–সবই ভবিতব্য। তাহলে ছাড়ি।
–হ্যাঁ। আর কোনো খবর পেলে ফোনে জানাবেন।
–নিশ্চয়ই।
.
–হ্যালো।
–হ্যালো সুসান, আমি ডিনসমেড কথা বলছি।
–বল, এত দেরি করছ কেন?
–একটু পরেই ফিরছি।
-আর দেরি করো না। আমি ছেলে-মেয়েদের বাচ্চাটার কথা বলেছি, ওরা কেবলই ওকে দেখতে চাইছে। আমি ভুলিয়ে রেখেছি।
–সুসান খারাপ খবর আছে।
–বলল, তা খবরটা কী?
–জোন্সকে পাওয়া যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে বাচ্চাটাও।
তার মানে?
–ও বাচ্চাটাকে নিয়ে কোথায় চলে গেছে কেউ তা জানে না।
–তুমি থানায় খবর দিয়েছ?
–না, প্রথমেই ওরা ছবি চাইবে, তা আমার কাছে নেই। মিস জুলিয়েটও একই কথা বলেছেন।
তাকেও জানিয়েছে?
–হ্যাঁ।
মেয়েটা তাহলে এভাবে হারিয়ে যাবে?
–কী করবো বল? আমার তো কিছুই করার নেই।
–জোন্সের মেয়েটাকে নিয়ে পালানোর পিছনে কী উদ্দেশ্য আছে?
–তা ওই জানে?
–অথচ তুমি জোন্সের কত প্রশংসা করতে।
–তখন তো এমন ছিল না।
–যাক তবু একটা ডায়েরি করে এসো।
–আচ্ছা।
.
০৭.
–হ্যালো।
–হ্যালো। মিঃ ডিনসমেড বলছেন? আমি পিটার বলছি।
–বল কী খবর?
–স্যার একটা খবর আছে। হয়তো শুনে খুশী হবেন।
–তা খবরটা কী?
–স্যার একটা তৈরি বাড়ির সন্ধান পেয়েছি।
–কোথায়?
–গ্রীন উডে।
–তোমায় গ্রীন উড়ে বাড়ি দেখতে কে বলেছে? একেবারে গ্রাম।
–গ্রাম কিন্তু এমন সুন্দর বাড়ি শহরেও পাবেন না। আর পেলেও তার দাম দুই-তিন লাখ টাকা চাইবে।
-কিন্তু আমি তোমায় শহরের বাড়ির কথাই বলেছিলাম।
–আমার চেষ্টার ত্রুটি নেই।
–তাই দেখো।
ডিনসমেড কথাটা বলল বটে কিন্তু শহরে সে হাঁপিয়ে উঠেছে। রবার্টের চিন্তা সারাক্ষণ মনমরা করে তুলেছে। তারপর বাচ্চাটাও হারিয়ে গেল। তারপর কী মনে হওয়ায় আবার জিজ্ঞাসা করল–তা বাড়িটার দাম কত?
-ষাট হাজার টাকায় একটা পুরো বাংলো। তিনটে শোবার ঘর, কিচেন, ডাইনিং স্পেস, সামনে বাগান।
–পঞ্চাশ হলে ভালো হত।
–স্যার আপনার অফার তাকে জানাবো।
তবে গ্রামে থাকতে ঠিক মন চাইছে না।
–স্যার ওখানে কিছু অসুবিধা হবে না। সবকিছু আছে। আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি।
–তা দেখেছো যখন তখন সত্যি করে বলল ওখানে কী কী সুবিধা অসুবিধা আছে?
–স্যার বাড়িয়ে বলা অধর্ম। এ শর্মা তা করে না।
–ঠিক আছে বল।
পিটার একটা লম্বা ফিরিস্তি দিল যার সুবিধা বেশি অসুবিধা নামে মাত্র।
-যাক সব শুনলাম তবু শহরই।
-তা তো ঠিক, তবে আপনি বলেছিলেন না একটু নিরিবিলি জায়গা, তাই ওখানটা খুঁজেছিলাম।
-নিরিবিলি?
– স্যার, ওখানকার মতো মুক্ত বাতাস, অদূরে পাহাড়ে, পাখির ডাক অন্য কোথাও পাবেন না। ওখানে ঠেলাঠেলি, নোংরা বাতাস-এর কিছুই এখানে নেই। স্যার রোববার বাড়িটা একবার দেখে আসবেন না?
দাঁড়াও আগে মিসেস-এর সঙ্গে কথা বলি।
–ঠিক আছে কাল আমি আবার ফোন করব।
–আচ্ছা, তা বলে শহরের বাড়ির কথা ভুলো না যেন।
–সেকি কখনও হয় স্যার? ছাড়ি স্যার।
–ঠিক আছে।
নিরিবিলি কথাটা বরাবরই তার খুব ভালো লাগে। সত্যি সে নিরিবিলিতে থাকতে চায়। একটা চাপা নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে, অথচ ডিনসমেড পিটারকে তার সঙ্গে আর বন্ধু রবার্টের বেঁচে থাকার সময় বলেছিল তার বাড়ির পাশে বন্ধুর জন্যও একটা বাড়ি খুঁজতে। যাতে তারা দুজনে আরো বেশি করে যোগাযোগ রাখতে পারে তার জন্য। এখন সেই বন্ধুর স্মৃতি মন থেকে মুছে ফেলতেই তিনি এখন থেকে পালাতে ইচ্ছুক। রবার্টকে ভুলতে সে নিজেকে সবসময় কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখে।
কিন্তু স্মৃতির হাত থেকে কারো মুক্তি নেই। সেই স্মৃতি তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এ যেন অসহ্য হয়ে উঠেছে। আগে তার এক ঘুমে রাত কেটে যেত। এখন অতি কষ্টে রাতে ঘুম এলেও মাঝে ঘুম ভেঙে যায়, আর ঘুম আসে না। দেওয়াল ঘড়ির টিক টিক্ শব্দ তাকে যেন অনেক কিছু বলতে চায়।
শুধু তাই নয় মাঝেমধ্যে রবার্টের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দৃশ্য ডিনসমেডের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তখন রবার্ট তাকে হাত নেড়ে ইশারা করে ডাকে এবং হাতটা বাড়িয়ে দেয়। কী বীভৎস সেই হাত! অথচ রবার্টের হাত ছিল মেয়েদের হাতের মতো সুন্দর।
এক আধদিন এই দৃশ্য দেখে সে ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। সুসান তখন স্বামীকে জল খাইয়ে সুস্থির করে। এই ঘটনার পর ডিনসমেড পাত্তারি গুটিয়ে অন্যত্র চলে যাবার চেষ্টায় আছে। ডিনসমেড ঠিক ভয় পায়নি। আসলে সে রবার্টকে নিয়ে এত বেশি ভাবে যে তার অবচেতন মনে এই সমস্ত দেখা দেয়। সুতরাং গ্রামের বাংলোবাড়িই শ্রেয়।
অন্যদিনের তুলনায় আজ ডিনসমেড একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে বলে সুসান খুব খুশী।
একটু পরেই সুসান কফি নিয়ে আসে। স্বামী-স্ত্রী মুখমুখি বসে কফি পান করছে। কফিতে চুমুক দিয়ে ডিনসমেড বলে–
–তোমার সঙ্গে একটা জরুরী কথা আছে।
জরুরী? কী ব্যাপারে?
–বাড়ির।
–সত্যি এ বাড়িতে আর থাকা যায় না।
–হঠাৎ এ কথা বলছ?
–রজার লাঞ্চের পর এসেছিল। রাতে তোমার সঙ্গে দেখা করবে বলে গেছে।
–ওকে ঠিক দোষ দেওয়া যায় না। ওর ছেলে আসবে।
–আমাদের অসুবিধাটা তো উপেক্ষণীয় নয়। তা তুমি কী বলছিলে যেন?
–পিটার একটা বাড়ির খোঁজ এনেছে।
–কোথায়?
–একটু গ্রামের দিকে।
–ওসব গ্রামে ফ্রামে গিয়ে থাকতে পারব না।
–কিন্তু…তোমার কথার যৌক্তিকতা অস্বীকার করা যায় না। তবু বলছিলাম…
–বল, তবে গ্রামের ব্যাপার বাদে। এতদিন শহরে থেকে তারপর গ্রামে থাকব কী করে?