চার্লস এসে বাগানে গুটি গুটি পায়ে হাঁটতে থাকে, ঠিক তখনই সে মেরীকে দেখে গাছের পরিচর্যা করেত।
–গুড মর্নিং, মিস মেরী।
–গুড মর্নিং, মিঃ চার্লস।
–আচ্ছা, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম।
–আমাকে? বলুন।
–গতরাতে আমার ঘরের টেবিলে কে এস.ও.এস. লিখেছে?
–আমি।
–কেন?
–তা জানি না।
–না জেনেই লিখেছেন? বিশ্বাস হয় না।
–আমি যাই বলে মেরী আর দাঁড়ায় না।
চার্লস আশ্চর্য হয়ে ভাবে মেরী ওভাবে চলে গেল কেন? এর পেছনে কী রহস্য থাকতে পারে? শার্লট বাগানের দিকে আসছিল কিন্তু চার্লসকে দেখেই চলে যেতে চায়। চার্লস বলে–মিস শার্লট, গুড মর্নিং।
-গুড মর্নিং, মিঃ চার্লস।
-প্লিজ, চলে যাবেন না। একটা কথা, আপনি কী কাল আমার ঘরের টেবিলে এস.ও.এস. লিখেছেন?
-না, আমি যাই।
দাঁড়ান আমার মনে হয় আপনি লিখেছেন।
–কিসে বুঝলেন? আর যদি লিখেও থাকি তাতে কী হয়েছে? শার্লট হাসে।
–না, কিছুই হয়নি। কথাটার মানে জানেন?
–না। চলুন ব্রেকফাস্ট তৈরি।
–হ্যাঁ, চলুন।
চার্লস ভাবে, এই এস.ও.এস.-এর মধ্যে কী রহস্যের সৃষ্টি হতে পারে?
.
০৯.
স্বনামধন্য গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারো, বহু রহস্যের জাল ভেদ করে খুনীকে ধরেছে। যার প্রশংসায় সবাই ধন্য ধন্য করেছে।
— পোয়ারো বার কয়েক চেষ্টার পর চার্লসের লাইনটা পেয়ে যায়। চার্লস তার কলেজের বন্ধু। একে অপরকে মনের কথা ব্যক্ত না করে থাকতে পারে না। তবে পোয়ারোর লাইনের গোপনীয়তা যৌক্তিকতা চার্লস বোঝে। কারণ সে ভালো করে জানে সব লাইনের কিছু না কিছু গোপনীয়তা আছে। যা নিজের স্ত্রীর কাছেও বলা যায় না। অবশ্য পোয়ারো চার্লসের কাছে অনেক কথাই অকপটে বলে এবং বুদ্ধি পর্যন্ত নেয়।
-হ্যালো!
–হ্যালো, আমি পোয়ারো বলছি।
–বলুন স্যার।
–তোমার সাহেব ফিরেছে?
–না স্যার, সেই জন্য বড় চিন্তায় আছি।
–চিন্তার কিছু নেই। কোথায় গেছে জানো?
–না স্যার।
সঙ্গে আর কেউ গেছে?
–না, একাই গেছে।
–এলে আমায় ফোন করতে বলল।
–আচ্ছা স্যার। গুড নাইট।
.
-হ্যালো।
–চার্লস ফিরেছে? পোয়ারো জানতে চায়।
–না স্যার, রাত প্রায় এগারোটা বাজে।
–ঠিক আছে যত রাতেই ফিরুক আমায় ফোন করো।
নিশ্চয়ই স্যার।
.
পরদিন সকাল নটা নাগাদ চার্লস ফিরেছে। তবে নিজের গাড়িতে নয়, কিছুটা ট্রাকে এবং বাকিটা ট্যাক্সিতে। ডিনসমেডের জিম্মায় গাড়িটা রেখে এসেছে। উনি গ্যারেজ থেকে লোক আনিয়ে সারিয়ে চার্লসের বাড়ি পাঠিয়ে দেবেন।
চার্লস বাড়ি আসার সঙ্গে সঙ্গে উদ্বিগ্ন চাকর বার্ট নানা কথা জিজ্ঞাসা করে। সে বাড়ির চাকর হলেও তার অবিবাহিত জীবনে বিরাট ভূমিকা আছে।
চার্লস তাকে বুঝিয়ে বলার পর বার্ট বলে–স্যার এক্ষুনি একবার মিঃ পোয়ারোকে ফোন করুন।
-হা করছি। কয়েকবার ফোন করেছে তো?
–হ্যাঁ স্যার।
–এক কাপ কফি দাও তো।
–এক্ষুনি আনছি। কাল রাতে উনি দুবার ফোন করেছেন, সকালেও দুবার ফোন করেছেন।
–তাই নাকি? ভাবছিলাম একটু বিশ্রাম নেবো, এক্ষুনি একবার যাই। বলে উঠে দাঁড়াল।
–স্যার কফি খাবেন না?
–না থাক।
একটা ট্যাক্সি ধরে মিনিট দশেকের মধ্যে পোয়ারোর বাড়ি পৌঁছালো চার্লস। পোয়ারো একটু ধমকের সুরে বলল–এই যে ধাড়ি খোকা, তোমার খবর কী?
-খুবই গুরুতর।
–তা কাল প্ৰেজার ট্রিপ মারতে কোথায় গিয়েছিলে? গ্রীন উড ছাড়িয়ে? সঙ্গে কে ছিল?
–কেউ না। কফি আনতে বল।
তারপর কফি এলো। কফি খেতে খেতে চার্লস ডিসমেডের পরিবারের প্রশংসা করে তাদের আতিথ্যের বর্ণনা করল এবং বলল রাতে তাকে থাকতে না দিলে সে জীবন পেত না!
বন্ধু, ও অবস্থায় কেউ কাউকে ফেরাতে পারে না।
–এবার আর কোথাও তোমায় ছাড়া বেরোচ্ছি না। তার আগে তোমায় ডিনসমেডের দুই কন্যার বিবরণ দিই। বন্ধু, বয়সে বড়ই ছোটা।
–গল্পটার গোড়াতেই কেঁচিয়ে দিলে।
বুঝিয়ে বলবে তো কীসে?
–সাধে কী তোমায় লোকে অবিবাহিত বলে?
বন্ধু, তুমিও তো একই দোষে দোষী।
–তা বয়স কত? একেবারে মায়ের কোলে দুধ খাচ্ছে না তো?
–না তা নয় দুজনেই সতেরো আঠারো হবে।
–এইজন্যই বলি অবিবাহিত লোকগুলো যেমন অবিবেচক তেমনি আহাম্মক।
বন্ধু, উপরে থুতু ছেটালে তা নিজের গায়ে এসেই পড়ে।
-তা ঠিক। তবে তোমার মতো আহাম্মক নই। একটু উঁচু ধরনের। কেউ সাতেরো আঠেরো বয়সের মেয়েদের বলে বয়সে বড়ই ছোটো।
বন্ধু, তোমার বয়স কত?
–ওদের সঙ্গে কথা বললে আমাদের বয়সও তখন পঁচিশের নিচে গিয়ে দাঁড়াতো। নইলে সেদিন পার্টিতে মিস জার্ডিন আমার সান্নিধ্য না পেয়ে অভিমানে কত কী বলেছিলো।
–আর তুমি কথা দিয়েও পরের দিন জার্ডিনের বাড়ি যাওনি।
–আহাম্মক তো।
–স্বীকার করছ? চার্লস হো হো করে হাসে–আজ আর অফিস গেলাম না।
হা ডুব মারলে তো দেখতেই পাচ্ছি আর তার সঙ্গে আমারও ক্ষতি করালে।
বরং তোমায় একটা কেস দিতে এসেছি।
–এখন আর কোনো কেস না। দুটো কেস সমাধান করতে গিয়ে নাজেহাল, এখন শুধু বিশ্রাম।
–তাই বুঝি কাল আমার সাথে প্রেজার ট্রিপে গেলে না? বিশ্রাম তোমার ঠিকুজি কোষ্ঠিতে নেই। ভগবান তোমার পায়ে চাকা লাগিয়ে দিয়েছে বন বন করে ঘোরার জন্য। আর মন দিয়েছে চিন্তা ভাবনার জন্য। এই কাজ করার স্পৃহা তোমার মধ্যে যথেষ্ট রয়েছে। আমার অফিস ডুব মারার প্রসঙ্গে তুমি বললে, এসে আমার কাজের ক্ষতি করেছ।