঃ প্রথেরোকে সাড়ে ছটার সময় গুলি করেছে?
–না, তা নয়।
–ওই সময়ে রেডিং-এর গতিবিধি তুমি খুঁটিয়ে দেখেছ?
-অবশ্যই। শোন তাহলে বলি, ছটা বেজে যখন দশ, তখন রেডিং গ্রামে ছিল। সেখান থেকে পেছনের রাস্তা দিয়ে যখন সে আসে তখনই মিস মারপলের চোখে পড়ে। এই মহিলাটি খুব একটা ভুল যে করেন না তাতো জানই।
যাই হোক, মিসেস প্রথেরো তার বাগানের স্টুডিও ঘরে অপেক্ষা করছিলেন। রেডিং সেখানে তার সঙ্গে গিয়ে দেখা করে।
সাড়ে ছটা নাগাদ তারা আবার স্টুডিও ঘর থেকে বেরিয়ে গ্রামের রাস্তা ধরে চলে যায়। রাস্তার শেষ প্রান্তে ওদের সঙ্গে দেখা হয় ডঃ স্টোনের।
একটানা অতগুলো কথা বলে ইনসপেক্টর দম নেবার জন্য একটু থামলেন। পরে বললেন, এরপর পোস্ট অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কথা বলার পর মিসেস প্রথেরো মিস হার্টনেলের বাড়ি যান বাগান বিষয়ে একটা বই আনতে। সেখানে তিনি সাতটা অবধি ছিলেন।
সেই সময় মিসেস প্রথেরোর ভাবভঙ্গী কেমন ছিল?
–মিস হার্টনেলের কাছ থেকেই জানতে পেরেছি খুব স্বাভাবিক মেজাজেই তিনি ছিলেন।