-তখন সময়টা মনে আছে?
-তখন সোয়া ছটা বেজে মিনিট দুয়েক বেশি হয়েছে। খানিক আগেই চার্চের ঘড়ির শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম।
–বেশ, তারপর কি হল?
-মিসেস প্রথেরো আমাকে বলল, তার স্বামীকে ডাকতে ভিকারেজে এসেছে। ওকে আমি গলিটা দিয়ে আসতে দেখেছিলাম। যাওয়ার সময় গেল ভিকারেজের পেছন গেট দিয়ে বাগান পার হয়ে।
-উনি গলির দিক থেকে এসেছিলেন?
-হ্যাঁ। একটু পরেই তাকে বাড়ির কোণটা ঘুরে যেতে দেখলাম। মনে হয় মিঃ প্রথেরো এখানে ছিলেন না। যাবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে এসেছিল।
-তারপর?
–দেখলাম স্টুডিওটার দিকে চলে গেল। ওর ঘরটা মিঃ ক্লেমেন্ট রেডিংকে আঁকার কাজের জন্য দিয়েছিলেন।
–আপনি কোন গুলির শব্দ শুনতে পাননি? একটু আগে কি পরে?
-হ্যাঁ। সেই শব্দটা এসেছিল বনের দিক থেকে। মিসেস প্রথেরো চলে যাবার মিনিট পাঁচেক পরে। আমি নিশ্চিত যে শব্দটা বনের দিক থেকেই এসেছিল।
-তারপর কি হল?
-তারপর মিঃ লরেন্সকে দেখলাম রাস্তা ধরে জঙ্গলের দিক থেকে আসছে। ভিকারেজের গেটের সামনে এসে দাঁড়াল, চারদিক একবার সতর্কভাবে তাকিয়ে দেখল
–আপনাকে দেখতে পেয়েছিল?
-মনে হল পায়নি। কেন না, ওই সময়েই আমি নিচু হয়ে এলিয়ে পড়া একটা ফুলগাছ ঠিক করে দিচ্ছিলাম। পরে দেখলাম গেট দিয়ে ঢুকে স্টুডিওর দিকে যাচ্ছে।
–মিঃ লরেন্স তাহলে বাড়িটার কাছে যায়নি?
-না। স্টুডিওর দিকেই চলে গিয়েছিল। ওর সাড়া পেয়েই বোধহয় মিসেস প্রথেরো ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর ওরা দুজনে ঘরে চলে গেল।
-কতক্ষণ পরে ওরা স্টুডিওর থেকে বেরিয়ে আসে?
–মিনিট দশেক পরেই। চার্চের ঘড়িতে সাড়ে ছটা বাজতে শুনেছিলাম। গেট দিয়ে বেরিয়ে ওরা গলিতে চলে আসে। ঠিক সেই সময়েই বনের দিকে রাস্তা দিয়ে? আসতে চোখে পড়ল। তিনি এসে এদের দুজনের সঙ্গে যোগ দিলেন। তারপর তিনজনে মিলে গ্রামের দিকের রাস্তা ধরে চলে গেলেন।
একটানা কথাগুলো বলে একটু থামলেন তিনি। পরে বললেন, আমার ধারণা রাস্তাটার প্রান্তে আসার পরে ওদের সঙ্গে মিস ক্রেমের সঙ্গে দেখা হয়। মিস ক্রেমই হবে, ওর পরণের ভীষণ ছোট স্কার্টটা আমি চিনতে পেরেছিলাম। মিস ক্রেমও ওদের সঙ্গে যোগ দেয়।
–আপনার দৃষ্টিশক্তির প্রশংসা করতে হয় মিস মারপল। আচ্ছা, মিসেস প্রথেরো আর রেডিং–এর হাঁটাচলার মধ্যে কোন রকম অস্বাভাবিকতা নজরে পড়েছিল আপনার?
–অর্থাৎ আপনি বলতে চাইছেন, ওদের মনের অবস্থা বা ভাবভঙ্গী কেমন ছিল, তাই তো?
–হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক তাই।
–ওরা খুব স্বাভাবিকভাবেই গল্প করতে করতে হাঁটছিল। আচ্ছা, মিসেস প্রথেরো কি স্বীকার করেছে, যে খুনটা সেই করেছে?
মিঃ মেলচেট বিস্মিত স্বরে বললেন, আশ্চর্য! আপনি আঁচ করলেন কি ভাবে?
-এটাই তো স্বাভাবিক, হাসলেন মিস মারপল, কিন্তু ঘটনাটা ঠিক নয়। মিসেস প্রথেরোর মত মহিলার পক্ষে এমন ঘটনা কিছুতেই সম্ভব নয়। তা, কি দিয়ে খুন করেছে বলে বলেছে?
-পিস্তল দিয়ে।
–কোথায় পেল সেটা?
–ওটা নাকি সঙ্গে করে এনেছিল।
মিস মারপল হঠাৎ জোরের সঙ্গে বলে উঠলেন, না, না ও সঙ্গে করে কোন পিস্তল আনেনি। ওই ধরনের কিছুই ওর সঙ্গে ছিল না।
মিঃ মেলচেট কয়েক মুহূর্ত কি ভাবলেন। পরে বললেন, এমনতো হতে পারে, হাতব্যাগে অস্ত্রটা ছিল?
মিস মারপল বললেন, ওর সঙ্গে কোন হাত ব্যাগই ছিল না।
মিঃ মেলচেট হঠাৎ বলে উঠলেন, আমি দেখছি উল্টে পড়া ঘড়ির সময় ছটা বাইশের সঙ্গে এই ঘটনাগুলো বেশ খাপ খেয়ে যাচ্ছে।
মিস মারপল আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ঘড়িটা সম্পর্কে মিঃ মেলচেটকে এখনো কিছু
ঘড়ির কি ব্যাপার? বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন মিঃ মেলচেট।
এবারে ঘড়ির ব্যাপারটা প্রকাশ করবার একটা সুযোগ আমি পেলাম। শুনে মিঃ মেলচেট বিরক্তির সঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, ঘড়িটা যে ফার্স্ট যায় এই কথাটা গতকাল আপনি ইনসপেক্টর শ্লাককে কেন জানাননি?
–আমি বলবার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ইনসপেক্টর আমাকে সেই সুযোগ দেননি।
মিঃ মেলচেট মাথা নত করে কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। পরে বললেন, দুজন পরপর খুনের কথা স্বীকার করেছে, আরও দু-একজন যদি একই দাবি নিয়ে হাজির হয়, তাহলে আমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
মিস মারপল মৃদু হেসে ধীরে ধীরে বললেন, আমি আপনাকে একটা পথ বাতলাতে পারি। রেডিং নির্দোষ একথা যদি মিসেস প্রথেরোকে আর মিসেস প্রথেরো নির্দোষ এই কথাটা রেডিংকে বোঝাতে পারা যায় তাহলে দেখবেন ওরা দুজনেই সত্যি কথাটা প্রকাশ করবেন। ওদের সত্য জবানবন্দি আপনাদের পক্ষে খুবই সাহায্যকারী হবে।
মিঃ মেলচেট বললেন, তবে আমার কিন্তু মনে হচ্ছে মিঃ প্রথেরোকে খুনের ব্যাপারে ওদের দুজনকে সন্দেহ করা যায়। দুজনেরই স্বার্থ রয়েছে এতে।
মিস মারপল বললেন, আমি ঠিক ওকথা বলতে চাইনি।
-তবে আপনি কি অন্য কাউকে সন্দেহ করেন?
মিস মারপল হাসলেন। বললেন, একজন কি বলছেন, আমি অন্তত এমন জনা সাতেকের নাম বলতে পারি, যাদের প্রত্যেককেই এই খুনের জন্য দায়ী বলে মনে হতে পারে।
মিঃ মেলচেট কথাটা শুনে মিস মারপলের দিকে হাঁ হয়ে তাকিয়ে রইলেন। পরে বললেন, আপনি বলছেন কি! এরা সবাই কি এই সেন্ট মেরী মিড-এরই বাসিন্দা?
মিস মারপল হাসতে হাসতে ঘাড় নাড়লেন।
.
০৯.
মিঃ মেলচেটের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি ভিকারেজে ফিরে এলাম। বসার ঘরে দেখলাম গ্রীসলডা মিস ক্রেমের সঙ্গে বসে কথা বলছেন। গ্রীসলডা জানাল, আমার সঙ্গে দেখা করবার জন্য উনি এসেছেন।