-ঘুমোচ্ছ।
–এরপর মনে হয় ওকে নিয়ে মুশকিলে পড়তে হবে।
–হ্যাঁ, কিছুটা তো পড়তেই হবে।
ও সমানে সাহেবের কথা জানতে চাইছে।
–সে তো চাইবেই। ওরা যে পরম করুণাময় ঈশ্বরের..ওঃ হ্যাঁ, তা ও কী বলছে?
–বলছে বাবা বাইরে গেছে।
ডিনসমেড শান্তভাবে পানীয়ে চুমুক দিতে থাকে।
–এরপর বলল, চল আমরা গিয়ে বাবাকে ডেকে আনি।
–এইভাবে কদিন কাটবে মিথ্যে বলে?
–তাই ভাবছি। এই বাড়িটা আমার কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছে।
–কি করবে এবার?
–এখান থেকে চলে যাবো।
–কোথায়?
–যে কোনো জায়গায়। এছাড়া কিছু ভাবতে পারছি না।
–শান্ত হও জোন্স।
-স্যার, আমি আজ সাহেবের অভাব ভালোভাবে টের পাচ্ছি। আর…অল্প বয়সে মা-বাবা মরা এই মেয়েটার দিকে আমি আর তাকাতে পারছি না। উঃ কী ভাগ্যই না এই মেয়ের। এই বাড়িটা এতো নির্জন হয়ে গেছে যে আমায় গিলতে আসছে বলে মনে হচ্ছে।
সবাই ভবিতব্য। ভেবে আর কী করবে?
-ভাবনার হাত থেকে কারো মুক্তি নেই, আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না। আমি ঠিক এখান থেকে চলে যাবো।
–কিন্তু একটা জায়গা তো ঠিক করতেই হবে।
–আমায় এখান থেকে চলে যেতেই হবে। আমার গ্রামেই ফিরে যাবো।
–এখানকার অ্যাপার্টমেন্ট?
–তা তো ভাবিনি।
—ওসব চিন্তা ভুলে যাও।
–অ্যাপার্টমেন্ট বেচে দেব। ফার্নিচারগুলোও।
–তা নয় হল। কিন্তু মেয়েকে গ্রামে নিয়ে কী করবে?
–ওখানে ওকে মানুষ করবো।
–ওখানে ভালো লেখাপড়া হবে না।
–কেন ওখানে কত ছেলে-মেয়ে স্কুল কলেজে লেখাপড়া করছে না।
–তা পড়বে না কেন? জোন্স ভুলে যেও না, ও হল রবার্টের মেয়ে। এত উচ্চ বংশের সন্তান।
–ওর জন্য আমি ভালো মাস্টার রাখব।
–তা নয় দিলে। কিন্তু বাড়িতে কে দেখাশোনা করবে?
–কেন আমি।
–আমি সেই দেখাশোনার কথা বলছি না। বাড়িতে ওকে পড়াশোনায় সাহায্য করা দরকার।
–এটা তো ভাবিনি। ঠিক আছে তাহলে ওর জন্য একজন গভর্নেস রেখে দেবো।
–তাকে তো অনেক মাইনে দিতে হবে।
–আমি উদয়াস্ত খেটে সেই টাকা জোগাড় করবো। সেরা স্কুলে পড়াবো মানে কোনো দিক দিয়েই আমার ত্রুটি থাকবে না।
–মানি। তাছাড়া তুমি বাচ্চাকে ভালোও বাস। তবে আমি বলি কি আমায় দাও ওর ভার।
–না না, সেটা অসম্ভব। ও আপনার কাছে কিছুতে থাকতে পারবে না।
–ঠিক পারবে। লিজা মারা যাবার পর বেশ কিছুদিন তো ও আমার কাছেই ছিল।
–তা ছিল। তখন ও একদম শিশু, এখন বোধশক্তি হয়েছে। পাশের বাড়িতে যে কিছুক্ষণ ছিল তাতেই আমার কথা বলে কেঁদে দিয়েছে।
-বাচ্চারা ওরকম করে। কদিন যেতে না যেতেই আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
–না স্যার, ও আমায় কখনই ভুলবে না।
–আমার কাছে রেখেই দেখ না। আমার ছেলেমেয়ের সঙ্গে ও ভালোই থাকবে। তুমি বিয়ে-থা করোনি সংসারের কোনো বালাই নেই।
-না স্যার, দয়া করে আমায় ও হুকুম করবেন না।
–হুকুম না জোন্স, বন্ধুর প্রতি আমারও তো কিছু কর্তব্য আছে।
–তা নিশ্চয়ই আছে।
–আমি এ ব্যাপারে মিস জুলিয়েটের সঙ্গে কথা বলেছি।
–তিনি কী বলেছেন?
তিনি বলেছেন বাচ্চা আমার কাছে রাখাই সব দিক দিয়ে ভালো। তোমার সাথেও তিনি কথা বলবেন।
-ও, আমায় একটু ভাববার সময় দিন।
–ঠিক আছে মন ঠিক করার জন্য দিন কয়েক সময় নাও।
–আপনি আবার আসবেন?
–এ সপ্তাহে আর হবে না।
–ঠিক আছে।
–অর্থাৎ তোমায় ভাববার জন্য দশদিন সময় দিচ্ছি।
–আপনার অসীম করুণা স্যার।
–তাহলে আজ উঠি।
–আসুন স্যার।
.
০৫.
সাড়ে দশটায় ডিনসমেড বাড়ি ফিরে সুসানকে বলল–সব কাজ ভালোভাবে হয়ে গেছে।
-তোমারও খুব ধকল গেছে।
–একটা কথা ভাবছি। তাতে মনে হয় তোমার কোনো আপত্তি নেই। রবার্টের মেয়েকে আমাদের কাছে রাখতে চাই।
-পরের মেয়ের ভার নেবে?
–রবার্টের মেয়ে আমাদের পর হবে কেন? তাছাড়া আমরা না দেখলে কে দেখবে বল?
–তোমার মতই আমার মত।
.
–হ্যালো। আমি কি মিস জুলিয়েটের সঙ্গে কথা বলতে পারি?
–বলছি।
–গুড মর্নিং, আমি ডিনসমেড বলছি।
–গুড মর্নিং, কাল ফিউনারাল থেকে কখন ফিরলেন?
–প্রায় সাড়ে দশটা হয়ে গেছে। শরীর ভালো আছে তবে মন ভালো নেই।
–না থাকবারই কথা। মিঃ রবার্ট শুধু আপনার বন্ধুই ছিলেন না। হিতাকাঙ্ক্ষীও ছিলেন।
–হ্যাঁ, ও আমার ভাইয়ের মতো। কোনো ব্যাপারেই আমাদের মতের অমিল ছিল না।
–হ্যাঁ, মিঃ রবার্টও আমায় মাঝেমধ্যে একথা বলতেন।
–মিস জুলিয়েট, কাল রাতে আপনাকে যে কথাগুলো বলেছিলাম সেই কথাগুলো আমি জোন্সকে বলেছি।
-হ্যাঁ, বাচ্চাটাকে আপনার কাছে রাখলেই বেশি ভালো হবে। তা জোন্স রাজী হয়েছে?
-বোধ হয় না, ও ভাবতে কিছুটা সময় নিয়েছে। কোলেপিঠে করে মানুষ করেছে তো। সেই জন্যই…
-তবু মেয়ের কথা ভেবে ওকে আপনার কাছে রাখতে দিলেই ভালো। ভবিষ্যৎ বলে তো কিছু আছে। ও নয় প্রতি সপ্তাহে ওকে দেখতে আসবে…
-আপনি ভালো কথা বলেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ।
-এতে ধন্যবাদের কী আছে? শিক্ষয়িত্রী হিসাবে ছাত্রীর প্রতি আমারও তো কিছু কর্তব্য আছে।
–নিশ্চয়ই তবে অনেকে তো…এবার আপনাকে একটা অনুরোধ করবো।
–বলুন।
–মানে বাচ্চা আমার কাছে থাকলে আপনাকে একটু কষ্ট করে আমার বাড়িতে যেতে হবে। আপনার বাড়ি থেকে ওটা দূরে তবে আমি চেষ্টা করবো তা পুষিয়ে দেবার।
–তবু মেয়ের দিকে তাকিয়ে আমায় এটুকু করতেই হবে। আর মেয়ে যখন রবার্টের।
-এবার আমার আর কিছুই বলার নেই। আপনার বন্ধুপ্রীতি দেখে আমি মুগ্ধ। আর আমিও সত্যি কথা বলতে ওকে পড়াতে চাইও।