-এতেই বোঝা যাচ্ছে আপনি বাচ্চাকে সত্যিই ভালোবাসেন।
–মা-বাবা হারা শিশু। তবে একদিকে সৌভাগ্য বলতে হবে। মিঃ রবার্ট আপনার মতো বন্ধু পেয়েছিল। যার থেকে তার মেয়েও বঞ্চিত হবে না।
কাজের চাপে ডিনসমেডের জোন্সের কাছেও যাওয়া হল না। সুসান বলল–কই জোন্সের কাছে গেলে না তো?
-এই সপ্তাহে যাবো। তবে মেয়ে দেবে বলে মনে হয় না।
–একবার চেষ্টা করেই দেখ না। না দিলে কীই বা করবে?
–দেখি আজ যদি যেতে পারি। এর মাঝে তো দশদিন চলে গেছে। তা তুমি যাবে আমার সঙ্গে?
যাবার তো ইচ্ছা আছে কিন্তু বাচ্চা সামলাবে কে? তুমি একাই যাও।
অগত্যা ডিনসমেড একাই চকলেট, বিস্কুট আর কিছু খেলনা নিয়ে গাড়িতে উঠে রওনা হল রবার্টের বাড়ির উদ্দেশ্যে। দশমিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেল।
নির্দিষ্ট অ্যাপার্টমেন্টের সামনে এসে দাঁড়ায় ডিনসমেড, দেখে দরজায় তালা। সে ভাবল জোন্স হয়তো বাচ্চাকে নিয়ে বেরিয়েছে একটু বাদেই ফিরবে।
মিনিট দশ পার হয়ে গেছে। ডিনসমেড একটা সিগারেট ধরায়, এইভাবে তিনটে সিগারেট শেষ হয় তবু জোন্সের দেখা নেই।
এক ঘণ্টা পর ডিনসমেডের কেমন একটা সন্দেহ হতে লাগল। তার মনে হতে লাগল বাচ্চাটার কিছু হল কী না; বাচ্চাটাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল না কী? বাচ্চাটার কিছু হলে তার আফশোসের সীমা থাকবে না।
আরো আধঘণ্টা অপেক্ষা করার পর একতলায় মিস হেনেসের কাছে আসে। রবার্টই আগে তার সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল।
কলিং বেল টিপতেই হেনেস বেরিয়ে আসে।
গুড মর্নিং মিসেস হেনেস।
–গুড মর্নিং মিঃ ডিনসমেড।
–কেমন আছেন বলুন।
–ভালো, আপনি।
চলে যাচ্ছে, জোন্স কোথায় গেছে জানেন? তালা দেওয়া দেখছি।
–জোন্সের কোনো খবর জানেন না?
–না।
-সেকি আমি তো জানি আপনি সব জানেন। জোন্স সেই কথাই বলেছিল। মিঃ হেনেসও তাই জানেন।
–ও কী বলেছে?
–ও চলে যাচ্ছে। কী যেন একটা জায়গায় নাম বলল।
–মিস হেনেস জানেন?
–না। আর জোন্স অ্যাপার্টমেন্ট বেচে চলে গেছে।
কবে? কাকে?
দিনপাঁচেক আগে মিঃ ম্যাকডোনাল্ডকে বেচেছে।
–তিনি কোথায় থাকেন?
–শুনেছি এই শহরেরর উত্তরদিকে থাকেন। ওর মালপত্র এসে গেছে, ফ্যামিলি কাল আসবে।
-কততে বেচেছে?
–চল্লিশ হাজার টাকা।
–মাত্র?
–আমায় তো তাই বলেছে। আমি ভাবছি এসব বেচে দিল অথচ আপনি জানেন না?
–মনে পাপ থাকলে কী অপরকে জানায়? বাচ্চাকে কী করেছে জানেন?
–দেখলাম তো সঙ্গে করে নিয়ে গেল।
–কিন্তু কোথায় নিয়ে গেল, দেশের বাড়িতে?
–তা আমি জানি না। জায়গাটার নাম করতে পারছি না। বলেছে বাচ্চাকে ওখানকার একটা কনভেন্টে ভর্তি করে দেবে। তারপর যা থাকে ওর কপালে।
-ঠিক আছে, চলি।
কনভেন্ট স্কুল
০৬.
শহরে যে কটা কনভেন্ট স্কুল আছে, সব কটা খুঁজেও কোথাও বাচ্চার হদিশ না পেয়ে ডিনসমেড বাড়ি ফিরে চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আকাশ-পাতাল ভাবতে লাগল।
-হ্যালো।
–হ্যালো মিস জুলিয়েট। আমি ডিনসমেড।
–বলুন মিঃ ডিনসমেত, খবর কী? বাচ্চা কেমন আছে?
বাচ্চার কোনো খবর জানি না।
-মানে, বাচ্চা এখনও নিজের কাছে আনেননি বুঝি? আপনার কথা শুনে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।
–আমার পরের কথা শুনে আরো ঘাবড়ে যাবেন।
–তা কথাটা কী?
–জোন্স অ্যাপার্টমেন্ট সহ ফার্নিচার বেচে বাচ্চা নিয়ে উধাও।
–পালিয়েছে? জুলিয়েটের গলায় বিস্ময়ের আওয়াজ।
–হ্যাঁ।
–কিন্তু আমি ব্যাপারটা কিছুই বুঝতে পারছি না।
–আমার কথা শুনলেই বুঝবেন। এইমাত্র ওর ওখান থেকে এসেই আপনাকে ফোন করছি।
-কোথায় গেছে কেউ বলতে পারছে না? মিসেস হেনেসকেও কিছু বলে যায়নি?
–সে বলতে পারছে না। তাকে বলেছে বাচ্চাকে শহরের একটা কনভেন্টে দেবে।
–তাহলে দেখা মিলতে পারে।
–সেগুড়ে বালি। আমি আশেপাশের সব কনভেন্টগুলিতে খবর নিয়েছি। ও মিথ্যে কথা বলেছে।
–অথচ বাচ্চাকে আপনার কাছে দেবে বলল।
–হ্যাঁ, আমি তো তাই জন্যই আনতে গিয়েছিলাম।
তাছাড়া বাচ্চাকে মানুষ করবে কী করে? একটু ভালোভাবে মানুষ করতে গেলে চাই টাকা। সে ও পাবে কোথায়? আর তাছাড়া গাইডেন্স?
-টাকার ব্যবস্থা করেই গেছে। অ্যাপার্টমেন্ট বেচে চল্লিশ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।
–কাকে বেচেছে কিছু জানতে পেরেছেন?
–হ্যাঁ ম্যাকডোনাল্ড নামে এক ভদ্রলোককে। দিন পাঁচেক হল বেচেছে।
–ও।
–আমি এখন কী করি? স্ত্রী শুনলে ভীষণ আপসেট হয়ে পড়বে।
–পড়বে তো। নেহাৎ বন্ধুর মেয়ে বলেই আপনি দেখাশোনা করতে গিয়েছিলেন অথচ
জানেন আমি এখনও ভাবতে পারছি না জোন্স বাচ্চাকে নিয়ে পালিয়েছে।
–আমারও এক অবস্থা।
–আমি কী থানায় যাবো?
–থানায় গিয়ে কোনো ফল হবে বলে মনে হয় না।
পুলিশ ওদের খুঁজে বার করবে।
–কেমন করে?
–তাও তো বটে, ওদের ছবি তো আমার কাছে নেই। আপনার কাছে আছে?
–উঁহু, তবে একটা ডায়েরি করে রাখুন।
–তাই করি। জোন্স যে এভাবে ডোবাবে
অথচ গেলে তো কত ভালো ব্যবহার করত। কথায় কথায় চা-কফি নিয়ে আসত। আর বাচ্চার কথা বলত সবসময়। আর সেই বাচ্চার ক্ষতি করার জন্য ও উঠে পড়ে লেগেছে।
-সত্যি, বাচ্চার কথা ভেবে আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
–ও বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাবে। আর জোন্স একসঙ্গে অত টাকা পেয়ে হয়তো বেপরোয়া জীবন শুরু করবে।
–আমারও তো একই চিন্তা আর আপনাকে যে টিচার রাখব কথা দিয়েছিলাম তাও খেলাপ হল।
–আপনি আর কী করবেন! আমার দুর্ভাগ্য এমন একটা সুন্দর বাচ্চা পড়াবার ভার পেয়েও হারালাম।