হতেও তো পারে।
জর্জ দরজার দিকে এগিয়ে যায়–নিশ্চয় কেউ বিপদে পড়েছে।
তারপর জর্জ দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে–ভেতরে আসতে পারি?
–নিশ্চয়ই। আপনি যে একেবারে ভিজে গেছেন।
পথের মাঝে গাড়িটা বিগড়ে গিয়ে এই বিপত্তি।
এর মধ্যে বাবা-মার কাছে মেরী এবং শার্ট এসে হাজির। ওরা কিচেনে মায়ের সঙ্গে রান্নায় সাহায্য করছিল। মাকে ছুটে আসতে দেখে ওরা থাকতে পারেনি।
–এসে ফায়ার প্লেসের কাছে বসুন। ডিনসমেড চার্লসের দিকে এগিয়ে যায়।
চার্লসের কাঁপা থামেনি–আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
–আরে এতে ধন্যবাদের কী আছে? আজ আপনি বিপদে পড়েছেন কাল আমিও পড়তে পারি। জর্জ ততক্ষণে একটা চেয়ার নিয়ে ফায়ার প্লেসের কাছে রেখে–আপনি এতে বসুন।
-ধন্যবাদ ভাই।
–ফায়ার প্লেসের কাছে বসে গনগনে আগুনের কাছে হাত বাড়িয়ে দেয় চার্লস।
–আপনার পরিচয়টা জানা হল না।
–আমার নাম চার্লস বো ভারা।
–কোথায় থাকেন?
–পাম এভিনিউতে।
–তা এদিকে কোথায়?
–নিছক ঘুরতে। বলতে গেলে প্রায় উইক এন্ডেই বের হই।
–তাহলে ঘোরা আপনার নেশা কী বলুন?
–হ্যাঁ তা বলতে পারেন।
হঠাৎ একটা জিনিসের দিকে নজর পড়তেই সুসান বলে ওঠে-শার্লট।
শুধু নাম উচ্চারণ করতেই শার্লট দ্রুত ভেতরে চলে যায়। চার্লস ব্যাপারটা দেখল। যুবতী নারীর দিকে বারবার তাকানো যায় না।
ডিনসমেড বলে–আপনাকে একটু ব্র্যান্ডি দিতে বলি?
-তাহলে তো খুব ভালো হয়। সত্যি আপনাদের আশ্রয় না পেলে…
–কিছুই হত না। অন্য কোথাও পেতেন।
–এখানে আপনার বাড়ি ছাড়া তো অন্য কোনো বাড়ি নজরেই এলো না।
–হ্যাঁ কাছে পিঠে আর নেই।
এর মধ্যে ব্র্যান্ডি ভর্তি গ্লাস আনে মেরী-এই নিন।
পানীয় নিয়ে মেরীর দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে অস্পষ্ট করে বলে–ধন্যবাদ।
চার্লস ব্র্যান্ডি পান করে কিছুটা চাঙ্গা বোধ করে।
-এই দেখুন কী ভুলো মন, আপনি এখনও ভিজে জামাকাপড়ে রয়েছেন।
–ঠিক আছে,-চার্লস সত্যিই লজ্জা পেয়ে যাচ্ছে।
-তা বললে হয়? এই ভিজে জামাকাপড়ে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন আর আমিও লজ্জায় মারা যাবো। একরাত কষ্ট করে আমার জামা পরে চালান।
হঠাৎ চলে গিয়ে শার্লট আবার ফিরে এসেছে দেখে চার্লস খুশী। দুবোনের মধ্যে সেই সুন্দরী। ডিনসমেড বলে–মেরী তুমি চার্লসকে বাথরুমটা দেখিয়ে দাও।
–আসুন আমার সঙ্গে।
অগত্যা মেরীকেই অনুসরণ করতে হয়।
পোশাক পাল্টে চার্লস আর ডিনসমেড ডিনার টেবিলে মুখোমুখি বসেছে।
ডিনসমেড বলল–আপনার নেশার কথা জানা গেল কিন্তু পেশার…
–পেশায় আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার।
জর্জ বলে ওঠে। জানেন আমারও ইঞ্জিনিয়ার হবার শখ।
চার্লস জর্জের দিকে তাকায়,-রোগা ছিপছিপে গড়ন, কটা চোখ, ধূসর চুল, বয়স ষোল হবে।
-ভালো কথা।
–আমি এখানে একটা ছোট্ট ল্যাবোরেটরি তৈরি করেছি।
–ভেরি গুড। যাবার সময় দেখে যাবো।
আমি পেশায় কন্ট্রাক্টর।–ডিনসমেড বলে।
–কীসের?
বাড়ির। অথচ আমার নিজের বাড়ি হল না।
–এটা?
–কিনেছি।
–আচ্ছা এখান থেকে শহর কত দূরে?
–ত্রিশ-চল্লিশ মাইল হবে।
–আপনার ছেলে কোথায় গিয়ে পড়াশোনা করে?
—এই গ্রামের শেষের দিকে স্কুল-কলেজ আছে।
-বাজার হাট?
–টিন ফুড ভরসা।
–বলেন কী?
মেরী বলে–মাংসওয়ালাই সপ্তাহে মাত্র একদিন দোকান খোলে।
-তাই নাকি?
ডিনসমেড বলে–হ্যাঁ, কে বলুন তো টিন ফুডের সৃষ্টি করেছিল? তাকে ধন্যবাদ না জানিয়ে থাকা যায় না।
–ঠিক বলতে পারব না। চার্লস মেরীর দিকে তাকায়। বয়স আঠারো হবে, মাথায় একরাশ ধূসর চুল, কটা চোখ, স্লিম ফিগার, পরনের ম্যাক্সি।
ওদিকে শার্লট ও সুসান ডিনার সাজাতে ব্যস্ত। শার্লটকে একনজরে দেখে নেয়। সতেরো হবে, নীল চোখ, লম্বা ধূসর চুল, সুন্দরী।
ওরা তারপর ডিনারে বসল। কোণার রাস্তার ধারের ঘরে চার্লসের থাকার কথা হল। ডিনসমেডের কথামতো চার্লস সেই ঘরে শুতে গেছে। তাকে সবকিছু দেখিয়ে দেবার জন্য দুবোন এসেছে। শার্লট বলল-ঘরের সঙ্গে বাথরুম রয়েছে।
চালর্স তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে শার্লটের দিকে তাকায়।
-ধন্যবাদ। কিন্তু ম্যাডাম আপনার নামটাই জানা হল না।
–শার্লট ডিনসমেড।
–এই অধমের নাম…
–শুনেছি।
–সুন্দরী মেয়ের সাথে কথা বলা থেকে ভগবান বঞ্চিত করে রেখেছে।
মেরী বলে–টেবিলে আপনার জন্য জল আছে। তবে টেবিলটা পরিষ্কার করতে পারিনি।
–যা করেছেন তাই যথেষ্ট। আপনার নামও অজানা।
–মেরী ডিনসমেড।
–দুঅক্ষরের ছোট্ট সুন্দর নাম। আমি একটু বাথরুম থেকে আসছি।
দুই বোন বিছানাটা একটু ঠিকঠাক করে চলে গেল। ক্লান্ত চালর্স শুতে যাবার আগে জলের গ্লাসের দিকে হাত বাড়িয়ে চমকে গেল। এভাবে এটা কে লিখল? কার লেখা হতে পারে? এ ধরনের লেখার অর্থ বা উদ্দেশ্য কী হতে পারে? এর পেছনে কী রহস্য লুকিয়ে আছে?
চার্লস আবার লেখাটার দিকে তাকায়, টেবিলের ধুলোর উপর লেখা আছে–এস.এ.এস. অর্থাৎ সেভ আওয়ার সেলভস–এই লেখাটার কীই বা হেতু হতে পারে?
আর কিছুই ভাবতে পারে না চার্লস, ক্লান্ত হয়ে অবশ দেহে ঘুমে অচৈতন্য হয়ে পড়ে। তবে ভোরেই জানতে হবে কথাটা কে লিখেছে এবং কেন? নইলে সে এখান থেকে যেতে পারবে না।
পাখির ডাকে চার্লসের ঘুম ভাঙে, চোখ মেলে বাইরে তাকায়। চোখ জুড়িয়ে যায়। অদূরে পাহাড়, চারিদিকে ঘন জঙ্গলের জটলা, পরিষ্কার আকাশ, সূর্য ওঠার প্রতীক্ষা। সে এক অনিন্দ্য সুন্দর মুহূর্ত।