-হ্যালো, ডিনসমেড? আমি জোন্স বলছি।
–বলো কী খবর? তোমার সাহেবকে রাজী করাতে পারলে?
–আর রাজী। সাহেব এখন সবকিছুর বাইরে।
–মানে?
–সাহেব আজ দুপুরে ট্রেন থেকে পড়ে গেছে। মিনিট পাঁচেক আগে পুলিশ ঘটনাটা জানিয়ে গেছে।
তারা তোমার সাহেবকে চিনলো কী করে, যে রবার্টই সেই মানুষ?
-সাহেবের পকেটে আইডেনটিটি কার্ড ছিল। উঃ সাহেব নেই ভাবতেও পারছি না। সাহেবকে ওরা মর্গে নিয়ে গেছে।
-জোন্স দয়া করে চুপ করো।
–স্যার, আমি একা মর্গে যেতে পারব না। আপনাকেও আমার সঙ্গে যেতে হবে।
–আমায় মর্গে গিয়ে রবার্টের মৃতদেহ দেখতে অনুরোধ করো না জোন্স।
–কিন্তু স্যার, আমি একা সাহস পাচ্ছি না।
–অগত্যা। এইভাবে আমিও একদিন পুট করে চলে যেতে পারি।
–স্যার ওকথা বলবেন না।
–বলতে তো চাই না। তবু ঘটনাগুলো তো আমাদের ভরসায় বসে না থেকে নিষ্ঠুরভাবে ঘটে যায়।
–আপনি আসছেন তো স্যার?
–হ্যাঁ, বাচ্চাটা কী করছে? তুমি জুলিয়েটকে একবার ফোন করে দাও।
–ও টি.ভি. দেখছে।
–অবোধ শিশু, জানতেও পারল না যে জীবনের শেষ অবলম্বনটুকু ও আজ হারালো।
–আপনি তো আছেন।
–আর আমি। ঘটনাটা কোথায় ঘটেছে কিছু বলেছে?
–বলেছিল। আমার ঠিক মনে নেই।
–ঠিক আছে আমি আসছি। মিস জুলিয়েটকে খবরটা দিয়ে দাও।
–হ্যালো।
–হ্যালো, ডিনসমেড বলছি।
–বল, আমি সুসান।
–একটা বাজে খবর আছে। রবার্ট মারা গেছে।
–মিঃ রবার্ট? আমি তোমার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না।
–আজ দুপুরে অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে।
–ওমা সেকি! এমন একটা জলজ্যান্ত মানুষ…তোমায় ঘটনাটা কে বলল?
–জোন্স।
–সত্যিই কী দুর্ঘটনা, না অন্য কিছু?
–হঠাৎ তোমার মনে এমন কথা এল কেন?
–রবার্ট একটা সুস্থ সবল মানুষ। এভাবে
–রবার্ট অসুখে মারা যায়নি। গেছে ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে।
–তা হোক, আমার মনে কিন্তু খটকা লাগছে।
–এতে খটকার কী আছে?
–কিন্তু নিউজে তো বলল না?
–সব ঘটনাই কী নিউজে বলে?
–তা ঠিক। তবু তুমি একটু ভালো করে খোঁজ নাও।
–জানো সুসান, আমার কিন্তু অন্য কথা মনে হচ্ছে। আত্মহত্যা করল না তো?
–না না, তা সে করবে কেন?
–না, ওর মনের অবস্থা তো ভালো ছিল না।
–মানছি, কিন্তু ওর মেয়েকে কে দেখবে?
–জোন্স দেখছে। মেয়েটা কতক্ষণ বা রবার্টকে পেত তাই জোন্সকে আঁকড়ে ধরেছে। দুজনে দুজনকে খুব ভালোবাসে। জোন্স তো মেয়েটার জন্য পাগল। মেয়েটাও জোন্স নেওটা হয়েছে।
–এটা একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। হা, তুমি আত্মহত্যার কথা বলছিলে কেন?
–রবার্ট লিজাকে ভুলতে পারছিল না। হয়তো সেই কারণে।
–তা বলে আত্মহত্যা করবে কেন?….
–আমার মনে হল বলে বললাম। আমি ওকে বহুবার বিয়ের কথা বলে পেয়েছি একই উত্তর। আর বিয়ে নয়। তারপর আনমনে কি সব ভাবত।
–আসলে ও লিজাকে খুব ভালোবাসত। ছুটির দিনে দুটিকে এক জায়গায় দেখা যেতো।
–তা মনে হয় স্ত্রীর শোক সামলাতে না পেরে এমন কাণ্ড করে বসেছে।
–তোমার কথাটা একেবারে ফেলনা নয়।
–শোন, আমায় মর্গে যেতে হবে। ফিরতে একটু রাত হবে।
–ঠিক আছে, হয়ে গেলেই চলে এসো।
.
-হ্যালো,
–হ্যালো, আমি রবার্টের বাড়ি থেকে জোন্স বলছি। মিস জুলিয়েটকে দিন না।
–ও, একটু ধরো।
–হ্যালো, মিস জুলিয়েট?
-হ্যাঁ। আজ সকালে যেতে পারিনি বলে খুবই লজ্জিত। বাড়িতে কয়েকজন গেস্ট এসে গিয়েছিল। কাল সকালে ঠিক যাবো।
-না না, আমি তার জন্য ফোন করিনি।
–ও বুঝেছি। ছোট্টসোনা বুঝি অভিমান করেছে?
কথাটা যেন জোন্সের গলার কাছে আটকে আছে।
সাহেব নেই।
–কী সব আজে-বাজে কথা বলছ?
আজে-বাজে নয় মেমসাহেব।
–আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। তা উনি মারা গেলেন কীসে?
–ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে। মেমসাহেব আপনি দয়া করে মর্গে যেতে পারবেন?
–যাবো।
–এক্ষুনি চলে আসুন।
–আচ্ছা, মিঃ ডিনসমেডকে খবর দিয়েছ? উনি কি বললেন?
–দারুণভাবে মুষড়ে পড়লেন। আপনার মতো উনিও প্রথমটা বিশ্বাস করতে পারেনি।
–কী করে পারবেন? এখনও আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
–এখন ভাবছি মেমসাহেব চলে গিয়ে ভালোই হয়েছে। উনি ছিলেন নরম স্বভাবের। উনি এ শোক সহ্য করতে পারতেন না।
–ঠিকই বলেছ। তা বাচ্চাটা এখন কি করছে?
–এতক্ষণ টি.ভি. দেখছিল। এখন খেলা করছে।
–এখন তুমি আর মিঃ ডিনসমেড ছাড়া হতভাগা শিশুটার আর কেউ রইল না।
–হ্যাঁ, দীর্ঘশ্বাস ফেলে, আপনি তাহলে তাড়াতাড়ি চলে আসুন।
–ঠিক আছে।
.
০৪.
রবার্টের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ। বিমর্ষ জুলিয়েটকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে জোন্সকে রবার্টের বাড়িতে পৌঁছাতে রবার্টের অ্যাপার্টমেন্টে গেলেন।
জোন্স এর মধ্যে একবার ডিনসমেডকে ডেকে গেছে। বিমর্ষ ডিনসমেড সোফায় বসে আছে। পাশের বাড়ি থেকে ঘুমন্ত বাচ্চাকে এনে জোন্স বিছানায় শুইয়ে দিল।
রাত নটা, বাড়ি যাবার জন্য ডিনসমেডের তাড়া নেই। তার বুকটা খালি হয়ে গেছে।
জোন্স কিছু স্যান্ডউইচ ও পানীয় এনেছে। স্যার।
–অ্যাঁ।
–আপনার জন্য একটু হুইস্কি আর…
–হ্যাঁ দাও। রবার্ট আমাকে এইভাবে নিঃসঙ্গ করে চলে গেল।
-সাহেব নেই তা যেন এখনো ভাবতে পারছি না। মনে হচ্ছে এখুনি আসবেন।
ডিনসমেড হুইস্কির গ্লাসটা টেনে নেয়। আর ফিরবেন। তোমার সঙ্গে তার আলাপ তিন বছরের আর আমার সঙ্গে স্কুল জীবন থেকে। কলেজ আলাদা হলেও আমাদের বন্ধুত্বে চিড় ধরেনি আজ যা ধরিয়ে দিল। বাচ্চাটা এখন কী করছে?