–সে ভার তো মিস জুলিয়েটের।
এদিকে ডিনসমেড এসেছিল কিছু টাকা ধার করতে। কিন্তু এ অবস্থায় কী করে বলবে? না বললে মেরী, জর্জ এদের অনাহারে রাখতে হবে।
রবার্ট বলে–আমি একটু বেরুবো।
–কোথায়?
দরকার আছে।
–তা যাবে কার কাছে?
-বললাম তো একটু দরকার আছে। রবার্টকে দেখে বন্ধু কষ্ট পায়। তাই বলে–তুমিও চলো। তোমার হাতে সময় আছে?
–এখন তো আমার হাতে অফুরন্ত সময়। ডিনসমেড সংসার, ব্যাবসা, বাড়ির খারাপ অবস্থার কথা বলে…রবার্ট একটা অ্যাটাচি আনছে দেখে–এটা নিয়ে কোথায় যাবে? কী আছে এতে?
লিজার দাদার কাছে। এতে শেয়ারের কাগজ আছে।
-শেয়ার? ডিনসমেডের বিশ্বাস হয় না। কারণ রবার্ট বরাবরই শেয়ারের ব্যাপারে এড়িয়ে যেত তাই এটা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়।
–হ্যাঁ চলো বেরিয়ে পড়ি।
তারপর মিনিট দশেকের মধ্যেই ওরা বার্জের বাড়িতে পৌঁছায়। বয়স ষাট পেরিয়েছে। আগে সলিসিটার ছিল এখন খালি বইপত্র নাড়াচাড়া করে মাত্র। বার্জ ব্যাচেলার মানুষ তাই চারিদিকে একটা অগোছালো ভাব!
রবার্ট ডিনসমেডকে বলে তুমি একটু বৈঠকখানার ঘরে বস, আমরা কয়েকটা কথা সেরেনি। ডিনসমেড ভেবে কূল পায় না। যে রবার্ট তাকে সামান্য কথাও না বলে থাকতে পারে না আজ সে কেন এমন গোপন করছে। বৈঠকখানার লাগোয়া ঘরেই বার্জের স্টাডিরুম।
–এসো রবার্ট আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
-হ্যাঁ, একটু বিশেষ দরকারেই এসেছি। এই অ্যাটাচিতে আমার জীবনের যথাসর্বস্ব লাখ তিনেক টাকা আর দু-লাখ টাকার গহনা আছে আর উইল আছে। এগুলো আপনার কাছে রাখুন আর মেরী সাবালিকা হলে তাকে দেবেন।
-কিন্তু আমি কেন? আমার তো কেউ নেই।
-তাই জন্যই তো আপনার কাছে রাখছি। আপনি নির্লোভ। চার্চের কাছে সব দান করে দরিদ্রের মতো থাকেন। আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। যেকোনো মুহূর্তে…
-না ওভাবে বলা না।
–আর আপনার কাছে রাখার অর্থ হল কেউ কিছু জানবে না। আর জানলে টাকার লোভে… আজ উঠি।
-তা অবশ্য ঠিক।
–চলি।
এসো। ভগবান তোমার মঙ্গল করুন।
ওদের কথা ডিনসমেড আড়াল থেকে শুনে ভাবতে লাগল-রবার্ট তার সাথে এমন ব্যবহার কেন করল?
সারা রাত ডিনসমেড ঘুমতে পারে না। চোখের সামনে অ্যাটাচিটা ভেসে ওঠে। মনে মনে সঙ্কল্প করে ওটা তার চাই-ই। সকালে উঠে সুসানকে ডাকে। সুসান কিচেনে কাজ করছিল, তাড়াতাড়ি আসতে বলায় কাজ ফেলে চলে আসে।
-কী বলছ?
–আজ থেকে মেয়েকে সোফিয়া বলে ডাকবে না। আর জর্জকে বারণ করবে।
–কেন নামটা তো তুমি দিয়েছিলে?
–হ্যাঁ, তবে বড্ড বড় নাম।
–কী নামে ডাকব?
–মেরী। ছোট্ট দুঅক্ষরের।
–কিন্তু বড্ড কমন।
–তা হোক।
সুসান তার কথায় সায় দিয়ে চলে যায়। ডিনসমেড অ্যাটাচিটার কথা ভাবতে থাকে তারপর বার্জের বাড়ির চারদিকে ঘুরে দেখে। কোথা দিয়ে ঢুকবে তারও ছক করে নেয়।
একরাতে ডিনসমেড পাঁচিল টপকে সেখানে গিয়ে দেখে অদূরে একটা বুলডগ বাঁধা। প্রাণের ভয়ে ডিনসমেড যেমন নিঃশব্দে এসেছিল তেমনই পাঁচিল টপকে বাইরে চলে যায়। তারপর অন্য মতলব আঁটে।
ডিকি নামে একটা লোকের সাথে ডিনসমেডের আলাপ ছিল। সে সার্কাসে বাঘের খেলা দেখাত। বয়স বাড়ার সাথে সাথে চাকরি চলে যায় তবুও তার গায়ে অসুরের জোর। তাকে ডিনসমেড সাড়ে তিন হাজার টাকায় রাজী করায় আর ধার দেনা করে অ্যাডভান্স পাঁচশো টাকা দেয়।
কিন্তু পরদিন সকালে দেখে কুকুরটা তার দেহ ছিঁড়ে ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে। এতে বার্জ সজাগ হয়ে যায়। তখন কুকুরের সঙ্গে একটা পঁচিশ বছরের যুবককেও তার হাতে রাইফেল দিয়ে পাহারায় লাগিয়ে দেয়।
ডিনসমেড স্থির করে সে বন্ধুকে হত্যা করবে, তাই স্থির করে যায় রবার্টের বাড়ি। শোনে সে নর্থ রোডে যাবে পরের দিন। এই সুযোগে আগে গিয়ে স্টেশনে বসে ডিনসমেড। বৃষ্টি পড়ায় ট্রেন ফাঁকা। যথারীতি রবার্ট আসে। ডিনসমেড তাকে দেখে একটা কামরায় উঠে যায়। তার পাশের কামরায় বসে রবার্ট। রবার্ট গাড়িতে বসে ঝিমোতে থাকে আর সেই ফাঁকে ওভারকোট, হাতে দস্তানা, চোখে সানগ্লাস, মাথায় মাঙ্কি ক্যাপের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে ডিনসমেড সে কামরায় আসে। তাকে যেন অশরীরী আত্মা ভর করেছে। নর্থ রোড ছেড়ে গাড়ি চলতে শুরু করেছে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে দরজার কাছ দাঁড়ায় রবার্ট। নামবে কী না ভাবছে, ডিনসমেড তাকে তখনই ধাক্কা দেয়।
তারপরেই আবার একটা ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট কেটে একটা ভিড় কামরায় বসে চলে যায় অফিসে। তারপর জোন্স-এর ফোন আসে। তাকে সান্ত্বনা জানিয়ে জুলিয়েটকে জানাতে বলে।
পরদিন রবার্টের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর ডিনসমেডকে সকলে প্রকৃত বন্ধু বলতে লাগল। মেয়ের ভারও আমাকেই নিতে বলল। ডিনসমেড গেল বার্জের কাছে। সেও ডিনসমেডকে ভালো বলেই মনে করল। মেয়েকেও নিজের কাছে নিয়ে রাখতে বলল। বার্জ জানায় জোন্সের শিক্ষাদীক্ষা তেমন না, তাই ওর কাছে মেয়েকে কিছুতেই রাখতে দেওয়া হবে না। তোমার কাছে মেয়েকে রাখতে হবে। ডিনসমেডের ইচ্ছা সফল হল।
এদিকে জোন্স ডিনসমেডকে মেয়ে দিতে রাজী হল না। পিটার এর মধ্যে গ্রীন উডে একটা বাড়ি ঠিক করে, পঞ্চাশ হাজার টাকায়। কিন্তু অত টাকা পাওয়া মুশকিল। এদিকে রজার বাড়ি ছাড়ার জন্য তাড়া দেয়। এই সুযোগে তার কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা চায় ডিনসমেড। বলে এই টাকা দিলেই সে বাড়ি খালি করে দেবে।