-সেদিন কি ওদের দুজনের মধ্যে খুব কথা কাটাকাটি হয়েছিল?
-মনে হয়। উনি চলে যাবার পরে মিঃ প্রথেরো আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন, কোনদিন যেন বাড়িতে ঢুকতে না পায়।
–ওদের দুজনের কথাবার্তা কিছু শুনতে পেয়েছিলে?
–মিঃ প্রথেরো মাঝে মাঝে খুব জোরে কথা বলছিলেন। টুকরো টুকরো কথা কানে এসেছিল।
–তাতে কি বুঝতে পেরেছিলে, কি নিয়ে ঝগড়াটা হচ্ছে?
–মনে হল মিস প্রথেরোর ছবি আঁকা নিয়েই ঝগড়া বেঁধেছিল।
ঝগড়ার পরেই লরেন্স চলে গিয়েছিল?
–হ্যাঁ, আমি দরজা অবধি এগিয়ে দিয়েছিলাম।
–ওকে কি খুব রাগান্বিত দেখেছিলে?
–না।
সেদিন আর কেউ এসেছিল বাড়িতে?
-না, কেউ আসেন নি।
আগের দিন কেউ এসেছিল?
–হ্যাঁ, বিকেলে ডেনিস এসেছিল আর ডাঃ স্টোন। তাছাড়া সন্ধ্যাবেলা একজন মহিলাও এসেছিলেন?
মহিলা? বিস্মিত হলেন মিঃ মেলচেট, মহিলাটি কে?
চাকরটি কয়েক মুহূর্ত কি মনে করবার চেষ্টা করল চুপ করে থেকে। পরে বলল, যতদূর মনে হয় তার নাম বলেছিল, মিসেস লেসট্রেঞ্জ।
-তিনি কখন এসেছিলেন?
–তখন সকলে রাত্রের খাবার খাচ্ছিলেন। তিনি মি: প্রথেরোর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন। বললেন মিসেসকে খবর দেবার দরকার নেই।
-তারপর?
–মিঃ প্রথেরোকে খবর দিতে তিনি উঠে এসেছিলেন। আধঘন্টা মত দুজনের কথা হয়। চলে যাবার সময় মি: প্রথেরোই তাঁকে দোরগোড়া পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছিলেন।
একটু পরেই আমাদের ভেতরে ডেকে নিয়ে যাওয়া হল। ঘরে মিসেস প্রথেরো একাই ছিলেন। মুখটা মলিন দেখাচ্ছিল। কিন্তু চোখ ছিল উজ্জ্বল। চিঠি পেয়েই চলে আসার জন্য তিনি আমাদের ধন্যবাদ জানালেন।
পরে বললেন, চিন্তা করে দেখলাম, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মনের বোঝা নামিয়ে দেওয়াই উচিত। মিঃ মেলচেট এসে ভালই করেছেন। আপনিই সেই লোক যার কাছে আমার কথাটা বলা উচিত। মিঃ প্রথেরোকে আমিই খুন করেছি।
আমরা স্তম্ভিত হয়ে মিসেস প্রথেরোর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। মিঃ মেলচেট কি বলতে যাচ্ছিলেন, তাকে থামিয়ে দিয়ে মিসেস প্রথেরো পুনরায় বলতে লাগলেন। সত্যি কথা বলতে কি, বিয়ের পর থেকেই আমি চূড়ান্ত অসুখী জীবন যাপন করছিলাম। আমার স্বামীকে আমি ঘৃণা করতাম, হ্যাঁ ভীষণ। গতকাল আমি মনের জ্বালা মিটিয়েছি তাকে গুলি করে খুন করে। আমার কথা সম্পূর্ণ সত্য মিঃ মেলচেট।
কথা শেষ করে তিনি চোখ বুজলেন।
–কিন্তু, ম্যাডাম, আপনি কি জানেন যে ইতিমধ্যেই মিঃ রেডিং মিঃ প্রথেরোকে খুন করেছে। বলে থানায় আত্মসমর্পণ করেছে?
–জানি। ও নির্বোধ। আমাকে পাগলের মত ভালবাসে। হয়তো এটা ওর মহত্ত্ব, কিন্তু চূড়ান্ত নির্বোধ।
লরেন্স কি জানতো যে আপনি খুন করেছেন?
–হ্যাঁ। মাথা নাড়লেন মিসেস প্রথেরো।
–কি করে সে জানলো? আপনি বলেছিলেন?
একমুহূর্ত ইতস্ততঃ করলেন তিনি। পরে বললেন, হ্যাঁ, আমিই বলেছিলাম।
কিন্তু আপনি পিস্তল কোথায় গেলেন?
–পিস্তল? ওটা আমার স্বামীর। ওর ড্রয়ার থেকে ওটা বের করে নিয়েছিলাম।
–তারপর সেটা নিয়ে ভিকারেজে গিয়েছিলেন?
–হ্যাঁ, জানতাম, সেখানেই যাবার কথা আছে।
–তখন সময় কটা হবে?
–ছটা পনেরোর বেশি হবে না কিছুতেই।
–স্বামীকে খুন করবার জন্যই কি পিস্তলটা সঙ্গে করে নিয়েছিলেন?
–না না, ঠিক তা নয়। নিজের জন্যই নিয়েছিলাম।
–তাই বুঝি। তা ভিকারেজে গিয়ে কি করলেন? মিঃ মেলচেট জিজ্ঞেস করলেন।
ঘরে আর কেউ আছে কিনা দেখার জন্য প্রথমে জানালার কাছে গেলাম। কিন্তু কারোর গলার আওয়াজ পেলাম না। আমার স্বামী একাই বসেছিলেন দেখলাম। হঠাৎ মনে হল এটাই সুযোগ। আমি গুলি করলাম। তারপর সেখান থেকে চলে এলাম।
–ওখান থেকে এসেই কি মিঃ রেডিংকে বললেন?
এবারেও দেখলাম কেমন ইতস্তত করলেন। পরে বললেন, হ্যাঁ, সবকথা জানাই।
–আচ্ছা, সেই সময় ভিকারেজ থেকে কাউকে ঢুকতে বা বেরুতে দেখেছিলেন?
-না। তবে ফেরার পথে মিস মারপলের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। উনি বাগানে ছিলেন। দাঁড়িয়ে দু-চারটা কথা বলেছি।
কথা শেষ করে মিসেস প্রথেরো সরাসরি মিঃ মেলচেটের দিকে তাকালেন। বললেন, সবকিছুই অকপটে স্বীকার করলাম। দয়া করে আমাকে আর বিরক্ত করবেন না। এবার আপনি আপনার যা করণীয় করুন।
ডাক্তার হেডক উঠে দাঁড়িয়ে তার কাছে গিয়ে নাড়ী দেখলেন। নিচু স্বরে বললেন, আমি এখন এখানে থাকব মিঃ মেলচেট। আপনি এঁর একটা ব্যবস্থা যতক্ষণ না করছেন, এঁকে একলা থাকতে দেওয়া ঠিক হবে না।
মেলচেট মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন। আমরা দুজনে নিচে নেমে এলাম।
.
০৮.
পুলিস স্টেশন হয়ে আমাকে নিয়ে মিঃ মেলচেট উপস্থিত হলেন মিস মারপলের বাড়ি। আমি দুজনের পরিচয় করিয়ে দিলাম।
মিস মারপলকে কয়েকটা প্রশ্ন করবেন বলেই চীফ কনস্টেবল এসেছিলেন। সে কথা শুনে মিস মারপল নীরবে সম্মতি জানালেন।
মিঃ মেলচেট বললেন, আপনার বাড়ি আর বাগানের দূরত্ব দেখে মনে হচ্ছে আপনি শুনলেও শুনতে পারেন। কাল সন্ধ্যাবেলা সন্দেহজনক কোন শব্দ কানে এসেছিল?
মিস মারপল বললেন, কাল বিকেল পাঁচটা থেকে আমি বাগানে ছিলাম। পাশের বাড়িতে কিছু হলে সেখান থেকে শোনা সম্ভব নয়।
–তবে একটা কথা। গতকাল কি কোন সময়ে মিসেস প্রথেরো এপাশ দিয়ে গিয়েছিলেন?
–হ্যাঁ। তাকে যেতে দেখেছি। আমি ডেকেছিলাম। আমার বাগানের গোলাপ দেখে ও খুব। মুগ্ধ হয়েছিল।